মোহিত চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৪-২০১২) <br />  নির্বাচিত কবিতাগুচ্ছ

মোহিত চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৪-২০১২)
নির্বাচিত কবিতাগুচ্ছ

কাব্যগ্রন্থ : ‘আষাঢ়ে শ্রাবণে’

প্রথম প্রকাশ : ভাদ্র ১৩৬৩ (অগাস্ট-সেপ্টেম্বর ১৯৫৬) / ব্যুক রিভ্যু

সাক্ষাৎ

তুমি তো দিয়েছ দ্বিধাদুর্বল চোখের জলে

কী অনবদ্য মেঘের অর্ঘ বেদনাময়!

ত্রিকালে আমার পদাবলী-সুর ― তোমার দান ―

সন্ধ্যা-সকালে কী-রঙ বুলালো হিরণ্ময়!

অশেষ অর্ঘে তবু কই শেষ তোমার ঋণ

তাই তো আষাঢ় কান্নায় ঢাকে মুগ্ধ দিন।

মৌন-মুকুল তোমার ও মুখ কি যেন ভয়ে

একটি কথার প্রলয় নেভায় চোখের জলে;

একটি পলক লুকায় নম্র বাহুতে ঢেকে

কিংশুকে রাঙা যেখানে তোমার বাসনা জ্বলে :

অর্ঘে নীরব একটি নিমেষ এখনো বাকি

সেখানে তোমার লুব্ধ-মরণ হৃদয় নাকি?

দ্বিধা থরথর ও ভীরু হৃদয় বজ্রে বাঁধো

রাখি-পূর্ণিমা তিথিতে সাজাও চোখের আলো;

মেঘের গুচ্ছ চিকুর-সীমায় ত্রিকাল বেঁধে

তীক্ষ্ণ শিখার একটি নিমেষে তোমাকে জ্বালো :

যেখানে প্রলয় অথবা জন্ম, ক্ষমা কি ক্ষয়

জীবনের প্রার্থিত সাক্ষাতে জ্যোতির্ময় !


জয়

কত না কান্নার দাগ মুছে নিতে তোমার প্রণয়ে

কোমল মেঘের মত অপরূপ ক্ষমার ধারায়;

কত না বিষণ্ণমোহ ― যন্ত্রণার প্রহারে বিধুর ―

সাজাতে দুর্লভ স্নেহে রূপচিত বাসন্তী ছায়ায়

তোমার আকাশে খুঁজি বাসনার মুগ্ধ আয়োজন:

যেখানে তোমার অঙ্গে সীমা–স্বর্গে–বসন্ত-বরণ।

হে সুন্দর আকাশিনি, মিলনান্তে অভিলাষে গাঢ়

তোমার হৃদয়ে কই পূর্ণিমার উত্তাল গরিমা?

ছিন্ন ক’রে দুই হাতে ক্ষণস্বর্গ মুহূর্তের মালা

দু’চোখে এ-কোন্‌ রাত ― দ্বিধা–ভীরু–মনো–কাতরিমা!

তুমি কি আমার মতো নম্র বুকে হৃদয়-তিমিরে

নির্জন রোদনে রুদ্ধ তীক্ষ্ণ-নীল আনন্দের তীরে?

তার সুখ দুঃখময়। বিচ্ছেদের শীতালি-শঙ্কায়

করুণ প্রহরে তার রাত্রি তুলে ধরে অশ্রুমুখ!

বুকে নিয়ে তীক্ষ্ণধার যৌবনের বেদনা বিলোল

সে এক বিষণ্ণ কান্না, কল্লোলিত বসন্তে বিমুখ।

যন্ত্রণায় শরবিদ্ধ, তুমি কাঁদো মুক্তিহীন ভয়ে:

আমার রোদনে শান্তি, চোখে ঘুম, কি যেন কি জয়ে ।।

অপেক্ষার দীপ

হৃদয়ে জ্বালিয়ে রাখো অএখার অপেক্ষার দীপ।

দ্রষ্টার নির্মোহ চোখে জেগে থাকো আপাতত রাত্রির প্রহর;

মৌনের পাষাণে দেখো ভেঙে যাবে কত রূপ বিলোল ছলনা,

মোহভঙ্গে ফিরে যাবে রূপপ্লাবী আনত শর্বরী!

