
কস্তুরী সেন-এর কবিতা
হে নূতন
১
ট্রেনের মধ্যে শুয়ে একটি মেয়ে কাঁদছে, কৈশোর থেকে ভোরবেলার দিকে এগোচ্ছে তার যৌবন। আটটা পনেরো রাত্তিরে সিগারেট ধরাবে কি ধরাবে না ভাবছে কেউ। ট্রেনের বাইরে জ্যোৎস্না, রহস্যময় জ্যোৎস্নায় অসুন্দর মফস্বল সুন্দর হয়ে উঠছে নিমেষে। জ্যোৎস্নায় ঝিকিয়ে উঠছে জল। একটি বাংলা উপন্যাস শুরু হচ্ছে। কার্জন পার্কের ম্যাজিশিয়ানের মতো শুরু হচ্ছে একটি নতুন বছর…কিশোরীর অশ্রুর মতো সেই বছর, রাতের ট্রেনের মতো, কতদূরের?
২
তোমাকে জাগাক এসে ঝাঁটপাট। ব্যাগ খুলছ, খাপে রাখলে স্টেশনের দশটা দশ রোদ। অন্যদিকে ভুলে যাওয়া, অন্যদিকে বাড়িভাড়ার প্রথম চিরকুট। কোন বাড়ি, কোন মজা পুকুরের পাশ দিয়ে পথ গেছে, উঠোনের একপাশে ছিল কি করবীগাছ কোনও? তুমি অন্যখাপে দুপুরের ফেরিডাক ভরে রাখছ সেই কবেকার। কার্তিকের হিম পড়ছে, ধ্বসধ্বস ফিরতে হবে, নেমে করবে সন্ধের বাজার। জন্মকবচ ছিঁড়ে ভোরবেলা ছুটে যাচ্ছে ট্রেন, ভৈরবের বাজার হয়ে নরসিংদি, আখাউড়া জংশন…কোন বাড়ি? উঠোনের কোনদিকে ঘট পাতা হয়েছিল, জলে ডোবা আমের পল্লব? তোমাকে জাগাক এসে সন্ধ্যার পাগল এক, অর্ধভুক্ত। তার থালা পড়ে আছে। বাকিটুকু সংসারের কাছে আর চেয়ে খায়নি কোনওদিন। তোমাকে চেয়েছে।
৩
শুরুটা হয় না বলে থিতিয়ে আসে গোটা এক বছর। পড়ার নতুন বই, রোদখাওয়া কাগজকলম। জলাশয়ের মতো শিথিল কে যুবতীর কাছে বেশি রাতে জলছিটোনো কুমড়োর ফুল। পাতিলেবু, ধনেপাতার গোছা। যুবতীর ত্রিপলে ট্রেন, মগরাহাট, বালিগঞ্জ স্টেশন। ধকধক বিপিআর রেলওয়ে, মগরাহাট, চতুর্থ দশক। শুরুটা হয় না তাই। জানলায় কেরানি বউ, পানিপাঁড়ে, মাহিনার ষাট টাকা বাকিতে ফুরায়। এইসব ঘরে ফেরা, এই সব গমগম হাটবাজার, পার হলে স্টিমারঘাট, জেটি আর বার্জ…শুরুটা হয় না তাই…কতদূর অন্ধকারে খিড়কির ঘাটে এসে নৌকা লাগে, রান্নার ভূগর্ভ ঘ্রাণ। মণীন্দ্র গুপ্ত থেকে ভেসে আসে বরিশাল। চাঁদপুরা ঝালকাঠি উত্তরের ভিটাখানি জঙ্গলে ঢাকা পড়ে কাটাইবার আশু প্রয়োজন… নদীর নিবিড় গন্ধ, সুদর্শন উড়ে যাওয়া সন্ধ্যার বাতাসখানি ভেসে আসে…হে দশক, তোমারই সঙ্গে আমার স্বদেশে ফেরার কথা ছিল