আমার মুক্তি আলোয় আলোয় <br /> বেবী সাউ

আমার মুক্তি আলোয় আলোয়
বেবী সাউ

ফাঁকা মাঠ। ধান উঠে গেছে। ধানগাছের অবশিষ্ট খড়, যে অংশটি মাটিতে গেঁথে আছে–পা যাচ্ছে ফালাফালা হয়ে, কিন্তু হুঁশ নেই। মনের মধ্যে ভয় নেই। পাখিদের মত হালকা শরীর নিয়ে আমার শৈশব আমার কৈশোর উড়ে যাচ্ছে পাকা ডাঁসা কুলগাছটির দিকে। বাকি বন্ধুরা ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছে সেখানে। শুকনো লম্বা বাঁশ দিয়ে কুল পাড়া চলছে— কুল গাছের মাথায় পড়ছে ঝপাৎ ঝপাৎ বাঁশের ঘা। আর বেচারা কুল গাছ নিজে বাঁচতে, একে একে সব কুলফল ঝরিয়ে দিচ্ছে মাটিতে। হঠাৎ হঠাৎ করে এমনভাবেই আমার কাছে মনখারাপ আসে। একটু আগে যে মন নিয়ে উড়ে আসছিলাম, পাখি হয়ে– ব্যক্তি হয়ে ওঠা এই কুলগাছ সে আনন্দটুকু ছিনিয়ে নিয়ে, বিষাদের একটা পরশ মাখিয়ে দিল যেন! তখন কুল পাড়তে যাওয়ার সমস্ত অ্যাডভেঞ্চারটাই মাটি, আর আমি যে বেখাপ্পা ধরনের বোকা একটা, বন্ধুরা এটা মেনে নিল। বলা ভালো শিওর হল। কথা গিয়ে পৌঁছালো আমার মায়ের কানে। আমাকে ভয় দেখানো হল, ওইযে ‘পুরনো ডিহি ‘ সেখানে মৃত আত্মাদের বাস! যাওয়া বারণ। কড়ে আঙুল কামড়ে যাওয়া যাবে ভেবে, আমিও চুপ করে থাকলাম তখনকার মতো! কিন্তু ‘পুরনো ডিহি’ আমার কাছে তৈরি হল সেই আশ্চর্য রূপকথার রাক্ষসরাজ্যের। বিকেলে যখন বাবার সঙ্গে বেড়াতে যেতাম মোরাম রাস্তা ধরে, ভয়ে ভয়ে তাকাতাম সেই মাঠের দিকে। দেখতাম, সূর্যের রঙ রক্তের মত লাল। বেচারা কুল গাছটি যেন কত কত বছরের শেকল পায়ে দাঁড়িয়ে আর দেখতাম ওখানে মেঘেরা ছবি আঁকে। পুতুল বানায়। নৌকো ভাসায়। আমার এক জ্ঞাতি সম্পর্কে দাদু একবার আমাকে বলেছিলেন, পৃথিবীতে যা যা দৃশ্য আছে মেঘেরা তাই দেখে, আর নিজেরা বানানোর চেষ্টা করে। মেঘেদের সেই চেষ্টা দেখার লোভে আমি বাবার সঙ্গে বেড়াতে যেতাম। আর দেখতাম প্রতিটি মুহূর্ত যেন কবিতার মত সুন্দর… মেঘেদের সঙ্গে আমিও লিখতাম। এখানে ‘মেঘের বাড়ি’ নৌকো পেরিয়ে ‘ তোমার সাথে যাবো ‘… পরের লাইন, তার পরের লাইন… আর তখনই একটা দুষ্টু আকাশি মেঘ রঙ দিয়ে মুছিয়ে দিত সবটুকু… রাগ হত খুব… মনে হত আমি বড় হলে মেঘ হবো। আর আকাশি মেঘটিকে করে দেব ‘বেবী ‘… বুঝবে কেমন মজা!

