
গুচ্ছকবিতা
শীর্ষা
১
বৃন্দাবন সেজে হাটে বসেছে মথুরা, যেন
লীলাখেলা হাতে বাঁশিটির ঢেউ – সেজেছে
ছলনানূপুরে, পাকে পাকে জড়িয়ে বাসুকি –
ওহে প্রমোদের বাছা, এসো, খেলা করি,
বসন্ত রোগটির এঁটো-কাঁটা শুয়ে থাক পাষাণশরীরে;
দোরে দোরে ভিক্ষা করুক নগ্ন পদাবলী।
২
অজস্র ভুলের মাঝে নিশ্চিন্ত ঘুম দেয়
ভ্রূ-এর জ্যামিতি, আকাশের খোলা পেটে
কৃষ্ণের পেটানো কম্পাস, চুমু খায়,
আঙুল বুলায় – একত্র যত কল্পনা-সাপের হিসহিস।
তারপর বৃষ্টি নামে মেয়েটি গলায় দড়ি দিলে
খাদ যেন উড়তে থাকে – সোনালী চিলের ডানায়।
আকাশকে ছিঁড়ে ফেলে চাঁদ নেমে আসে,
কুণ্ডলিত নাগদেব শুয়ে পড়ে জ্যামিতি-কুটিরে,
নাভিমূলে খেলা করে স্নিগ্ধ সান্ত্বনার জল
৩
অথচ অকথ্য কৃষ্ণের নাম যত পদাবলী!
রাইয়ের পায়ের কাছে মুঠো মুঠো ঘৃণা,
অবজ্ঞার সুরটি হাসে বাঁশির ফুটোয়, আস্ত
পৃথিবীর দেবালয় কালো পাথরের পায়ে –
পুরোহিতের ঘন্টা-সূত্র মিথ্যাচারে ঢাকা,
রাধার আঁচলে বেঁধে রেখে কুলটা আজান
অন্ধকার দেবতাটি মুচকি হেসে চেটে চলে
ভক্তির বাটি।
৪
বাসুকির পা ধরে থাকো গো মিনতি,
থাকো কামনার মা – সর্পবিষে
জ্বলে ওঠো নাগদেবী রূপে,
চরাচর খাক হয়ে যাক,
পুড়ে যাক না-পাওয়ার সন্তাপ।
বহিরঙ্গে ছাই মেখে দ্যাখো নারী ভোলানাথ –
তোমার দিব্য দেখে মূর্ছা এ জগৎ,
যতটা কলঙ্কময় চাঁদ সোনা সেজে
মূল্য গেলে অন্ধকার আকাশে
৫
এসো নগ্ন প্রেম, এসো ছদ্ম বৈরাগ্য।
তোমার তর্পণকষ্টে ফেটে যাক পৃথিবীর
পেট। রক্তমাখা খিদেশস্য ছড়িয়ে পড়ুক,
এদিক ওদিক। বৃথা সান্ত্বনার ধূপ, অভব্য
সমাজ! বেদনার গাছ বেয়ে আপেলের চাষ –
এসো নগ্ন প্রেম। শেষ আপেলটি খাও। ঋদ্ধ
হও সামগ্রিক শান্ত বৃষ্টি মেখে। চরাচর
ঘুম দিক কাঁথামুড়ি দিয়ে। চরাচর ঘুম দিক
নিজ নিজ কাজে।
৬
অতঃপর নূপুরের ঢেউ গুনে কাটিয়ে দাও বেলা
বঁটি দিয়ে কেটে ফেলো চোখের সম্ভ্রম,
আত্মার বিসর্জন হোক পোড়াকাঠে –
সকল অঙ্গ জুড়ে ফুটুক বসন্তরোগ, যেন
একটি পৃথিবীর মায়া; পাকে পাকে গিলে নিক
অধিকারগাছ, চিবিয়ে ফেলুক না-এর মহেঞ্জোদারো –
একটিবার বেঁচে ওঠো আস্তাকুঁড় ঠেলে,
একটিবার মাথা তোলো সমাজের পেট চিরে