
রিমি মুৎসুদ্দি
যাজ্ঞবল্ক্যের আকাশ
‘আপনার কাছে দাঁড়ালে আমার শরীর এমন করে কেন ছোটবাবু?’
বলেছিল কুসুম।
ওকে ধরে বেঁধে সহিষ্ণুতা শিখিয়েছিল যে, সে আসলে উপন্যাসের নায়ক নয়,
বারবার খলনায়কে পরিণত হওয়া দেশ কাল শাসন কিচ্ছু নয়,
কেবল ব্যথার মধ্যে মিশে থাকা এক অনিবার্য সুখ!
স্মৃতির আখরগুলো গুছিয়ে রাখার মতো কোনও সিন্দুক নেই কুসুমের,
মহাকালের ভাঁড়ারে কেবল সঞ্চিত তার অমোঘ উক্তি।
উক্তি নয় এ এক চিরকালীন পঙক্তি!
যা স্রষ্টাকেও নিরুত্তর রাখে, কারণ সৃষ্টির ওপর স্রষ্টার কোনও হাত নেই।
‘সবই যখন জলে ওতোপ্রোত, জল কিসে ওতোপ্রোত?’
প্রশ্ন করেছিল গার্গী।
বায়ু থেকে অন্তরীক্ষে নেমে এসেছিল মেঘ,
গন্ধর্ব্যলোক, আদিত্যলোক, চন্দ্রলোক হয়ে
জমা হয়েছিল কেবল নক্ষত্রলোকে।
বীজগর্ভ ও বহুস্তর পেরিয়ে ব্রহ্মলোকে নেমে এসেছিল মন্ত্র,
যে মন্ত্রে কোনও এক নবীন বিপ্লবী চেয়েছিল বেদমন্ত্রের শুদ্ধি
অথচ সোনালী আলোর করুণ মায়ায় মিলিয়ে গেল যে
বৃহৎ বনভূমি, গার্গীর আকাশে সে রেখে গেল
তার নিজস্ব কালো মেঘ!
সেই আমি
রিমি মুৎসুদ্দি
এই তো সেই মাঠ
যেখানে সিঁদুরে মেঘ দেখে
তুমি কৃষিকাজই করবে, শপথ নিয়েছিলে
এই তো সেই রাস্তা
যেখানে দুটো কুকুর ছুটে আসতে দেখে
তুমি আমার পিছনে লুকিয়েছিলে
ভীষণ ভয়ে ভীত ছিলাম আমি!
এই তো সেই রেস্তরাঁ
যেখানে সিসিটিভির ক্যামেরায় ধরা আছে
একটা মৃত পাখির গান!
এই তো সেই জিয়াভরলী নদী
যার স্মৃতিকথা লিখতে গিয়ে
মায়ের আঁচলে লেগে থাকা হলুদ,
মায়ের গায়ে মিশে থাকা মশলার গন্ধ মনে পড়েছিল।
এই তে সেই কাজিরাঙ্গা জঙ্গল
যেখানে শুকনো পাতা আর বাতাসের যৌথ শব্দে
আমার শান্ত নিরুদ্বেগ বাবার কথা মনে পড়েছিল
এই তো সেই গোধূলি
যার ছবি আমার চোখে দেখতে পেয়ে
তুমি লিখেছিলে,
‘অল্পকথায় স্বপ্নের ঘোর’।
এই তো সেই আমি
যার মধ্যে সেই মাঠ, সেই রাস্তা,
রেস্তরাঁ, জিয়াভরলী, কাজিরাঙ্গা,
একটু তুমি, আমার মা, আমার বাবা
আর হঠাৎ আসা বৃষ্টি যেন গভীর অন্ধকারে
কেবল চোখের জল!