একটি মৃত্যুর পর
(উৎসর্গ-গৌতম বসু)
বর্ণালী কোলে
(১)
বাড়ির কাজ করতে করতে জামা ভিজে গিয়েছিল
ভেবেছিলাম স্নান করে নেব
গিজারে জল গরম করতে দিয়ে ফোন দেখছিলাম
হৃৎপিণ্ড চড়াৎ করে লাফিয়ে উঠল
একজন পোস্ট করেছেন,আপনি নেই
তারপর আর একজন,তারপর আর একজন,আর একজন,আরো,আরো..
এখনও বুকের মধ্যে ওঠাপড়া
মূক চেয়ে আছি
২ রা জুন সন্ধে ছটার কথোপকথন
শেষ কথোপকথন হয়ে গেল
কাশছিলেন বারবার
বলছিলেন “করোনা নয়,ফুসফুসে সংক্রমন
ডাক্তার বলেছেন কেশে কেশে কফ তুলতে হবে
এছাড়া আর উপায় নেই”
কত খুশি হয়েছিলেন আমার ফোনে
বলছিলেন,“মেয়েটির অনেকদিন খোঁজ নেই
দু’দিন ভাবছিলাম ”
টেলিপ্যাথি বলে পৃথিবীতে সত্যিই কিছু আছে
না,স্নান করতে যেতে পারি নি এখনো
চুপ বসে
পৃথিবীতে মড়ক
সব জীবিত মানুষই এখন মৃত্যুর আস্তিনে
আজ অথবা কাল
প্রয়োজন হলেই যখন তখন ফোন করে বিরক্ত করতাম
নাটক বলুন,চলচ্চিত্র বলুন
আদর্শ বলুন
বলুন তত্ত্ব
বলুন “হায়েনাদের সঙ্গে কীভাবে সহাবস্থান সম্ভব?”
মাথা নীচু করে আছি
মাথার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে পুণ্য নদী
আপনারই উচ্চারণ-পবিত্র বারিধারা
বয়ে যাক যতদিন বাঁচি
আকাশে পৌঁছে গেলেন,এত দ্রুত?
দীপশিখা হয়ে গেলেন
এত দ্রুত,এত দ্রুত?
আজ থেকে ওই দীপ,ওই নক্ষত্র আপনার নামে হোক
(২)
আপনি এখন চুল্লির মধ্যে
লেলিহান আগুন,ছাই
জেগে উঠবেন না কখনও আলোর স্পর্শে
রচিত হবে না ভুবন
প্রচার থেকে অনেক দূরে
আপনি যেন নির্জন কোনও গ্রাম
একা একা লেখা
নিজের জায়গাটুকু নিজেরই রক্তে পাওয়া
বৃষ্টি হয়ে আসবেন আবার
দিকে দিকে জন্মাক কবিতাগাছ
(৩)
জীবনের গান ভালো লাগছে না
সব শব্দ, সব উচ্ছ্বাস অরুচি আজ
ফোনে হাজারও নোটিফিকেশনের শব্দ
নিতে পারছি না আজ
মা সারাক্ষণ পাখি তাড়াচ্ছে, বিড়াল
“যা,যা,হুশ,হুশ..”
নীরবতাকে ভেঙে দিচ্ছে বালতির শব্দ
বহুদিন বৃষ্টির পর রোদ, মধ্যাহ্ন কূজন
চিরে দিচ্ছে আমায়
পৃথিবী,একটু থামো,একটু
শোক হোক, শোক
আমাকে নিঃশব্দের দেশে নিয়ে চলো
(৪)
একজনকে মুছে ফেলতে একদিনও লাগে না?
মানুষ এত উদাসীন
জীবন আজ ভাবি, সরলতার
খ্যাতির দৌড় থেকে, ভন্ড হৃদয় থেকে
অনেক ভালো নিজস্ব যাপন
কী হবে এইসব কুচক্রী টেবিলের
মোমবাতির আভিজাত্যে?
জীবন বয়ে যায় কেবলি
ফুল হয়ে ভাসো
বর্ষা পেরিয়ে, চলো, ফিরি আপন গৃহে
মুখোশ নয়,বাঁচি একান্তে,বিশ্বাসে
ঝরে যাওয়ার আগে সূর্যাস্তের আভাটুকুর মতো রয়ে যাই যেন
এমন কবিতা পড়ার পর আর বলার মতো কিছু থাকে না। শ্রদ্ধাভাজন কবি গৌতম বসুর প্রতি এটি উপযুক্ত শ্রদ্ধা নিবেদন।
অসাধারণ শ্রদ্ধার্ঘ্য।