প্রব্রজ্যার সঙ্গীত
মের্সেদেস রোফফে (আর্জেন্টিনা)
অনুবাদ- জয়া চৌধুরী
মেরসেদেস রোফফে বর্তমান কালের সবচেয়ে পরিচিত প্রতিভাশালী কবির নাম মেরসেদের রোফফে। আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আইরেসে জন্ম হয় ১৯৫৪ সালে। অসংখ্য কাব্যগ্রন্থের লেখক তিনি। আন্তর্জাতিক লেখক সংগঠন পেন এর আর্জেন্টিনার শাখায় প্রকাশনা শুরু করেন। আলোচ্য কবিতাগুলি ২০১৭ সালে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ “El desierto y oro” বা মরুভূমি ও সোনা থেকে নেয়া হয়েছে।
Canto Errante / Mercedes Roffe (Argentina) / Traducción al bengalí Jaya Choudhury
রক্তমাখা অশ্রুজল
দাঁতহীন হাসি
আগুনের নদী দিয়ে নৌকো বয়ে যায়
দেবতার বেদীসব ও বাতাসে এলোমেলো পাতারা
পরিষেবা পেয়েছিল
আর নাস্তিক পশুদের দ্বারা বিভ্রান্ত কুকুরেরা
আর খাবারের জন্য
আর ঘিলু
আর নিস্তব্ধতা
মিনারের চুড়া থেকে কেউ ক্রিয়াপদ ছুঁড়ে দেয়
মিনার জ্বলে যাচ্ছে
কবর খুঁড়ে কেউ বের করে আনছে আমার কণ্ঠস্বর
শরীরগুলো
সবকটা নাম
বসুমতী জ্বলে যাচ্ছে
কেউ ছুঁড়ে দিচ্ছে সঙ্গীতের আলো
সমুদ্র জ্বলে যাচ্ছে
পিতা
পিতা
আমার শরীর থেকে দুরন্ত এক শিশু বের হয়ে যাচ্ছে
আর সে আমায় দিয়েছে
অনন্তের হার্প বাদ্য
আর রাজদন্ডে
আর্দ্র আয়নার কাঁচ ভেঙে গুঁড়োগুঁড়ো
সাপেদের পিঠ
(ওহ্ অপয়া চাঁদ)
জানো
তুমি তা জানবে না
বিকৃত কর্মফলের মুকুট তুমি আবাদ করে গেছ
আর আমার মাথাকে তার সাথে বেঁধেছ কঠিন
মহিমময় রাজকুমার
পরাজয়
শান্ত বন্দরে নির্বাচন করেছে তোমার বয়স
এবং স্বাভাবিক পোতাশ্রয়ে তোমার তৃষ্ণার সময়
প্রেমিকার ছবি আঁকা কাঁথা চুরি করেছ তুমি
এবং সোনালি ও বেগুনি রঙে ঢেকেছ আমায়
(ওহ শদের
মিথ্যে অলংকার যত)
জানো
তুমি তা জানবে না
এবং হীরে বুনেছ নগ্ন পায়ের জন্য
এবং শরীরের জন্য জারিত করেছ সূর্যের মধু
যুদ্ধক্ষেত্রে একটা একঘেঁয়ে সঙ্গীত
সঙ্গীতের জায়গায় তীক্ষ্ণ ও জেদী লৌহশলাকা
প্রাচীন উপত্যকায় গুটিয়ে নেয়া নিরর্থক
জ্বলন্ত আগুনকে লোভ দেখানো নিরর্থক
ভেড়া
নরকের সোনালি শীর্ষচূড় তোমার জন্য চকচক করবে না
কোন আশ্রয় নেই ওখানে ধূসরতাও নয়
তুমি তা জানবে না
এবং তুমি নালিশ করেছ সশব্দ
এবং ঐতিহ্যশালী আচার মাফিক উদযাপনও
এবং মৃত্যুর জন্য তুমি তা দিয়েছ
(রাত
কিছুই লুকোন যায় না কিচ্ছু অস্বীকারও করে না
বুড়ি
স্বীকারোক্তি প্রদানকারিণী)
এবং তুমি নিজের কাছে ভান করেছ
কিন্তু
তুমি তা জানবে না
এ বড় অন্য পথ
সেখান থেকে যদি ফিরে আসা যায়
… খন্ড খন্ড টুকরো
আমি যে গান গাই সে কন্ঠ তুমি আমায় দিয়েছ
এই চক্র উদযাপন করি আমি
আমি যে গান গাই সে কন্ঠ তুমি আমায় দিয়েছ
এই চক্র উদযাপন করি আমি
আমি যে গান গাই সে কন্ঠ তুমি আমায় দিয়েছ
এই চক্র উদযাপন করি আমি
মশাল! মশাল!