সুবর্ণ হৃদয়ে জ্বালো অপেক্ষার দীপ:

আগে তার বিলসিত যৌবনের উদ্ধত প্রাসাদ

বিচূর্ণিত ছিন্নসুরে ঝরুক, ঝরুক;

সে যেন একান্ত-একা ছায়া দেখে অন্তহীন কাঁদে!

যেহেতু নিজেকে চেয়ে সে শুধু ঝরছে ফুলে মেঘে ―

নিজেকে দেয়নি, তাই তার মন একা-অন্তরীণ!

তাই আগে তার কান্না ফিরে যাক অগ্নি রুচি তপে

পার্ব্বতীও ফিরে গেছে। বসন্তের ষড়যন্ত্র ছিল সেই দিন!

প্রণয়ের পুণ্যলীন পঞ্চতপা হোমের বিভাসে।

পঞ্চাগ্নির দুঃখ-দাহ শেষ হলে কোন এক বিতন্দ্রিত স্বর

ধ্যান ভাঙে পার্ব্বতীর। অন্ধকারে আরাধিত ধুপ।

অপর্ণা সুবর্ণ দীপ জ্বেলে দেখে হাসে মহেশ্বর।

কাব্যগ্রন্থ : ‘গোলাপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’

প্রথম প্রকাশ : আষাঢ় ১৩৬৮ (জুন-জুলাই ১৯৬১) / কৃত্তিবাস প্রকাশনী

প্রেম, পুনর্বার

হে আস্বাদিত দুঃখ তুমি বাম পার্শে বোসো

আর এই সুমঙ্গলা রমণী দক্ষিণে;

আমি মধ্যবর্তী থাকি, কথা বলো তোমরা দুজনে

কলহ ক’রো না, ঊর্ধ্বে গোধূলির আলো বড় নির্জনতাপ্রিয়।

তোমার নিরালা মুখ বলো কে কাঁদালো কলহে কণ্টকে?

জানি, নারী সুমঙ্গলা, হিংসা ওর বুকের প্রিয়তা;

কাম্য শান্তি তাই ভাবি, বিবাদে ক্ষরিত রক্ত, বিবাদ ভালো না

আনো মুখ দৃশ্য মুছি, গোধূলির আলো বড় নির্জনতাপ্রিয়।

শোনো, সহ্য করো এই রমণী দক্ষিণে বামে দুই হাতে আমাকে জড়াবে

হিংসুক সমস্ত চায় ―

বলে, প্রেম উদারতা থেকে আরো অধিক যুবতী।

বিলাপ ক’রো না দুঃখ, তুমি বাম পার্শ থেকে বুকে এসে বোসো,

কলহে কণ্টক, ঊর্ধ্বে গোধূলির আলো বড় নির্জনতাপ্রিয়।


জাহাজ

যেখানে জাহাজখানি ডুবে গেছে সেই জল চিহ্ন করে রাখি।

দিগন্তে মমতা; ভাবি, বিপদ সঙ্কেত কোন বিবাদের রঙে

নিরালা আলোকস্তম্ভ গড়ে দিলে সব প্রেম দূরে, দূরে যাবে।

কয়েকটি নির্জন তরী বেঁচে থাক পালে দীর্ঘ সাগরের হাওয়া!

দুইটি নয়ন শুধু বহে আনে, তার ভারে বিপুল জাহাজ

কী মন্থর ডুবে গেল!

লক্ষ প্রসারিত পাখা, এত বড় হাঁস কেউ দেখেনি সাগরে।

সব ছিন্ন পালগুলি মজ্জমান বালিকার বিকীর্ণ আকুল

উত্তোলিত শাদা হাতে কয়েকটি অন্তিম দুঃখ শূন্যে রেখে গেল।

যারা তাঁবু ভালোবাসে দেখেনি জাহাজ ডুবে গেল।

কে চায় ঝটিকা, মৃত্যু? তার চেয়ে ভালো বুকে জ্বালো দ্রাক্ষালতা।

আমরণ চেয়ে থাকা সফলতা ― চিবুকের বড় কাছে প্রেম!

