ছিঃ  <br />  ঈশিতা ভাদুড়ী

ছিঃ
ঈশিতা ভাদুড়ী

"এ ক্ষেত্রে অনেকের মতন আমারও প্রশ্ন অভিযুক্ত যদি দস্তানা বা কন্ডোম পরে নির্যাতিতার গোপনাঙ্গ স্পর্শ করে তবে কী অভিযোগ দায়ের করা যাবে না? জামা খুলে নগ্ন করে ফেলার পরেও হাতে যদি গ্লাভস থাকে, তাহলে জোর করে বুকে হাত ব্যাপারটাকে যৌন নিগ্রহ বলে ধরাটা ঠিক হবে কী? অথবা, কন্ডোম পরে বলপূর্বক যৌন সংসর্গকেও ধর্ষণের তুলনায় লঘু কোনো ব্যাখ্যায় ধরা যাবে না কী? এমতাবস্থায় আমরা শিশুদের যৌন নির্যাতন থেকে রক্ষা করবো কী করে? বাসে ট্রেনে ট্রামে এমন কী পরিবারেও অনেক সময় যেসব যৌন নিগ্রহের মুখোমুখি হতে হয় শিশুদের, তাদের জন্যে মাননীয় বিচারপতি পুষ্পা গনেড়িওয়ালা কোন আইন সৃষ্টি করতে চান? " বম্বে হাইকোর্টের রায় নিয়ে সঙ্গত কিছু প্রশ্ন তুললেন ঈশিতা ভাদুড়ী।

২০১৬ সালে সতীশ বান্দু রগড়ে নামে এক ব্যক্তি একটি বাচ্চা মেয়েকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে নিজের ঘরে নিয়ে যায়। বাড়ি ফিরে মেয়েটি মাকে বলে, সতীশ তাকে পেয়ারা খাওয়াবে বলে ঘরে নিয়ে গেছিল। পেয়ারা দেয়ও – কিন্তু, সাথে সাথে তার বুকে হাতও দেয়। এমনকি, সালোয়ার খুলে ফেলার চেষ্টাও করে। বুকে হাত , সালোয়ার খোলার চেষ্টা – এই বিষয়টিকে যে কোনো মানুষই শ্লীলতাহানিই বলবেন। না, শুধু শ্লীলতাহানি নয়, এ তো যৌন নিগ্রহের আওতায়-ই পড়বে। কিন্তু, সঠিক যৌন নিগ্রহর অর্থ নাকি সরাসরি স্তনে হাত বা গোপনাঙ্গে হাত সরাসরি। কিন্তু ‘পোশাকের উপর দিয়ে শরীরের অঙ্গ স্পর্শ করলে তা যৌন নির্যাতন হিসাবে গণ্য হবে না’, সম্প্রতি কন্যা দিবসে প্রতিটি নিউজ পেপারে হেড লাইন সেকথাই বলল। ২০১৬ সালে এক শিশুর যৌন হেনস্থার মামলায় এই রায় দিল বম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চ ১৯ শে জানুয়ারী-তে। যেহেতু শিশুটির জামাকাপড়ের ভিতর হাত গলিয়ে তার শরীরে কোথাও স্পর্শ করা হয়নি তাই এটিকে যৌন নির্যাতন বলা যাবে না। বোম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চের মহিলা বিচারপতি পুষ্প গনেড়িওয়ালা এই রায় দিয়েছেন রবিবার। অভিযুক্ত ব্যক্তি শিশুকে পেয়ারার লোভ দেখিয়ে ঘরে নিয়ে গিয়ে শিশুকন্যাটির বুকে হাত দেয়। ৩৯ বছরের ওই অভিযুক্তকে পোকসো আইনের ৮ নং ধারার ৩ বছরের সাজা দিয়েছিল নিম্ন আদালত, হাইকোর্টে পালটা আবেদন জানায় সে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ এবং ৩৪২ নম্বর ধারা অনুযায়ী নিম্ন আদালতের সাজাপ্রাপ্তের সাজার মেয়াদ কমে দাঁড়াল ১ বছর!

এই রায়ের পর তাপসী পান্নু বা আরও অনেকের মতন আমিও কোনো শব্দ খুঁজে পাচ্ছিনা, দুদিন ধরে চেষ্টা করেও না। মুম্বাই হাইকোর্টের বিচারপতির এই যে বিচার, ‘স্কিন টু স্কিন কন্ট্যাক্ট’ নাহলে তাকে যৌন নির্যাতন বলা যাবে না, এই রায়ে আপামর মানুষ স্তব্ধ বিমূঢ়। আমরা শিশুদের, কিশোরীদের নিরাপত্তা নিয়ে এমনিতেই সর্বদা ভীত আতংকিত, তার ওপর এই রায়ে নিজের পরিবার ও আশেপাশের সমস্ত শিশুর জন্য চিন্তিত হয়ে ওঠা ছাড়া উপায় কী !

মাননীয় বিচারপতি মহিলা, তাই তাঁকে যৌনতার অর্থ বুঝিয়ে দেওয়ার দরকার নেই। যদিও মহিলা হোন অথবা পুরুষ, কাউকেই যৌনতা বুঝিয়ে দিতে হয় না। কিন্তু যেহেতু বিচারপতি মহিলা, সেহেতু ধরেই নেওয়া যায়, তিনি অনেক অন্ধকার অনেক কালো স্পর্শ পার করেই এখানে এসেছেন। তাই তাঁর কাছে এমন বিচার শুধুমাত্র আমাদের কাছে নয়, তাঁর নিজের কাছেও লজ্জার। নাকি সেই শাশুড়ি পুত্রবধূর গল্প? শাশুড়ি অত্যাচারিত হয়েছেন বলেই তিনিও তাঁর পুত্রবধূর প্রতি অত্যাচারীর ভূমিকা পালনে অগ্রণী হন।

এখনও যেখানে আমাদের জাতীয় কন্যাসন্তান দিবসের প্রয়োজন হয়, কন্যাশ্রীর মত প্রকল্পের প্রয়োজন হয় দেইখানে দাঁড়িয়ে মাননীয় বিচারপতি পুষ্পা গনেড়িওয়ালা জানিয়েছেন, কেবল নাবালিকার বুক স্পর্শ করার অভিযোগ উঠলেই তাকে পকসো আইনে যৌন নির্যাতন হিসেবে ধরা যাবে না। জামা সরিয়ে ‘স্কিন টু স্কিন কন্ট্যাক্ট’-এর অভিযোগ উঠলে তবেই যৌন নির্যাতনের মামলা করা যাবে। বিচারপতি স্পর্শ শব্দের সঙ্গকীর্ণ ভাবানুবাদ করে যা বললেন, তার সার হল, পক্সোতে ‘টাচিং’ কথাটি লেখা আছে। স্তন, নিতম্ব, যোনি ‘টাচ’ করার কথা লেখা আছে। এবং জামা না সরালে ‘টাচ’ করা যায় না। জামার উপর থেকে টেপাটেপি তাই পক্সোর ৭ বা ৮ ধারা অনুযায়ী ‘যৌন নির্যাতন নয়’। তিনি বলেন, পকসো আইন অনুযায়ী পেনিট্রেশন না করে কেউ নাবালক বা নাবালিকার যৌনাঙ্গ স্পর্শ করলে বা তাকে নিজের যৌনাঙ্গ স্পর্শ করতে বাধ্য করলে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের হতে পারে। এইধরনের যৌন নিগ্রহকে এরকম নিপুণ বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিতে বিচার করে আইনের এমন যুগান্তকারী ব্যাখ্যা যখন একজন মহিলা বিচারপতি দিতে পারেন, তখন মেনে নিতেই হয়, দেশ অন্ধকারের দিকেই চলেছে। যদিও বিচারপতি মহিলা কি পুরুষ, সেটি বড় কথা নয়। বিচারপতির কাছে যোগ্য বিচারই কাম্য সুস্থ সমাজ গড়তে।

এ ক্ষেত্রে অনেকের মতন আমারও প্রশ্ন অভিযুক্ত যদি দস্তানা বা কন্ডোম পরে নির্যাতিতার গোপনাঙ্গ স্পর্শ করে তবে কী অভিযোগ দায়ের করা যাবে না? জামা খুলে নগ্ন করে ফেলার পরেও হাতে যদি গ্লাভস থাকে, তাহলে জোর করে বুকে হাত ব্যাপারটাকে যৌন নিগ্রহ বলে ধরাটা ঠিক হবে কী? অথবা, কন্ডোম পরে বলপূর্বক যৌন সংসর্গকেও ধর্ষণের তুলনায় লঘু কোনো ব্যাখ্যায় ধরা যাবে না কী? এমতাবস্থায় আমরা শিশুদের যৌন নির্যাতন থেকে রক্ষা করবো কী করে? বাসে ট্রেনে ট্রামে এমন কী পরিবারেও অনেক সময় যেসব যৌন নিগ্রহের মুখোমুখি হতে হয় শিশুদের, তাদের জন্যে মাননীয় বিচারপতি পুষ্পা গনেড়িওয়ালা কোন আইন সৃষ্টি করতে চান?

