পণ্যতান্ত্রিক , একুশের  ভারত  <br />  প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়

পণ্যতান্ত্রিক , একুশের ভারত
প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়

হেমন্ত দিভ্তে – কেনাকাটার সময়ে স্বপ্ন

১.
সামনে দাঁড়ানো কামুক মহিলার মুঠোবন্দি হয়ে আমিই
সেই জ্যাকুয়ার হাত-ঝরণা
ভিজিয়ে তুলি ওকে চুমুতে-চুম্বনে
চুমো দিই সারা গায়ে
নির্বিঘ্নে, ঘুরি-ফিরি রোমাঞ্চিত থিরথির ত্বকে
ঢুকে পড়তে চাই যেন শরীর ভেদ করে
আবেশে ফুলে ওঠে দেহবল্লরী ওর
আর আমি নিজেকে পুরোপুরি হারিয়ে ফেলি।

তৃপ্ত হয়ে সে আমাকে ঝুলিয়ে রাখে
চটজলদি—রূপান্তরিত আমি,
যেন এক ওয়েলস্পান তোয়ালে
সর্বাঙ্গ রগড়ে ওর শরীর ঘষামাজার প্রয়োজনে
অধরোষ্ঠ আমার, ওর শরীরের প্রতিটি ইঞ্চিতে ঘুরে এল
আলতোভাবে ছুঁই
আর নিজেই ভিজে উঠি,
ছুঁই, ছুঁতে থাকি, ঘষি-রগড়াই
আর ও আমাকে কচলে নিচে নামায়

ঘষ্টে-রগড়ে
মুছে দিই ওকে, অবশেষে
নিম্নাঙ্গে পৌঁছানোর
অপেক্ষায় আছি
আদতে

গুঙ্গিয়ে ওঠে সে পুলকিত শীৎকারে
যখন জড়িয়ে যাই ওর নিম্নাঙ্গে
বিদীর্ণ হব প্রায় ,টুকরো-টুকরোয়
ও আমাকে দূরে সরিয়ে রাখে

কাতরাতে থাকি – যন্ত্রণায়
আর কষ্ট পাই—
নিঠুর মহিলার ফিরে আসার অপেক্ষায়

হাত-ঝরণা আর তোয়ালে
ঠিক তোমাদেরই মতন
এই শপিং মলের লেভেল-টু’র এককোণে
পরিত্যক্ত পড়ে আছি

আমি একটি মার্কামারা সোফা
এই মল-টির আসবাবপত্রের এলাকায়
দীর্ঘসময়—হৃষ্টপুষ্ঠ
গদি আকৃতিরএই মহিলা বসে রয়েছে অনেকখানি জায়গা জুড়ে
ওর পাছায় সেঁটে আছে নাক আমার 
দম বন্ধ হবার জোগাড়—ওজনের চাপে
হা ভগবান!
ওর বসার ঘরের এ নরক থেকে আমাকে বাঁচাও
তোমার তুষ্টির জন্য প্রতিজ্ঞা করছি
ঘাসিটরাম থেকে এক ডজন মোদক এনে দোব
বারোটা ভিখিরিকে ম্যাকডোনাল্ডের হ্যাপি মিল খাওয়াব 
একটি রাত্রির জন্য অন্তত তোমার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করব ।

যে কোনোকিছুই তোমার রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে

আয়ডিনযুক্ত নুন নেই খাবারে
তোমার বি.পি. বেড়ে যাবে

ঈশ্বর গরহাজির কবিতাতে
নয়তো তোমার বি.পি. বেড়ে যাবে

বন্ধ-য়ের দিনগুলোতে
অথবা যে কোনো দিনে,
নিউজচ্যানেলগুলো বাড়িয়ে দিতে পারে তোমার বি.পি.

নিজের ডাক্তারের সঙ্গে দেখা হলে
তোমার বি.পি. টঙে চড়তে পারে

টি.ভি-তে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত প্রোগ্রামগুলো দেখে
তোমার বি.পি. পাড়া মাথায় তুলতে পারে

কাজের জায়গায় অনিশ্চয়তা
ফস্ করে বেড়ে যাবে তোমার বি.পি.

বি.পি-র ব্যাপারে ভাবলে
বি.পি. তোমাকে ভাবাতে পারে ।
হেমন্ত দিভ্তে ঃ গন্ধ উড়ে আসত তোমার শরীর থেকে

মনে পড়ছে‘পণ্ডস ড্রিমফ্লাওয়ার’-এর গন্ধ
তোমার শরীর থেকে
ই-মেলগুলো তোমার
অন্তরঙ্গতা আমাদের
মেরিন ড্রাইভের হৈ-হট্টগোলে
বিন্দুমাত্র ক্লান্ত না হয়ে কীভাবে অন্তহীন বকরবকর—
কি বিশেষ বিষয়ে তা মনে পড়ছে না যদিও
আর ওই মাঝেমাঝে
সিগারেট ফোঁকা—দুজনে, পর্যায়ক্রমে

‘ডিস্কো’-র ভিতরে উঁকিঝুকি দিইনি কখনো
দেখতে যাইনি একটিও
ঘুরে আসা স্থগিত রেখেছি বারংবার

সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছ তুমি
মদ খাওয়াও
আমরা ত্যাগ করেছিলাম,তারপর—
মেরিন ড্রাইভের সেই হৃদ্যতা

জারি রেখেছি পরস্পরের কাছে আসা—চার দেওয়ালের ভিতরে
এখন যেন ,এক চাকায় জড়িয়ে গিয়েছি আমরা
কথাবার্তার সময় নেই আমাদের

খবরের কাগজ পড়ি বসে,দুজনে মিলে
চা পান করি কখনো-সখনো
আর কথাচালাচালি হয় (যদিবা কখনো),
আমাদের সন্তান আর ঘরবাড়ি নিয়ে
অথবা ঘরে ফিরে আসব কখন
কখনো ফোন করে,বিকেলে
জিগ্যেস করি পরস্পরকে –কী করছো?
আর এ সময়ে ‘পণ্ডস ড্রিমফ্লাওয়ার’-এর গন্ধের বদলে ,
তোমার শরীর থেকে , রাতের দিকে
ক্লান্ত স্বেদবিন্দুর মনোহারী –বোঁট্‌কা গন্ধ ভেসে আসে

মুম্বই শহর নিবাসী নব্বই দশকের কবি হেমন্ত দিভতে । এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি প্রথামতো ‘অভিধা’ ও তার পরে ‘অভিধানান্তর’ নাম দিয়ে একটি মারাঠি কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন।প্রখ্যাত কবি-অনুবাদক দিলীপ চিত্রে-র নজরেহেমন্ত দিভাটে হলেন উনিশ-কুড়িজন মারাঠি কবিদের মধ্যে এমন একজন কবি যিনি তাঁর প্রজন্মের প্রতিনিধিস্থানীয় কবিই নন শুধু, এইধারার কবিতা-অস্তিত্বের একালীন বাহক-নির্ধারকও বটে।মারাঠি ভাষায় লেখা তাঁর কবিতা-বই ‘চৌতিশপরযন্তচ্যা কবিতা’ বা চৌত্রিশ বছর বয়স পর্যন্ত লেখা কবিতা বইটি ‘ভাইরাস এলার্ট’ নাম দিয়ে পরবর্তী সময়ে ইংরাজিতে অনুবাদ করেছেন স্বনামধন্য কবি দিলীপ চিত্রে স্বয়ং। বইটি ভারতীয় ভাষা পরিষদ,কলকাতা থেকেও পুরষ্কৃত হয়েছে । একজন মনোযোগী কবির লেখায় তার সময়, দেশকাল, নগরজীবনকথা অনুবাদিত হয়। ফলত,তাঁর বাচনভঙ্গিতে বাণিজ্যনগরীর ‘আপ্সটার্ট কনজিউমারিস্টের’ চিন্তা-চেতনা-চাহিদা সাবলীলভাবেই ফুটে উঠেছে।উতলা-উদগ্র-উৎপীড়িত উচ্চরোলের অত্যাধুনিকতম সময়চিহ্নগুলো সর্বাঙ্গে নিয়েও কবিতাগুলো যেন ফিসফিসিয়ে খুব কাছ থেকে বলা হয়েছে। চিত্রে জানিয়েছেন যে ২০০১ সালে হেমন্ত দিভাটে-র প্রথম বইটি তিনি অনুবাদের জন্য বেছে নিয়েছিলেন।কিন্তু নিজেরই অজান্তে তিনি একটি-দুটি করে,শেষমেশ পুরো বইটাই অনুবাদ করে ফেলেন।

সে ছিল ১৯৮০-র দশক = টেলি-বিনোদনের যে প্রথমপ্রহর জুড়ে চুটিয়ে ব্যবসা করেছিল ওয়াশিং পাউডার বা বজ্রদন্তী দন্তমঞ্জনের সুপার-ডুপার জিঙ্গল।ûঅ্যাড-য়ের বোর্ডরুমে– এখন ২০২৩-য়ে, শাওয়ার থেকে জল ঝরে;মার্কেটেড হয় উচ্চবিত্তীয়‘জ্যাকুয়ার’ ঝর্ণাসমুদায়।আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে বিজ্ঞাপনের ভাষায়!ঢের ঢের বেশি আধুনিক,চিত্তাকর্ষক ও মনোরঞ্জক।কিন্তু মাত্র বছর দুই আগে (২০২০-তে প্রকাশিত)ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের এক স্টাডি অনুযায়ী সুরেশ তেন্ডুলকর কমিটি জানিয়েছেন যে দৈনিক 32 টাকার চেয়েও কম উপার্জনে ২২০ মিলিয়ন গ্রামীণ ভারতীয় জীবন নির্বাহ করে।ডেটলাইন ১৯৯০।
ছেঁড়া পর্দার ফাঁক দিয়ে স্মিতা পাতিলের স্নানদৃশ্যের সাক্ষী ছিলাম ‘চক্র’ সিনেমায়। ঝরঝরিয়ে জল ঝরছে ২০২২-য়ের টিভি-বিজ্ঞাপনের বোর্ডরুমে।।ইন্ডিয়া দ্যাট ইজ ভারত এমুহূর্তে এতখানি এগিয়ে এসেছে। অবজার্ভারের চোখ দিয়ে আমাদের কানে আসছে বোর্ডসদস্যদের স্নানরত কলকাকলি। ক্রমে আমরা জানতে পারছি যে এস. আর তেন্ডুলকর কথিত কেবল শতকরা ২৩% পার্শেন্ট উচ্চ বা উচ্চ-মধ্যবিত্তশ্রেণির একভাগ জলাভূমিই শুধু নয় ;( নাই বা করল কেনাকাটা),তবুও বাকিবকেয়া তিনভাগ জলাভূমির অনেকেই এখন কমসে কম উইন্ডোশপিংটুকু তো সেরে নিতেই পারেন। অর্থ হয় ঃ ‘মেক-বিলিভ’ পৃথিবীতে,ভ্রম-সৃজন,ভ্রম-উজ্জীবন,ভ্রম–উদযাপন চলিতেছে সগৌরবে, এবং তা ক্রমশ সর্বজনীনও হয়ে উঠছে বটে। কান টানিলে মাথা আসিবেই সূত্রানুসারে আশা করা যায় যে সার্বিক সামর্থ্য একদিন হৃষ্টপুষ্ঠ হয়ে সাধ্যের দেখভাল করিবে।কিন্তু,জনতা-জনার্দন নয়, আমাকে যে লিখতে হবে পণ্য-পুরাণের নিহিত বচন।

পণ্যবিশ্বের বাসিন্দা আমরা। এবং আমাদের সফলতা অবশ্যই ক্রয়ক্ষমতা-নির্ভর, অর্থাৎ,ভোক্তা হিসাবে ‘কেনাকাটার’ কততম ফ্লোর-নিবাসী আমরা ঃ লেভেল ওয়ান-টু নাকি লেভেল সিক্সেস অ্যান্ড সেভেন ? দুনিয়াজোড়া এই পণ্য-সাম্রাজ্যের ধর্ম এক, জাত এক,পথ এবং পন্থাও এক। এমনকি মন্ত্র-তন্ত্রও এক। আর তাই,নার্সিসাসি কঞ্জিউমারিজম আক্রান্ত একুশের দুনিয়ায় সর্বজনমান্য একমাত্র ধর্মগ্রন্থ হল বাজার-সংহিতা। এবং সাড়ম্বরে পূজিত-বন্দিত-আরাধ্য একমাত্র ঈশ্বর ঃ আ-বিশ্ব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা তেত্রিশ কোটিরও ঢের ঢের বেশি (এ মুহূর্তের উইকিপিডিয়া অনুযায়ী ৮.১ বিলিয়ন)‘বহুরূপে সম্মুখে তোমার’ একমেবাদ্বিতীয়ম উপভোক্তা।এহেন ধনবাদী পণ্য-বিশ্বের পূজা-আরাধনার মূলমন্ত্র হল “চয়েস”(বাছবাছাই) বনাম প্রেফারেন্স (পছন্দ/আসক্তি)তাড়িত বাছবিচার।কবি হেমন্ত দিভ্‌তের তীক্ষ্ণ-তির্যক-তকতকেউচ্চারণগুলোর,ভাষান্তরের সময়ে, আমিও বিশেষভাবে প্ররোচিত হয়েছি তীব্র-তড়িৎগর্ভ কবিতাগুলোর (জাগতিক) পটভূমির বিচার-বিমর্ষে ঃ ‘দুটো কিনলে একটা ফ্রি’-য়ের এই যুগে জিনিসের গুণগত মানের চেযে বরং আনন্দবর্ধক ভোগ্যপণ্যের সংখ্যাধিক্য, তদনুসারী চাহিদা, যোগান ও ক্রয়ক্ষমতাকে কেন্দ্র করেই একালের সচ্ছল জীবনবোধ গড়ে ওঠে।অতএব, স্টার্ক কন্ট্রাসটিঙ্গ,থুড়ি,তীব্র বৈপরীত্যটিও খুঁজে দেখা দরকারঃ কেমন ছিল প্রাক-বিশ্বায়ন, প্রাক-অর্থনৈতিক উদারীকরণ বা মুক্তবাজার-পূর্ব ‘আধা-গ্রামীণ’ ভারতবর্ষ ? ভোগবাদ= ধনবাদ।কিন্তু একুশের প্রথম দশক না কাটতেই ইক্যুয়েশনটা কি সুরক্ষিত মনে হয় আর? চাকুরির সুযোগ, বর্ধিত ও উচ্চহারে বেতন,নানারকমের পার্ক্স, জীবনযাত্রার মানোনয়ন্ন ইত্যাদির সুযোগে ভোগবাদ প্রায় জন্মলগ্ন থেকেই অবাধ গতিতে ব্যাপক ব্যাপ্তি লাভ করেছিল।কিন্তু,২০০৮-য়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘সাবপ্রাইম’ সংকটের কারণে আ-বিশ্ব ভোগবাদী ক্রয়ক্ষমতা চূড়ান্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

প্লেটোর তত্ত্ব অনুযায়ী মানুষের মনের তিন ধরনের সুস্পষ্ট দক্ষতা আছে=চেতনা,আবেগ ও আরব্ধ কাজ সম্পন্ন করার ইচ্ছা।আধুনিক শাস্ত্রে ব্যবহৃত পরিবর্ত শব্দগুলো হল উদ্দেশ্য, বিশ্বাস আর অনুভব।পাশাপাশি আরো এক গুরুত্বপূর্ণ দিশা হল যে আধুনিক ভোগবাদ অবশ্যই অতিমাত্রায় তথ্য-নির্ভর। সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন যে তথ্যের (gustatory) বা রসাত্মক, (olfactory)বা ঘ্রাণজ, tactile বা (স্পর্শানুভূতি) pictorial (দৃশ্য) কিংবা aural বা ( শ্রাব্য ) দিকগুলো সেভাবে পর্যালোচিত হয়নি। এইসব সেন্সরি চ্যানেলগুলোর সাহায্যে ভোক্তা কেনাকাটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।মারাঠী কবি হেমন্ত দিভ্তের কবিতার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে সদ্য কঞ্জিউমারিস্ট (অর্থাৎ ভোগবাদী) মেট্রোপলিটান মন।স্ফূর্তিবাজ আনন্দময়তার আঁতুড়ঘর হল আবেগ।আবেগসৃষ্ট মানসিক ইচ্ছাগুলোই তো ভোগবাদী কেনাকাটার পিছনে সক্রিয় থাকে।
কেবল মানসিক / পার্থিব চাহিদা নিবারণের একমাত্র উপায় নয়—ভোগ্যবস্তু,বরং আমাদের সামাজিকতার বাঁধুনি, সম্পর্কের পোক্ত গাঁথুনি,সত্ত্বার আলম্বী আবরণীও বটে। Bauman-কে অনুসরণ করে বলা যায় যে কোন ধরণের ভোগ্যপণ্যের মাধ্যমে অধিকতর আত্মতৃপ্তি পাওয়া যাবে—চাহিদা অনুযায়ী তেমনতর বাছবাছাই করার সুযোগকেই এ যুগে স্বাধীনতা বলা হয় এবং অধিকতর তৃপ্তিদানকারী ভোগ্যপণ্যটি বেছে নেওয়ার মধ্যেই ‘সহী হ্যায়’ যৌক্তিকতা নিহিত। অর্থ হয়–ভোগবাদেই নিহিত আনন্দ।তৈত্তিরীয় উপনিষদে বর্ণিত ‘আনন্দতত্ব’(‘আনন্দাদ্ধ্যেব খল্বিমানি জায়ন্তে ভূতানি’)অনুযায়ী আনন্দই সবকিছুর মূল।উপনিষদীয় সেই সুখানুভবের অত্যাধুনিক প্রবক্তা তবে কি পোস্ট-কম্যুনিস্টিক কঞ্জুমারিজম?উত্তর-ঔপনিবেশিক পণ্যজীবিতায় সোচ্চার এই দু/তিনটি কবিতার ভাবানুষঙ্গে লেখা কবিতা-বই ‘Virus Alert’ থেকে চয়িত এবং অনুবাদিত রাজনৈতিক/ সামাজিক/অর্থনৈতিক পটপরিবর্তনের (সযত্নে লুকানো)সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী ভারতীয় মূল সুরটি,অর্থাৎ,প্রাক-‘লিবেরালাইজড্’ অর্থনীতির বাস্তবতা ঃ দৈনিক দু-ডলারেরও নীচে বেঁচেবর্তে থাকা ৭৭% নিম্নবিত্ত জনতা বনাম ২৩ পার্শেন্ট মধ্যবিত্ত + উচ্চবিত্তীয় যাপনচিত্রের আংশিক ওয়াটার-কালারড্ ভারতবর্ষীয় জলছবিটিকে খুঁড়ে তোলার প্রয়াসেই এই লেখাটির অবতারণা।
হার্শম্যানের মতো আর্থ-সমাজবিজ্ঞানীদের মতে ভোক্তারা একটি পণ্যের গুণাগুণ বা বিশেষ বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ক্রয়যোগ্য পণ্যের একটি বিষয়গত অর্থ করে নেয় । স্ফূর্তিবাদী ভোগেচ্ছা, বস্তুত,বাস্তবতার কাল্পনিক নির্মাণের ওপর নির্ভরশীল। স্পর্শ-দৃশ্য-ঘ্রাণজ ইত্যাদি ইন্দ্রিয়ানুভূতির সূত্রে অনুভববেদ্য পণ্যের যেমন আবেগমথিত আচ্ছন্নতার ইমোশন্যাল চাহিদা আছে তারই পাশাপাশি উপযোগিতামূলক কার্যকারিতার দিকও আছে।বাস্তবতার বাস্তবিক পরিচিতির বদলে একজন স্ফূর্তিবাজ ভোক্তা আদতে স্বীয় অনুমানের ভিত্তিতে কাল্পনিক বাস্তবতার নির্মাণ করে নেন—ওই যেরকম সিনেমা চলাকালীন দর্শক যেভাবে নিজেকে নায়কের জায়গায় প্রতিস্থাপিত করেন কিংবা দর্শক যেভাবে (টি.ভি-তে)খেলা চলাকালীন নিজেকে সেই খেলোয়াড় ভেবে নেন। এই ধরণের প্রোজেক্টিভ ফ্যানটাসি বা আরোপিত কাল্পনিকতার সূত্রে উপভোক্তাগণ আদতে নিজেকে দেখতেই পছন্দ করে।এই দৃষ্টিকোণটিকেই আর্থ-সমাজবিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ হার্শম্যান ও মরিস হলব্রুক সাহিত্যের আঙ্গিনাতেও ইদানীং পর্ণোগ্রাফিক দৃশ্যাবলির বাড়বাড়ন্তের যুক্তি হিসাবে উল্লেখ করেছেন।মানসিক প্রক্রিয়াজাত এ জাতীয় আরোপিত কাল্পনিকতার সূত্রে হৃদয়-যন্ত্রণা বা যৌন- পরিতৃপ্তির দিকটি দিভ্‌তের কবিতায় লেভেল-টুর সোফা বা হাতঝরণা কিংবা টার্কিশ তোয়ালের মাধ্যমে প্রাণিত হয়ে দিভ্তের কবিতার বিষয়বস্ত-কাম-উৎসভূমি হয়ে উঠেছে।

এলিজাবেথ সি হার্শম্যান আর মরিস ই হলব্রুক-এর মতন আর্থ-সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন যে যদি এমনটি ভাবা হয় যে আধুনিক স্ফূর্তিধর্মীতার চাবিকাঠি রয়েছে ইন্দ্রিয়ানুভূতির চেয়ে বরং আবেগানুভূতির মধ্যে,তাহলে আধুনিক ভোগেচ্ছাকে মনোবাঞ্ছা বা স্ফূর্তিপূরণের খেলনা-যন্ত্র / মাধ্যম হিসাবে ভাবা যেতেই পারে।পণ্যগুলো আদতে কল্পনার পথ বানায়, তাকে প্রশস্ত করে তোলে এবং দিবাস্বপ্ন গোছের ভাবাবেগ তৈরি করার সূত্রে আকাঙ্খাপূরণের সহায়ক হয়ে ওঠে। দিভ্তের কবিতায় অমনই স্বপ্নতাড়িত নার্সিসাসি (শহুরে) যৌনতার দাখিলা রয়েছেঃ যার মধ্য দিয়ে কোনো একটি বিশেষ পণ্যকে ঘুরপথে বাজারজাত করার মনোমোহিনী কৌশলের ম্যানিফেস্টোটিও উচ্চকিত ঢঙ্গে পরিবেশিত হচ্ছে।পণ্যসংস্কৃতির অবাধ তাড়নায়,অতএব,কাল্পনিক ইন্দ্রিয়সুখের বিভিন্ন উচ্চকিত পন্থা আবিস্কৃত হচ্ছে,হয়ে চলেছে। প্রত্যাশিতভাবেই,ভোগবাদী এই আধুনিক বাজার-বিশ্বে সমস্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করেন দুনিয়াময় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অগণিত ঈশ্বর ওর্ফে নীতি-নির্ধারক,ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা, পরিবেশবিদ, মধ্যস্থতাকারী ইত্যাদি মানুষজন।পণ্য-জগতে উপভোক্তার স্বার্থই হল মুখ্য বিচার–বিবেচনার চর্চাবস্তু। স্বভাবতই, দুনিয়াজোড়া যে কোনোও মার্ট-মল-শপিংকমপ্লেক্স-সুপার মার্কেটগুলো হল আমাদের সময়কালের একটি প্রধানতম প্রতীকচিহ্ন,বাজার গণিতের মুখ্য উপাসনালয়।ভোগ্যবস্তুতে আনন্দ উপভোগ করেন বলেই অধিকাংশ ভোক্তা ভোগ-দর্শনে বিশ্বাস করেন। অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে উচ্চস্তরীয় জীবনযাত্রার মান হল অধিকতর সুখের পরিচয়জ্ঞাপক।আর এমনধারা সুখের জন্য তো কেবল টাকাকড়ি হলেই চলে না। আনন্দের অনুসন্ধান ও তার নিজীকরণ তো মার্কিন সংবিধানেই স্বীকৃত । সুতরাং , রোটি–কাপড়া-মকান ছাড়াও (কঞ্জিউমারিস্ট) বর্তমানতার নিরিখে ক্রয়-ক্ষমতাও অতি আবশ্যিক একটি সদ্-গুণবিশেষ!আহা আনন্দ! বাহা আনন্দ! @ কতোরকমের আনন্দ। অস্ত্র-বিক্রির এত যে খুল্লমখুল্লা বোলবালা ! রাষ্ট্রগুলোও কি তবে নির্লজ্জ নার্সিসাস ? অস্ত্র তার প্রসাধন।কিন্তু দু-দশ জন ক্রেতার ওপর নির্ভর করে ‘বাজার’ গড়ে ওঠে না।তাই এই পণ্যবিশ্বে সাড়ম্বরে একমাত্র পূজিত-বন্দিত-আরাধ্য ঈশ্বর হলেন আ-বিশ্ব ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তেত্রিশ কোটিরও ঢের ঢের বেশি উপভোক্তা। এহেন ধনবাদী পণ্য-বিশ্বের প্রাথমিক তন্ত্রসূক্ত হল বাছবিচার।রাইট টু চয়েসঃ পন্ডস ড্রিমফ্লাওয়ার নাকি টম-ডিক-হ্যারি ট্যালকম পাউডার?

বিশশতকীয় মানুষের নানান শ্রেণিবিভাগ ছিল।ব্র্যাকেটবদ্ধ বা চিহ্নিত গোষ্ঠীর সাহচর্যে তারা একাত্ম হতে পারতেন। কিন্তু একুশশতকে পা দিয়েই সেই পরিচয়লিপি যেন অব্যবহার্য হয়ে উঠেছে।এখন,এই অত্যাধুনিক বিশ্বায়িত সময়ে দাঁড়িয়ে কেউ কি আর নিজেদের নিছকই ‘শ্রমিক’ বা মেহনতী মানুষ অথবা চাষি-শিক্ষক-মজদুর শ্রেণি্ভুক্ত বলে মনে করেন?(এ-সময়ের)পণ্য-সংস্কৃতি অনুসারে আ-বিশ্ব মানুষের জেনারালাইজড্‌ বা সাধারণীকৃত আস্তিত্বিক পরিচয় হল যে ‘সর্বাগ্রে’ তিনি একজন উপভোক্তা।এবং একজন ভোক্তা হিসাবে আর্থিক ক্রয়ক্ষমতার বিচারে ক্রেতা-কাম-জনতার অধিকারের মাত্রা নির্ধারিত হয়।ভোগবাদ এবং আধুনিক “শিল্প সমাজ” এর কঠোর সমালোচনা করে বিশ্বখ্যাত তাত্ত্বিক হার্বাট মার্কুসে‘ওয়ান ডাইমেনশনাল ম্যান’-য়ে লিখেছিলেন যে এটি সামাজিক নিয়ন্ত্রণের একটি রূপ। মার্কুসে মনে করেন যে ‘আধুনিক’ গণতান্ত্রিকতা আদতে একটি সর্বগ্রাসী ব্যবস্থা।সংস্কৃতি এবং জনজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত যৌক্তিকতার আধিপত্যবাদী জগদ্দল পাথর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে,হচ্ছে।আর আধুনিক শিল্প সমাজগুলি আরও একটি “সমৃদ্ধ সমাজ” তৈরি করেছে, যা ক্রমবর্ধমান আরামদায়ক ব্যবস্থার শোষণমূলক প্রকৃতিকে গোপন রেখে আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলিকে শক্তিশালী করেছে। আধুনিক ভোক্তা সমাজে,মার্কুসে-র যুক্তি অনুসারে, স্বল্পসংখ্যক ব্যক্তিকে (আ-বিশ্ব ১%) আমাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য কেনার সুযোগ প্রদান করে স্বাধীনতার বিষয়ে আমাদের উপলব্ধি নিরূপণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থাকে “Unfreedom’ বা “অ-স্বাধীনতা” আখ্যা দিয়ে মার্কুসে মন্তব্য করেছেন যে এই অবস্থায়, ভোক্তারা প্রকৃত মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কাজ করে,কিংবা মনন –চিন্তনের ওপর ধেয়ে আসা ধ্বংসাত্মক প্রভাব বা বর্জ্য এবং পরিবেশগত ক্ষতিকে উপেক্ষা করে, এবং বস্তুবিশ্বের মাধ্যমে সামাজিক সংযোগ অনুসন্ধান করে।পাশাপাশি স্ট্যানলি লেবারগট-এর মতোন বিশিষ্ট আমেরিকান অর্থনীতিবিদের মন্তব্যটিও উল্লেখনীয় লেবারগট-এর মতে মুক্ত সমাজে মানুষের ভোগপ্রবৃত্তির মোটামুটি একটিই বৈশিষ্ট্য ঃ মানুষ সুখের সন্ধানে ব্রতী।১৯৯০ সালে একজন মার্কিন শ্রমিক সন ১৯০০-র থেকে ছয়গুণ বেশি আয় করে এবং একইসময়খণ্ডে বিশ্ববাজার জুড়ে ভিন্ন-বিভিন্ন গোত্রের পণ্যও হাজির হওয়ার কারণে সুখসন্ধানী মানুষের বর্ধিত আয় সেই অতিরিক্ত পণ্যের খরিদ্দারিতে ব্যয়িত হয়।হচ্ছে।এবং হবে ।

নীতা মাথুর সম্পাদিত ‘কঞ্জিউমার কালচার ,মর্ডানিটি অ্যাণ্ড আইডেনটিটি ‘ বইতে মাইক ফেদারস্টোনও জানিয়েছেন যে বেশ কিছু অর্থনীতিবিদ কিন্তু ভোক্তাবিশ্বের উত্থানের বিষয়টিকে সমস্যা হিসাবে গণ্য করার চাইতে সমাধান বলেই মনে করেন যেহেতু বেইজিং থেকে নিউইয়র্ক, লন্ডন থেকে জোহানেসবার্গ হয়ে সাও পাওলো পর্যন্ত ভোক্তাদের আরও পণ্য কিনতে উৎসাহিত করার জন্য,ভোক্তাদের চাহিদা পুনর্নবীকরণ এবং পণ্য ও পরিষেবার উৎপাদন বাড়ানোর উপায় খুঁজে বের করার প্রয়াস এখন সর্বত্র জারি।আধুনিক বাজার-বিশ্বে প্রায় ২৪ ঘন্টার জন্যই রুজিরুটিসন্ধানী হয়ে আ-বিশ্ব শ্রমজীবী মানুষ এখন সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। ভোগ্যপণ্যের প্রসারের ফলে আরও চাকরিবাকরি এবং অর্থনীতির প্রসার ঘটেছে। ফেদারস্টোন আরোও জানয়েছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ক্ষেত্রে, মার্কিন জিডিপির প্রায় 70 শতাংশ এখন আসে ভোক্তা ব্যয় থেকে।
শুধু ভারতবর্ষই বা কেন?খোদ বিশ্বই তখনো একটি গ্লোবাল ভিলেজ হয়ে ওঠেনি।ভারতীয় পণ্যজগতে রাজত্ব করত মোটামুটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন করগোনা কয়েকটি ব্র্যাণ্ড।চয়েস-এর মাল্টিপল অপশন কাম বাছবাছাইয়ের প্রেফারেন্সিয়াল পণ্যজীবিতা তখনো লাগু হয়নি।এমনকি,‘হো-আ’,‘এ-আই’-য়ের পূর্বসূরী ‘ই-মেল’-এ সীমাবদ্ধ আপস্টার্ট মুম্বইকরদের জীবনেও (ধীরে ধীরে হলেও)পশ্চিমি ছোঁয়ার প্রাদুর্ভাব ঘটেছে অবশ্যই।কবি জানাচ্ছেন মেরিন-ড্রাইভের জন-জঙ্গলে দুজনে মিলে ‘সিগারেট ফোঁকা’ / ‘ডিস্কো’ ইত্যাদি ‘আধুনিকতা’-র ‘গ্রহণ’ তখনই শুরু হয়ে গেছে।

গ্যাব্রিয়েল ও ল্যাংয়ের (দি অ্যানম্যানেজেবল কনজিউমার) মন্তব্য অনুযায়ী একুশশতকীয় আমরা প্রথমে ক্রেতা বা ভোক্তা,পরে অভিভাবক-শ্রমিক-শিক্ষক কিংবা নাগরিক। ভোক্তা হিসাবে আমাদের ভূমিকা থেকেই স্থির হয় আমাদের অধিকার,আমাদের ক্ষমতা; রাজনৈতিক ভোক্তা হিসাবে আমরা তাদেরই ভোট দিই ,যারা আমাদের কাছে সবচেয়ে সেরা প্রতিশ্রুতি বিকোয়। গ্যাব্রিয়েল-ল্যাং আরো লিখেছেন যে গুণগত মান নয়, উপভোক্তা হিসাবে আমরা সংখ্যার মাহাত্ম্যে মোহিত হয়ে পড়ি ; ভোগ শুধুমাত্র চাহিদাপূরণের মাধ্যমই নয়,আমাদের সামাজিক সম্পর্ক,পরিচয়,উপলব্ধির পাশাপাশি আমাদের জীবনযাপনেরও প্রতিচ্ছবিই বটে। হেমন্তয়ের কবিতাতেও যেন শহুরে মনের পণ্যতান্ত্রিক অনুরণনের আয়োজনঃ আয়োডিনবিহীন নুন কীভাবে বি.পি.বাড়িয়ে দেওয়ার সহায়ক কিংবা টিভি-চর্চার দৈনন্দিনতায় স্বাস্থ্যসংক্রান্ত প্রোগ্রামগুলো কীভাবে বিপি-বর্ধক হয়ে ওঠে।বস্তুত,
ভোক্তার শারীরবৃত্তি বিশ্লেষণ করে কতোরকমের ভোক্তার সন্ধান দিয়েছেন গ্যাব্রিয়েল ইয়ানিস ও টিম ল্যাঙের মতো তাত্ত্বিক অর্থনীতিবিদরা—যেমন, চয়নকারী ভোক্তা, ভাববিনিময়ী বা যোগাযোগকারী ভোক্তা,স্বত্ত্বা-অনুসন্ধানী ভোক্তা বা আবিস্কারক ভোক্তা।সমাজবিজ্ঞানী ল্যাশ (Lasch)-এর মন্তব্য অনুযায়ী মার্কিনী জীবনচর্যায় ‘রোরীং টোয়েন্টিজ’ নামে খ্যাত ভোগবাদের বকলমে আনন্দ,উপভোগ এবং স্বাধীনতা ক্রমে উনিশশোবিশের দশক থেকে জীবনযাপনের একটি মাধ্যম হয়ে
দাঁড়ায়। আইডেন্টিটি বা আত্মসত্ত্বানির্মাণ, বস্তুত,অত্যাধুনিক বিশ্ব-রাজনীতি ও সামাজিক সত্ত্বা-সংস্কৃতির বিকাশে অভীষ্ট লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন যে বিশশতকীয় সমাজতাত্ত্বিকতার সঙ্গে একুশের পণ্যতান্ত্রিক অত্যাধুনিকতার মূল বৈলক্ষ্মণ হল বিশশতকীয় শ্রেণি-লিঙ্গ-পেশাকেন্দ্রিকতার বদলে আ-বিশ্ব মানুষ এখন আরো অনিশ্চিত এবং কঠিনতর “মনস্তাত্ত্বিক আত্ম-পরিচয়’-অনুসন্ধানী। পছন্দসই পেশা, মনোমত সঙ্গী নির্বাচন,যৌন-চাহিদা, তদনুযায়ী পণ্য-তালিকার নির্মাণ ইত্যাদি আদতে ভোক্তা/গ্রাহকের আত্ম-সত্ত্বা গঠনে মুখ্য দিশা হয়ে উঠেছে।পাশাপাশি কিছু নতুনতর সমস্যাও সৃষ্টি করেছে।সমাজবিজ্ঞানী এবং অর্থশাস্ত্রীরা মনে করেন যে বস্তুতান্ত্রিক সংস্কৃতি,বস্তুত,আত্মপরিচয় নির্মাণে সহায়ক হলেও,ক্রমে,তেমনতর নির্মাণ প্রক্রিয়াকে ব্যাহতও করে।বহুবিধ ব্র্যাণ্ডেড জিনিসপত্র যেরকম,সাময়িকভাবে, সুস্ফিত ও বর্ধিত আত্ম-কেন্দ্রিকতা,আত্মসম্মান ও আত্মগর্বের কারণ হয়ে ফোলানো-ফাঁপানো স্বাভিমান গড়ে তোলে; ফলে,আধুনিক ভোক্তা-সংস্কৃতির নীট ফল হল পণ্যভোক্তাদের মধ্যে নার্সিস্টিক প্রবণতা বৃদ্ধি-অক্লান্তভাবে যা স্বাস্থ্য- শিক্ষা-বাসস্থান-রুজিরোজগারের মতো সামাজিক বিষয়গুলোকে,নিঃসন্দেহে – অতিমাত্রায়,প্রভাবিত করে। অতএব,একুশের বিশ্বায়িত পৃথিবীতে ইন্দ্রিয়সুখের আনন্দ আর পারিপার্শ্বিক বাস্তবতাকে এড়িয়ে চলা কোনোই আধুনিক মানুষের পক্ষেই আর সম্ভব নয় ।পূর্ণমাত্রায় জীবন উপভোগের অর্থই হয়ে দাঁড়িয়েছে ভোগেচ্ছার কাছে সম্পূর্ণ আত্ম-সমর্পণ। ইয়ানিশ/ ল্যাংয়ের ভাষায় একুশ শতকীয় ভোক্তা হল এক ‘totem pole’ around which a multitude of actions and ideologies now dance’।

অন্যদিকে, আধুনিক হেডোনিজম বা ভোগেচ্ছা আদতে সংবেদনশীলতার চেয়ে বরং অভিজ্ঞতা-জাত আবেগের সূত্রে সুখানুভূতির উত্তেজনায় পুড়তে চায়। আবেগগত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আনন্দ-সন্ধানই যদি আধুনিক ভোগ্যপণ্য-তান্ত্রিকতার মূল চাবিকাঠি হয়, তাহলে আধুনিক ভোগবাদকে একটি সহায়ক মাধ্যম হিসাবে দেখা যেতে পারে কেননা ভোগেচ্ছু মানসিকতার ক্ষেত্রে তা উপযুক্ত আবহ বা ইচ্ছাপূরণের অভীষ্ট সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়।ইয়ানিসের মন্তব্য অনুযায়ী এ যুগের আত্ম-প্রপঞ্চময় আনন্দবাদী পটভূমিতে ব্যক্তি হল an artist of the imagination, সৃজনশীল কাল্পনিকতার কথক-রূপকার।,যিনি স্মৃতি কিংবা তাৎকালিক পরিস্থিতির সূত্রে কল্পনার রসদ সংগ্রহ করেন।হেমন্তয়ের ‘ভাইরাস এলার্ট’ বইটির প্রায় সবকটি কবিতাতেই তেমনতর ‘পণ্যতান্ত্রিক’মন্ত্রগুলো সু-উচ্চারিত।বইটি কলকাতাস্থ বঙ্গীয় ভাষাপরিষদ কর্তৃক পুরস্কৃত।