শুধু ঊর্ধ্বে গোলাকার মদ্যপানরত সূর্য ঝাঁপ দেয় জলে

ললাটে আঘাত লাগে, রক্তপাত চতুর্দিকে তরল গোধূলি।

শাদা বৃষ্টি কুয়াশার। ইতস্তত অচঞ্চল জলের উপর

ভেসে ওঠে আদিগন্ত শ্বেতচূড়া অসংখ্য কবর।

সব মৃত নাবিকেরা খেলা করে বিষণ্ণ চূড়ায়!

জলে কান পেতে শুনি, মৃত্যু নাই, মৃত্যুও স্পন্দনে বড় কাছে।

তলদেশে দীর্ঘ মৃদু শব্দে চলে এখনো জাহাজ।

*


শাস্তি

তৃষ্ণা, শুধু তৃষ্ণা তোমায় জ্বালিয়ে দিল; কটু

অভিজ্ঞতা কে শেখাল? ― নিষিদ্ধ সে কুসুমটিকে মূঢ়

আবার তুমি কুড়িয়ে নিলে! আকাশ দ্রুত হাতে

নীল বেদীতে সাজায় দ্যাখো, রক্তজবা রাশি।

একটি পাতা নড়ছে, ঝড় দুলছে শিরোদেশে।

এবার সেই আদিগন্ত ছড়িয়ে থাকা কেশ

কোথায় পাবে? কানের পাশে উন্মোচিত শ্বেত

কুন্দটিকে রাখতে হবে, বিপুল পৃথিবীতে

আর কথাও থাকবে না সে, ভাসবে না সে জলে।

অভিমানী, অভিমানী… কোথায় তারে রাখি।

করতলে কুসুম হল পাহাড় থেকে ভারি!

*


অন্তরালে

বড় শ্রমসাধ্য লাগে ভালোবাসা। আহা, অই ক্ষুদ্র মুখখানি

ভ্রমণে অযুত বর্ষ মনে হয়; হৃদয়ের কাছাকাছি কি সব জটিল

তর্কের নিয়ত যুদ্ধ। অস্ত্রাঘাত ঘুরে লাগে বক্ষে কটিদেশে।

ভালোবাসো নিরন্তর, যে চেয়েছ অবিরাম গাঢ় সন্তরণ।

আমি অই জানালার পার্শ্বে যাই। মল্লিকা বনের

তলায় অনেক প্রেম দীর্ঘ শুয়ে কলরব করে।

বড় শ্রমসাধ্য লাগে দরজা খুলে উদ্যানে বেরোতে

কে যেন অনেক দূরে, বুকের পাতাল থেকে নিষেধ করেছে।

কেহ কেহ পৃথিবীতে অন্তরালে বিরহ চেয়েছে।

প্রেম অন্তর্হিত, ছায়া সন্নিকট

ছিল কি জলের নিম্নে, কিংবা মেঘে, অলক্ষ্য কনিকা?

পৃথিবীতে দেখি নাই অগ্রে পিছে দক্ষিণে বা বামে।

অকস্মাৎ সেতুখানি ন’ড়ে ওঠে লঘু বৃষ্টিপাতে

তুমি কি পারাপার কর বক্ষ থেকে বক্ষের বাহিরে।

বলেছি গভীর জলে একাকিনী যেও না, বালিকা।

জলেও বসন্ত আছে, মৃদু দেহ জ্যোৎস্নার পীড়নে

অদ্ভুত ব্যথায় ফাটে; অতলতা, অতলতা ― কেঁদে ওঠে প্রাচীন পিপাসা।

সন্তরণ করে পার্শ্বে দীর্ঘ দেহ আকাশের ছায়া

ফিরে এল কার দেহ জলে রেখে একাকী মন্থর?

কার মালা ভেসে যায়?― বধির, বধির তীরভূমি!

আছো কি জলের নিম্নে কিংবা মেঘে, অলক্ষ্য কনিকা?

