
কিঞ্চিৎ পরচর্চা – ৮
রূপশ্রী ঘোষ
সিসিটিভি সভ্যতায়
মাথা নেই, লিঙ্গ আছে
– ‘জানো তো, আমি তার ফোনে হাত দিতে পারি না। কিন্তু সে আমার ফোন ঘেঁটে দেখে। আমি তাই জন্যই হোয়াটসঅ্যাপ লক করে রেখেছি’।
– ও, তাই নাকি?
– হ্যাঁ। জানো না, সারাক্ষণ আমার ফোন ঘেঁটে দেখে।
– ও, তোমারও? উমুকেরও তো হাসব্যান্ড তার ফোন ঘেঁটে দেখে।
– হ্যাঁ, সেটাই তো বলছি। সবাই তাই। আর তুমি তাদেরটায় হাত দিতে যাও, দিতে দেয় কেমন দ্যাখো! সঙ্গে সঙ্গে কেড়ে নেবে। বা তুমি এমনিই ঢুকতে পারবে না। লক করাই থাকবে।
– হ্যাঁ, উমুকুও গল্প করে তার এই একই সমস্যার কথা। আমি জানি সব। সে তো আবার বাড়ি মধ্যে ঢুকে গেলে আর কোনো ছেলে বন্ধুর সঙ্গে গল্পই করতে পারে না। এমনকি যাদের সঙ্গে সারাদিন গল্প করে তাদের সব কললিস্ট ডিলিট করে দিয়ে তবে বাড়ি ফেরে। নাহলেই অশান্তি হবে। কে আর চায় শুধু শুধু অশান্তি।
– কিন্তু ‘তারা’ প্রকাশ্যে ঘোষণা করে দেয়, তারা কোথায় যায়, না যায়, কী করে, কখন ফিরবে তুমি কিন্তু প্রশ্ন করতে পারবে না। অথচ তোমার সবকিছু খুঁটিয়ে জেনে তবে তোমাকে ছাড়বে। প্রশ্ন করলেই মুশকিল, তাই দরকারি কিছু জানার থাকলেও তুমি ভয়ে জানতে চাইতে পারবে না। এই বুঝি পান থেকে চুন খসে গেলে বাবা! যদি ডিভোর্স দিয়ে দেয়। ও তারও আগে আর একটা স্টেপ আছে, এমন করলে কিন্তু ভালোবাসাটা মরে যায়। এই অস্ত্র তো কথায় কথায় অ্যাপ্লাই করে ফেলে আজকাল প্রায় প্রত্যেকেই। এবার তুমি বোঝো ভয়ে ভয়ে সব সহ্য করে কাটিয়ে দেবে নাকি অন্যকিছু বেছে নেবে। আর শোনো তোমার ওই বস্তাপচা মার্কা কথাগুলো আর বোলো না, পাড়া প্রতিবেশি কী ভাববে, সমাজ কী ভাববে, কাজের জায়গা কী ভাববে সব জানাজানি হয়ে গেলে। আরে বাবা কষ্ট তো তুমি একাই পাচ্ছো। তারা কী তোমার এই যন্ত্রণার কথা জানে? বা যারা জানে তারাও কী তোমাকে কোনোভাবে সাহায্য করছে? তাহলে তুমিই এবার মুখোশটা খুলে দিয়ে সবাইকে জানানোর চেষ্টা করো। নাহলে কী বলো তো, কোনোটা সত্যি কোনটা মিথ্যে সেই তথ্যটা বাইরে আসবে না। উলটে তোমার নামেই বাজে কথা রটিয়ে তোমাকেই সমাজের একজন জঘন্য মহিলাতে পরিণত করে দেব। ভেবে দেখো। আর প্যানপ্যান করে কাঁদার দিন নয় এখন। একটা জিনিস মাথায় রাখো তোমার বিপদের সময় কিন্তু কেউ তোমার পাশে থাকে না। তোমার থেকে যে যতই সুযোগ সুবিধা নিক না কেন দরকারে কিন্তু তুমি পাশে কাউকেই পাবে না। এ ধ্রুব সত্য, একা এসেছ, সর্বত্র একাই লড়াই করতে হবে।
– হুম, ঠিকই বলেছ তুমি। আমি আর মেনে নেব না এসব। তোমাকে তো আমি সব কথা বলিইনি। শুনলে তুমি আরও রেগে যাব।