আমি যে গান গাই তুমি আমায় দিয়েছ সে কন্ঠ
আমি উদযাপন করি
তখন আমি একটা পাখির মত ছিলাম
তখন আমি একটা মুখের মত ছিলাম আমি
কণ্ঠস্বরের মত ঝড়ের মত
আর গাছেরা পাকস্থলীর মত দিত ফলমূল
কিংবা শুকনো জ্বলে যেত মৃতের ত্বকের মত।
তখন আমি একটা লাঠি আর আলোর মত ছিলাম আমি
আর পৃথিবীটা মাথা তোলা পাহাড় কিংবা চর্বির মত ছিল
উপত্যকা কিংবা আকাশগঙ্গা
এবং আমি ছিলাম দিগন্তরেখা আমি।
তখন
কে লুটেছিল আমার ছায়াটুকু কে
কে ছিনিয়ে নিয়েছিল মাটি আমার বসুন্ধরা, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ শান্ততা
প্রতিবিম্বিত হ্রদে আমার মুখ
তখন কে বদলে গেল আমিত্বে এবং আমি পারলাম না
কারণ আমি ছিলাম ভাঙতে থাকা নক্ষত্র
তখন পালটে গিয়ে হয়েছিলাম এক পরিত্যক্ত নির্বাসন স্রেফ
তখন বদলে গিয়েছি মৃত্যুতে, মৃত্যু
আমিতে পরিণত হয়েছিল
এই সব যা কিছু নিয়ে আমরা
এবং বিধ্বস্ত হয়েছি আমি এবং আমরা বিধ্বস্ত
এবং নামের মুখোশের খোঁজে আমরা বিধ্বস্ত
হয়েছিলাম
এবং পাথরের খোঁজে আমি বিধ্বস্ত ছিলাম এবং আমরা হয়েছিলাম বিধ্বস্ত
এবং কোন শিশুর কান্নার মত ছিল স্রেফ এক নীরবতা
যেন এক রশ্মি
যেন এক জাল উৎসাহিত হচ্ছে
এবং অনন্য কোন স্থানের মত এক শূন্যতা
যেন রাজ্যপাট
তখন পালটে গিয়েছি অন্ধ ও অ্যাক্রোব্যাট খেলুড়ে নারীতে
এবং বিধ্বস্ত হয়েছি আমি এবং আমরা বিধ্বস্ত
এবং তা সবচেয়ে প্রথম
আলো ছিল না জৃম্ভণও নয়
বরং তীর্থযাত্রীদের জন্য তৈরী গোবরের মুকুট
মেয়েটা ওর ছবি আঁকছে রাতের সূক্ষ্ম প্রান্তে
মেয়েটা ভেলকি দেখায়
বদলে দেয়
সমর্পণ করে
গান গায়
মেয়েটা নাচছে
নাচছে
ওর শরীরে মেয়েটা শরীরের উৎসব শুরু করে
মেয়েটা অন্যদের ডাক দেয়
যারা আনন্দ পেতে পারে
মেয়েটা নাচছে
নাচছে
মেয়েটা ওর রক্তে উদ্বোধন করে রক্তের উৎসব
মেয়েটা নাচছে
ষড় করে উৎসর্গ করে
গান গায়
মেয়েটা নাচছে
তোমরা সবাই ঝুড়ি ও ঘাস নিয়ে এসো
নিয়ে এসো মধু ও ছাই
মেয়েটা নাচছে
মরা পিশুদের দুধ নিয়ে এসো তোমরা
মেয়েটা নাচছে
শেষ পর্যন্ত প্রেমিকা ও তার প্রেমিকের কাছে নিয়ে এসো
রুটি আনো সকলে এবং ধূপও
নিয়ে এসো শিশুটিকে
মৃত শিশুর মুখের মুখোশ
মেয়েটা নাচছে
মেয়েটা নাচছে
তবে সমস্ত ফলের ওপরে
যেন কেউ বাদ না যায়