জলস্থলে ছায়া পড়ে, কেহ অগ্রে পিছে দক্ষিণে বা বামে।

নীল পাখি

সেই চক্রাকার ঘোরা, বিশাল আকাশে কোন বৃক্ষ নেই

ডালে বসি। চক্ষু নীল অবিরাম মেঘের পাথরে

করুণ ঘর্ষণ লেগে। মাঝে মাঝে জটিল বিদ্যুৎ

সোনার খোলস ছেড়ে তাড়া করে আকুল সপিনী।

মনে পড়ে, মুখে মৃদু উদাসীনতার আলো

করতল থেকে জলে ভাসায়েছ সোনার খাঁচাটি।

কত পুষ্প নিরাকার, কেহ মৃত আকস্মিক বসন্ত প্রভাতে …

বিপুল শূন্যের ক্ষোভে ধ্বনি জাগে, হে বৃন্ত আমার,

কি অদ্ভুত মুকুলিত হৃদয়ের সুগন্ধ বয়স

ফুটেছিল নেত্রপাতে, কে যেন আমার মুখ ঊর্ধ্বে ধরেছিল

লঘুবৃন্ত, করতল ঝ’রে গেছে হলুদ আঘাতে।

সেই চক্রাকার ঘোরা, বিশাল আকাশে কোন বৃক্ষ নেই

ডালে বসি। হে নিশ্চল, মুখে মৃদু উদাসীনতার আলো

কিছুকাল বন্দী রাখো করযুগে, ওষ্ঠে, বুকে, যুগ্মতা আমার,

সমস্ত আকাশ, দ্যাখো, নীল পাখি সোনার খাঁচায়।


গোলাপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ

সংখ্যাতীত সৈন্য নিয়ে বৃথা আস্ফালন কর গোলাপের কাছে

সে ফুটবে সময় হোলে, অগ্নির সহাস্য গন্ধে, মুঘল রমণী।

হয়ত বা ভালোবাসা মায়া ধ’রে গোলাপ হয়েছে।

বৃথা কোলাহল কর কোরকের কাছে, বৃথা যাচ্ঞা করা, এই

পৃথিবীর বহু কিছু যুদ্ধের অতীত, বহু সৈন্যদল ক্ষোভে

সাঙ্ঘাতিক হেরে গেছে এতটুকু কুসুমের ক্ষুদ্র পদতলে।

যত অনুরোধ বৃথা। যতই তর্জন কর বিক্ষুব্ধ বাহুতে

সহজ উপেক্ষা করে ফুলদল, অথচ সামান্য হিম

দু-একটি সজল স্পর্শে খুলে দেয় কোরক পল্লব।

বারবার মানুষেরা হেরে যায় বাতাসের শিশিরের কাছে।

কে সম্রাট, নত করে গোলাপের অসম্বৃত গ্রীবার গরিমা

নিজেই ফিরিয়া যায়, হায় পরাভূত দ্যাখো, ক্রুদ্ধ অধিপতি।

দশ লক্ষ সৈন্য মৃত এক কণা শিশিরের নির্মল আঘাতে।

ভালোবাসা, আমিও কি চেয়ে রবো সুদূর আকাশে!

যদি রশ্মি দেখা দেয়; তরবারি ফেলে দেব স্থির রিক্ত জলে

শোণিতে লুকানো ক্ষুব্ধ অতিকায় বিরক্ত কামান

শব্দহীন শিশিরের জলে স্তব্ধ ভিজে যাবে একা!

সৈনিক, ফিরিয়া যাও, সমাদৃত আকাশের দৈব রশ্মিমালা

সিংহাসন এনে দেবে করতলে যদি রাজ্যসুখ লেখা থাকে।

কা
প্রথম প্রকাশ : আষাঢ় ১৩৭২ (জুন-জুলাই ১৯৬৫) / বীক্ষণ প্রকাশ ভবন
ব্যগ্রন্থ : ‘শবাধারে জ্যোৎস্না’

শবাধারে জ্যোৎস্না

১.

বয়স বেড়েছে বিজন আমার

বাড়েনি সময়ে, শয়নে।

ভ্রমণ আমারে ডাকেনি বাহিরে

জেগেছি কি যেন চয়নে।

হল না তেমন বুকে আহরণ

এল না বাগান নয়নে!

পাখি উড়ে যায়;

প্রতিযোগিতায়

জ্যোৎস্নাও যায় ফাগুনে।

দুয়ারে রঙন

কে করে হরণ

ঘুমাল কে একা আগুনে!

বয়স বেড়েছে বিজনে আমার

বাড়েনি সময়ে, শয়নে।

অমাবস্যায় চাঁদ ফিরে যায়

সব দোষ এই নয়নে।

*

শবাধারে জ্যোৎস্না

৯.

জন্ম থেকে শুনি আমি চ’লে যাব, হয়ত কেবল

সঙ্গীতের কাছে ঋণ থেকে যাবে আর সে বকুল।

সব থেকে বেশি দীর্ঘ রাজ্য জয় করেছে সঙ্গীত …

পৃথিবীর জন্ম থেকে, তারো আগে বিদ্যুতে বাতাসে

বেজেছে নিভৃত বীণা, সে সকল শুনিনি তবুও

বৃক্ষে মেঘে জলস্থলে সেই স্বর লেগে আছে কিছু।

লেগে আছে আমাদের কণ্ঠে সুখে বিষাদে নৈরাশে

কেহ গায়, কেহ তার তলা থেকে কুড়ায় বকুল।

অমন বকুল আমি বনতলে অনেক দেখেছি,

শুনেছি গহন গান। কুড়ায়েছে যেসব আঁচল

তাদেরও রেখেছি মনে; ভুলি নাই যেহেতু স্মরণ

হারালে উদ্যান থেকে উড়ে যায় সমস্ত ভ্রমর।

জন্ম থেকে শুনি আমি চ’লে যাব, হয়ত কেবল

সঙ্গীতের কাছে ঋণ থেকে যাবে আর সে বকুল।

*

শবাধারে জ্যোৎস্না

১০.

সকলেই ত্যাগ করে। আমাদের বিজন ললাটে

এসব অধিক লেখা। উপভোগ আলস্য আহ্লাদ

প্রচণ্ড চেয়েছি ব’লে ঈশ্বরের জ্বলন্ত শলাকা

মর্ম ভেদ ক’রে সোজা চ’লে গেছে রক্তের ব্যথায়।

এত পুষ্প, এত নীল, এত নারী, সমাগত হীরা

রৌদ্রের মতন স্পষ্ট, সন্নিকট, বিচ্ছুরিত পাশে ―

তবু ত্যাগ ক’রে যাই, যেতে হয়, যেহেতু শীতল

বাতাস হঠাৎ যুদ্ধে হেরে যাওয়া মানুষের বিধি!

জেনেছি এসব বহু জ্যোৎস্নায় বাদলে পথ হেঁটে।

অতর্কিতে শাখা হতে বকুলের সামান্য পতনে

আকাশে গম্ভীরতম ধ্বনি হয়, করুণ ক্রেংকারে

ময়ূরেরা উড়ে যায়। চিরকাল জেনেছি বিচ্ছেদে

সাংঘাতিক শব্দ হয়, যেন যুদ্ধ নীলিমায় ক্ষোভে

তারকার সঙ্গে এক তারকার গভীর আঘাতে।

*

শবাধারে জ্যোৎস্না

১১.

বকুল, আবার তুমি দেখা দিলে মেঘক্লিষ্ট দিনে।

স্মরণীয়তার থেকে বড় কোনো দুঃখ নেই আজো

এসব জেনেছি, ক্ষুব্ধ ভেবেছি অনেকদিন, এই

মর্মে নেব না কোনো দ্বিখণ্ডিত চৈত্রের বিষাদ

রব মগ্ন মেঘচ্ছায়ে, অতি শান্ত দয়ায় সেবায় ―

ক্রমশ কাটাব দিন। হায় ভ্রান্তি! চিরকাল পথে

যুদ্ধ হয়, প্রদোষের অতি নম্র ছায়াও হঠাৎ

বাঘের মতন গায়ে ঝাঁপ দেয়, আক্রমণ ঘটে।

এরকম আক্রমণ ঘ’টে যায় মানুষের দেশে

গভীর ক্রেংকার হয় অতর্কিতে ঊর্ধ্ব মেঘোদেশে

আকাশের ত্বকরাশি ছিঁড়ে যায় সোনালী নখরে।

যুদ্ধের বিরাম নেই পৃথিবীর রণক্ষেত্র থেকে

কে দেবে গভীর শান্তি যতদিন হৃদয় রয়েছে

স্মরণীয়তার থেকে বড় কোনো দুঃখ নেই আজো।

শবাধারে জ্যোৎস্না

১২.

কাটে অপলাপে বেলা। তুমি জানো, মনুষ্য দুহিতা

মর্মে যত সিংহাসন তার ওপর জ্যোৎস্না প’ড়ে ছিল

তুমিও নিকটে ছিলে, উড়ে যেত চৈত্রের পাখিরা

পালকে সুন্দর পাখা হৃদয়ের গভীর অভাবে

হাওয়া দিত। বাতায়ন খুলে যেত আকাশে আঁধারে।

তোমার সাথেই দিন, তোমার সাথেই নিশা, অনাবৃত ঘুম

জেগে ছিল। সুখ ছিল ডালিমের কণায় অযথা।

আজ অন্যবিধ খেলা। গৃহে ঢোকে বাদলের কণা

ধাবমান ছায়া যায় পূর্ব থেকে অবাধ পশ্চিমে।

কে যেন কুড়ায়ে নিল আমার বকুল, ব্যথা, এলে

চন্দ্রের শরীর তাও শীতল রোমাঞ্চে ভ’রে ওঠে।

স্তব্ধতার থেকে বড় সাঙ্ঘাতিক শব্দ নেই মানুষের কাছে

মর্মে যত সিংহাসন তার ওপর ছায়া প’ড়ে আছে।

*

শবাধারে জ্যোৎস্না

১৩.

বকুল, এসেছি আজ দুয়ারে তোমার।

ফিরাবে কেমন ক’রে? মেঘক্লিষ্ট দিনে

এনেছি অনেক বড় ব্যাথার খবর;

আঁধার জেনেছে যারে, জেনেছি বিজনে।

বজ্রে মরিনি আমি; তিমিরে বাদলে

আজো অবিচল আছি, অপমান ব্যাধি

কিছু নীল চিহ্ন শুধু রেখে গেছে ত্বকে।

বক্ষদেশে অসম্ভব রৌদ্র লেগে আছে।

ভেবেছ, হয়তো কবে ভেসে গেছি বানে,

বনে কাঠ কাটতে গিয়ে বাঘের উদরে

চ’লে গেছি। মরব না, যতদিন সেই

মালিনীর তীরে এক গোলাপের সাথে

বাতাসের যুদ্ধ হয়, যতদিন হাতে

কয়েকটি নীরব কররেখা বাস করে।

*

শবাধারে জ্যোৎস্না

১৪.

হয়তো ফুরাবে সব ফুরালে এ-মর্ম থেকে আত্মনিবেদন।

কি থাকে হৃদয় থেকে ঝ’রে গেলে মুকুলিত বাদলের কণা,

ত্রিশূল উঁচিয়ে আসে গোলাপের মর্ম থেকে ক্রোধে অন্ধকার …

মনে হয় খেলাচ্ছলে মাথায় পৃথিবী নিয়ে উদাস বাসুকি

অসম্ভব দুলে উঠছে। কি খেলা জেগেছে মনে খেলার অভাবে?

জানি না তখনও কোন করবী কি যূথিকার যুগল মূরতি

আমারে ভোলাবে কিনা, অথবা ফিরায়ে নেবে শান্ত বাতায়নে।

নিবেদন ভুলে গেলে হয়তবা তুষারের বৃষ্টি শুরু হবে।

হে কাল, দিও না ঐ শান্ত ফুলরাশি, ঐ হিম জলকণা

অনেক মানুষ আছে ওরা নেবে, ওরা জীর্ণ আয়ু ভালোবাসে।

একটি সন্তান যারে ছারেখারে স্তবে যুদ্ধে সাক্ষাৎ বিনাশে;

পদযুগ ধ’রে দীপ্ত কটি কণ্ঠা উন্মূলিত করে, ক্ষিপ্ত লাফে

সবংশে নিপাত যাক। ক্ষোভ নেই যদি ঐরাবত ক্রুদ্ধ আসে

পদচাপে পিষ্ট ক’রে শুঁড় তুলে ছুঁড়ে দেয় ফুটন্ত তিমিরে।

নির্বাচন – গৌতম বসু
চিত্রাঙ্কণ – পৃথ্বীশ গঙ্গোপাধ্যায়

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes
410 Gone

410 Gone


openresty