
চৈতালী চট্টোপাধ্যায়-এর গুচ্ছ কবিতা
বিজয়া
লিখে দি’ দুর্গানাম
তোমার ও হাতের পাতায়…
অন্যরা থাকুক গাঢ়
প্রীতি শুভেচ্ছায়…
ঘিরে দি নস্যিরং
চাদরের তাপ,
আমাদের যত পাপ
হেমন্ত ঈশ্বরীর মতো মুছে নেবে!
আর,বসন্ত আবার ভরে দেবে
একেএকে,
সম্বচ্ছরের ভ্রান্তি!
চোখের নীচের ক্লান্তি!
বদরক্তের মতো পলাশের লাল!
রাস্তায় হাঁটছি,
আর,স্ট্রিটলাইটের তলা থেকে
ময়লা কাগজ,
কুড়িয়ে নিচ্ছি
মুখে ঘষব বলে,
যাতে লোকে বলে,
‘এত কাটাকুটি নিয়ে থাকে?’
নখ ডুবছে পাঁকে,
পরের আশ্বিনে পদ্ম হবে,
ফের দুর্গানাম লিখবে
তোমার ও হাতের পাতায়!
চোখ ভেসে যাবে জলে, যতদূর যায়…
গ্লোব ট্রটার
আমি রন্ধনশালাটিতে,ভেলকির মতো, বিশ্ব পুরে নিচ্ছি ।
ঝালে ঝোলে অম্বলে শীর্ষপতাকা পুঁতছি।
ফোড়নে বাসনা পোড়ে,
মরুঝড় ওড়ে!
মশল্লা ভাসাই জলে,
যেন,খালেবিলে।
ঘ্রাণে, সুস্বাদ নামে জীবনের।
জিভে,অকারণ,তেতো নেমে
ভয় পাইয়ে দেয় আমাকে!
আহার্য তৈয়ারি হয়,
কৌটোবিলাসী,সামান্য তেলাপোকাটিও
পরিব্রাজকের মতো জেনে যায়…
আগুনে শরীর রাখলে,
ভ্রমণের ধকল পেরিয়ে, ধীরে,
বহুক্ষণ পরে,
মেরুপ্রদেশের শীত নামবে মাথায়।
নয়নতারা
সমুদ্রে যাই না। চোখের মধ্যে নিয়ে বসে থাকি।
দেখি,আধভোরে,জেলেনৌকোর সারি নেমে গেল জলে।
দুর্ভিক্ষের মাটি থেকে তীরে ভিড়ল কচি মৃতদেহ।
নীল হয়ে গেছে মুখ!
ভিড়ে মিশি না। চোখের মধ্যে নিয়ে বসে থাকি।
দেখি, শ্রমিকেরা হাঁটতে হাঁটতে রেলপথে ঘুমিয়ে পড়ল।
কৃষকদের সূর্যাস্ত হল।
রাজনীতি করি না।আর, দেখি,রাষ্ট্রনীতি আমার চোখের মধ্যে
আলগা আবর্জনা ঢেলে দিচ্ছে।
ভুলেও তোমার কাছে যাই না –
তবু, দুটো হাসি, তিনটে কথা,এইসব অকিঞ্চিৎকর,
চোখের ভিতরে অশ্রুপাপড়ি হয়ে ফুটে থাকে।
আমি জানি। চোখ, একদিন অন্ধ হয়ে যাবে
এইসময়
ফাঁকা মাঠ।
বীজ পোঁতা হয়নি এখানে।
আমি ফসল তুলছি।
উন্মাদ হচ্ছি ক্রমশ
“সমুদ্রে যাই না। চোখের মধ্যে নিয়ে বসে থাকি।” … আহা! চৈতালীদির কথা ও কবিতা প্রথম শুনি অমিতাভদা ( দেব চৌধুরি, শিলচর)’র কাছে। পরে কিছু কিছু লেখা পড়েছি, পড়ি এলোমেলো। এই মুগ্ধতার জানান দিলাম। চৈতালীদি, সমুদ্রে না গিয়েই এমন ঢেউ তুলুন অক্ষরে… অক্ষয় …
সপ্তর্ষি