দীপ্তেন্দু জানা-র কবিতাগুচ্ছ
রঙিন হাওয়ার দোষ
উঠোনে কোন জেব্রা বাঁধা নেই–বিমুর্ত এক জেব্রা বাঁধা আছে
ডোরাকাটা ভারসাম্য
মেধা যে কী তীব্র ইশারা
মনে হয় আমরা সবাই ফুটকি ফুটকি ঈশ্বর
ডুবে গেছি সেই কবে
এক ফোঁটা জল
এত গভীর
সে তো রঙিন হাওয়ার দোষ–কেন হাওয়া চিবিয়ে খাচ্ছি
সে তো সরু সুরের দোষ–সুরের ওপর কেন দুঃখের মতো হাঁটি
সেলাই মেশিন চলছে
১)
সে প্রসঙ্গ থাক
আর কোনো দিক নেই সম্মুখ ছাড়া
সে প্রসঙ্গ থাক
আর কোন দাবি নেই পরবর্তী হাওয়া ছাড়া
এক পা হাঁটতে গেলে একবার শূন্য ডিঙাতে হয়
মহাসমারোহে এটাই নিয়ম
২)
শূন্য একটা নেতিবাচক শব্দ
একটা বাধা
একটা খাঁ খাঁ
পা নষ্ট করে এবং পায়ের ইচ্ছে
মহাসমারোহে কেন যে এত অপচয়
৩)
এই সমারোহ
এক মিশ্র পদার্থ
এই অস্তিত্ব
স্বভাবতই একটি মিশ্রণ
স্বভাবতই এক মিশ্রণ
এই প্রতিফলন
৪)
শুকোয়
শুকোচ্ছে
কুঁড়ির পাশে ফুলের পাপড়ি
ফুল যত শুকোয়
গাছের অভিজ্ঞতা রঙিন হয়
৫)
একটা সেলাই ভোর
একটা সেলাই সন্ধ্যে
সেলাই মেশিন দ্রুতবেগে চলছে
অথচ
একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে পরের শ্বাসে যেতে
যেন এক মুহূর্ত নয়
কত কত বছর লেগে যায়
যেতে যেতে
এক অবজ্ঞা থেকে আর এক বিদ্রুপের দিকে যেতে যেতে আমার উচ্চতা কমে আসে– লম্বা হই
লম্বা হতে হতে ক্রমশ বামন হয়ে যাচ্ছি
এক রোদ থেকে আর এক রোদের দিকে যেতে যেতে হীনমন্যতা জমাট বাঁধে– ক্ষয়ে যাই
ক্ষয়ে যেতে যেতে আমি জিরো ডিগ্রীতে জমে যাচ্ছি
এই আনন্দলোকে আমি কেমন আছি সে প্রশ্ন থাক
পর্যটক তুমি এলে আমার ঘরের সিলিং থেকে তুষারপাত হবে
অজ্ঞাত কারণবশত
ট্রেনের ছাদে চেপে ছঁইয়া ছঁইয়া
আও জানাত চলে চল ছঁইয়া
সিনেমায় যেমন হয় সিনেমার বাইরে হচ্ছে না
সিনেমায় কেন এমন হয়
চরিত্র এবং চরিত্রের অন্তর্গত চরিত্রকে
আস্তে আস্তে গিলে নেয় হরর মুভি
এসব তো সিনেমায় হামেশাই হয়
গলা শুকিয়ে আসছে এই ভেবে
আমি সিনেমার বাইরে কতটা
কতটাই বা সিনেমার ভেতরে
শিকার
মনের বাইরে ঘুরে বেড়ায় চোরাশিকারির দল
আর মনে মনে ঘুরে বেড়ায়
একটা তাড়া খাওয়া মাংসের খরগোশ
এই কাস্তেমণ্ডলে ভয় জমতে জমতে দুর্বোধ্য পোকা হয়ে উঠছে
এই আনন্দলোকে ভয় জমতে জমতে দুর্বোধ্য পোকা হয়ে উঠছে
আগুন হাতে ঘিরে ফেলছে যারা
তারা ফাগুনের ব্যবহার শিখেছে কি
ধোঁয়া উঠছে ধোঁয়া রঙের
কতটা বনের ধোঁয়া কতটা জীবনের ধোঁয়া
হাওয়ার তাতে মাথাব্যথা নেই
ঘোড়সওয়ার
সংকুচিত জলের ভেতর একটা ঘোড়া দেখা যাচ্ছে
ঘোড়ার পিঠে আমি
ঘোড়া আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে নাকি আমি ঘোড়াটাকে— জলের বাইরে থেকে স্পষ্ট হচ্ছে না
জানেনই তো–উদ্দেশ্য মারা গেলে মুঠোর ভেতর পড়ে থাকে শুধু কঙ্কাল
ঘোড়াটাকে আপনি যদি উদ্দেশ্য বলে ডাকেন–
আমি কিন্তু কোনরকম বিরোধ করবো না
কর্তব্য
কুঁকড়ে যাওয়া এক ফোঁটা জল নিয়ে কী যে করি মানুষের সমাবেশে
পিপাসা মেটাবো নাকি ঘাড় থেকে তেলচিটে দাগ ধোব অপমানের,আঘাতের,ভয়ের
নাকি বলবো– জল, তুমি লাফ দাও নিচের
খাদে
উঁচু থেকে ঝাঁপ না দিলে কোন জলই যে জলপ্রপাত হয়না
উদ্দেশ্য
হায়নাকে ভয় পাইনা তেমন আয়নাকে ভয় পাই
আপনি ফুঁ দিন– আমি এত তুচ্ছ যে এক ফুঁয়ে উড়ে যাব ভয় নিয়ে
উড়ে যাব ছেঁড়া পলিথিনের সঙ্গে জঞ্জালে আর কাদায় যেখানে কাশতে কাশতে কফ ফেলে কৃষ্ণ আর রাধায়
ভাত কালো হচ্ছে
কালো হচ্ছে ভাত
হলুদ হচ্ছে ছায়া
হলুদ হচ্ছে হাত
তবু মাছের শরীর নয়
মাছের চোখের দিকে তাকালে এখনো উদ্দেশ্য উঁকি দেয়
পথিক
কোন এক ব-দ্বীপে
কোন এক আনারস গাছ
আনারস গাছের কোন একটি পাতায় একটি শামুক
শামুক এতই তুচ্ছ জীব আপনি হয়তো কোনদিন খেয়ালই করেননি
হাত ফস্কে কতবারই তো পড়ে যায় কাঁচের গ্লাস
আর পা ফস্কে পড়ে যায় পথ
এবং ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়
শামুকের খোলসের ভেতর কিন্তু হাঁটতেই থাকে অস্পষ্ট একজন–তাকে আমি উদ্দেশ্যপূর্ণ শূন্য বলে ডাকি