
শুভদীপ ঘোষাল -এর কবিতাগুচ্ছ
বীজগণিত
তোমার প্রার্থনা থেকে
একটু দূরে
নতজানু হয়ে আছি
রাতের মনেস্ট্রি থেকে
উড়ে আসে পাখিদের মন —
সাদা বাঘের মতো
অনন্ত জ্যোৎস্নার দিকে
মৃৎপ্রদীপের আলো
সামান্য কেঁপে ওঠে
এই দ্বিঘাত সমীকরণের
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
আমি দেখি —
একটি বাদামি কুকুর
কুণ্ডলী পাকিয়ে
নিজের ভেতরে
শুয়ে আছে।
ইদানিং
এই যে প্রতিদিন
নিজেকে ছিঁড়ে খাওয়া—
এ এক নিজস্ব খেলা
কেউ শেখায়নি।
প্রতিটি স্নান
পুনর্জন্ম।
এখানে সমস্ত গাছ
বাকসিদ্ধ।
মাতৃভুক জ্যোৎস্না—
তথাগত।
রবিবার
যত দূরে আলো দেখা যায়
তত বেশি কাছে আসে অন্ধকার।
দূর থেকে আমাকেও
নরখাদকের মতো দেখায়।
সেইসব অনন্ত রাত্রি
মিশে আছে জলে
গতজন্মের অভিসারকাঁটা
এখনো ফুটে আছে পায়ে।
আমাকে কি সঙ্গে নেবে সে
রাই কিশোরী।
হারায় সে রোজ—
চৌরাস্তায়, গলির মোড়ে, বাসস্টপে।
যেভাবে চাঁদ হারিয়ে যায়
বেনেটোলা থেকে রবীন্দ্র সরণীতে।
সরকারি প্রসূতিসদন
চারিদিকে পশুপাখির কঙ্কাল।
বালিহাঁস
একটি রুক্ষ পাতাবিহীন গাছ
L-System-এর কোডে গড়া
প্রতিটি ডাল θ কোণে বিভাজিত
যেন বৃষ্টিচিহ্নিত মেঘ
নরম অন্ধকারে টেবিলের ওপর
মৃত গ্রাফচার্ট
অথচ
থোকা থোকা গোলাপি ফুল—
ফুটেছে আকাশে
হাঁটছি কোমল গান্ধার থেকে শুদ্ধ ঋষভের দিকে
একটি linear function ধরে
f(x) = mx + c
মাথার ভেতরে দিন-রাত পাক খায়—
একঝাঁক বালিহাঁস
সিনেমা
জল কেঁপে ওঠে
বক উড়ে যায়।
অসাধারণ, শুভদীপ! নতুন উচ্চারণের আদলে শব্দ স্তোত্র হয়ে ওঠে। সৃষ্টি হয় পবিত্র আবেশ। কবিতার এই প্রতিমারূপে মগ্ন নৈঃশব্দ্যের মেঠোপথ ধরে বৈরাগ্যের দিকে হেঁটে যেতে যেতে ভাবি, এভাবে কেউ আগে তো বলেনি! সৃষ্টির আদল তখন অতিকায় হয়ে উঠে ঢেকে ফেলছে আমাদের সব প্রকাশ-অপারগতা। সংকটেরও এমন মোলায়েম স্বরূপ হয়! কী আশ্চর্য! কী অপরূপ!