
সৌরভ মজুমদার-এর কবিতা
যে যেখানে
০১
জেগে আছি; থাকি। শোনো —
‘সুখে আমায় রাখবে কেন’…
আত্রেয়ী গাইছে এখন, এই রাত্রে
আর নীলাঞ্জন কোল্ডপ্লের সায়েন্টিস্ট
ওরা কি জেনেই গ্যাছে !
এরপর, বিক্রমও আজ
যেমন করে গাইছে, আকাশ
ভেসে যায় — চব্বিশ বছর —
‘ট্রিস্ট উইথ ডেস্টিনি’ — বৃষ্টি এলো
এই মাত্র, সোয়া তিনটে
তুমি ! শোনো !
০২
নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে, দেখি
চোখবন্ধ করে, বেদনা
এবার শোনার পালা, প্রথমে কাছের
ক্রমশ দূরে চলে যাওয়া, উৎসে
ব্যথাগুলি কোলাহল ক’রে
-– তোমাকে ঘিরে থাকে — প্রতিটির ধ্বনি
ভিতরের কানে নিয়ে, শুনি
অপেক্ষাতরঙ্গে, ঈষৎ দোলায়
নিকানো উঠানে তুলসীমঞ্চের মতো
পবিত্র হয়ে উঠি; কণ্ঠিবদল প্রক্রিয়ায়
এরপর, লিখি…
০৩
এস্পিএস্এস্ না শিখিতে পাইবার দুঃখ আজিকেও
বিদ্যমান তথাপি তোমাকে ক্রমশ ছাড়িয়া আসি
এই দুঃখবোধ, গ্লানি, অপস্রিয়মাণ মানিয়াছি
— চতুর্বিংশতি বৎসর — হন্যমান — চব্বিশ বছর —
০৪
অবিরত ঝড়ে ক্ষয় সেতুমুখি স্বর
ক্ষীণ শ্বাসবায়ু যেন রুখা হিমাচলে
কাশী থেকে ছুটে যাই কাবা বরাবর
অল্পতাও সবুজের গ্রহণীয় হলে
মহাজনপদ ঘিরে হাঁটা নিরুত্তর
মনোভাষা লেখা দূর অপরার টানে
খরতর জলে শত ধ্বনিবিম্ব ফোটা
সহজতা হারা ভূমি কঠিন তরলে
শীর্ষ ছোঁয়া নিচু মেঘ বাষ্প জল-কণা
নির্ভার সলাজ স্পর্শে শেষ সত্য যাচে
বিনিময় সূত্রে গাঁথা প্রাণ সংযোজনা
অন্তিমে স্ব-ফল সাঁকো কৃষ্টি অভিলাষে
যত জানো তুমি তার সব-ই অজ্ঞতা
তোমার শূন্যতা দিও, শূন্য অক্ষ, স্রোতে
০৫
প্রায়শই ঘাই মারে অনন্য পৌরুষ, ‘জেগে আছো’ ?
অক্ষ থেকে জাগি…
ঘুমের ভেতরে, আজ
মাহ্সা জাগে — চুল বেঁধে নাজাফি জেগেছে
আওয়াজ কন্যা লাখেলাখ
— আর জাগে
লালকমল-নীলকমল
ফারজাদ, মহ্সেন, রেজা, ফেরদৌন, জাকারিয়া, ফুয়াদ
বেনকাব পৃথিবীর ঘুমে, তবু হিম
হিজাব বাহিনী, ইব্রাহিমের, পুরুষকার
০৬
এসো, উদ্যাপন করি — মূর্তি, পূজো, দুই
ঘুম মধ্যবর্তী পল, এই তে’তলার
পালকপ্রবণ ঘরে — ঘন আবাহনে
ভাষে, শিরোনামহীন কবিতা ক’টির
নাম, শব্দ ছবি আঁকা প্রথম পংত্তি
পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় কাব্যতত্ত্ব তিলাঞ্জলি
যেন, ওই ‘ঙুঙা’ নাম্নী ফল, ওড়া হাঁস —
পাতালের ঘর থেকে শিমুলে, তারায়
তেমনি নিষ্ঠায় ওহে, লেখো প্রত্যাখ্যান
ছাঁদে, কলোনি শরতে ভাসা ইতিময়…
তৃতীয় চোখের দৃষ্টিবহ যতটুকু
ক্ষয়, অশোক পথের ততো আয়োজনে
চৌকাঠ পেরোয় মহাজাগতিক আলো
ক্ষণপ্রভা, আমিনির হাসির মতোন
দুধে-আলতা শূন্যতার ক্ষত, তে’তলায়
সেপ্টেম্বর তিরিশের চৌষট্টি দেউলে
গাণিতিক, বিয়োগ সম্পন্ন কবিঘরে
ঈশ্বরীয় ফিরে আসা, চক্রের অশোকে…
‘রবীন্দ্রবিনয়সঙ্গীত’