
অণুকবিতাগুচ্ছ
রূপশ্রী ঘোষ
একশটি অণুকবিতা একসঙ্গে। সঙ্গতে জেন চিত্র।
১
জলের ধারা
নেমে আসে কঠিন
আদর পথে।
***
২
নিঝুম রাতে
তুমিই এসো একা
জোনাক আলো।
***
৩
নরম ভোর
আদর এঁকে দিল
আমার ঠোঁটে।
***
৪
টিপ কপালে
গোধূলি মেয়ে এসো
আমার কাছে।
***
৫
কাঁকন পায়ে
শিউলি ফুল এল
আমার কোলে।
***
৬
বিষাদ মাখো
দুহাত দিয়ে গালে
দুপুর রোদ।
***
৭
কবিতা লিখি
শুধু তোমার কথা
লিখব বলে।
***
৮
বিদায় বেলা
আসবে জানি মন
ভাসান জলে।
***
৯
লেখার ছলে
তোমাকে পড়ি বলে
শিমূল আসে।
***
১০
হলুদ গাঁদা
গাঁথব মালা সুতো
বেদন রঙে।
***
১১
হলুদ গাঁদা
গাঁথব মালা আমি
সোহাগ টানে।
***
***
১২
বিষাদ বুনে
দূরের বাঁশি একা
স্টেশন ছাড়ে।
***
১৩
কলকা পাড়ে
বুনবে শাড়ি তুমি
আমায় ভেবে।
***
১৪
কলস খানি
ভরে এনো আমার
পরাগ সুরে।
***
১৫
বুকের ভাঁজে
রঙিন চিঠিখানি
লুকিয়ে রেখো।
***
১৬
তোমাকে চাই
বলবই না আর
মিলিয়ে নিয়ো।
***
১৭
নীল বসনা
আঁচল ঘিরে এসো
যেয়ো না ফিরে।
***
১৮
সন্ধ্যা তারা
মলিন হবে জানি
আদর দিলে।
***
১৯
একাকী ঘড়ি
সময় বুনে চলে
আমার মতো।
***
২০
রাত চিবুকে
আদর দিয়ে যায়
করুণ বাঁশি।
***
২১
নরম রোদ
ছুঁয়ে দেয় যখন
ফসল ফলে।
***
২২
বিষাদ যেন
মুক্ত হয়ে ঝরে
সাগর তটে।
***
২৩
পথের শেষে
চেয়ে দেখি যখন
পথই ডাকে।
***
২৪
গোধূলি বেলা
বয়স কাঁদে রোজ
রাত্রি নামে।
***
২৫
নীরব হলে
পাথর চাপা বু্কে
ঝর্ণা নামে।
***
২৬
শীতল পাটি
বিছিয়ে দেব রোজ
কুয়াশা ভোরে।
***
২৭
জীবন যেন
আতস কাঁচে বাঁধা
ঘুমের ঘোরে।
***
২৮
বিজন পথে
তুমিও ছিলে একা
পথের মতো।
***
২৯
বাউল সুরে
আমায় ডেকো তুমি
একাকী গান।
***
৩০
চোরা বাঁকের
গলি বেয়ে নদীও
বাউল মন।
***
৩১
উদাস পথে
হরিণ ছুঁয়ে গেলে
আদর কাঁদে।
***
৩২
নিথর দেহ
আসুক নেমে বুকে
ভ্রমর সুরে।
***
৩৩
একাকী চাঁদ
আছড়ে পড়ে বুকে
নবীন রাগে।
***
৩৪
বিরহ মাখি
গভীর রাতে মন
মধুর লাগে।
***
৩৪
নিপাট কালো
আমি বলি তুমিই
কৃষ্ণকলি।
***
৩৫
শান্ত হও
চাঁদ আসবে ঘরে
জানলা খোলো।
***
৩৬
শ্বেত করবী
নিপাট হয়ে এসো
আদর করি।
***
৩৭
নিভাঁজ মন
এলোপাথারি রং
ভিজিয়ে নাও।
***
৩৮
অপরাজিতা
আঁচল মেলে এসো
তৃপ্তি ঢাকি।
***
৩৯
নদীর দেশে
মিলন হলে পরে
আসবে ঢেউ ।
***
৪০
ডোবার পাড়ে
ব্যাঙ ডেকেছে রাতে
বৃষ্টি হল।
***
৪১
চিঠির খামে
উড়ে এলে আদর
কুড়িয়ে নিয়ো।
***
৪২
ময়ূররঙে
বর্ষা এলে ঘাটে
ভিজতে যাব।
***
৪৩
মহুয়া বনে
মাদল বেশে রোজ
সোহাগ নাচে।
***
৪৪
বকের সারি
আকাশ ছুঁয়ে দিলে
আমিও উড়ি।
***
৪৫
কান্না ভেজা
পিছল পথে তুমি
ভোরের আলো।
***
৪৬
কৃষ্ণচূড়া
তিলক কেটে দেয়
হলুদ বুকে।
***
৪৭
দিগন্ত ঐ
হেলান দিল আজ
রঙিন সাঁঝে।
***
৪৮
মেঘের বুকে
পেঁজা তুলোর ভেলা
আলতো ছোঁয়া।
***
৪৯
বিলীন হল
আলতা পায়ের ছাপ
সাদা খইয়ে।
***
৫০
