কিঞ্চিৎ পরচর্চা – ২ <br /> রূপশ্রী ঘোষ

কিঞ্চিৎ পরচর্চা – ২
রূপশ্রী ঘোষ

পূর্বের লেখার লিংক– ক্লিক করুন এখানে

ক্যামেরা রেডি। বাটন স্টার্ট। ভিডিও শুরু। থুড়ি, রিল।

– মামমাম মা আজ কী করেছে?

– স্কুলে আমাকে আনতে যেতে দেরি করেছে।

– কতটা দেরি করেছে?

– (দুহাত প্রসারিত করে বাচ্চা) এত্ত দেরি করেছে।

– হ্যাঁ হ্যাঁ, এই এত্তটা কত? বলো মামমাম?

– এত্ত, চার ঘন্টা।

– তোমার মা কেন দেরি করেছে?

– রাস্তায় কারো সঙ্গে গল্প করছিল নিশ্চয়ই।

– ও, গল্প করছিল? কাদের সঙ্গে?

– রাস্তার লোকেদের সঙ্গে।

– ছেলেদের সঙ্গে?

– হ্যাঁ ছেলেদের সঙ্গে।

– তুমি এর জন্যে কী শাস্তি দিতে চাও মামমাম? দিতে চাও তো নাকি?

– হ্যাঁ চাই। শাস্তি দিতে চাই।

– আর মা যে, দেরি করে গেল, রাস্তায় কিছু কিনে দেয়নি তোমাকে?

– না, (মনে পড়তেই) হ্যাঁ দিয়েছে জুস।

– মা কতটা খেয়েছে, তোমাকে কতটা দিয়েছে?

– (তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের সাহায্যে) এইটুকু।

– আর মা কতটা খেয়েছে?

– (আবার দুহাত প্রসারিত করে) মা এত্তটা খেয়েছে।

– আচ্ছা আজ তোমাকে স্কুলে তাহলে অনেকক্ষণ থাকতে হয়েছিল তো?

– হ্যাঁ, অনেক্ষণ।

– তুমি মাকে শাস্তি দিতে চাও তো নাকি?

– হ্যাঁ চাই, তুমি সবাইকে বলে দাও। মাকে শাস্তি দিতে চাই।

– হ্যাঁ, মামমাম আমি সবাইকে বলে দেব, এই তো ভিডিও করে করে নিচ্ছি, শেয়ার করে দেব সবাই জেনে যাবে।

– হ্যাঁ, তুমি শেয়ার করে দাও, উমুক কাকু, তুমুক কাকু সবাইকে, স্কুলের ম্যামকেও। সবাই মাকে লাঠিপেটা করবে।

– হ্যাঁ, আমি শেয়ার করে দেব, সব কাকুরা পেয়ে যাবে। (এরা সবাই বাবার বন্ধু, নামগুলো উল্লেখ না করাই ভালো)। তুমি আর একবার বলো, কী শাস্তি?

– লাঠিপেটা। একদম লাঠি দিয়ে খুব করে পেটা।

– (মেয়েকে প্রায় খুঁচিয়ে) মামমাম আর একবার বলো, মা জুসটা কতটা খেয়েছে? আর তোমাকে কতটা দিয়েছে? আর কিচ্ছু কিনে দেয়নি রাস্তায়।

– (জুসের পরিমাণ রিপিট করে), না আমাকে আর কিচ্ছু কিনে দেয়নি।

– ঠিক আছে মামমাম আমি ভিডিও করে নিলাম, তোমার এই কথা সবাই জেনে যাবে।

সত্যিই জেনে গেছি। আমার মতো অনেকেই হয়তো এই রিল দেখেছেন। যাঁরা দেখেছেন তাঁরা রিলেট করতে পারবেন। হ্যাঁ, খুবই অদ্ভুত। অদ্ভুত না, ভয়ঙ্কর জানা নেই। এ হেন বাবারা রীতিমতো শিক্ষিত করে বাচ্চার হাতে মায়ের বিরুদ্ধে লাঠি ধরিয়ে দিচ্ছেন। বাচ্চার আধো আধো গলায় বাবা শুনছেন, এনজয় করছেন এবং মাঝে মাঝেই চাপা হাসির রোল আসছিল। ঠিক উলটো ভিডিও তৈরিও চলছে কিনা চোখে পড়েনি। অর্থাৎ মা, বাবার বিরুদ্ধে বাচ্চাকে লেলিয়ে দিচ্ছেন কিনা। আপনাদের চোখে পড়লে শেয়ার করবেন। বাচ্চাটা বেশ উত্তেজিত হয়েই বলছিল, মা’র যেতে একটু দেরি হয়েছে বলে তাকে কী শাস্তি দেওয়া দরকার। এবং শাস্তিটা দেবে বাবার বন্ধু কাকুরাই, একজন মাত্র ম্যাম। যেহেতু বাচ্চাদের স্কুলে মায়ের পরিপূরক হিসেবে মহিলা শিক্ষকই সংখ্যায় বেশি তাই হয়তো।

এমন আর একটা রিল। বাবা পাশে দাঁড়িয়ে। বাচ্চার কানে ফোন। অ্যাজ ইফ সে কাউকে ফোনে নালিশ করছে। মা সম্পর্কে ভীষণই অ্যাবিউসিভ সব কথাবার্তা। এবং বাবা নাটকের প্রম্পট করার মতো প্রম্পট করে কথার জোগান দিচ্ছেন আর হাসছেন। ভিডিওটা নিজের ওয়ালে পোস্ট করে রাখতে হত, জাস্ট খেয়াল হয়নি। নাহলে সবাই দেখার সুযোগ পেত। সেই কথাগুলোর অর্থ সত্যি সত্যি বাচ্চাটা মানে বোঝে বলে মনে হয় না। আসলে সে তো বাচ্চা। যদি বুঝত, তাহলে কি প্রতিবাদ করত না? বাবাকে একবার বলত না? মা সম্পর্কে তুমি আমাকে খারাপ খারাপ কথা বলাচ্ছ বা শেখাচ্ছ কেন? একজন বাবা তাঁর বাচ্চার কাছে অবশ্যই ভালো একজন দৃষ্টান্ত হতে পারেন। কিন্তু সেটা তাঁর নিজস্ব কিছু ভালো গুণ, যদি থেকে থাকে সেটা দিয়ে বাচ্চার কাছে ভালো হওয়া যথেষ্ট নয় কি? নিজে ভালো হতে বা না হতেও মা সম্পর্কে খারাপ ধারণা বাচ্চার মধ্যে ঢোকানো এবং সেটা শেয়ার করে জানানো কি খুব দরকার? কে জানে, যাঁরা জানান তাঁরাই ভালো বুঝবেন। তবে একথা ঠিক। আজ সে বাচ্চা। একদিন বড়োও হবে বুড়োও হবে। নিজস্ব জগৎ তৈরি হবে। নিজে নিজে ভাবনা চিন্তা করতে শিখবে। যখন নিজের চারপাশটা জানবে সাদাকে সাদা, কালোকে কালো নিশ্চয়ই বুঝতে শিখবে। কারণ এ জেনারেশনের বাচ্চাদের অধিক বুদ্ধিমান ধরা হয়। যদি বুদ্ধিমান হয়, এখন যে সমস্ত মুখরোচক কথাবার্তার আকারে রিল বানিয়ে তার মাথায় বিষ গোঁজা হচ্ছে তা কি একদিন বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে না? বঙ্কিমচন্দ্র তো সেই কবেই বলে গেছেন বিষ বীজ রোপন করলে ঘরে ঘরে তো বিষবৃক্ষই জন্মাবে। হয়তো ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যাবে আজকে যিনি বাবা, তিনি যখন বাচ্চা ছিলেন হয়তো তাঁর বাবাও তাঁর মা সম্পর্কে খারাপ কথা বলতেন, মাকে অসম্মান করতে শিখিয়েছেন। বা না শিখলেও বাবার ব্যবহারে বাচ্চা নিজেই শিখে গেছে। আজ বাবার ভূমিকায় তা প্রকাশ পাচ্ছে। এ হেন রিলের বাচ্চার পাকা পাকা, আধো আধো কথা পরিণতি পাবে না? সে বলবে না? তুমিই তো শাস্তি দেওয়া শিখিয়েছ? নিজের মাকে অসম্মান করাটা হাতে ধরে শিখিয়েছ। এর উত্তর ডেফিনেটলি ভবিষ্যৎ দেবে। সেটা রিল করে সবার মাঝে শেয়ার হবে কিনা জানা নেই, লাইক, কমেন্ট, সাবস্ক্রিপশন পাবে কিনা তাও অজানা। কিন্তু সেই বাবা তো জানতে পারবেন। বা তাঁর মতো অভিভাবকরা তো জানতে পারবেন। উপলব্ধি করবেন। রিলস দুনিয়া একদিন রিয়েল হয়ে যাবে না তো? কে জানে। ছোটোবেলায় পড়া বর্ণপরিচয়ের দ্বিতীয় ভাগের গল্প, মাসির কাছে বড়ো হওয়া বাচ্চার গল্প। একদিন মাসির কানে কানে কথা বলতে গিয়ে মাসির কান কামড়ে নিয়েছিল। আগামী দিনে কজনের কান খোওয়া যাওয়া যাবে তা কিন্তু ভীষণ চিন্তার। বা আবার এমনটা নাও ঘটতে পারে। হয়তো মিছিমিছিই উদ্বিগ্ন গুটিকয় মানুষ।

রিলস চলুক। সবাই দেখে মজাও পান। কিন্তু যদি আপনার ভালো লাগে শেয়ার, লাইক, কমেন্ট এবং সাবস্ক্রিপশন করতে ভুলবেন না কিন্তু। আর আপনি যদি আমার চ্যানেলে নতুন হন তাহলে এখনই ফলো করুন। পাশে থাকা বেল আইকনটি অবশ্যই ক্লিক করবেন। তাহলে আমার করা ভিডিও সবার আগে আপনার কাছে পৌঁছে যাবে। ধন্যবাদ! আবার দেখা হবে পরবর্তী রিল নিয়ে, থুড়ি, পরচর্চা নিয়ে।

বি.দ্র – সাধারণীকরণ করে সব বাবার উদ্দেশ্যে এ লেখা নয়। রিলস বা রিলসের বাইরে সেই সব বাবার উদ্দেশ্যেই এই লেখা।

(ক্রমশ প্রকাশ্য)

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes