তিরন্দাজির পথে, জেন <br /> চতুর্থ পর্ব <br /> পার্থজিৎ চন্দ

তিরন্দাজির পথে, জেন
চতুর্থ পর্ব
পার্থজিৎ চন্দ

‘জেন’- শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে চলা রহস্যময়, মিস্টিক এক সাধনপদ্ধতি; প্রাচ্যের সুগভীর দর্শনের একটি ধারা, যে ধারার মধ্যে মিশে রয়েছে পারমিতার ছায়া, ‘না-জানা’র মধ্য দিয়ে জানার গূঢ় পদ্ধতি। একটি সুবিখ্যাত জেন-কবিতায় পাওয়া যায়, ‘Sitting quietly, doing nothing / Spring comes, and the grass grows itself’। এই ‘কিছুই না-করা’র পদ্ধতি অর্জন করতে হয় দীর্ঘ অনুশীলনের মাধ্যমে। আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানের এই ধারার সঙ্গে তিরন্দাজির মতো একটি শৌর্যময় বিষয়ের কি কোনও সংযোগ থাকতে পারে? তিরন্দাজি কি শিল্প? এই শিল্পের মধ্যে দিয়ে কি প্রবেশ করা সম্ভব জেন-এর মিস্টিক পৃথিবীতে? আজ থেকে প্রায় সত্তর বছর আগে প্রকাশিত হয়েছিল অয়গেন হেরিগেল-এর ‘Zen in the Art of Archery’। ব্যক্তি-অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ এ কাহিনি যেন এক রোমাঞ্চকর শান্ত থ্রিলার, ইউরোপের চোখে ‘জেন’ দর্শন অথবা ভিন্নধারার ডিসকোর্স।

ঠিকঠাকভাবে ধনুক তুলতে প্রায় বছরখানেক সময় লেগেছিল, এটা যদিও খুব বড় কোনও ঘটনা নয়। কিন্তু মনে মনে বেশ তৃপ্তি পেয়েছিলাম। জাপানে আত্মরক্ষামূলক বিভিন্ন খেলা রয়েছে, সেখানে প্রতিপক্ষকে অপ্রত্যাশিত আঘাতে হারানোই দস্তুর। যদিও আক্রমণাত্মক খেলা তবু এসব খেলায় আক্রমণের থেকেও বেশি দরকার স্থৈর্য, নিজের শক্তিকে নিজে অনুভব করা। প্রাচীণকাল থেকে এ খেলার প্রতীক ‘জলধারা’। জেন-মহাগুরু লাও-ৎসু তাই বলেছেন, সঠিক জীবনযাপন আসলে জলের ধর্ম।
যা ভীষণ নমনীয় তাও কিন্তু সব থেকে কঠিন বস্তুকে কাঠিন্যের নিরিখে হারিয়ে দিতে পারে।
গুরুজি’র একটা কথা খুব ঘুরে বেড়াত আমাদের মধ্যে, ‘যার শুরু যত ভাল তাকে শেষের দিকে তত কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে।’ আমার শুরু মোটেই সহজ-সরল ছিল না; ফলে আগামী দিনগুলির দিকে তাকিয়ে কিছুটা স্বস্তি পেতাম।
ধনুক তোলার পরের পর্ব ছিল তির ছোড়া। এতদিন পর্যন্ত আমরা যে যেমনভাবে পারতাম তির ছুড়ে গেছি, এতদিন পর্যন্ত ধনুক তোলাই আমাদের কাছে প্রধান বিষয় ছিল, তির ছোড়া নয়। তির ছোড়া বিষয়টি নিয়ে তেমন মাথাও ঘামাতাম না। কিছুটা দূরে একটা খড়ের আঁটি চাঁদমারি হিসাবে রাখা থাকত, তির দিয়ে সেটাকে ফুঁড়ে বেশ তৃপ্তি পেতাম। যদিও সেটাকে তিরবিদ্ধ করা এমন কঠিন কোনও কাজ ছিল না; কারণ আমরা মেরেকেটে দশ-পা দূরে দাঁড়াতাম তির হাতে।
ধনুকের ছিলা টেনে তির ছোড়ার বিষয়টির দিকে একবার নজর দেওয়া যাক – ছিলা টেনে থাকতে থাকতে এমন একটা সময় আসত যখন আর সেটা টেনে রাখা যেত না; ছেড়ে দিতেই হত। অনেকেই ভাববেন ছিলা টেনে রাখতে রাখতে যে সময় হাত দুটো ব্যথায় টনটন করে উঠবে, আর সহ্য করা যাবে না সে সময়টাকেই সঠিক সময় হিসাবে গণ্য করতে হবে। বিষয়টা কিন্তু একদমই তা নয়; সঠিক সময়ের সঙ্গে ব্যথার কোনও সম্পর্ক নেই।
আমাদের চামড়ার দস্তানা দেওয়া হত, ছিলার টান সহ্য করবার জন্য বুড়ো আঙুলের কাছে মোটা প্যাড দেওয়া থাকত। এক এক সময়ে ছিলার টান অসহ্য হয়ে উঠত।
ছোড়ার সময় বুড়ো আঙুল দিয়ে তিরটিকে ছিলার সঙ্গে চেপে ধরতে হত। পরের তিনটে আঙুল দিয়ে তিরকে এমন ভাবে ধরতে হত যাতে ফসকে না-যায়। ছোড়ার সময়ে এই চারটি আঙুলকে ধীরে ধীরে ছেড়ে দিতে হত। টানটান ছিলা থেকে আঙুলগুলি সরে গেলেই টংকার শোনা যেত, তির উড়ে যেত লক্ষ্যের দিকে। কিন্তু একটা সমস্যাও ছিল, যতবার তির ছুড়তাম ততবার বেশ জোরে ধাক্কা এসে লাগত শরীরে; সারা শরীরের সঙ্গে তির-ধনুকও নড়ে যেত সে ধাক্কায়। মাখনে ছুরি চালানোর মত হতে হবে তিরচালনা; সেটা আর হত না অধিকাংশ সময়ে। ধাক্কার চোটে তির এদিক ওদিক চলে যেত।
গুরুজি বিষয়টা লক্ষ্ করেছিলেন, দেখেছিলেন সাবলীলভাবে ধনুক তুলতে আমি যতটা অভ্যস্ত তির ছুড়তে ততটা নয়। একদিন তিনি বললেন, ‘এখনও পর্যন্ত তোমরা তির ছোড়ার প্রাথমিক বিষয় শিখেছো; আমাদের এর পরের ধাপ বেশ কঠিন। তিরন্দাজির পরের ধাপে যাবার জন্য আমাদের এটুকু কষ্ট করতেই হবে।’
এ কথা বলে গুরুজি তাঁর ধনুক তুলে নিয়ে তির ছুড়েছিলেন। খুব খুঁটিয়ে গোটা প্রক্রিয়াটি দেখেছিলাম; গুরুজি ডানহাতের আঙুলগুলি ছিলা থেকে আলাদা করছেন, তির লক্ষ্যের দিকে সাঁইসাঁই করে ছুটে যাচ্ছে। ডান-হাতে একটা ধাক্কা এসে লেগেছিল কিন্তু গুরুজির সারা-শরীর ছিল স্থির। তির ছোড়ার আগে ডানহাত কনুইয়ের উপর থেকে বেঁকে ছিল, কিন্তু তির ছোড়ার পর তা আবার প্রসারিত হয়ে আগের জায়গায় ফিরে এসেছিল। ধাক্কাটাকে যেন শুষে নিয়েছিলেন গুরুজি।
ছিলা থেকে তির উড়ে যাবার সময় কম্পন রেখে যায়, ছিলা তিরতির করে কাঁপতে থাকে। টংকার ছাড়া তিরের অস্তিত্ব কল্পনা করা দুঃসাধ্য। গুরজির ক্ষেত্রে এই তির ছোড়া এতটাই মসৃণ, যে একে বাচ্চাদের খেলা বলে মনে হয়।
প্রচণ্ড শক্তির এই সাবলীল ও মসৃণ প্রকাশের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে প্রাচ্যের নন্দনতত্ত্বের মূল রূপ। এতদিন পর্যন্ত আমি ভেবে এসেছি লক্ষ্যভেদ করার পিছনে সব থেকে বড় যে বিষয়টি রয়েছে তা হল সাবলীলভাবে তির ছোড়া। আমার রাইফেল-শুটিং-এর কিছুটা অভিজ্ঞতা ছিল, হাত সামান্য কেঁপে গেলে লক্ষ্য থেকে দৃষ্টি সরে যাবে। তিরন্দাজিকেও আমি সে জায়গা থেকে বিশ্লেষণ করেছিলাম। তিরন্দাজি মানে আমার কাছে সাবলীলভাবে ধনুক তোলা, ঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করা, তারপর ছিলা থেকে তির ছোড়া, ধীরে ধীরে ধাক্কা শুষে নিয়ে স্থির হয়ে যাওয়া। লক্ষ্যভেদ করার এ পদ্ধতি রপ্ত করা আমার তিরন্দাজির শিক্ষার উদ্দেশ্য। বহু পরিশ্রম করে ও ধৈর্য্য নিয়ে এ কারণেই আমরা সবাই তিরন্দাজি শিক্ষা করছি। কিন্তু গুরুজির একটা কথা আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াত; গুরুজি বলেছিলেন এর পরের ধাপ অনেক বেশি কঠিন, এতদিন আমরা যা শিখে এসেছি তার থেকে অনেক বেশি পরিশ্রমসাধ্য। কী সেই ধাপ আমি ভেবে পেতাম না।
সে ধাপ যাই হোক, আমি গুরুজির নির্দেশমতো ধৈর্য্ ধরে এক মনে তিরন্দাজি শিক্ষা করে যেতাম; কিন্তু কিছুতেই যেন সফল হতে পারছিলাম না। সব চেষ্টা জলে যাচ্ছে বলে মনে হত। মাঝে মাঝে মনে হত, যখন এত চিন্তাভাবনা না করে এক নাগাড়ে মনের সুখে তির ছুড়ে যেতাম তখনই যেন বেশি ভাল তির ছুড়তাম। সব থেকে বেশি ভুগিয়েছিল ডানহাতের বুড়ো আঙুলের সঙ্গে তির ধরে থাকা আঙুলগুলি; তেড়েফুঁড়ে জোর করে তির ধরে থাকার কারণে ছোড়ার সময় ঠিক তির নড়ে যেত। তির ছোড়ার পর ডান-হাতকে শান্তভাবে গুটিয়ে নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ, আমি সেটাও ঠিকঠাক করতে পারতাম না তখন। গুরুজি একনাগাড়ে ঠিকভাবে তির ছোড়ার কৌশল দেখিয়ে যেতেন, আমিও নাছোড়বান্দা হয়ে গুরুজির কায়দায় তির ছুড়তে চেষ্টা করতাম। ফল হত হিতে-বিপরীত; আগের থেকেও খারাপ। নিজেকে মাঝে মাঝে কেন্নোর মত লাগত, এমন এক কেন্নো যে তার শয়ে শয়ে পা নিয়েও বিন্দুমাত্র এগিয়ে যেতে পারছে না; কারণ, সে দিশাহারা।
ভয়ে আঁতকে উঠতাম, আমার ব্যর্থতার যেন কোনও সীমাপরিসীমা নেই। গুরুজি কিন্তু ততটা উদ্বিগ্ন হতেন না। তিনি হয়তো অভিজ্ঞতা থেকে জানতেন যে এই পর্যায়টা পার হতে হয় সমস্ত শিক্ষার্থীকে। গুরুজি শুধু বলতেন, ‘তোমাকে কী করতে হবে, কীভাবে তির ছুড়তে হবে সে নিয়ে একদম ভেবো না। দেখবে তির একদিন তোমাকে অবাক করে নিজে থেকে ছিলা থেকে উড়ে যাবে, তোমাকে কিছুই করতে হবে না। দেখবে একদিন তোমার বুড়ো আঙুল থেকে ছিলা নিজেকে ছিন্ন করবে, তুমি বুঝতেই পারবে না। এখন তুমি কিছু করার জন্য ডান হাত প্রসারিত করছ, একদিন এমন আসবে যে কোনও উদ্দেশ্য ছাড়াই তোমার ডানহাত প্রসারিত হবে’।
দিনের পর দিন, মাসের পর মাস কেটে যায়; আমি খুঁটিয়ে দেখে আবার বুঝতে চেষ্টা করি গুরুজি ঠিক কীভাবে তির ছুড়ছেন। কিন্তু নিজে একটা তিরও সেভাবে ছুড়তে পারি না। একরাশ চিন্তা মনের মধ্যে জমাট হয়ে উঠেছিল, অসহ্য হয়ে উঠছে এ পদ্ধতি। দিনের পর দিন দু-হাত দিয়ে তিরধনুক আঁকড়ে ধরছি, তির ছুড়ে যাচ্ছি, অথচ সাফল্য পাচ্ছি না।
এই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়ায় জোর দিতাম, বুঝতাম কাঁধ আর হাতের মাংশপেশি আবার শক্ত হয়ে উঠছে; একদম স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে থাকতাম তিরধনুক হাতে। গুরুজিকে নকল করতেই আমি এসব করতাম। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হত না, কারণ দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকার ফলে আমার সাবলীল ভঙ্গি চলে যেত। হয়তো এসবই গুরুজি’র অভিপ্রায় ছিল, তিনি চেয়েছিলেন এই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে যেতেই একদিন বিষয়টি আমাদের কাছে জলভাত হয়ে যাবে।
