
সবর্ণা চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
যে জন নিভৃতচারী
১.
প্রশ্ন চুঁইয়ে পড়ে,
জিভ দিয়ে চেটে তৃপ্তির আস্বাদে
ভরাও উত্তরপত্র!
ছলাকলা তো ওসব মেয়েলি আদব,
তুমি তো বলিষ্ঠ পুরুষ-
বাহুর নিচে চেপে ধরা ময়াল সাপটিকে
আছড়ে আছড়ে কাবু কর নিমেষে।
অথচ প্রশ্নে এত ভয়?
চোখ বুজে এড়িয়ে যাও ঝড়,
আর আমি? সেই আবার ছেড়ে দিতে
গিয়েও চেপে ধরি, থেকে যাও বলে!
২.
নিজেকে বন্দি করো সময়ের খাঁচায়
কারণ স্বরূপ ধরো অজুহাত,
ঋণ জমে ওঠে-
জল চোখ আঁকা মেঘরাশি-
বৃষ্টির কাছে বরাবরই তারাদের অভিমান থাকে,
যেন ঠিক আমাদের নিভৃত দেওয়া নেওয়া!
আকাশ তো দুজনেরই –
তবু এ কেমন মৃত্যুহীন দূরত্ব এক?
৩.
দূরত্ব শ্বাস নেয় ম্যানগ্রোভ শরীরে-
মনও কঠিন হতে হতে নিজেদের বলে আটকাও!
যে ছোঁয়া যায় না আনচ কানাচ থেকে একটিফোঁটাও
আমি তার গন্ধ, লালা, রস লালন করি!
পালন করি না পাওয়ার মুহূর্তগুলো-
মধুসূদন, বুঝেও চোখ বুজে বলো, ‘আবার আসব তো’!
আসা কি সহজ এত?
কত জল, স্থল, আকাশ পেরিয়ে তবে,
সাতটা সাগরের পরে চিরকাল বাস করে রূপকথারা।
বন্দিনীর ছদ্মবেশে-
কিন্তু যে অপেক্ষার শেষ নেই, সে গাছ রোজ
রান্না সারে নিজেরই শরীরে, খেতে দেয়, বাসা দেয়,
দিতে পারে না তো তবু সম্পূর্ণ স্বচ্ছ জলধারা-
যা ধুয়ে দেবে সব লুকানো ধুলো মাটি কাদা!
৪.
প্রতিটা আলাপের পর অপেক্ষা রেখে যাও-
ভৈরবী বাজে তানপুরায়,
কাঁপা বুক নিয়ে আয়নার সামনে এসে দাঁড়াই,
কেন জীবন এত কঠিন মনে হয়?
অথচ তুমি যে বলো কত সহজ?
যা আছে, তা আমার-
যা নেই তা তো ছিল না আর-
তবে যে প্রতিটাক্ষণ বয়ে নিয়ে চলা এই
নিঃস্তব্ধ, নিঃশব্দ আততায়ী জীবন-
আমাদের এত এত নিভৃত আলাপ?
সেও কি মিথ্যে হতে পারে?
আসলে, তুমিও জানো, পথকে বন্ধ ভাবলে
মনকে ভুলিয়ে বলা ভালো, উপায় ছিল না আর!
৫.
নগ্নতার চাদরে বিছিয়ে দাও সারে সারে মোম
জ্বলছে তো জ্বলছেই –
সাদা চামড়ায় এসে পড়ে, ছ্যাঁকা লাগে,
চমকে উঠি তার আচমকা স্পর্শে।
জল ভেঙে টুকরো করে দিয়ে চেটে নাও
সব ছাপ- অথচ আমি যদি চাই,
দাও না, দাও না কিছুতেই,
এ কেমন খেলা তোমার?
অধিকার ভেবেছ তবু, কাছে তো রাখোনি একদিনও!
কেন ভয়? কেন এত জেদ?
মোমের গরমে দেখো আমিও লাল হয়ে উঠেছি কেমন! তুমি সাজিয়েছ প্রাণ ঢেলে- তবু চোখ বুজে আছে
ভেসে যাওয়া দেখবে না বলে,
অথচ আমি সে ভাসান দেখি,
ডুবতে দেখি এই ভারি শরীর,
আর ভাবি, যদি একবার টেনে ধরো হাত কখনও আর
ছাড়বে না বলে!