যখনই “আমি চঞ্চল হে/ আমি সুদূরের… ” সুদূর শব্দটি শোনা মাত্রই আমি এই ‘পুরনো ডিহি’ থেকে ভেসে আসা সুরটিকে ধরতে চাইতাম। যেন কত না কত রহস্য ভেদ করে, কত না কত আলো, অন্ধকারের খেলা ভেঙে এই সুর এসে বসেছে আমাদের পশ্চিমের ছোট বারান্দার মাদুরে। গানের মাস্টারমশাই দুলালবাবু চোখ বন্ধ করে গেয়ে যাচ্ছেন, আর আমি হারিয়ে যাচ্ছি সেই মাঠের গভীরে বাবলা গাছের জঙ্গলে। পাখি ডাকছে। বন্ধ পাখি। মেঘ উড়ছে। বন্দী মেঘ। হাওয়া বইছে। শিহরিত। সূর্য এখানে রক্তের মত লাল। আর আমি অন্যমনস্ক হয়ে সুর দেখছি। সুর গুনছি। তার তখনই সামনে দিয়ে উড়ে গেল আমার পোষা শালিক ছানা। গান সব রইল পড়ে। সুর গেল ছিড়ে। আর পশ্চিমের সেই মাঠ হয়ে গেল দিগন্ত বিস্তৃত। আমি ছুটলাম পাখির ওড়া আটকাতে। স্যার চোখ বন্ধ করে ততক্ষণে ঢুকে পড়েছেন গীতবিতানে…আর আমি ছুটছি…ছুটছি… পোষা পাখি চলে গেলে আমার এই পৃথিবী যেন স্বজন হারা হবে। যেন চার কূলে কেউ নেই ওই রোগা, পটকা, কাকের মুখ থেকে কেড়ে আনা শালিক বাচ্চাটি ছাড়া। এই নিয়ে কত বকুনি খেয়েছি, কত পিটুনি। কিন্তু শুধরাতে কি পেরেছি? একেকটি সম্পর্ক যখন উড়ে যায় ওই নোনা নদী পেরিয়ে, পুরনো ডিহি পেরিয়ে, আলো অন্ধকারের দ্বন্দ্বে তখন বুঝি আসলে সবাই শালিক ছানা, উড়তে শিখলেই হল! পরে, এখন মনে হয়, পাখির ওড়া আটকাতাম বলে, এমন এক হিংস্র দুনিয়ায় ঢুকে পড়েছি… যেখানে প্রতি মুহূর্তে ডানা কাটার শব্দ!

হঠাৎ যখন শ্রাবণ আসত দুকূল ভিজিয়ে, আমাদের পুকুরের ছোট ছোট কই, মাগুর, শিঙি নতুন জলের লোভে গান গাইতে গাইতে ওঠে আসত ডাঙায়। আমরা, ভাইবোনেরা, মা- জেঠিমার চোখ এড়িয়ে পৌঁছে যেতাম ওই পুকুরের ঘাটে। টইটুম্বুর নালা বেয়ে জল ঢুকছে পুকুরে। কাদামেশা, ঈষৎ হলুদাভ জল। আমাদের হাতে বানানো অনেকগুলো ডিঙি, কাগজের। ডিঙি ছেড়ে ভাবতাম মাছেরা এবার একটু আনন্দ পাবে। ডিঙি বেয়ে ওঠে আসবে উপরে। আর আমরা তাদের আদর করে, আড়াল করে বাস দেব, ঘর দেব…
ঠাকুমা বলতেন, ” প্রকৃতির সঙ্গে কথা বললে প্রকৃতিও কথা বলে!” প্রকৃতি যদি কথা বলতে পারে, মাছেরা এই সামান্য ইঙ্গিত বুঝতে পারবে না! নিশ্চয়ই পারবে। শুধু আমাদের নৌকাগুলো উলটে যায় বলেই, ওরা বসতে ভয় পায়। দেখতাম, পশ্চিমের মেঘ কালো হয়ে উঠছে, পাহাড়ের মত। দক্ষিণের মাঠে সবুজ পাতা কার্পেট। ঢুপঢুপ শব্দ করে তাল পড়ছে পুবপাড়ে। আর পুকুর ভর্তি কালো জল টলমল করে হাসছে। এই বৃষ্টির দৃশ্য দেখা যেত, আমার সিক্স ক্লাসের রুম থেকে। রুমটির সামনে ছিল আমাদের খেলার মাঠ। বাউন্ডারিহীন এই মাঠ গিয়ে মিশত ধানের খেতে। সবুজ, সবুজ আর সবুজ। তার উপরে নিকষ কালো শ্রাবণের মেঘ। হাওয়ায় ভেসে আসত জলের ছিটে। এখন্ যখন আমি বিষন্ন থাকি খুব, মনে হয় সিক্স ক্লাসের ওই রুমে গিয়ে বসি। আরেকবার মুগ্ধ হই। কিন্তু এখন সে মাঠও নেই, সেই দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ কার্পেটের ভূমিও নেই। মাঠের চারপাশে কংক্রিটের দেওয়াল আর ইস্পাতের ছাউনি। দূরে ইটভাটা। আর তখনই যেন, সেই অতীত, পরাবাস্তবতার ডাক দিতে দিতে আশ্রয় নেন আমার লেখায়, আমার অক্ষরে। আমি নিজেকে ভাঙি, আহত করি… আর যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠতে উঠতে টেনে নিই ল্যাপটপ, কী-বোর্ড… সিপিয়া টোনের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত প্যারাসিটামল…

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes