সব্যসাচী সরকারের গ্লাভসে লুকোনো পৃথিবী – জীবনবোধের উপন্যাস

সব্যসাচী সরকারের গ্লাভসে লুকোনো পৃথিবী – জীবনবোধের উপন্যাস

গ্লাভসে লুকোনো পৃথিবী/ সব্যসাচী সরকার/ দেজ পাবলিশিং/ ২৯৯ টাকা/ প্রচ্ছদ পৌলমী গুহ

মতি নন্দীর উপন্যাস যেভাবে আমাদের বাংলা সাহিত্যে এক অন্য ঘরানার উপন্যাসের সঙ্গে পরিচিত করিয়েছে বারবার, ঠিক তেমনই সব্যসাচী সরকার তাঁর নতুন ভাবনায় লেখালেখির
উদাহরণ রেখে গেছেন বেশ কয়েকযুগ ধরে। কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্পের সঙ্গে মিশে গেছে তাঁর পেশাগত জীবনের লেখালেখি। খেলাকে দেখা, ক্রিকেটের মতো মহান এক বিষয়কে কলমে ধারণ করার মতো জোর অনেক লেখকেরই থাকে না। অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিক শুধুমাত্র খেলা হিসেবেই ক্রিকেটকে দেখে থাকেন,কিন্তু সব্যসাঈ ক্রিকেটকে শুধু খেলা হিসেবে দেখেননি। ক্রিকেটের মধ্য দিয়ে যে মহান জীবনবোধ ফুটে বেরোয়, তাকেই তিনি বারবার লিখে গেছেন তাঁর কবিতায় এবং উপন্যাসেও। তৈরি হয়েছে লেখালেখির এক অন্যরকম ভাষ্য। তাঁর কবিতা নিয়ে নয়, এই লেখায় বরং আমরা ছুঁয়ে যাব তাঁর সদ্য প্রকাশিত উপন্যাসের গ্রন্থ দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত ‘গ্লাভসে লুকোনো পৃথিবী’কে। এই গ্রন্থটিতে রয়েছে দুটি উপন্যস।একটি গ্লাভসে লুকোনো পৃথিবী এবং অন্যটি ‘স্কাইলাইনে সিঁদুরে মেঘ’।
এক হার-না-মানা জীবনবোধের কাহিনি ‘গ্লাভসে লুকোনো পৃথিবী’। সব্যসাচী ক্রীড়াজগৎকে হাতের তালুর মতো চেনেন। তাঁর অভিজ্ঞতাগুলি বানিয়ে তোলা নয়। বরং অনেকটা চিত্র পরিচালক ফ্লান্সিস ফোর্ড কপোলার মতো ছিঁড়েখুঁড়ে তিনি উপন্যাসের অন্দরমহলে যে আলো অন্ধকারের জায়গা, সেখানে ঢুকে পড়তে চান। আপাত ভাবে মনে হতে পারে এই উপন্যাসের ‘রোল অফ ন্যারেটর’কে চিনতে পারা যাচ্ছে, কিন্তু না, তাঁকে চিনতে পারা যায় না। তিনি হারিয়ে যান উপন্যাসের প্রধান চরিত্রের সঙ্গেই। খেলার জগতের রাজনীতি, সাংবাদিকতা জীবনের রাজনীতি, নির্বাণ নামক চরিত্রটির ( রূপকাত্মক কারণ সে বারবার ফিনিক্সের মতো ছাইভস্ম থেকে উঠে আসে) অতি নিম্নবিত্ত জীবন থেকে পরিশ্রম করে উঠে আসা টিন ইন্ডিয়ার মতো রাজনীতি অধ্যুষিত জায়গায়, তার লড়াই,তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, তার বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া মিডিয়া ম্যানুফাকচারিং, অথচ এ সবের বিরুদ্ধে প্রায় একাই দাঁড়িয়ে আত্মসম্মানবোধ বজায় রেখে তাঁর নীরবে লড়ে যাওয়ার যে জীবন, তা-ই এই উপন্যাসের উপজীব্য বিষয়। আর তা সব্যসাচী লিখেছেন অত্যন্ত সূক্ষ্ম ভাবে। নির্বাণ যে কে, তা আমাদের বুঝতে অসুবিধে হয় না। এও অসুবিধা হয় না নির্বাণের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা ভয়ংকর রাজনীতির সত্যি কথাগুলিকে। আর তার পর, এই উপন্যাসটি পড়তে পড়তে আমাদের মন ক্যাথারটিক হয়ে ওঠে। সব্যসাচীর লিখনভঙ্গিমার অন্যতম বৈশিষ্ট্য পাঠককে একই সঙ্গে ক্যাথারটিক করে তোলা এবং উদ্বুদ্ধ করে তোলাও। নির্বাণ এখানে ট্র্যাজিক চরিত্র, কিন্তু তাঁর ট্র্যজেডি জেনুইন ট্র্যাজেডি। তাঁর নিজস্ব হিউব্রিস বা হামারতিয়া আমরা পাই না। কারণ এখানে তাঁর বিরুদ্ধে আমরা দেখতে পারি একটা সম্পূর্ণ ব্যবস্থা। আধুনিক ট্র্যাজেডির বৈশিষ্ট্যই এই, যে আধুনিক ট্র্যাজেডিতে কোনও ঐশ্বরিক নিয়তিবোধের সামনে চরিত্রটি ট্র্যাজিক হয়ে ওঠে না। নিয়তিবোধ হয়তো সমস্ত কিছুই। কিন্তু এখানে সিস্টেম, ব্যবস্থা- অনেক বেশি ভূইকা পালন করে। ঠিক সেভাবেই আমরা দেখি এখানে নির্বাণের লড়াই এবং ক্রমে ক্রমে জেনুইন ট্র্যাজেডির মতো তাঁর একা হয়ে যাওয়া। কিন্তু,এখানেই সব্যসাচীর কলমে উঠে আসা লড়ে যাওয়ার আশ্চর্য জীবনবোধ। উপন্যাসের মধ্যে তিনি লিখছেন, “কিন্তু তা বলে সে ক্রিকেট ছাড়বে কেন? প্রশ্নই নেই।দ্বিতীয়ত, আত্মসম্মান বলে একটা কথা আছে। সে কারও ফোন ধরেনি, কথা বলতে চায়নি। নীরবতাও তো একধরনের নিজের সঙ্গে কথা বলা। নিজের ভিতরটাকে কাঁটাচামচ দিয়ে খুঁচিয়ে দেখা। যে যার মতো করে দেখে। আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া যায়, খুব সোজা। কিন্তু দুঃখ বা যন্ত্রণা কি সব সময় সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া যায়?
নির্বাণের এই লড়াই মুহূর্তে মানুষের জীবনের বিভিন্ন লড়াইয়ের সঙ্গে মিলেমিশে যায়। আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই কমবেশি করা নানান নেপোটিজম এবং বিরোধিতার সম্মুখীন আমরা হই। আমাদের যা করার তা অনেক সময়ই আমরা করে উঠতে পারি না। ফলে, আমাদের জীবনের প্রকৃত ক্ষমতা যতটুকু, ততটুকু দেওয়ার ইচ্ছে প্রবল ভাবে থাকলেও, তা দেওয়া হয়ে ওঠে না। দিতে পারি না। তার কারণ একটাই। আমরা দিতে গেলে, বড় মঞ্চে নিজেদের প্রকাশ করতে গেলে, আমাদের আটকে দেওয়া হবে। নানা ক্ষেত্রেই এই একই জিনিস করা হচ্ছে। এই সংস্কৃতি সর্বত্র বিরাজমান। একজন কবি থেকে খেলোয়াড়, সাংবাদিক থেকে সাহিত্যিক, অভিনেতা থেকে রাজনীতি– সব জায়গায় আমরা এই বিষয় দেখতে পাই। জীবন যেন বা একটা বিরাট কর্পোরেট সেক্টর, যেখানে ছোট ছোট স্বার্থ নিয়ে তৈরি হয়ে আছে কিছু অর্থহীন লবি। আর তারাই ইতিহাসকে তৈরি করছে। যা যা ইতিহাস হতে পারত, তা মুছে যাচ্ছে। কেঁচোদের কলমে নিভে যাচ্ছে শ্বাপদের ইতিহাস।
কিন্তু তাই বলে, শ্বাপদকে তো নিজের কাজ করে যেতেই হবে। নির্বাণকে তো ক্রিকেট ছাড়লে চলবে না। নির্বাণ তাই ক্রিকেট ছাড়েনি। আর এখানেই এই উপন্যাস আমাদের দেয় এক অফুরন্ত জীবনীশক্তি। সব্যসাচী সরকারকে ধন্যবাদ আমাদের এমন একটি উপন্যাস দেওয়ার জন্য।
এই বইয়েই তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস একটু অন্যরকম, আধুনিক জীবনেরই আরেকটি অন্ধকার তলের কাহিনি। দুটি উপন্যাসের এই হলোগ্রামে যেন বা প্রতিফলিত হয় সমগ্র সমাজ।

হিন্দোল ভট্টাচার্য

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes