
ধীমান ব্রহ্মচারী-র কবিতা
গহ্বরের সংকেত
ভোরের আলোড়ন সরিয়ে আমি অন্ধকারে পেতেছি আসন
মুখোমুখি হব বলে জীবনের,
যে জীবনের মধ্যে রয়েছে অন্নহীনের উপকথা,
আস্তরণ পড়ে আছে গায়ের ত্বকে, জমে আছে
দুঃখ – যন্ত্রণার মতো অজস্র জং, মরচে পড়েছে
সময়ের হাত ধরে, আমরা ফাগুনের রঙ মেখেছি
পলাশ ফুলের বিছানায়, শোকার্ত আহ্বান ফিরিয়ে দিয়েছে
আশ্বাসের বালিয়াড়ি,
উত্তাল ঢেউ আমাদের পায়ের বালি সরিয়ে দিল
পায়ের তলার বালি সরে গেল জলে ধুয়ে..
বেরিয়ে এলো.. এক শামুকের গহ্বর।
মিছিলের আগে হেঁটে যাওয়া মানুষটি -২
১.
স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে কাহিনির পর কাহিনি, যন্ত্রণা চাপা বুকে জমেছে
দুঃস্বপ্নের প্রলেপ। আমরা ভালো আছি, নিস্তেজ মোহ আর আবেগঘন
মায়া মেখে প্রতিদিন ভোরের সূর্যোদয় দেখেনি বাড়ির শ্যাওলা ধরা
ছাদ থেকে, সময় থেকে সময়ন্তর নিষিদ্ধ গান যেভাবে আমাদের
মায়াবী রাতের নেশা জাগিয়ে মিলিয়ে যেন জং ধরা লোহার দরজায়
সেই দরজায় এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে যেন নিঃশব্দে
পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছিল ময়না তদন্তের রিপোর্ট
রক্তমাখা মাটি সবটুকু শুষে নিয়েছে লোভের বশে,
এখন রাত দখলের লড়াই শেষে আমরা মাটি খুঁড়ছি বারুদের আশায়..
২.
শীতলপাটি বিছিয়ে দিয়েছে শহীদ মিনারের পাদদেশে
সন্ত্রাস চালিয়ে যে আততায়ী গুলি করে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল
বুকের পাঁজর, সেই পাঁজরের আর্তনাদ শুনেছিল চারের দশকের
আমাদের পূর্বপুরুষ —
আমরা মাটি আঁকড়ে নিংড়ে নিয়েছি আমাদের ঔরস
জ্বলন্ত চিতায় পুড়িয়ে ফেলছি ইতিহাসের দলিল
এখন শুধুই মাটি ঘোলা জলে পাথর হাতড়ে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে হাত
শবের জৌলুস বাড়ছে সুগন্ধি আতরে…
৩.
কে এই মৃতদেহ করবে শনাক্ত? কে খেলবে রক্তের হোলি তিরঙ্গা বিছিয়ে!
যে মানুষটি জীবন দিয়ে দেখেছিল স্বাধীনতা! কোথায় পাবে
সেই ভোরের সূর্য? একশো আট লাল পদ্ম বিছিয়ে স্বেচ্ছামৃত্যু
নিয়ে চলে গেল যে সন্তান, সেই মায়ের আঁচল কীভাবে শুনবে
সন্তানের আর্তনাদ.. আসুন, সবাই আসুন
আমরা একটা সুইসাইড নোট লিখে রাখি আগামী হলফনামার জন্য..