আদরখানি
জড়িয়ে দিলে গায়ে
ধ্রুপদী পদে।
***
৫১
পাপড়ি ঠোঁটে
নরম ভোরে আজ
মধুপ এল।
***
৫২
আবির ফুলে
তুমিও ছিলে মিশে
পলাশ দিনে।
***
৫৩
গাছের পাতা
নীরব হল তুমি
আসবে বলে।
***
৫৪
রূপকথারা
কেবল কাঁদে রোজ
ভ্রমর প্রাণে।
***
৫৫
চোখের কোণে
আবেশ এলে বুঝি
খিদের জ্বালা।
***
৫৬
দারুণ সাজে
তুমিই এসো ঘরে
ফাগুন মাখি।
***
৫৭
ধূসর আলো
মাটির মোহে তাই
মেঘ জমেছে।
***
৫৮
ডালিম ঠোঁটে
আলতা রঙে ফুল
পরাগ এঁকো।
***
৫৯
গোপন বাঁশি
মলিন ঠোঁটে দিল
আঁচড় কেটে।
***
৬০
কুঠরি খুলে
দাও ব্যাকুল মন
কুয়াশা এলো।
***
৬১
মেঘনা নদী
কাগজ নৌকা জলে
পাল তুলে দে।
***
৬২
সঙ্গোপনে
অলির দল ফুলে
বিরাজ করে।
***
৬৩
ভ্রান্ত মনে
বিভাব ভেবে তোমায়
বাসর বুনি।
***
৬৪
কাজল কালো
চোখের নিচে নদী
জন্ম নিল।
***
৬৫
পাহাড় বেয়ে
নদী নামে নরম
পুটুস ফুলে।
***
৬৬
অতল জলে
ভিজিয়ে নিয়ো মন
করুণ রাগে।
***
৬৭
বিকেল ফুলে
মধুপ আসে রোজ
একা যামিনী।
***
৬৮
বিষাদ রঙে
তুমিই ছিলে রাতে
জ্যোৎস্না নয়।
***
***
৬৯
নিকষ কালো
রাতের আগে মন
বাজায় বাঁশি।
***
৭০
ধূসর চায়ে
সন্ধ্যা নামে কাপে
গোপন রাগে।
***
৭১
ধাঁধার মতো
দমকা ঝড় এসে
উড়িয়ে নিল।
***
৭২
ঠোঙায় মোড়া
নীরব দেহ জুড়ে
গোলাপ কথা।
***
৭৩
বরফ সাদা
বেলের কুঁড়ি শুঁকে
তোমাকে পাই।
***
৭৪
এসো আমার
সতেজ ভোর আলো
কিরণ দেবে।
***
৭৫
আলেয়া দেখে
ভাসিয়ে দিয়ো না গা,
অদূরে চিতা।
***
৭৬
মাছের চোখ
নদীর জল শুয়ে
গভীর তল।
***
৭৭
আজব বাঁশি
বাজিয়ে কেন ডাকো
অতল তল।
***
৭৮
মিহি গলায়
বলে গেল সানাই
গভীর রাত।
***
৭৯
চলকে পড়া
চায়ের কাপে লেখা
চুমুক দিয়ো।
***
৮০
বাদল ঝরা
সন্ধেবেলা সোঁদা
গন্ধ ঠোঁট।
***
৮১
ভিজিয়ে নিয়ো
আঁচলখানি তুমি
স্নিগ্ধ তাপে।
***
৮২
গড়িয়ে পড়ে
ঝিলম নদী ডাক
ব্যর্থ স্বরে।
***
***
৮৩
জিয়ন কাঠি
ছুঁইয়ে দিয়ো মনে
জাগব আমি।
***
৮৪
অলস রঙে
ঠোঁটের সুধা যেন
গরল হল।
***
৮৫
যাপন ঘিরে
উঠল হাহাকার
আর এলে না।
***
৮৬
নীল পরীরা
রাতেরবেলা আসে
আকাশ পথে।
***
৮৭
পায়রা জুটি
ডুবিয়ে ঠোঁট মাতে
ছাদ রেলিংয়ে।
***
৮৮
পলাশ রঙে
তুমিও এসো আজ
আবির হাতে।
***
৮৯
ময়ূর ফুলে
বর্ষা নাচে মন
পেখম তুলে।
***
৯০
একলা ঘাট
নদীর পাড়ে বসে
নৌকা আসে।
***
৯১
চুপ কথাতে
তুমিই ছিলে মনে
আদর হয়ে।
***
৯২
গালিচা পাতা
বিষাদ রঙে মাখা
জিরিয়ে নিই।
***
৯৩
জ্যোৎস্না রাতে
নিভে এল প্রদীপ
ঘুমের আগে।
***
৯৪
জ্বলবে আলো
আসবে তুমি ঠিক
বিজনবেলা।
***
৯৫
প্রভাত শেষে
দুপুর কাঁদে রোজ
শুকনো ফুলে।
***
৯৬
বিফল পথে
হেঁটেই আমি ফুল
কুড়িয়ে আনি।
***
৯৭
বিদায় নেব
ঝরা বকুল ফুলে
সাদা গন্ধে।
***
৯৮
তোমার মুখে
গোধূলি রঙ আলো
মাতাল করে।
***
৯৯
সবুজ পাতা
একলা হয়ে ভিজো
চিঠির খামে।
***
১০০
থমকে আছি
আকাশ ভেঙে নামে
বিদায় বেলা।
***