অর্ণব চৌধুরী-র কবিতাগুচ্ছ
অবমাননা
সমস্ত রাত অবমাননার মতো
অকথ্য গুলি ফুটে ওঠে দিকে দিকে
সমস্ত রাত সন্ধ্যায় ভেজা তারা
জ্বলে আছে যেন ঢেকে রাখা সন্ধিকে
সমস্ত দিন নিজেকে ভাসালো ধুলো
দুচোখের কোন রক্তে উঠেছে ভিজে
তবুও গোধূলি নেমে এসে আধপোড়া
সম্ভবনার মৃত স্বপ্নকে খোঁজে
কিন্তু তোমার শারীরিক পরিভাষা
ঘর-সংসার পুড়িয়ে দিয়েছে আগে
শ্রেণী চেতনার উপাস্য দেবতাকে
নামিয়ে রেখেছে ভৃত্যের সংরাগে
আমি জেনে গেছি সকালের সংকেতে
ভাসেনি জলের বিরুদ্ধে কোনও জল
দুরূহ মেধায় তন্ত্রের ছলাকলা
গর্জে উঠেছে ঝকঝকে সম্বল
সমস্ত রাত অবমাননার আলো
রাস্তার ধারে মসিলিপ্তের নোলা
উপচে পড়েছে মাংসের খুশবুতে
দুচোখ বন্ধ দুচোখ তবুও খোলা
বিস্ময়
আর কাকে হতে হবে অমর অক্ষয়
এ সভ্যতা লকলকে, সারাদিন ভয়
সারিসারি মানুষের রতিময় চোখ
গাছে গাছে লেখা থাকে ‘ যাত্রা শুভ হোক’!
সুগন্ধী মেখেছ মেয়ে, চোখ ক্যামেরায়
পিছনে লোকনাথ বাবা, দুবাহু বাড়ায়
পিতা কি কন্যার ঠোঁটে ঢেলে দেয় বিষ
পিতা কি পুত্রের চোখে জাগে অহর্নিশ!
কেন তবে হতে হবে তোমাকে অক্ষয়
কালবেলা আছড়ে পড়ে ঘুম ঘন হয়
রান্না ঘরে তোলা থাকে কাদের সংসার
গঙ্গার বাতাস ঢোকে, চোখে কাঁটাতার—
আর কিছু নেই শুধু সন্ধ্যা নামে ধীরে
একরাশ পাতা ঝরে এখন শরীরে
কখন যে, কবে
কাদের কী আসে আজ, আমি তো আমার টুকু বুঝি
নীল-চোখ শ্বাপদেরা দেশভক্তি ভরে তোলে চোখে
ঘাপটি মেরে চেখে নাও, কোথায় কীভাবে হবে লাভ
এমনই বাঙালি জাতি ইতিহাসে বারবার পাই
ধ্বংসের ভিতরে মুক্তি যদি আসে আমি তাকে খুঁজি
বন্ধু ছাড়া রাস্তা হাঁটি,কাঁটাতার নয়, নষ্ট হওয়া শোকে
অথচ কোথাও কবে বিপরীত সমস্ত জবাব
জেগে উঠেছিল তুমি শুনেছিলে সেই ইশারাই
রাষ্ট্রের শিকল আজ, বেঁধেছে তোমার চিৎকার
সে আওয়াজ যাবে নাকি পেরিয়ে নিঃশ্বব্দ অন্ধকার
রাষ্ট্রদূত বলে দেয়, থাকো সঙ্গে,পুরনো শকটে,
রাষ্ট্রদূত ঢেলে দেয়, ভক্তিরস মাঙ্গলিক ঘটে
কারা তাই ঘিরে থাকে, তবু দেখি কেউ কাছে নেই
যেমন জেনেছি ঠিক যা হবে তা সার্থক হবেই
হাতছানি
ধরেছ কাকে ফস্কে যাবে যেকোনো দিন
হাতের নীচে রয়েছে আজ অন্য হাত
সে সব দেখা যাবেনা আর, মহেশ্বর
তুমিও এক বন্ধুহীন নির্যাতন
ঐক্যবোধ,বৃক্ষনদে, ফসলে মাঠে
উড়ছে কার শৈশবের স্বপ্ন-স্নান
নতুন কোনো আত্মদান খরার চাষ
হবে না আর ! শক্ত করো বুঁকের ভাঁজ
ইমানহীন বন্ধু তুমি দিনাতিদিন
চন্দ্রাতপ আগুন আর মরণ-পার
হাতের রেখা ঝলকে ওঠা বিদ্যুতের
শিরায় যেন নতুন কোনো হাতের টান
ধরেছ কাকে ফস্কে যাবে মূর্ছনায়
ফণার তালু সরিয়ে নাও সরিয়ে নাও
অ-কল্প
আমি কোনো সত্য আজও পাইনি কোথাও
যে আকাশে মেঘ নেই, সরে যাব সে আকাশ থেকে!
কিন্তু একটা নীল রাস্তা দরজার শেষে
পিচ্ছিল সুড়ঙ্গ নিয়ে ঢুকে পড়ছে আমার ভিতর
বহুদূরে একঝাঁক বক উড়ে যায়
কোনো সার-সত্য তবু দেখতে আজও পাইনি কোথাও
পিচ্ছিল সমস্ত পথ,
পা-দিলেই—গড়াতে গড়াতে চলে যাই
অতিদূর শহর ছাড়িয়ে