একদিন গুরুজিকে বলেছিলাম, ‘জানেন গুরুজি, আমি বুঝি তির ঠিকঠাক ছুড়তে গেলে হাত প্রসারিত করার সময় কোনও ঝাঁকুনি লাগলে চলবে না। কিন্তু যতবার করতে যাই ততবার ব্যর্থ হই। যদি হাত শক্ত করে টানটান করে প্রসারিত করি, আঙুল খোলার সময় ঝাঁকুনি কিছুতেই আটাকাতে পারি না। আবার হাত আলগা করে রাখলে আরেক মুশকিল, সেক্ষেত্রে হঠাৎ ছিলা থেকে তির ছুটে যায়। সে মুহূর্তে আমার আঙুলের আর কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না তিরের উপর। ধনুকও ঠিকঠাক বাঁকে না। এই দুই অদ্ভুত ব্যর্থতার মাঝখানে আটকে পড়েছি; কিছুতেই বেরোতে পারছি না।’
‘বাচ্চার দিকে মায়ের বাড়িয়ে দেওয়া আঙুল দেখেছো? দেখেছো সে কীভাবে আঙুল ধরে থাকে? ছিলা সেভাবে ধরতে হবে তোমায়। শিশুর আঁকড়ে ধরা আঙুলের শক্তি অসীম, কিন্তু কী নরম একবার ভেবে দেখো। তাই সে যখন আঙুল ছেড়ে দেয় বিন্দুমাত্র ঝাঁকুনি লাগে না। সেটা কেন হয় জানো? একটাই কারণ, শিশু আঙুল ধরার সময় অতশত ভাবে না। এভাবেই ধরতে হবে, এটাই আমার সব থেকে বড় শেখানোর বিষয় তোমাদের।’
গুরুজি আরও বলেছিলেন, ‘বাচ্চাদের খেলা দেখেছো মন দিয়ে? দেখবে নিজেকে ভুলে গিয়ে, উদেশ্যবিহীনভাবে বাচ্চারা এটা-ওটা নিয়ে খেলা করছে। আমরা বলি বাচ্চারা খেলছে; কিন্তু একটু খুঁটিয়ে চিন্তা করলে বুঝবে, খেলনাগুলোও বাচ্চাদের সঙ্গে খেলা করে চলেছে’।
‘আমি বুঝতে পারছি এই উদাহরণ দিয়ে আপনি কী বোঝাতে চাইছেন, কিন্তু গুরুজি আমার অবস্থা তো একটু আলাদা। ধনুক তুলে নেবার পর শুধু মনে হয় তির না ছোড়া পর্যন্ত আমি উত্তেজনা সহ্য করতে পারছি না। আমার শ্বাস ফুরিয়ে আসে, তখন তির না-ছুড়ে আর কোনও উপায় থাকে না।’
‘বেশ বলেছো’, গুরুজি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আর এখানেই গলদ লুকিয়ে রয়েছে। আচ্ছা, তুমি কি ভেবে দেখেছ কেন তোমার শ্বাস ফুরিয়ে আসে? কেন কিছুটা আগে তির না-ছুড়ে তুমি থাকতে পার না? ঠিক সময়ে ঠিক ভাবে তির ছুড়তে গেলে নিজেকে বিলীন করে দিতে হয়। তুমি সেই পরম ক্ষণের জন্য অপেক্ষা করতে পারো না বলেই বারবার ব্যর্থতায় ডুবে যাও। যতদিন না সে ক্ষণের সন্ধান পাচ্ছ ততদিন তোমাকে নিজের মধ্যে এক শক্তি খুঁজে যেতে হবে; সে শক্তি তোমার ভেতর থেকে উঠে আসা, কিন্তু সে তোমার অস্তিত্ব ভুলে নিজে থেকে কাজ করবে। যতদিন তোমার এই খোঁজ চলবে, যতদিন তুমি তার সন্ধান না-পাবে ততদিন তোমার হাত ওই শিশুর মতো প্রসারিত হবে না, ততদিন ফলের খোসা ফেটে বীজ ছড়িয়ে পড়ার সাবলীলতা তুমি অর্জন করতে পারবে না।’