প্রকাশ্য স্থানে বা বাসে ট্রামে ট্রেনে অনেক সময়ে মহিলারা, শিশুরা নির্যাতিত হয়। সেখানে পোশাক সরানো বা ‘স্কিন টু স্কিন কন্ট্যাক্ট’-এর প্রশ্নই থাকে না। তবে কি সে ক্ষেত্রে নাবালক বা নাবালিকা নির্যাতিত হলে পকসো (প্রোটেকশন অব চিল্ড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস অ্যাক্ট) আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে? যদি থাকে তবে আইন পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা নেই কী? মনে রাখতে হবে পকসো কিন্তু শিশুদের স্বার্থেই এসেছিল। এবং পকসোর ৭ বা ৮ নম্বর ধারায় ত্বকে ত্বকে স্পর্শ অর্থাৎ ‘স্কিন টু স্কিন কন্ট্যাক্ট’-কেই শুধু ‘টাচ’ বলা হবে এমন কথা কোথাও লেখা আছে কী? বরঞ্চ আমি তো পড়লাম ২৯ নম্বর ধারায় লেখাই আছে পকসোর ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে অপরাধী ধরেই এগোতে হবে, কেননা এই আইন শিশুদের যৌন নিগ্রহ থেকে রক্ষার্থেই হয়েছিল। আইনের এমন ছিদ্র বার করে আমাদের আতঙ্কিত করার মানেই হলো আমাদের আরও সহস্র বছর পেছনে নিয়ে যাওয়া। তবে কী এই দেশ অত্যাচারিতদের বুকের ওপর পা রেখে দোষীদেরই পক্ষে? তবে কী আমাদের এই পোড়া দেশে মহিলারা, শিশুরা দ্বিতীয় তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়েই রয়ে যাবে? আসলে এত কিছু না লিখে শুধু একটা ‘ছিঃ’-ই যথেষ্ট ছিল এখানে।

তবু কপাল ভালো শিশু অধিকার সংরক্ষণের জাতীয় কমিশন মহারাষ্ট্র সরকারকে যৌন অপরাধ আইন থেকে শিশুদের সুরক্ষা আইনের আওতায় একটি নাবালিকাকে যৌন নির্যাতন হিসাবে চিহ্নিত করার ব্যাখ্যা দিয়ে বোম্বে হাইকোর্টের ব্যাখ্যাটির বিরুদ্ধে জরুরি আপিল করতে অনুরোধ জানায়। শিশুদের অধিকার সংস্থা বলেছিল যে আদালতের রায়টির ভাষাটি প্রাথমিকভাবে পর্যালোচনা করা দরকার। সরকার কি পর্যালোচনা করবেন বা এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে অ্যাপিল করলে সেই বিচারের চূড়ান্ত রায় কি হবে সে প্রশ্ন অন্য। কিন্তু মুম্বাই হাইকোর্টের বিচারপতি মহিলা হয়ে যে রায় দিলেন তাতে কী তিনি লজ্জিত হলেন না নিজের কাছে, তাঁর পরিবারের সকল মহিলা বা শিশুদের কাছে? মেয়েদের জন্যে এমনিতেই পথ পিচ্ছিল। তার ওপর এই প্রহসন না করলে কী আর হতো এমন?

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (2)
  • comment-avatar
    Fazlul Haque 5 years

    ঈশিতা ভাদুড়ী … আমাদের সময়ের সাহসী লেখক । একটি অসাধারণ প্রতিবাদের খোঁজে লেখকের অনুসন্ধান আমাদের এসময়ে অতীব গুরুত্বপূর্ণ লেখা। একজন বিচারকের শ্রেয়নীতিক বিবেচনা ও নৈতিকতা থাকা অবশ্যকর্তব্য। রাজনৈতিক দাসত্বের জীবন একদিন ফুরিয়ে যায়… জেগে থাকবে শুদ্ধতা ও শ্রদ্ধাময় কর্মজীবন। প্রাচীন ভারতীয় আর্য সময় থেকে আমাদের পরম্পরা ও মূল্যবোধের যে শাশ্বত প্রবাহের জীবন ও সমাজ তাকে ফিরিয়ে দেয়ার অধিকার … এই বিচারককে কে দিয়েছে ? … ঈশিতা ভাদুড়ীর প্রতিবাদের সাথে আমাদের সকলের একাত্মতা প্রকাশ করছি। এমন বর্বরতা , অবিচার প্রতিরোধে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, এটা সময়ের দাবি ❤️🙏

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes