
হিন্দি ভাষার কবি উদয়ন বাজপেয়ীর কবিতা
অনুবাদ- দেবলীনা চক্রবর্তী
কবি কথাকার উদয়ন বাজপেয়ীর জন্ম ৪ জানুয়ারি ১৯৬০ সালে সাগর, মধ্যপ্রদেশে। ভিন্ন ধারার সাহিত্য চর্চা ও বিচারকের ভূমিকায় তিনি সুপরিচিত। " কুছ বাক্য ", পাগল গণিতজ্ঞ কী কবিতাএ " এবং " কেবল কুছ বাক্য " এই তিনটি তাঁর কাব্য সংগ্রহ ও "সুদেশনা ", "দূর দেশ কি গন্ধ ", "সাতবা বটন " নামে তিনটি গল্প সংকলন প্রকাশিত। এছাড়াও তাঁর বেশকিছু নিবন্ধ ও ভ্রমণ সংকলন প্রকাশিত। চিত্র নির্মাতা মনিকল্ এর সাথে সাক্ষাৎকার " অভেদ আকাশ " শিরোনামে এবং ইতিহাসবিদ ধর্মপালের সাথে সাক্ষাৎকারটি " মন,স্মৃতি ও প্রজ্ঞা " এই শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে। উদয়ন বাজপেয়ী স্বয়ং অনুবাদ সমন্ধিয় কাজের সাথে যুক্ত। তিনি জাপানি কবি সুন্তারো তানিকাওয়ার কবিতার হিন্দি অনুবাদ করেছেন যেটি " মটমেইলী স্মিতি ম্যয় প্রশান্ত সমুদ্র " নামে প্রকাশিত। বিভিন্ন পত্র পত্রিকার সম্পাদনায় উদয়ন বাজপেয়ী যুক্ত তারমধ্যে " সমাস " পত্রিকা উল্লেখ্যযোগ্য। তাঁর কবিতাও সর্বভারতীয় ও অন্তরাষ্ট্রীয় বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। দেশে - বিদেশে বিভিন্ন সাহিত্য সম্মেলনে অতিথি হয়ে সমাদৃত হয়েছেন। তিনি কৃষ্ণ বলদেভ বৈদ্য পুরস্কার এবং রাঁঝা ফাউন্ডেশন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
বৃক্ষ
বৃক্ষের মধ্যে এই যে গুমড়ানো ব্যাকুলতা
যা পাখি দিনরাত দানার মতো খুঁটে খায়,
যা পাতা তার নিরন্তর সরসর দুলুনির অন্তরালে ঢেকে রাখে,
যাকে আগুন তার নিজের মধ্যে লেপ্টে নিয়ে ছাই ভস্মে লুকিয়ে নেয় , প্রতিবার।
লিখতে পারলেই লেখা যায় কবিতা
লিখতে পারলেই লেখা যায় কবিতা
যেভাবে ভালোবাসতে বাসতে হয় প্রেম
যেমন জঙ্গল অনুরণনের
বই অতল স্পর্শের
মৃত্যু অপেক্ষার
জীবন , চতুর্দিকের অগোছালো সবকিছুকে
গুছিয়ে নিয়ে আসা এক বিন্দু
যেখানে নৃত্যশিল্পীর মতো বিচ্ছেদ
পায়ের এক আঙুলের ওপর ভর দিয়ে
দাঁড়িয়ে থাকতে পারে কিছুক্ষণ
রাত
গাছের অদৃশ্য শীতল ছায়াপথ ধরে
চলতে শুরু করে এক শিশু
আর আকাশে অর্ধেক চাঁদ ভেসে যায়
চুপচাপ , বাকি অর্ধেকের ওপর ভর করে
আকাশগঙ্গা পার হয় পূর্বজ
রাত গভীর হলে তরী ডোবার অপেক্ষায়
নদী তীরে উদ্বিঘ্ন পদচারণা করে মৃত্যু।
স্বপ্ন
ঘুমের মধ্যেই বিছানায় তাকে খোঁজা
কারণ স্বপ্নে সে বারবার হারিয়ে যায়
মেঘের আড়ালে চাঁদ তার অন্তিম দশায় ঢলে পড়ে,
হটাৎ একদিন চৌকাঠ ডিঙিয়ে হাসিমুখে সে ঘরে প্রবেশ করে
আমায় উদভ্রান্তের মতো এদিক ওদিক করতে দেখে
চিন্তিত হয়ে মুখের দিকে তাকায়।
সন্ধ্যে নামার আগে তোমার ঘরে ফিরিতে হবে।
আর সন্ধ্যের আগেই আমায় তোমার ফেরার অপেক্ষায় আবার পথ চেয়ে থাকতে হবে।
মৃত্যু এমন অনেক স্বপ্ন দেখে, আমাদের জীবন তারই মধ্যে মাত্র একটা।
বাক্য
… আর তখনই উৎপন্ন হলো। বাক্য !
অদৃশ্য অহঙ্কারে দীপ্ত , সক্ষম।
সে আকাশে নিহিত একা আর আকাশ তাতে সমাহিত একাকী।
সে তার প্রকাশের দিকে এগিয়ে গেলো,যেখান তার থামা সম্ভব এই ভেবে।
তবে সে এগোতে চাইলেও আর পারলো না।
কারণ তার বিস্তার আকাশের তুলনায় যে কমই ছিল।
তবু সে হার মানলো না। শুধু এবং শুধুমাত্র এভাবেই
এখানে থমকে দাঁড়ালো।
প্রকাশ : পূর্ব আকাশে এখন সে , তাকিয়ে দেখো
পাল তোলা নৌকার মতো
নিজে নিরন্তর ডুবের মধ্যেও কেমন ভেসে বেড়াচ্ছে।
শেষ দেখা
অশ্রু যখন চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে তখন তার জানা সম্ভব নয়
যে এই তার শেষ দেখা, যে মানুষটির মনের লুকোনো কোণে এত বছর সে রয়েছে
আর আজ যার গাল বেয়ে সে হাওয়াতে মিলিয়ে যাবে।
অশ্রু যখন চোখ থেকে …..
লেখক
গায়কের সুমিষ্ট কণ্ঠ মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকে
পাখির স্বরের মধ্যে,গাছের প্রশ্বাসে।
চিত্রকর বিদায় নেওয়ার পরেও , জগৎ সেই
শৈল্পিকতা উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে
নৃত্য শিল্পী সাপের খোলসের মতো ত্যাগ করে যায়
নিজস্ব কিছু ভাব,
আর কিছু ভঙ্গি ভেসে বেড়ায় হাওয়াতে।
কিন্তু লেখক ? তার কি বেঁচে থাকে
চলে যাওয়ার পর ?
লেখকের মৃত্যুর পর তার কান্না জেগে থাকে
আর মাঝে মাঝে ভিজিয়ে দিয়ে যায়
তারই লিখিত কিছু কিছু অক্ষর বিন্যাসকে।
সাবলীল অনুবাদ। অনেক ধন্যবাদ অনুবাদককে এত সুন্দর উপহারের জন্য।
ধন্যবাদ তোমায় ❤️☺️