চন্দন ভট্টাচার্য-র  কবিতাগুচ্ছ

চন্দন ভট্টাচার্য-র কবিতাগুচ্ছ

পাঁচটি কবিতা

যে-তুমি অনার্যধন
(মাকে)

আকাশনৌকোয় চেপে আমার সমস্ত মন মা থেকে বাবার দিকে যায়
মেঘলা ও উঁচে কধ সূর্যবাল্ব ফেলে রেখে হ্যান্ডগীতা অরুণসন্ধ্যায়
সমুদ্রসিঁড়িতে দুটো আলোস্তম্ভ স্বামী-বউ, মাঝখানে বাচ্চা দিশেহারা
তারপর চুড়িদার ছেড়ে ভিজে পাজামার দিকে পদক্ষেপের ফোয়ারা

মায়ের মৃত্যুর পর মা’র সঙ্গে পরিচয়, তারপর বন্ধুত্বে এলাম
সাদা জল থেকে তোলা মৃগেল মাছের আঁশ, সেই দেহে অকুন্ঠ সেলাম
যে-তুমি অনার্যধন, জোরগলা, স্মৃতিধর, বিদ্যাস্থানে লবডংকা মেয়ে
দোজবরে বিয়ে করো, তিনি শাস্ত্রজ্ঞানী আর সিনিয়ার শাশুড়ির চেয়ে

পূর্ব-পাকিস্তানে রাখি খুলনা জেলার অন্তঃপাতী সেনহাটি নামে গাঁও
ঘ্যাঁটকোল পদাতিক, কালমেঘে অন্ধকার, আম-জাগে দাঁতন বিছাও
সাপের ভুবন ছিল…আলখেতে অ্যাকিলিস, দুই ডুব চান যদি দিতে
ফিরতি গামছা ভারি, হাওড়া স্টেশান যেন চ্যাং-শোল-খয়রা দিঘীতে

দুপুরে রাতের রান্না সারা, বউ সেজেগুজে উচ্ছ্বসিত জানলা খুলে রাখে
বছরে একটি বার যাত্রা বসে বাংলাদেশে — তাল-অন্ত শিউলির প্রাক-এ
কিন্তু যে-মানুষ ফিরতো স্কুল থেকে রোদ গায়ে, তার ডাঁটি ছাতাটি দেখি না
শাঁখের আজান পড়ে, বাপখাকি কালো মেয়ে আতংকে হিম-হিম সিনা…

উঠোনে পায়ের শব্দ, নিঃশ্বাস পর্যন্ত চিনি, যাক ফিরলো কাঁটায় কাঁটায়
পাদ্যঅর্ঘ দিয়ে রাখা মাদুরে চা-মুড়িমাখা, জোরে হাঁটলে ফার্স্ট সিন পায়
“ট্যাঙোস ট্যাঙোস ক’রে মেয়ে মানুষের ঘোরা, গৃহকাজ করবে কিছু তো?হ্যাঁ, আগে বলেছি যাব, এখন আর ইচ্ছে নেই”, ছুঁড়ে ফেলল প্রতিশ্রুতি-জুতো!

সারেঙ্গি উঠছে ডেকে, কনসার্ট শুরু হবে, পেছনে বেহালা রেডিসেডি
শোয়ার পাথর-ঘরে চুলের রুপোলি কাঁটা ভেঙে নামে কালো এক নদী
কান-গলা খ’সে গিয়ে পাতাঝরা গাছটার কোটরে সমস্ত এলোমেলো
দৃশ্যনির্মাণকারী পুরুষেরা চুপিচুপি হিডন ক্যামেরা রেখে এলো

মুছে যাওয়া বেনারসি, বক্ষখাতে ঢেউ শুধু, চক্ষুপাতে পাতা গ্লেসিয়ার
আজন্ম সময় ধ’রে কোটি কোটি “টেক” পড়ে, তারপর অস্কার অস্কার…

আলোকন ক্লিনিক

রিসেপশানের মাথায় আমরা ছবিটা ঝুলিয়ে রেখেছি
ছবিতে যে মুখ, তার চোখের নিচে ফ্লুইড জমে বড় বড় পাফ
কপাল থেকে জুলপি পর্যন্ত শালিখের পা ছড়ানো
মাথার মাঝখানটায় চমৎকার এইট বল পুল খেলা যাবে
আর এসবের প্রতিক্রিয়ায় ভদ্রলোকের মুখে একটা ঘেঁটে যাওয়া
ডিপ্রেসড লুক

আপনি বড্ড দেরি করে ফেলেছেন স্যার

মিনোডিক্সিল আর অ্যামিনেক্সিল সলিউশান (টেন পার্সেন্ট)মাথায় দিনে দুবার করে। খেয়াল রাখবেন, ওষুধটা শুরুতে ডেসিড্যুয়াস
কাজেই ব্যবহারের আগে আপনার অভ্যেসমতো কিছুটা
ঈশ্বরকে নিবেদন করতে যাবেন না, কেলেংকারি হবে!

রোমশ হয়ে ওঠা আমাদের কাছে তত মূল্যবান হতে পারে না
যতটা সার্থকভাবে রোমশ হয়ে ওঠা। তাই রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে
পাতার পর পাতা পথিক-থামানো বিতর্কের পর আমরা রোগটির নাম রেখেছি
অ্যালোপেসিয়া, যেভাবে একদিন নৈতিকতার সংজ্ঞা খুঁজে পেয়েছিলাম

এছাড়াও ছবিতে আপনার হাতে র‌য়েছে একটা স্ফটিকের পানপাত্র
কিন্তু যেটা জানা যায় না — পানপাত্রের তরল এখন কোথায়?অনুমান সত্যি হলে আমরা একই সঙ্গে আপনাকে রেফার করবো
সাইকো-থেরাপির জন্যে যেখানে বোঝানো হয়, সমস্ত দার্শনিক মুক্তির
পেছনে রয়েছে মানুষের শরীর। জানানো হয়, এ-পর্যন্ত সভ্যতা
আমাদের দিয়েছে ৪-৫টা জিনিস — ঢাকাই মসলিন, ইস্তাম্বুলের মিনিয়েচার ছবি,হ্যামবার্গার, আফগান মহিলা ক্রিকেট টিম…আর এ-সবই একজোট
হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে একক পৃথিবীর দিকে যার একমাত্র সমস্যা
কালো হয়ে যাওয়া

যদিও অলরেডি অনেকটা দেরি হয়ে গেল, পিগমেন্টেশনের বিরুদ্ধে
আমরা আপনাকে ব্যবহার করতে দিচ্ছি গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ক্রিম
রাতে শোয়ার আগে। এবং সকালে যদি অন্যান্য নানা কারণে
আর জেগে উঠতে না পারেন তো স্যার মনে রাখবেন এই বিউটিশিয়ানের
কথাটা —
ইতিহাস আর নিয়তি একই কলমে লেখা হয়

বাথরুম-কারখানা

ঝিনুকসাদা পরীক্ষার খাতা।
একলা ঘরে আমাকে বসালে;দেখে দেখে আঁকব ভেবেছিলাম
তোমার চোখ তোমারই মশালে!

যেমন দেখি: গায়ে পোশাক নেই
বেরিয়ে গেছি রাস্তায়, আন্‌মনা…স্বপ্ন — তবু লজ্জা করে জেনে
পৃথিবী এক বাথরুম-কারখানা!

পাথর-চাপা হলুদ পাঞ্জাবির
ছুটে এসেও গ্রুপ-ফটোতে লেট…নতুন হরিণ আমার উঠোনে
পকেটে নেই আধখানা বুলেট

আজ থেকে সব আসল হবে, দেখো
তোমার আঙুল, জীবনবীণার তার
কিন্তু কবির বদলে যাওয়া বাড়ি
হাসপাতাল, না সংশোধনাগার?

জাতিস্মর চোয়ালেরা

যারা আসমুদ্র সমস্যা নিয়ে ভাবল তারা হিমাচল।
ভোঁসলে বা দেশমুখ, দাশগুপ্ত কিম্বা সিংহানিয়া — বড়জোর স্নান ক’রে
চুল আঁচড়েছে, জাতিস্মর ফুলদানির দিকে কেউ ফিরে তাকায়নি।

যারা ব্যাঙ্কের মাথায় ছাতা ধরল, ছোট চাষির এক টোকায়
বন্ধ করল আত্মহত্যা, কারখানার গেটে ঘোল খাইয়ে দিল
উৎপাদনব্যবস্থাকে, খবরের কাগজ তাদেরই কথায়
চার থেকে বাইশ পাতায় উঠে গেছে। তারা পৃথিবীর বরকর্তা,
চিকু-বাগানে কালো ডোরাদাগ। ইন ফ্যাক্ট ওরাই শিক্ষাপদ্ধতিকে বলল
কাঁদিস না; বিল আনল, মাছ নয়, অক্ষরভর্তি বিল। শাস্তিকে কড়া ভাষায়
প্রশংসা করে অত্যাচারকে সময় দিল পচে ওঠার। তাদের মাথার চুল
যত পাতলা হতে লেগেছে, ততই সেখানে শক্ত করে বসল ফিফথ ব্যাটেলিয়ান।

তারপর একদিন কী ভেবে হলুদ পাঞ্জাবি পরার শখ হল তাদের,
জোঙ্গা জিপ টেনে তুলল পুরো সি-বিচের তলপেটের ওপর।
পেছনে ছায়ার তরমুজফালি থেকে বন্দুক আকাশকে
ইতস্তত তাক লাগিয়ে আছে। খর ভাবে দাড়ি কামানো, লোহা-চোয়াল —
দু’পা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে তারা তাকিয়ে থাকল মিশমিশে সূর্যাস্তের দিকে…

শরতের তালা

এই শরতের প্রথম কথা সবাই জানে হলুদ বেড়ে ওঠো
আলোর ছোট ছোট স্তনের ওপর চায়ের গরম ফোঁটা,আঙুলের ডগায় রক্ত তুলে নারকোলপাতার শীর্ষাসন।
সময় আসার আগে বুঝতে পারছি সময় আসবে
মাইক থেমে গিয়ে গান হচ্ছে কলতলাতে, রেললাইনে, পাখির মাথায়
সকালে উঠিয়া আমি শার্ট পরে তার ওপর গরম লাগছে
শ্বেতপাথরের মন্দির, অষ্টভোগ শ্বেতপাথরের
সময় চলে যাওয়ার পর বুঝতে পারছি সময় চলে গেল
কতদিন পর চিলেকোঠায় উঠলাম শরতের তালা খুলবো বলে
নিচে কথা নিজেকে বলতে বলতে যাচ্ছে
যেমন পুজোর সতরঞ্চি এসে পড়ে দিনের মধ্যিখানে;
ভাঙা থাকতেও জোড় খেয়ে যাচ্ছে নতুন ঘোমটা, অর্থাৎ চিল কখনও
শকুন হবে না
যদিও সময়ে বুঝতে পারিনি সময় চলছে
বারুদকে খুশি করতে ফেটে পড়েছে শব্দ
শরতের শেষ-কথা তাহলে ফিরে আসবে কিন্তু রিস্কি হয়ে যায়
জানি, এ-ক’টা লাইনে জীবন খুশি হয় না

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes