
বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়-এর কবিতাগুচ্ছ
আলিকবি@২০২৫
১
গত শীতে প্রায় ভোরে কথা হতো মণীশের সাথে।
ফোন করা মাত্র দূরে শোনা যেত ম্যাও ম্যাও ধ্বনি।
‘তোমার গলার স্বরে কোথা থেকে এল সে এখনই’
মণীশ বলত,আর দুধ দিতো বিড়ালের পাতে।
তারপর একদিন লেখা হলো সময়-বিড়াল।
মণীশের কবিতার শক্তি তার নিজস্ব দর্শন।
তবুও অধরা যেন অবিশ্বাসী বিড়ালের মন..
ক্রমশঃ পৃথিবী জুড়ে দেখা দিলো মানুষের পীড়া।
যখন প্রবাসে আসি মণীশের ফোন বন্ধ থাকে।
হঠাৎ দুপুরে এক সংক্ষিপ্ত মেসেজ পাঠায়…
তিনমাস আগের গল্প,যবে থেকে বিড়ালটি মৃত।
যার মানে,কোনোদিন জ্বালাবেনা সে আর আমাকে।
এবার সনেট লিখে সাঙ্গ করি কবিতার দায়।
নিষ্ঠুর না হলে বন্ধু পান করে কে আর অমৃত?
২৮/০৪/২০২৫
বিকেল ৫ টা
স্মৃতির শহর
স্মৃতির আড়ালে কোনো পূণ্য নেই ভালবাসা জানে।
আজ মনে হয় সব ছেড়ে আসা ছিল বাস্তবিক।
পূর্বনারী,বৃক্ষসারি কত ঋণ থেকে গেল বাকি…
যখন চেয়েছি তুমি ব্যস্ত রবি ঠাকুরের গানে।
একটি জাহাজ এসে খুঁজে পেল নতুন নাবিক।
বালির ঐতিহ্য ছেড়ে সমুদ্রটিলায় হাত রাখি।
এ শহরে মধ্যরাতে ঝড় ওঠে বৃষ্টি হয় খুব।
ঘুমের ভিতরে তুমি কথা বল,থেমে যায় গান
জেগে উঠে দেখি জলে ভিজে গেছে বিছানা চাদর…
বৃষ্টি থামে।মাঝে মাঝে বিদ্যুতের রূপালি চাবুক
ফিরে আসে।ভিজে মাটি সহ মৃত শহরের ঘ্রাণ
নিষ্প্রদীপ একতলা।কিশোরের না পাওয়া আদর..
স্মৃতির ভিতরে কোনো পাপ নেই এই কথা ঠিক
তোমার সান্নিধ্য ছেড়ে চলে আসা ছিল বাস্তবিক।
০২/০৫/২০২৫
রাত ১১টা ৩০ মি
তোমার বন্ধুর সঙ্গে
তোমার বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় ছিল কি কখনও?
হয়তো দেখেছি তাকে মুখবন্ধে, পরিচয়হীন
পথিকৃৎ বলেছিল:চকমকি পাথরেও ইদানীং আগুন জ্বলে না
দিগন্তে প্রাসাদ তুলে শুভদীপ কার কাছে যাবে?
গণিত শিখিয়ে পথ-বিড়ালের চিকিৎসা করিয়ে
এখনও কবিতা নিয়ে তর্ক করো?যার তার সাথে?
না হয় চেনোনি তাকে,না হয় সে দূরে চলে গেছে
এবার ফেরার পথে কিনে দিও কাঁটা সহ গোলাপ মঞ্জরী…
শহর ছেড়েছি আর কাগজ পড়িনি একমাস।
আঁধি হলে ঝড় দেখি।পার্কে বসে গাড়িটাড়ি দেখি
তোমার বন্ধুর মতো একজন দ্রুত হেঁটে আসে
হঠাৎ সামান্য ঝড়ে গাছ থেকে পাখি পড়ে যায়।
প্রেমের কবিতা মানে ওষ্ঠপুটে জীবিত মৌমাছি..
তোমার বন্ধুর থেকে আপাতত বহুদূরে আছি।
০৪/০৫/২০২৫
বিকেল ৫টা
যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা
একটি মেয়ের চিঠি ও দেশের অচেনা বন্ধুকে
আলিকবি@২০২৫
আমার বাবাকে কারা অস্ত্র দিয়ে সীমান্তে পাঠাল?
আমার চেয়েও বাবা দেশকেই ভালবাসে জানি।
এখনও জানিনা ঠিক কোন দেশ,কার রাজধানী?
যে দেশ পাহারা দিতে বন্দুকের গুলি চমকালো!
স্বদেশ পাহারা দিতে বাবা গেল পর্বতচূড়ায়।
ওপারে যে দেশ তার বাবারা কি ছেলেমেয়েদের
যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে গল্প বলে মৃত বন্ধুদের?
মৃত শত্রুদের বাড়ি চিঠি আর গোলাপ পাঠায়?
শান্তি বা অশান্তির চুক্তি কারা সই করে,জানো?
এবার তোমার কাছে গল্প আর শুনবনা আমি।
সবার বাবার মূল্য সকল দেশের চেয়ে দামী।
যতই মাথার কাছে উড়ে যাক বোমারু বিমানও!
দু-দেশের ভাইবোন ঘরে বসে “যুদ্ধ”খেলে নিক
বাবাদের পরিবর্তে লড়ে যাক পুতুল সৈনিক।
বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়
১১/০৫/২০২৫
দুপুর ১২ টা ২৭মি