অমৃতা ভট্টাচার্য -র কবিতাগুচ্ছ
অপ্রেম
জলের পোশাক বয়ে যায়
ধরতে পারি কই? তোমাকে দেখাবো
ইতস্তত শঙ্খমালা – ছলছল ঢেউ –
শূন্য ছুঁয়ে ফিরে আসা অন্ধকার অযুত
যন্ত্রণা স্বচ্ছ বলে, বিরাগ ক্ষতের মুখে রেখে আলোর চাদর –
জলের শরীর উঠে আসি
করুণ নাভির নীচে কতকাল
গল্প থামেনি কোনো – স্রোত যত
ঘাট ভেঙ্গে উজাগর –
প্রতি ফোঁটা তেজ, অশ্রাব্য অরূপ
এত গতি – বয়ে যায় ছবিমুখ
জ্বলজ্বল রাজার তিলক – ধরা পাই কই?
মুঠি ফাঁকে অক্টোপাস, লালায় আরব্ধ লালা
নাহলে তো, আদিগন্ত মায়া, কাচ নিরাকার
জল কত দুরবন্ধু, ভ্রম রোদ কালাপাহাড়!
ঠাট
থোকায় আঙুর শোয়ানো
টসটস মাংসল ভিড়ে বন্ধ শ্বাস, শুধু
বীজ দূর দূর – এমন মৃত্যুর আগে
পঞ্চম প্রখর হয়, জল উঠে আসে মুখে
হসন্ত তীব্র বেগে
কামড়ে ধরে আধখাওয়া লাল।
বেদীর নিঃস্তব্ধ ফল
একধাপ নেমে
কম্পনে ছড়িয়ে যায় স্বর
চন্দন পাথর ঘষে শুভ্রা উঠে আসে
পড়ে থাকে নিষাদ খোলস – লাল।
রেওয়াজ শুরুর আগে মধ্যমায় পাথর ছুঁয়ে
চিবুকে টীকা নেন গুরু
দরাজ আলাপে বসন্ত ছড়ায় … ছড়ায় ছায়ানট
গুঁড়ো গুঁড়ো থকথক লাল –
নৈবেদ্য
কেন অতল বলতে পারছ না ভাষায়?
প্রবাহ আটকে কোথায় – কোথায়
ধুকধুক অনন্ত ছারখার চেরি –
কোথায় আগন্তুক যন্ত্রণা হতে হতে
গুনছে জলের রেখায় ভেসে
থাকা অভাব, সাদা হাঁস খলবল
দেবি, পটে আঁকা মাটির বিষাদ
কোথায় গিলতে গিলতে অনঙ্গ নিমেষ
এখনও খুঁজে যায় হলুদ পাঞ্জাবি ভিড়
উন্মন, উন্মাদ প্রলাপ – নৈবেদ্য হবে বলে …
হীরামন
দিনান্তে শূন্য রাখো, ভয় আর ভিতর অখিল
ধ্বনি গিলতে মেঘ খোলা
নরম চিনব না বলে প্রস্তুত আমি
মেঘের ওপার থেকে বাড়ন্ত বেলা
টুপ তুলে আনি, কথা নয় – জল
মেপে রাজা হয় এই দণ্ড –মানচিত্র এই
শ্মশান চিনব না বলে – হাওয়ার পোশাক উড়ে দিকচিহ্নঋণ
অবেলায় ছবি দেখে, আতঙ্ক হীরামন,
আগুন জ্বলতে দিও ধিকিধিকি দুধ আর ধানে –
ভূতের সঙ্গে কবি – আঁতাত অপার তলহীন —
ভূত নিঃশব্দ মানে, কবি তাকে শব্দহীন ধ্বনি বলে চেনে!
ভেদ
কেউ নেই, যতটুকু ভেদ রাখি শিকড় ও ঝড়ে
সংখ্যা মুক্ত নয় কোন পেরিয়ে যাওয়ার মত –
কোন গ্রীষ্ম লাল নয় কাঁচা উদ্ভ্রান্ত উত্তাপ
সংযোগ শেষ হলে কাল বা পরশু
অসম্ভব ফোয়ারা সব লাল নীল স্বরাজ
প্রাসাদ জ্যামিতি ধরে শিরায় বাঁধে জরিমানা
চিত সাঁতার জানে রক্তসূর্য – তুলে নাও ওজন –
তালুর সে মুদ্রাদোষে লজ্জা ঠেকে গেল
নিংড়ে নিংড়ে গড়িয়ে ভবিষ্যৎ রটিয়ে গেল
বানী ছলনা – সমুদ্র বিভাস হল—উত্তুঙ্গ –
ডমরু … ডমরু … অন্ধকার গেল — গেল অথৈ –
জানলা খুলে রাখি অনন্ত আরোহে
কেউ নেই – কিছু নেই — যতটুকু ভেদ শুধু শিকড় ও ঝড়ে …