এই ব্যাখ্যা আমাকে আরও বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দিয়েছিল, গুরুজিকে বলেও ছিলাম সেটা, ‘দেখুন আমি ধনুক তুলি, তির ছুড়ি – সবই কিন্তু একটা লক্ষ্যভেদ করতে। আমার কাছে ধনুক তোলার প্রক্রিয়া শেষের শুরু মাত্র, লক্ষ্যভেদ করা সে প্রক্রিয়ার শেষ। এ পারম্পর্য আমি কিছুতেই অস্বীকার করতে পারি না; একটি শিশুর কাছে বিষয়টা আলাদা।’
গুরুজি এই প্রথম উচ্চকিত স্বরে বলেছিলেন, ‘প্রকৃত শিল্পও তাই, প্রকৃত শিল্পের কোনও কারণ বা তথাকথিত উদ্দেশ্য থাকে না। ওই লক্ষ্যভেদ করবার জন্য যত মাথাফাটাফাটি করবে তুমি তত ব্যর্থ হবে, তোমার সাধনার জগত থেকে চ্যুত হবে। তুমি নিজেকে স্ব-আরোপিত ইচ্ছাই বড্ড বেশি জড়িয়ে ফেলছ। তুমি ভেবে চলেছো তুমি যা করতে চাইছ তা সচেতন ভাবে না-করলে হবে না’।
আমিও ছাড়বার পাত্র ছিলাম না, মরিয়ে হয়ে উঠেছিলাম; গুরুজিকে বলেছিলাম, ‘কিন্তু গুরুজি, আপনিই তো শিখিয়ে ছিলেন যে তিরন্দাজি নিছক অবসর-বিনোদন নয়; এর একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য আছে। এমনকি একে জীবনমরণের একটা ব্যাপার হিসাবেও ভাবা যেতে পারে…’।
গুরুজির মুখে অদ্ভুত প্রশান্তি, ‘আমি এখনও তাই-ই বলছি, তিরন্দাজির মহাগুরুরা বলেন – একটা তির, একটা জীবন। কিন্তু এর অর্থ তুমি এখন বুঝতে পারবে না; তোমাকে বরং আরেকটা উদাহরণ দিয়ে বোঝাই একটু। তিরন্দাজির মহাগুরুরা কী বলেন জানো? ধনুকের অর্ধবৃত্তাকার উপরের অংশ দিয়ে ধনুর্ধর আকাশকে বিদ্ধ করেন, আর ছিলা দিয়ে এই পৃথিবীকে উলম্বভাবে ধারণ করে রাখেন। যদি তির ছোড়ার সময় বিন্দুমাত্র ঝাঁকুনি লাগে তো ছিলা ছিঁড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। যারা শুধুমাত্র উদ্দেশ্য নিয়ে তিরন্দাজি করতে আসে, যারা উগ্র মেজাজের তাদের কাছে এর ফল হয় মারাত্মক। মহাগুরুরা মনে করেন সে সব মানুষ স্বর্গ আর মর্ত্যের মাঝে ত্রিশঙ্কু অবস্থায় দুলতে থাকে।’
‘তা হলে আমার কী করা উচিত এখন?’
‘তোমাকে অপেক্ষার শিল্প রপ্ত করতে হবে।’
‘কীভাবে একজন ব্যক্তিমানুষ সে অপেক্ষার শিল্প রপ্ত করতে পারে?’
‘ধীরে ধীরে তোমার নিজেকে ভুলে যেতে হবে, নিজের সর্বস্ব বিসর্জন দিতে হবে, এমন ভাবে সেটা করতে হবে যেন তোমার মধ্যে বিন্দুমাত্র কিছু অবশিষ্ট না-থাকে। যা থাকবে তা হল এক উদ্বেগশূন্য অবস্থা, ছিলার টানের মতো অনেকটা।’
‘তা হলে আমাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে উদ্দেশ্যবিহীন হতে হবে, তাই তো?’
আমার প্রশ্ন শুনে গুরুজি কিছুটা থমকে গেছিলেন, ‘আজ পর্যন্ত কোনও ছাত্র আমাকে এ বিষয়ে কোনও প্রশ্ন করেনি, তাই আমি এর উত্তর জানি না’।
‘আমাদের সে শিক্ষা কখন শুরু হবে?’
‘সময় আসবেই, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে।’

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes
410 Gone

410 Gone


openresty