– থাক আর বলতে হবে না, আমি বুঝে গেছি। তুমি আগামীটা ভাবো। তাদের লোক দেখানো ভালো সম্পর্কে আর ভুল কোরো না।
হ্যাঁ, এই গল্পই শুনছিলাম দুই মহিলার। দুই মহিলাই কিন্তু সমাজের বেশ সম্মানজনক পদে নিযুক্ত। আয়ও বেশ জোর গলায় বলার মতো। গল্প থেকে বুঝলাম তারা কতটা স্বাধীন। সেই ছোটোবেলা থেকে মেয়েরা বাবা, মা, দাদা, দিদি সবার অধীন কাটিয়ে যখন শ্বশুরবাড়ি আসে সে-ও তো আর একখানা জেলখানা আপনার সামনে। বাবা, মা, দাদা দিদির শাসনটা অন্য ব্যাপার। সেখানে বোনকে বা মেয়েকে বাঁচাতে বা দুষ্টু লোকের হাত থেকে রক্ষা করতে চেয়ে একটা শাসন থাকে ঠিকই, কিন্তু সেটা স্নেহ মিশ্রিত। মেয়েরা পরের বাড়িতে, হ্যাঁ পরের বাড়িই। কারণ আপনি লোকের মেয়ে। এই পরের বাড়িতে যে শাসন পায় সেখানে স্নেহ তো দূর অস্ত, তাতে গ্লানি, অপমান, মেয়ের বাড়ির লোককে নানাভাবে ছোটো করা ইত্যাদি প্রভৃতি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। এবং দুজন মানুষের যাদের খুব ধুমধাম করে তারাই বিয়ে দিয়ে আনে, সেই দুটো মানুষের সম্পর্কে কীভাবে চিড় ধরানো যায়, সেই বাড়ির লোক প্রথম থেকেই উঠে পড়ে লাগেন। আর যাকে ভরসা করে আপনি আসেন? তার কথা তথৈবচ। এই যে আপনি প্রতিটা মুহূর্ত ভয়ে ভয়ে, দমবন্ধ হয়ে কাটাচ্ছেন, হতাশায় ভুগছেন, আপনাকে প্রতিমুহূর্ত অসম্মান করা হচ্ছে, সেটা যেকোনো ক্ষেত্রেই, কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক সবক্ষেত্রেই অপমানিত, লাঞ্ছিত। এটাকে কী বলবেন? স্বাধীনতা? পরাধীনতা? মানসিক অত্যাচার? মানসিক খুন, মানসিক ধর্ষণ? নাকি অন্যকিছু। এই ফোন ঘেঁটে দেখা ‘তার’ বা ‘তারা’ও কিন্তু রাত দখলে সবাই হেঁটেছে যে যেখানে পেরেছে। ভাবুন একবার এগুলোকে কি ধর্ষণ বলা যায়? যদি না যায়, তাহলে এগুলো কী? শারীরিক না হলেও মানসিক? আর টুকটাক শারীরিক অত্যাচারও চলে কথায় কথায়। “টুকটাক” শব্দটা আর জি করের রেসপেক্টে। নাহলে ওটা সত্যিই টুকটাক নয়। কালসিটে দাগ কিন্তু পড়ে। তবে হ্যাঁ কারও পাসওয়ার্ড খুলে ফোন দেখা ঠিক নয়। কিন্তু যদি খুলেও ফেলেন তারপর আপনি এমন সমস্ত জিনিস দেখতে পেলেন, সেটা কি আপনার ভালো লাগবে? ভালো লাগার জিনিস থাকলে পাসওয়ার্ড দেবেন কেন? চোরদের হাত থেকে বাঁচার জন্য? ফোন হারিয়ে গেলে চোর সব তথ্য পেয়ে যাবে তাই? ভেবে দেখা উচিত। শুনুন যদি ভালোকিছু উদ্ধার হত তাহলে তিনি ওসব লুকিয়ে রাখবেন কেন? আমার এক পরিচিতর অভিজ্ঞতা, সে তার হাসব্যান্ডের ফোন থেকে অন্য মেয়েদের অনেক ন্যুড ভিডিও এবং ছবি পেয়েছিল। তারপর তার দিশেহারা অবস্থা হলেও সে ক্ষমা করে দিয়েছিল। কিন্তু কোনো মানুষকে একবার ক্ষমা করেছেন মানে আপনি মরেছেন। সে পরে কোনো না কোনো ভাবে আপনাকে ছোবল মারবেই। এ অবধারিত সত্য। আপনি দোষ করেন ছাই না করেন। কারণ ক্ষমা করাকে দুর্বলতা ভাবা হয়, ভদ্রতা বা ভালো মানুষী নয়। এবং আমার সেই পরিচিত এও বলেছে যে, তার শ্বশুরবাড়ির লোক ছেলের এমন অন্যায় বা অনুচিত কাজ দেখে, তাকে তার হাসব্যান্ডের বাবা বলেছেন, ‘আসলে কী জানো তো, ছেলেরা কোকাকোলা খেলে পেপ্সিটাও খেয়ে দেখতে চায়। তাই এসব করে’। এমন বাবা যদি ঘরে ঘরে থাকে, তাহলে কোকাকোলা আর পেপসির ফ্যাকটরি উদ্ধার হবে ছাড়া কী হবে বলুন তো? কোকাকোলার পাশাপাশি পেপসির ফ্যাকটরির চাষ করা ছাড়া আর উপায় আছে? তাহলে যারা কথায় কথায় কন্যা ভ্রূণ হত্যা করছে তাদেরও তো এ বিষয়টা নিয়ে ভাবা উচিত। ভ্রূণ হত্যা করে দিলে ফ্যাক্টরি কীভাবে সম্ভব? এবং সব থেকে বড়ো কথা মেয়েদের বাচ্চা হলেও নাকি সেসময় ছেলেরা অমন কোকাকোলা ছেড়ে পেপসি খেতে যায়। ভাবুন। ভদ্র, সভ্য, শিক্ষিত বলে জানেন যাদের তারাই এসব বলে। এবং ছেলেদের এই যা কিছু অনুচিত বা নোংরা কাজ সবই কিন্তু মেয়েদের দোষেই করে। একজন মেয়ের দোষে আবার অন্য একটা মেয়ের কাছেই হাজির হয়। কী অবাক কাণ্ড না?! কারোর সঙ্গে বন্ধুত্ব করা, আর বন্ধুত্বের নামে যৌনতা করা দুটো মনে হয় আলাদা বিষয়। আপনারা বলবেন ছেলেদের মধ্যে আছে পলিগ্যামি। হতেই পারে। তো পলিগ্যামিই থাকুক না। এদিক ওদিক সারাক্ষণ চেখে বেড়াতে তো কোনো অসুবিধা থাকবে না। তাহলে ঢাক ঢোল বাজিয়ে বিয়ে করে, বউকে প্রতারণা করা কেন বাবা? বা বউয়ের কাছে চোর সেজে থাকাই বা কেন? এ তো একটা ছেলের কাছেও বিড়ম্বনার বিষয়। বড়ো গোলমেলে ব্যাপার স্যাপার সব, এ বোঝা খুব মুশকিল। সবথেকে বড়ো মুশকিল আপনি নিজে জানেন একজন পুরুষ হয়ে বাড়ির বাইরে কী কী করে আসেন, তাই ঘরে থাকা মহিলার গায়ে সেই কাদাটা ছুঁড়ে দিতে একটুও জিভ কাঁপে না। হতেই পারে আপনার জিভ কাঁপল না। কিন্তু আপনার উল্টোদিকে থাকা মানুষটার কি কোনোদিনও দেওয়ালে পিঠ ঠেকবে না ভাবছেন? ঠেকবে তো। আর তখনই আপনার মান সম্মানটা সত্যিই যাবে। আপনি যে মুখোশের আড়ালে এতদিন নিজেকে সযত্নে ঢাকলেন, উল্টোদিকের মানুষটি নিমেষে চারশো আটানব্বইয়ের এ-নামক অস্ত্রটি বাধ্য হবেন ব্যবহার করতে। এবং তারপরই আপনার সযত্ন লালিত মুখোশটি ঝুরঝুর করে সবার সামনে গুঁড়ো হয়ে পড়বে। অনেক মহিলা সাত পাঁচ ভাবছেন বলেই রোজ রোজ মুখোশ খুলে পড়ছে না। নাহলে কত মুখোশ যে রোজই খুলে পড়বে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। প্রত্যেক মেয়ের উদ্দ্যেশ্যেই বলা আলিয়া ভাট আর শেফালি শাহের “ডার্লিংস” সিনেমাটা দেখে নিন। যদি দেখে নেন সত্যি বলছি আপনি নিজের মধ্যে একটা অসম্ভব শক্তি অনুভব করবেন। যা এতদিন আপনার ছিল না। মনে রাখবেন, যে তথ্য একবার ডিলিট করে ফেলছেন আপনার ফোন থেকে, তা কোথাও না কোথাও রয়ে যাচ্ছেই। খুঁজলেই পাওয়া যাবে। যা ক্যামেরাবন্দি হয়ে যায়, তা কোথাও না কোথাও রয়ে যায়।
যেকোনো ক্ষেত্রেই, কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক সবক্ষেত্রেই অপমানিত, লাঞ্ছিত। এটাকে কী বলবেন? স্বাধীনতা? পরাধীনতা? মানসিক অত্যাচার? মানসিক খুন, মানসিক ধর্ষণ? নাকি অন্যকিছু। এই ফোন ঘেঁটে দেখা ‘তার’ বা ‘তারা’ও কিন্তু রাত দখলে সবাই হেঁটেছে যে যেখানে পেরেছে। ভাবুন একবার এগুলোকে কি ধর্ষণ বলা যায়? যদি না যায়, তাহলে এগুলো কী? শারীরিক না হলেও মানসিক? আর টুকটাক শারীরিক অত্যাচারও চলে কথায় কথায়। “টুকটাক” শব্দটা আর জি করের রেসপেক্টে। নাহলে ওটা সত্যিই টুকটাক নয়। কালসিটে দাগ কিন্তু পড়ে। তবে হ্যাঁ কারও পাসওয়ার্ড খুলে ফোন দেখা ঠিক নয়। কিন্তু যদি খুলেও ফেলেন তারপর আপনি এমন সমস্ত জিনিস দেখতে পেলেন, সেটা কি আপনার ভালো লাগবে? ভালো লাগার জিনিস থাকলে পাসওয়ার্ড দেবেন কেন? চোরদের হাত থেকে বাঁচার জন্য? ফোন হারিয়ে গেলে চোর সব তথ্য পেয়ে যাবে তাই? ভেবে দেখা উচিত। শুনুন যদি ভালোকিছু উদ্ধার হত তাহলে তিনি ওসব লুকিয়ে রাখবেন কেন? আমার এক পরিচিতর অভিজ্ঞতা, সে তার হাসব্যান্ডের ফোন থেকে অন্য মেয়েদের অনেক ন্যুড ভিডিও এবং ছবি পেয়েছিল। তারপর তার দিশেহারা অবস্থা হলেও সে ক্ষমা করে দিয়েছিল। কিন্তু কোনো মানুষকে একবার ক্ষমা করেছেন মানে আপনি মরেছেন। সে পরে কোনো না কোনো ভাবে আপনাকে ছোবল মারবেই। এ অবধারিত সত্য। আপনি দোষ করেন ছাই না করেন। কারণ ক্ষমা করাকে দুর্বলতা ভাবা হয়, ভদ্রতা বা ভালো মানুষী নয়। এবং আমার সেই পরিচিত এও বলেছে যে, তার শ্বশুরবাড়ির লোক ছেলের এমন অন্যায় বা অনুচিত কাজ দেখে, তাকে তার হাসব্যান্ডের বাবা বলেছেন, ‘আসলে কী জানো তো, ছেলেরা কোকাকোলা খেলে পেপসিটাও খেয়ে দেখতে চায়। তাই এসব করে’। এমন বাবা যদি ঘরে ঘরে থাকে, তাহলে কোকাকোলা আর পেপসির ফ্যাকটরি উদ্ধার হবে ছাড়া কী হবে বলুন তো? কোকাকোলার পাশাপাশি পেপসি ফ্যাকটরির চাষ করা ছাড়া আর উপায় আছে? তাহলে যারা কথায় কথায় কন্যা ভ্রূণ হত্যা করছে তাদেরও তো এ বিষয়টা নিয়ে ভাবা উচিত। ভ্রূণ হত্যা করে দিলে ফ্যাক্টরি কীভাবে সম্ভব? এবং সব থেকে বড়ো কথা মেয়েদের বাচ্চা হলেও নাকি সেসময় ছেলেরা অমন কোকাকোলা ছেড়ে পেপসি খেতে যায়। ভাবুন। ভদ্র, সভ্য, শিক্ষিত বলে জানেন যাদের তারাই এসব বলে। এবং ছেলেদের এই যা কিছু অনুচিত বা নোংরা কাজ সবই কিন্তু মেয়েদের দোষেই করে। একজন মেয়ের দোষে আবার অন্য একটা মেয়ের কাছেই হাজির হয়। কী অবাক কাণ্ড না?! কারোর সঙ্গে বন্ধুত্ব করা, আর বন্ধুত্বের নামে যৌনতা করা দুটো মনে হয় আলাদা বিষয়। আপনারা বলবেন ছেলেদের মধ্যে আছে পলিগ্যামি। হতেই পারে। তো পলিগ্যামিই থাকুক না। এদিক ওদিক সারাক্ষণ চেখে বেড়াতে তো কোনো অসুবিধা থাকবে না।
যাহোক, তবে এবার মনে হয় সময় হয়েছে সব মেয়েরই ঘুরে দাঁড়ানোর। যে যেখানে আপনাকে হ্যারা্স করে বা অপমান করে আনন্দ পাচ্ছেন, তার আনন্দকে সম্পূর্ণরূপে উপভোগ করতে আপনাকে ওই চারশো আটানব্বইয়ের এ-র কথাটা মাথায় রাখতেই হবে। আপনি যদি একবার ওটা প্রয়োগ না করেন, তাহলে তিনি বা তাঁরা সত্যিই বুঝবেন না। আনন্দ উপভোগ এক তরফা হবে কেন? দুদিক থেকেই হোক। কথায় কথায় আপনাকে নিয়ে পিংপং বলের মতো খেলে যাবে আর আপনি বল হয়েই থেকে যাবেন? দেখুন না একবার খেলোয়ার হয়ে। গোটা সমাজ বদলে যাবে। আপনাকে তো সেটার জন্যই বাধ্য করছেন। অতএব আপনি সুযোগটা নেবেন না কেন? এই দু হাজার চব্বিশে এসে এত কেউ ভাবে? বা আপনাদের ভাবাতে হবে? যখন হত তখন হত। এখন সাহসটা দেখিয়েই ফেলুন। দেখবেন, আপনার দেখাদেখি অনেকেই এই সাহস দেখাতে এগিয়ে আসবেন তখন। জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে আপনার মাথার উপর ক্ষমতাটাকে আপনি বুঝিয়ে দিন, ‘আপনি আসলে যেটাকে ক্ষমতা ভেবে অপব্যাবহার করছেন সেটা আপনার ক্ষমতা না। আপনিও কারোর অধীনে। আপনাকে কিছুদিনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মাত্র। সেটা পালন করুন। অপব্যবহার করবেন না। আখেরে আপনারই ক্ষতি’। এটা বুঝিয়ে দিন, আর নাহলে একটা আর জি কর নয়, ঘুরে না দাঁড়ালে এই হাজার হাজার আর জি কর নানান রূপে হাজির হতেই থাকবে। এবং প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবসে আপনাকে মাইকের উল্টোদিকে বসে ভূতের মুখে রামনাম শুনতেই হবে। আপনি সেখানে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করবেন না, কেবল মুখ টিপে হেসে চলে আসবেন তাহলে সমাজ বদলাবে? অসম্ভব। আপনি উঠে দাঁড়িয়ে হাত থেকে মাইকটা কেড়ে নিয়ে অমায়িকভাবে বলুন, ‘আপনি এসব কী বলছেন? আপনার মুখে এ কথা মানায় না। এটাকে আপনার দ্বিচারিতা বলে’। বলে ওনারই চোখটা খুলে দিন, এবং অন্যদের সামনে ওনার মুখোশটা। গোটা দেশের যে যেখানে শাসক দল তারা যদি এগিয়ে না আসে, এ জিনিস তো থামানো যাবে না। হ্যাঁ, আপনারা ডোমেস্টিকটা হয়তো আপনারা সামলাতে পারবেন না, ওটা মেয়েদের নিজেদেরকেই থামাতে হবে। চুপ করে বসে থাকলে হবে না। সমাজ কী ভাববে, লোকে কী ভাববে এসব ভেবে সময় নষ্ট করে। আরে বাবা আপনাকে অপমান করছে, আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে, আপনার পিছনে আজেবাজে কথা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে আপনিও আইনের সাহায্য নিয়ে বলুন, ‘চলুন, ঢেড় হয়েছে। যা বলছেন সব মানলাম, এবার সেটা আদালতে কাঠগোড়ায় দাঁড়িয়ে প্রমাণ করুন তো বাপু। তাহলেই পুরোটা মানব। না প্রমাণ করতে পারলে এবার আপনি ভুগুন। সেটা আপনার ব্যাপার, আপনি কোথায় বসে কোকাকোলা আর ্পেপসিটা খাবেন। আমি তো বাপু আপনার মুখের কথা মানব না। প্রমাণ করে দেখান’। কর্মক্ষেত্রেও আপনিই দায়িত্ব নিন। আপনাকে যারা প্রতিনিয়ত অপমান করছেন তাদের বিরুদ্ধে। আপনার সামনে ভালো কথা বলার চেষ্টা করছেন আর ঠিক আপনার বাইরে মিথ্যে কথা রটাচ্ছেন আপনি তাদেরও মুখোশ খুলুন। দেখবেন অনেকেই এগিয়ে আসবেন। কারণ একটা কর্মক্ষেত্রে একমাত্র যিনি ক্ষমতায় থাকেন তিনিই ভালো বাকি আর সমস্ত কর্মচারী খারাপ এটা তো হতে পারে না? আরও উপর মহলে খবরটা পৌঁছে দিন, তাঁরাই খুঁজে নেবেন কারা প্রকৃত আর কারা নয়। কাদের স্বভাব মিথ্যে ছড়িয়ে সারাদিন ষড়যন্ত্র করা, একে অন্যের বিরুদ্ধে তাতিয়ে ইন্টারন্যাল রিলেশন নষ্ট করা এ এক্সপার্টরাই বুঝে যাবেন। আপনি শুধু সময়মতো খবরটা পৌঁছে দিন। আর ছোটো পরিসর বা ঘরের বাইরে বৃহৎ ক্ষেত্রের ব্যাপারটা তো শাসকরাই দেখতে পারেন। আপনাদের পক্ষে তো খুব সহজ ব্যাপার। খুনি, দোষি, ধর্ষক যে যেখানে আছে ধরিয়ে দিন না। দেখুন না, এভাবে ধরিয়ে দিলে বা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে আপনাদেরই লাভ হবে ভোট নিয়ে আর ভাবতেই হবে না। জনগণ খুশি হয়ে বার বার একই শাসককে ফিরিয়ে আনবেন। আর সমাজেরও উপকার হবে। এক- যাঁর বা যাঁদের সন্তান তাঁরা খুশি হবেন, সন্তাদের দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেখে একটু প্রাণ জুড়াবেন। সন্তানকে তো আর ফিরে পাবেন না, এটুকু শান্তিও যদি পান সেই অভিভাবরা আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবেন। দুই-এইরকম কঠোর শাস্তি চলতে থাকলে মানুষ এমন ভুল করার কথা দুবার ভাববে। তাতে যদি দুর্ঘটনা কমে। নির্মল, কলুষমুক্ত সমাজের জন্ম হবে। মেয়েদের উপরই ভরসা রাখুন দেশের সমগ্র সমাজ। তারা হাতে বাতি নিয়ে যেমন পথে নামতে পারে, তেমনি আপনাদের কাজে খুশি হলে আপনাদের ব্যালট বক্সও ভরিয়ে দিতে পারে। লক্ষ্মী প্রতিটা মেয়েই। যার যেমন সাহায্যের প্রয়োজন তার তেমন ভাণ্ডারের দিকেই লক্ষ দিতে হবে। তাদের সবার সুরক্ষা দরকার। সমস্ত ক্ষেত্রে। প্রাকৃতিকভাবে তারা নমনীয় কমনীয় বলে অন্যরা নৃশংসভাবে গায়ের জোর খাটিয়ে মেয়েদের মেধাটাকেই নষ্ট করে দেবে এ তো সারাজীবন চলতে পারে না। প্লিজ যেখানে যত শাসক দল আছেন আপনারাই এগিয়ে আসুন। আপনারাই পারেন এ নিকৃষ্ট ঘটনার সমাধান করতে। অন্য শাসক দল খারাপ করেছে বলে সেই প্রতিযোগিতায় নামা নয় বা উদাহরণ হিসেবে দেখানো নয়। যে, ওদের সময়ও হয়েছে। হয়েছে বলেই জনগণ তাদের তাড়িয়েছে। আপনারা এটা হতে দেবেন না। তাহলে আপনাদেরই সহযোগিতা জনগণ বারেবারে চাইবে। সমগ্র দেশে জুড়ে আর জি কর, বর্ধমান, নির্ভয়া, আসিফা, বিহার, ঝাড়খন্ড আর দেখতে চাই না আমরা। বেটিকে কেবল পড়াতে বা বাঁচাতে বললে হবে না, পড়ানোর পর বাঁচানোর দায়িত্বও আপনাদের নিতে হবে। পড়ানোটা তো মা-বাবা কষ্ট করে হলেও করে দেবেন। বাঁচানোর দায়িত্ব আপনাদেরই। মানবিক হওয়ার শিক্ষা দিন। বিনীত অনুরোধ।
আপনাদের পক্ষে তো খুব সহজ ব্যাপার। খুনি, দোষি, ধর্ষক যে যেখানে আছে ধরিয়ে দিন না। দেখুন না, এভাবে ধরিয়ে দিলে বা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে আপনাদেরই লাভ হবে ভোট নিয়ে আর ভাবতেই হবে না। জনগণ খুশি হয়ে বার বার একই শাসককে ফিরিয়ে আনবেন। আর সমাজেরও উপকার হবে। এক- যাঁর বা যাঁদের সন্তান তাঁরা খুশি হবেন, সন্তাদের দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেখে একটু প্রাণ জুড়াবেন। সন্তানকে তো আর ফিরে পাবেন না, এটুকু শান্তিও যদি পান সেই অভিভাবরা আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবেন। দুই-এইরকম কঠোর শাস্তি চলতে থাকলে মানুষ এমন ভুল করার কথা দুবার ভাববে। তাতে যদি দুর্ঘটনা কমে। নির্মল, কলুষমুক্ত সমাজের জন্ম হবে। মেয়েদের উপরই ভরসা রাখুন দেশের সমগ্র সমাজ। তারা হাতে বাতি নিয়ে যেমন পথে নামতে পারে, তেমনি আপনাদের কাজে খুশি হলে আপনাদের ব্যালট বক্সও ভরিয়ে দিতে পারে। লক্ষ্মী প্রতিটা মেয়েই। যার যেমন সাহায্যের প্রয়োজন তার তেমন ভাণ্ডারের দিকেই লক্ষ দিতে হবে। তাদের সবার সুরক্ষা দরকার। সমস্ত ক্ষেত্রে। প্রাকৃতিকভাবে তারা নমনীয় কমনীয় বলে অন্যরা নৃশংসভাবে গায়ের জোর খাটিয়ে মেয়েদের মেধাটাকেই নষ্ট করে দেবে এ তো সারাজীবন চলতে পারে না। প্লিজ যেখানে যত শাসক দল আছেন আপনারাই এগিয়ে আসুন। আপনারাই পারেন এ নিকৃষ্ট ঘটনার সমাধান করতে। অন্য শাসক দল খারাপ করেছে বলে সেই প্রতিযোগিতায় নামা নয় বা উদাহরণ হিসেবে দেখানো নয়। যে, ওদের সময়ও হয়েছে। হয়েছে বলেই জনগণ তাদের তাড়িয়েছে। আপনারা এটা হতে দেবেন না। তাহলে আপনাদেরই সহযোগিতা জনগণ বারেবারে চাইবে। সমগ্র দেশে জুড়ে আর জি কর, বর্ধমান, নির্ভয়া, আসিফা, বিহার, ঝাড়খন্ড আর দেখতে চাই না আমরা। বেটিকে কেবল পড়াতে বা বাঁচাতে বললে হবে না, পড়ানোর পর বাঁচানোর দায়িত্বও আপনাদের নিতে হবে।
তা এই হল আমাদের সকলের অবস্থা। ঘরে বাইরে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত আমরা ধর্ষিত হচ্ছি। যাঁরা ভালো ভালো কথা বক্তিমে মেরে বলে যাচ্ছেন, তারাও কি পুরুষতন্ত্রের বাইরে? সুযোগ পেলেই তাঁদের দিক থেকে ধেয়ে আসছে নারীর শরীর নিয়ে নানা রঙ্গরসিকতা, নানা ইঙ্গিত। সাহস নেই হয়তো ধর্ষণ করার। কিন্তু নারীকে নানাভাবে হ্যারাস করার মধ্য দিয়ে তো এই ধর্ষকামী মানসিকতারই প্রকাশ ঘটছে। নারীর উপর ঘরে বাইরে এই সিসিটিভি হয়ে থাকার মধ্যে তো রয়েছে একধরনের শাসক সুলভ , একধরনের ক্ষমতাদখল করা প্রভুর মতো আচরণ। আপনাদের না আছে নিজেদের জীবনদর্শন, না আছে নিজেদের জীবনের কোনও দার্শনিক বিপন্নতা। বরং আপনারা আপনাদের ইন্দ্রিয়ের দাস হয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিচ্ছেন। আর ক্ষমতার হাত ধরে নারী মাত্রেই মনে করছেন দুটি স্তন এবং একটি যোনির বিশ্ব।
আজ্ঞে, এই সব ভাবনাচিন্তার বদল না ঘটালে, নারীরাই এবার আপনাদের ঘিরে ধরবে। পালটা প্রশ্ন করবে। কর্মক্ষেত্র থেকে বেডরুমে, রাস্তা থেকে রেস্টুরেন্টে। ঐক্যবদ্ধ এই প্রশ্নের মুখে উত্তর দিতে পারবেন তো? নাকি একটু সতর্ক হবেন? একটু ভদ্র হবেন? একটু সজ্জন হবেন? একটু শিক্ষিত হলে তো আপনার নিজেরই ভালো হবে। অশিক্ষিত বর্বর পশুরও অধমের মতো গোটা জীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন, সত্যিই আপনাদের মনখারাপ হয় না?
আপনাদের কথা ভেবে আমার তো করুণাই জাগে। আপনারা আসলে আত্মধ্বংসী। বোঝেন ব্যাপারটা? না বুঝলে ভাবুন একটু। মাথাটাকে অত হুল্লোড় সংস্কৃতির মধ্যে এলিয়ট কথিত ‘ লিনিং টুগেদার হেডপিস ফিলড উইথ স্ট্রজ’ করে রাখবেন না। আবার তোরা মানুষ হ।
(ক্রমশ)