
অর্ঘ্যকমল পাত্র-র গুচ্ছ কবিতা
প্রথম প্রেমের কবিতা
১.
আমাদের দেখা হওয়া নিয়তিতাড়িত
যেমন ফুটেছে ফুল
মফস্বলে। ছাদের ক্যাকটাসে
চুপিসাড়ে সাদাপাতা
ঝড়ের হিসাব নিত, প্রতিদিন-ই
যখন সে এসেছিল৷ হেসেছিল
ভুল করেই, বসেছিল পাশে…
২.
তারপর কেটে গেছে নিদারুণ দহন
এসো হওয়া, একা ঘরে, কিছুদিন র’হো
ডোম ও মৃতদেহের শুদ্ধ নির্ভরতায়—
যুগ যুগ গেয়ে যাওয়া মিথ্যে সব গান
আমি শরীর। তুমি ব্যাধি। ব্যর্থ কবিতারাই
পসারহীন চিকিৎসকের
সফল প্রেসক্রিপশান
৩.
গাইতে জানে এমন ধারণা ছিল
ভেবেছিল ঠিক মিশে যাবে হাহাকার
সদ্য কিশোর, নোনাজলে চোখ ধুয়ে
মানে তো বোঝেনি, অশ্রু ধ’রে রাখার
এখন দেখছে ক্ষত জুড়ে শ্যাওলারা
সংসার গড়ে দিব্যি রেখেছে বংশ
কবিতাসৃষ্টি, শিশুর মতোই সৎ
তবু শব-জুড়ে জীবনের সংশয়!
৪.
তারপর থেকে অভিজ্ঞতার মিশেল।
প্রেম থেকে বহু-বহুদূরে কবিতারা
তবু প্রেম নেই?
নেই কোনোরূপ দ্রোহ?
প্রেম মানে শুধু
রেখে যাওয়া বটচারা?
৫.
যেন সে কখনও আসতে চায়নি।
আমি-ই গিয়েছি গোল্লায়
সারা খেত জুড়ে খুঁটে খুঁজে গেছি
জল সূর্যের গন্ধে
এখন তো সে খুব হতাশায়
গলা উচ্চিয়ে চেল্লায়—
আসব না আমি ভাসব না আমি
কোনো গাণিতিক দ্বন্দ্বে
৬.
জানি
সে তীক্ষ্ণ-‘না’ করেছে
সমস্ত প্রস্তাবে
জানি না কীভাবে এখন কবিতা
চরাচর টপকাবে!
বরং ঘরেই আটকে নিয়েছি
নিজস্ব জিভ, দাঁত
কোনো অজুহাতে স্নানঘরে আর
ভিজতে যাই না!
ভাস্কর চক্রবর্তীকে
প্রতিটি শূন্যতা, মনে হয় আপনার প্রেরণ
উজ্জ্বল বান্ধবী আমার, এ সময়ে
খিস্তি করে বলে— তুই কঠিন বালুচর
আপনি তো জানেন
সুপর্ণারা কেমন
আমিও দেখেছি তার নখের ধূসর!
নেচার স্টাডিজ
১.
একটা গাছের কোনো বন্ধু নেই। এই কথাটা জানার পর, একটা গাছের কাছে যাই। এবং এখন, আমার বন্ধু নেই কোনো!
২.
তারপর লোকটি বুঝতে পারল, পাখি খুবই স্বার্থপর। সে কেবল নিজেই ওড়ে।
যদিও লোকটির পাখি পর্যন্ত যাওয়ার পিছনে, শুধুমাত্র তাঁর ওড়ার স্বার্থই ছিল
৩.
পিঁপড়ে খুব গণতান্ত্রিক। পিঁপড়ে খুব ভালো। পিঁপড়ে খুব আবহাওয়াবিদ। এবং খুব শ্রমিক-ও
জাস্ট মাড়িয়ে দিলেই মরে যায়…
৪.
সারাদিন, সারারাত না ঘুমিয়ে চুপচাপ বসে থাকলে বোঝা যায়— মশারির ভেতরের যে শূণ্যস্থান, তাতে তোমার বান্ধবী ঢুকে পড়তে পারলেও, একটি ছোট্ট মশার কোনো জায়গা হয় না!
৫.
ক্রমশ কাঁদতে ভুলে যাওয়া দম্পতি জানেন — ফুলদানি একা হয়ে যাবে, একথাটি কোনো ফুলই মনে রাখে না!
৬.
সদ্য প্রেম ভাঙতে শেখা মেয়েটি কখনোই বুঝে উঠতে পারেনি— হঠাৎ ঢিল ছুঁড়ে, সে পুকুরকে আহত করল? না উত্তেজিত?
৭.
অ্যাকোয়ারিয়ামে খাবার দিতে গিয়ে, প্রতিবার তার কাচে নিজেকেই দেখতে পায় বালক! এবং তৃষ্ণার্ত হয়ে ফিরে যায় খাবার না দিয়েই…
আর এভাবেই না খেতে পেয়ে, ক্রমশ মৃত্যুকালীন বিষণ্ণতা আসে, অ্যাকোয়ারিয়ামের ভিতর…
৩,৪,৬ দারুন লাগলো
অসাধারণ
বেশ ভালো লেখাগুলো ❤️❤️