ক্যাম্পবেল-য়ের মতো তাত্ত্বিক মনে করেন যে একুশশতকীয় ভোগবাদী পণ্যতান্ত্রিকতার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল কল্পনার অংশ হিসাবে ভোগ্যপণ্যগুলোর উপভোগ করে থাকে আধুনিক উপভোক্তা। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো সাধ্যাতীত মূল্যের পণ্যগুলোকে উইণ্ডোশপিং অথবা ইন্টারনেট ব্রাউজিং কিংবা ঝাঁ চকচকে ম্যাগাজিনের মুদ্রিত মসৃণ ছবির মাধ্যমে নয়নসুখজনিত পরিতৃপ্তি লাভ করে থাকে।অর্থ হয়—একুশের ভোগবাদ হল একালের প্রতিদ্বন্দ্বীহীন ( এবং প্রশ্নবিহীন)গয়ংগচ্ছতা।সোভিয়েত য়ুনিয়নের পতনের পর ভোগবাদের ভৌগোলিক প্রভাব পৃথিবীর কোণে কোণে ছড়িয়ে পড়েছে,পড়ছে। ১৭৮৯-য়ে উন্নয়নব্রতী মানুষেরই চাহিদা ছিল লিবার্টি-ইক্যুয়ালিটি-ফ্রেটারনিটি(স্বাধীনতা-সাম্য-সৌভাত্র)।চরৈবেতিতে পেরিয়ে আসা বিবর্তনের ধাপগুলো হল
১. কৃষি-প্রগতি
২. প্রথম আন্তর্জাতিকতা।
৩.শিল্প-বিপ্লব ওর্ফে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকতা,মানবিক বিজ্ঞানের শাখাবিস্তার।স্টীম ইঞ্জিনের আবিষ্কার
৪. ১৯৮৯ = আ-বিশ্ব বাজারবিস্তার। ব্যক্তিগত মালিকানা / সম্পত্তির অধিকার বনাম রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব/ দেখরেখ-এর অবসান।এবং ভুঁইফোঁড় সীমাহীন দুর্নীতি—তা সে কলকাতা হোক বা কোলন কিংবা ক্যালিফোর্ণিয়া!পাশাপাশি লাগামহীন যুদ্ধবাদিতা,অস্ত্রের আয়োজন। একবিশ্বের এক মোড়ল,তবু কেন এত যুদ্ধাস্ত্র? ২০২২-১৭৮৯ = দুশো তেত্রিশ বছর হয়ে গেল ‌তবুও সীমান্তমুক্ত পৃথিবীতে এতো সীমান্ত দ্বন্দ্ব। কেন? যোগ্যতমের উদ্বর্তন সুত্রানুসারে ধনবাদের বিবর্তনই তো এখন সর্বত্র ঘটমান।কত ভিন্ন ভিন্ন ধরণে প্রকাশ হয়ে চলেছে ধনবাদ। পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্রীয় ধনবাদ।পশ্চিম ইওরোপীয় সামাজিক ধনবাদ।আমেরিকায় লেসে ফেয়ার উদারবাদী ধনবাদ। অথচ বাড়ছে লাগামহীন বৈষম্য। কেস–ডিটন একটি অধ্যায়ের শিরোনাম দেন ঃ” হোয়াই ইজ ক্যাপিটালিজম ফেলিং সো মেনি?’ অন্যান্য ধনী দেশের তুলনায় হতাশাজনিত মৃত্যুর হার আমেরিকায় সর্বাধিক।আর এমনতর অসাম্যের জন্য বিশ্বায়নকে দায়ী করে বলা হচ্ছে যে বিশ্বায়নের কারণে, কাজের বাজারে, অশিক্ষিত শ্রমিকের চাহিদা ভীষণভাবে কমে গেছে। সেই জায়গায় বিদেশ থেকে সস্তার মজদুর বা মেশিন এনে সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স-খ্যাত ল্যারি রে মনে করেন যে ‘ fall of communism opened up new terrains of struggle for modernity.পূর্ব এশিয়া বা কমিউনিস্ট মহাচীনও আজ এই নতুনতর আর্থসামাজিক দ্বন্দ্ব যুদ্ধে ধরাশায়ী। তথ্যসামুদ্রিক জোয়ারের কল্যাণে এই প্রথম একুশশতকের দ্বিতীয় দশকের প্রথমার্ধে,পণ্যস্পৃহাজনিত ভোগবাদ এক সর্বপ্লাবী রোগের মত এশিয়া,লাতিন আমেরিকা বা আফ্রিকার নিম্নবিত্ত এলাকাতেও শিক্ষা আর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অভ্যন্তরে পাকাপোক্ত ডেরা গেঁথেছে।
পাঞ্চ ম্যাগাজিনের পাতায় “ I am a freshly slit chicken ‘ কবিতায় আধুনিক পন্যতন্ত্রকে তীব্র আঘাত করে শিলালিপিত রেখেছেন “ In a branded box শিরোনামেঃ—
‘In this branded chicken-shop/
A freshly slit chicken…
‘Have I become a Godrej Farm Fresh or a Venky’s chicken?
Or am I Gulab Bhai’s corner-shop poultry?
সমাজবিজ্ঞানী ইয়ানিস গ্যাব্রিয়েল এবং টিম ল্যাং বস্তুত কত রকমের ভোক্তার সন্ধান দিয়েছেন যেমন কনজিউমারস অ্যাজ চুজারস বা বাছাইকারী ভোক্তা, কনজিউমারস অ্যাজ কমিউনিকেটর বা সংযোগ রক্ষাকারী বক্তা কিংবা কনজিউমারস অ্যাজ এক্সপ্লোরার্স বা আবিষ্কারক ভোক্তা। এখানে অনুবাদিত ‘কেনাকাটার সময় স্বপ্ন’ কবিতায় দিভাটে একই সাথে সংযোগরক্ষাকারী এবং আবিষ্কারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ।ইয়ানিশ-ল্যাং আরো এক সমাজ বিজ্ঞানী Lasch- এর মন্তব্য তুলে ধরেছেন। Lasch- এর মন্তব্য অনুযায়ী্,১৯২০ এর দশক থেকে, মার্কিনী জীবনচর্যায় ‘রোরিং টোয়েন্টিজ’নামে খ্যাত ভোগবাদের বকলমে আনন্দ উপভোগ এবং স্বাধীনতা ক্রমে জীবনযাপনের একটি মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। অত্যাধুনিক সময়ের অধিকাংশ সমাজ বিজ্ঞানীই মনে করেন যে আজকের রাজনীতি, সংস্কৃতি বা ভোগ প্রবৃত্তির পটভূমিতে ভোক্তার পরিচিতি বা সত্তার প্রশ্নটিই মুখ্য আকার ধারণ করেছে। সেইজন্যই, শ্রেণী, লিঙ্গ পেশা ইত্যাদি সামাজিক বিভাজনগুলোর অন্তর্বতী পারস্য-দারার মুছে গিয়ে মানুষের বর্তমান মনস্তাত্ত্বিক পরিচয়টুকুই মুখ্য প্রতিনিধি বা প্রবক্তার স্থান দখল করেছে।একটি তথ্য উল্লেখ করার লোভ সম্বরণ করা বেশ শক্ত ঃ ১৪ শতকে ইংরেজি অভিধানে ‘consume’ শব্দটিকে নেতিবাচক অর্থে যেমন ধ্বংস করা, ফুরিয়ে ফেলা দফারফা বা নিকেশ করা ইত্যাদির অর্থে প্রায় ১৯ শতক পর্যন্ত ব্যবহার করা হতো।তারপরে তা আধুনিক ভোগ করার অর্থে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। একুশের বিশ্বায়িত পৃথিবীতে ভোগেচ্ছার বর্তমান রূপ অনুসারে ইন্দ্রিয়সুখের আনন্দ আর বাস্তবতাকে এড়িয়ে চলা কোন আধুনিক মানুষের পক্ষেই আর সম্ভব নয়।‘লাইফ স্টাইল’শব্দবন্ধটি বোধ হয় তারই সূত্রধর। আজকের বোধ শব্দে তাই লাইফটাইলটাই পাল্টে ফেলার ডাক শোনা যায়। কিন্তু সেই আহ্বান তো খুবই সীমাবদ্ধ এক শ্রেণীর উচ্চবিত্ত বা উচ্চ-মধ্যবিত্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।কত শতাংশ মানুষ লাইফস্টাইল শব্দবন্ধটি যে অর্থে ব্যবহৃত হয় সেই সামাজিক উচ্চতার লেভেল নাইন-এর বাসিন্দা হতে পারবেন ? উপযোগিতাহীন যাবতীয় দুঃস্বপ্নকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবার জন্যই প্রাচীর ভাঙ্গা হলো কিংবা গৌরীসেনীয় ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।অতএব,সিদ্ধান্ত হল যে লাইফের বদল না আসুক,স্টাইলের বদল অবশ্যই চাই! গ্যাব্রিয়েল ইয়ানিশ-ল্যাংয়ের মন্তব্যটির অবিকল উল্লেখ রাখতে চাইঃ ‘Whether en masse or as an individual, the consumer is no longer a person who merely desires, buys and uses up a commodity. Instead, we encounter the consumer in turn as one who choses, buys or refuses to buy; as one who displays or is unwilling to display… as one who needs or cherishes’.

একুশশতকীয় বিশ্ব হল সেই জগত যেখানে কেবলমাত্র আঙ্গুলের ছোঁয়াতেই চার দেওয়ালের গণ্ডিতে দুনিয়া হাজির হয়,বিশ্বদর্শন সম্ভবপর হয়, কিংবা তিজোরির চাবি ছাড়াই টাকাকড়ির বিনিময় বা কেনাকাটার মনোবাঞ্ছা বা তথ্যের আদানপ্রদান করা সম্ভব হয়।একজনের শরীর, পোষাক-আশাক,কথাবার্তা-সম্ভাষণ,বাড়ি-গাড়ি, খাওয়াদাওয়া, ছুটিছাটার নির্বাচন ইত্যাদির মাধ্যমে ভোক্তার স্বকীয়তা ও রুচির ভিন্নতা প্রকাশ পায়। বম্যান,বর্ডিয়ু,বর্দিলার-য়ের মতোন দিকপাল তাত্ত্বিকেরা মনে করেন যে পশ্চিমা ভোগবাদ হল নানারকম চৌম্বকীয় প্রলোভন ও চটকদার ভোগেচ্ছার একটি যথার্থ ফাঁদ ঃ সুতরাং, নিম্নবিত্ত হোক কিংবা উচ্চবিত্ত—যেমনতর অর্থনৈতিক অবস্থার সম্মুখীনই হোক না কেন, আধুনিক উপভোক্তার পালাবার পথ নেই। অত্যাধুনিক ব্যাখ্যায় ভোক্তা তার পছন্দের কাজটি সেরে নেয়– কেনাকাটা করে কিংবা কিনতে অস্বীকার করে; ভোক্তা হলেন সেই ব্যক্তি যিনি খোঁজাখুঁজি চালান; পণ্যের বিজ্ঞাপিত টেক্সটি ডিকোড করেন, প্রস্পেক্টাস পড়ে বুঝে নিতে চান ‘সহী হ্যায়’-এর কতটুকু ঠিকঠাক, মনপসন্দ পণ্যটিকে ঘিরে দিবাস্বপ্ন দেখতে শুরু করেন এবং শেষমেষ পয়সা খরচা করেন। অর্থাৎ জাগতিক বা বস্তুগত সুখানুসন্ধান থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরে থাকা তার পক্ষে আর সম্ভব নয়।’ ভাইরাস এলার্ট’ বইয়ের অজস্র কবিতায় ক্রেতা জগতের এইসমস্ত লক্ষণগুলোকে হেমন্ত দিভ্‌তে অতি সুস্পষ্ট রূপে ফুটিয়ে তুলেছেন।কবিতা পংক্তিগুলোর সাবলীল বিন্যাসে তিনি প্রথম পুরুষের উচ্চারণ ব্যবহার করেছেন।সেইসূত্রে কবিতার ভোগী পুরুষটি জ্যাকুয়ার ঝরনাটি নিয়ে এমন স্বপ্নমদির হয়ে উঠেছেন কিংবা শপিংমলের লেভেল টুতে রাখা একটি সোফাকে কেন্দ্র করে নিজেকে এক মোটাসোটা মহিলার পাছার তলায় স্থান পাওয়ার সম্ভাবনায় ভাবিত হয়ে উঠেছেন। আধুনিক পণ্যগ্রাহিতার এইসব বিষয়গুলোই সুতীব্র এবং সুতীক্ষ্ণ শ্লেষের সঙ্গে উচ্চারণ করেছেন হেমন্ত । বদ্রিলার লিখেছেন,’ সমস্ত সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করার জন্য উপভোক্তাকে সব সময়ই প্রস্তুত থাকতে হবে। অবাধ ভোগপ্রবণতার আবহে কোনরকম বিচ্যুতি ঘটলে তাকে খুব( সুনির্দিষ্ট ভাবে) স্মরণ করিয়ে দিতে হবে যে তার সুখী হবার কোনই অধিকার নেই’। কামনাবাসনার কলঙ্কহীন ‘নির্মল’ পরিতৃপ্তি এখন নতুনতর ‘নৈতিক’ দর্শনের ভিত্তিপ্রস্তর,আনকোরা আশ্বাস,এহসাস।

পণ্যতন্ত্র,বস্তুত, আনন্দকে পুনরুদ্ধার করতে চায়। পোস্টসোভিয়েট অত্যাধুনিক পোস্টমর্ডান সমাজে তাই ফ্যাক্টরি থেকে উৎপাদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থাৎ ফিনিশড্ প্রোডাক্ট হিসেবে বাজারে আসার সাথেসাথেই,পণ্যগুলো—বিজ্ঞাপনের দরিয়া-দিল আবহে কল্পনা-কাম-স্ফূর্তির উপকরণ হয়ে উঠছে।কঞ্জিউমার ক্যাপিটালিজমের পটভূমিতে হাল আমলের নেশন-স্টেটগুলোর নিবিড়পাঠের বিষয় হল দুর্নীতিগ্রস্ত,দারিদ্র-জর্জরিত,অনুন্নত শ্রেণির মানোন্নয়ন।কঞ্জিউমার ক্যাপিটালিজমের অর্থ তো ভোক্তার জন্য আরো বেশিমাত্রায় পণ্য নির্বাচনের সুযোগ। একচিলতে ভাবনা উঁকি দেয়ঃ১৯৬৯-এর ম্যানকিনটি বিধ্বস্ত হয়েছিল কি পন্যতন্ত্রের এমনতর অসহ অবাস্তবতা দূরীকরণের লক্ষ্যে ?

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes