সুবর্ণরেখার তীরে <br /> ১৬ এবং ১৭ তম পর্ব   <br /> ছন্দা বিশ্বাস

সুবর্ণরেখার তীরে
১৬ এবং ১৭ তম পর্ব
ছন্দা বিশ্বাস

ষোড়শ পর্ব

তেইশ

মহুয়া বনের আঁধারেঃ

আদবাসী পাড়ায় আজ পরব চলছে। মুরলী সেই পরবে যোগ দেবার জন্যেই এসেছিল।

মেঘমালা জানত সে কথা। সখী কাজললতার সঙ্গে এ ব্যাপারে আগেই কথা হয়ে গেছে। দুইজনে বেশ কিছুক্ষণ শলা পরামর্শ করল।

কী করতে হবে মেঘমালা পরিষ্কার তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে।

আজ আচ্ছা করে কাজললতা মুরলীকে মহুয়া থেকে প্রস্তুত মদ খাওয়াবে।

তারপরে যা হবার হবে।

কাজললতা মুরুলীকে দেখা মাত্র ছদ্ম প্রেমের অভিনয় শুরু করে দিল। দারুর নেশায় তার যেন কথা জড়িয়ে যাচ্ছে এমন ভাব।

তার শরীর হিল্লোলিত হচ্ছে। চোখের পাতায় দারুণ মাদকতা।

মুরলীর চোখের দিকে সে এমন বিদ্যুৎ বাণ হানল যে মুরলীর বুক কেঁপে উঠল। হৃদয় নেচে উঠল দীর্ঘ দাবদাহের পরে নদীর শুষ্ক বুকে বর্ষার প্রথম জলের ফোঁটায় চমকিত হয় যেমন তেমনি।

দু’চোখে প্রেমের উচ্ছ্বাস ধরা পড়ল কাজললতার।

যেন সেও প্রেমের মদিরা পান করেছে।

সে আর স্থির থাকতে পারছে না।

তার পা টলছে।

কাজল লতার হাতে যে মদের বতল ছিল তার থেকে ছিনিয়ে নিয়ে মুরলী ঢকঢক করে সবটা পান করে ফেলল। কাজল লতা বলল, আরে করো কি, করো কি…

এটা তো আমি খাব, তোমারটা ওই যে ওইখানে রেখেছি,-

সেই দারু ছিল আরো কড়া।

কাজল লতা যেটা পান করেছে তাতে খুব বেশী নেশা হবার কথা নয়। তারুপরে সে খুব সামান্য খেয়েছিল।

কাজলতার এই প্রেম উন্মাদ অবস্থা দেখে মুরলীর শরীর দিয়ে দর দর করে ঘাম ঝরতে লাগল।

কান মাথা গরম হয়ে সে একটা বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা তখন।

সে পরম আবেশে কাজললতার দিএক এগিয়ে আস্ল।

কাজল লতা দুই পা পিছিয়ে গেল।

ফের মুরলি তাকে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ে গেল।

ফের আবার শিশুর মতো টলোমলো পায়ে উঠে দাঁড়াল। দুই চোখে ঘোর নেশায় ভরপুর।

কাজললতা দেখেই বুঝতে পারল ওষুধে কাজ দিয়েছে।

মুরলী আর থাকতে পারছে না। জড়ানো জিহবায় সে কত রকম প্রেমের শব্দ উচ্চারণ করল। কাজল লতা হাসতে গিয়ে নিজেকে সামলে নিল।

এদিকে একবারটি এসো না প্রিয়ে, বলতে বলতে সে পুনরায় এগিয়ে গেল কাজললতার দিকে।

কাজললতা এরপরে আরো এক বোতল দারু তুলে দিল মুরলীর হাতে।

মুরুলী ঢক ঢক করে পান করতে লাগল যেন প্রবল তৃষ্ণার্ত সে।

নেশা জমতে ক্ষীর হয়ে গেছে।

সেই সময়ে কাজল লতা আরো এক বোতল পানীয় মুরলীকে দেখিয়ে বলল, এটা তোমার বন্ধুর জন্যে রেখে দিলাম। এবারে যাও আর ওকে পাঠিয়ে দাও। দেরী হলে কিন্তু পাবে না।

খুব খুশি হল মুরলী। আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে ঘোড়ার পিঠে চেপে চলে এলো রংকিনী দেবীর থানে।

বাদলকে বলা মাত্র বাদল তো মহাখুশী।

এবারে সেও অশ্বের পিঠে চেপে চলে এল আদিবাসী গ্রামে।

আর সোমের পাহারায় থাকল মুরলী।

অদূরে জঙ্গলের ভিতরে দাঁড়িয়েছিল মেঘমালা। পাহাড়ের বেশ কিছুটা উপরে এই মন্দির। মন্দিরের সামনে যেটুকু আলোকময়।

আলোকিত স্থানের বাইরে জমাট বাঁধা অন্ধকার। চারিদিক নিস্তব্ধ। রাতজাগা পাখিরাও যেন আজ নিশ্চুপ হয়ে আছে। অজানা ভয়ে তারাও ভীত, সন্ত্রস্ত। কোনো জন্তুর পায়ের শব্দ কি গলার স্বর শোনা যাচ্ছে না। রাত বাড়ছে। বাড়ছে উৎকন্ঠাও।

মেঘমালা দেখল মুরলীর নেশাটা উত্তরোত্তর বাড়ছে।

দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে সে এবারে সামনে পাথরের উপরে বসে পড়ল। সামান্য সময় বাদে নেশায় বুঁদ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

মেঘমালা সেটাই চাইছিল।

এবারে সে ঘরের শিকল খুলে সোমকে বলল, পোষাক খোলো।

সোম তো হকচকিয়ে গেল।

যা বলছি শোনো।

সোম নিজের পোশাক খুলে ফেললে মেঘমালা তাকে একটা রক্ষীর পোশাক পরতে বলে সামনের জঙ্গলের পথ দেখিয়ে বলল, আড়াআড়ি পথটা ধরো। দেখ একজন রক্ষী অপেক্ষা করছে। সে ঘোড়ায় বসে আছে। সেখানে যাও। সোজা এই পথ ধরে চলে যাও। একটু দেরী কোরো না।

এবারে মুরলীকে টানতে টানতে ঘরে ঢুকিয়ে তাকে রক্ষীর পোশাক ছাড়িয়ে সোমদেবের পোশাক পরিয়ে দিল।

তারপরে ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়ে মেঘমালা জঙ্গলের পথ ধরল।

আড়াআড়ি সংক্ষিপ্ত পথ ধরে সে দ্রুত রাজকন্যার কাছে চলে এল।

দেখল সোমদেব সেকাহ্নে পৌঁছে গেছে। সোমকে দেখামাত্র রক্ষীর বেশধারী চিত্রলেখা ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরল।

সোম প্রথমে হক চকিয়ে গেলেও পর মুহূর্তে রাজকন্যার গায়ের গন্ধ সে টের পেল।

প্রিয়তমা তুমি!

সোম বুকে জড়িয়ে ধরল চিত্রলেখাকে। তারপরে চুম্বনে চুম্বনে তাকে মথিত করতে লাগল।

কিছু সময় কেটে গেল। কারো মুখে কোনো নেই।

মেঘমালা দূর থেকে দেখল সেই মধুর দৃশ্য। কিছুটা সময় দিল সে। মন থেকে সাড়া না দিলেও কঠিন কাজটা সে করল।

মেঘমালার হাতে আর বেশী সময় নেই। তাই সে আর দেরী করতে চাইল না।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও কাছে গিয়ে বলল, একটু রসভঙ্গ করতে হল যে।

তোমাদের সামনে এখন কঠিন সময়। বিপদ এখনো কাটেনি।

এক্ষুণী এই স্থান থেকে তোমাদের পালাতে হবে। নইলে ধরা পড়ে যাবে।

– পালিয়ে যাবো কোথায়?

– আগে চলো, কাপালিকের মন্দিরে।

-এই রাতে কাপালিকের মন্দিরে কেন?

– আগে মন্দিরে গিয়ে মায়ের সামনে তোমাদের বিবাহ দিয়ে দেই। তারপরে কী করবে কোথায় যাবে ভাবা যাবে।

– না না সেটা সম্ভব নয়। তাছাড়া কাপালিক যদি সেখানে থাকে?

সে তো ভয়ানক মানুষ। আমার বাবা ভয় করছে।

– না তিনি আজ এই অঞ্চলে নেই। আমি খবর নিয়ে জেনেছি। তিনি অনেক দূরে গেছেন বিশেষ একটা কাজে।

– না না সখী, তুমি অন্য কোনো পথের সন্ধান দাও। অন্য কিছু ভাবো-

– ঠিক আছে, চাইছ আন যখন তখন আর একটা কাজ করতে পারো, আজ রাতটা আমার গৃহে বাস করো। প্রভাতে আমিই তোমাদের পথ দেখিয়ে দেবো।

মহারাজের চর সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। খুব সাব ধান!

– ভয় নেই এমন ভাবে সাজিয়ে দেবো কেউই তোমাদের সন্দেহ করবে না বিন্দুমাত্র।

– সে না হয় হল, তারপরে?

– পরের কথা চিন্তা করতে গেলে সামনে এক পাও এগোতে পারবে না।

– কিন্তু আজ রাতে যখন আমার খোঁজ পড়বে।

– সেটা আমি ম্যানেজ করে নেবো।

রাজকন্যা চিত্রলেখা তবু অনড় রইল। এইভাবে রাজপরিবারের মুখে চুন কালি মাখিয়ে নতুন জীবনে প্রবেশ করাটা কি সমীচীন হবে?

মেঘমালা পর মুহূর্তে চিন্তা করে বলল, ঠিক আছে, এটাও পছন্দ হচ্ছে না। অন্য কী উপায় আছে আমি দেখছি।

সপ্তদশ পর্ব

চব্বিশ

সুবর্ণরেখার তীরে

সোমদেবকে যে রংকিণী মাতার যূপকাষ্ঠে বলি দেবার জন্যে আদেশ দিয়েছেন স্বয়ং মহারাজের মুখ থেকে এখবরটা প্রথম পেয়েছিল অপূর্ব।

চরেরা অনেকদিন ধরে ওৎ পেতে ছিল সোমদেবকে হাতে নাতে ধরার জন্যে।

এর পিছনে মুরলি আর বাদলেরও হাত ছিল। আর ছিল দাসী মণিকার হাত। সকলের নেপথ্যে একজন এর আসল ঘুটি সাজিয়েছিল। সকলের অজান্তে যে এই কাজটি করেছিল সে হল মন্ত্রী কন্যা।

খুবই ঈর্ষা পরায়ণ মেয়ে। চিত্রলেখার সঙ্গে রাজকন্যার এই যে এত সখ্যতা সে কিছুতেই মানতে পারত না। সে চাইত রাজকন্যা যেন শুধু তার সঙ্গে খেলা করে, সময় দেয়। মনে মনে রাজকন্যাকে সে হিংসা করত।

কিন্তু চিত্রলেখা যে মেঘমালা সখি অন্তে প্রাণ। তা ছাড়া মন্ত্রী কন্যা মেয়েটা মোটের উপরে খুব একটা সুবিধের নয়। সব কথায় তার নালিশ।

চিত্রলেখা তাই মন্ত্রীকন্যাকে পছন্দ করত না। কিন্তু মুখে সে কখনো এ কথা কাউকে বলেনি।

মন্ত্রী কন্যা মুক্তামালার কানে যখন এই সংবাদ পৌঁঁছাল যে সোমদেব নামে এক শিল্পীর সঙ্গে গভীর প্রণয় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে রাজকন্যার তখন সে সোমদেবকে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করল।

একদিন মুক্তমালা তার এক সখিকে বলল আমাকে একবার নিয়ে যাবি সুবর্ণরেখার ধারে যেখানে শিল্পী বসে ছবি আঁকেন?

– এ আর কী এমন কথা। কবে যেতে চাও বলো?

– কালই।

– ঠিক আছে, প্রস্তুত থেকো।

পরেরদিনই সখী সঙ্গে মন্ত্রীকন্যা চলে আসে সুবর্ণরেখার ধারে।

বিকেল গড়িয়ে গেছে। পাখিরা দলবদ্ধ ভাবে বাসায় ফিরছে। সোমদেব একখানি প্রস্তরখন্ডের উপরে বসে আপন মনে ছবি আঁকছিল।

পিছন থেকে দুই জন কৈশোর উত্তীর্ণা সদ্য যৌবনপ্রাপ্তা নারী তার পিছনে এসে দাঁড়াল।

বহুদূর ভেসে চলা নদীটা, তার দুই পাড়ে গাছ গাছালি, বৈকালিক দৃশ্যপটের সুন্দর একখানি ছবি সে খাতার পাতায় আঁকছিল। এতো গভীর মন দিয়ে সে আঁকছে যে তাদের উপস্থিতি সোমদেব টের পেল না।

আঁক কষা সম্পূর্ণ হলে সকলে অবাক হয়ে দেখতে লাগল। পশ্চিম আকাশের আলো এসে পড়েছে ছবিটার উপরে। কিছুটা আলোর ছটা তেরছা ভাবে পড়েছে সোমের মুখে।

সোনার বর্ণ ঝলমলিয়ে উঠেছে সেই কমলা আলোক বিভায়।

মন্ত্রীকন্যা সোমদেবকে দেখে মোহিত হয়ে গেল। এতো সুন্দর যুবক সে ইতিপূর্বে দেখে নি। যেমন রূপ তেমনি তার চেহারায় মাধুর্য। অপূর্ব দর্শনধারী এক যুবক। দীর্ঘদেহী, সোনার বর্ণ, উন্নত নাসিকা, দৃষ্টি নন্দন তার চোখ দুটো। চোখ ফেরাতে পারছে না। আবার কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না এমনি তার ব্যক্তিত্ববোধ।

এ ওকে ঠেলাঠেলি করতে লাগল।

এক সময়ে পিছনে গুঞ্জন ধ্বনি শুনে সোম দেব ঘাড় ঘোরাল।

দেখল তিনজন কিশোরী তার পিছনে দাঁড়িয়ে উঁকিঝুকি দিচ্ছে।

ব্যাপারটা সোমের ভাল লাগল না।

সে তসবির গুটিয়ে নিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করল।

এতে সেদিন মন্ত্রী কন্যা অপমানিত বোধ করল। সে বেশ সেজেগুজেই গিয়েছিল। যাতে সোমের নজরে পড়ে যায়। কিন্তু নজরে পড়া দূরে থাকুক সোম বিন্দুমাত্র তার দিকে তাকিয়ে দেখেছে কিনা বুঝতে পারল না।

এতে তার ভয়ংকর রাগ হল। সে অপমানিত বোধ করল। আজ পর্যন্ত কোনো কিশোর যুবক তাজে দেখে এমন করে মুখ ফিরিয়ে নেয় নি। মুক্তমালার রূপের দেমাক ছিল ভারী।

ভিতরে ভিতরে ঈর্ষার আগুনে পুড়তে লাগল।

এরপরেই সে সখীদের মারফৎ বাদল আর মুরলীকে বলে দিল।

রাজা ইতিমধ্যে সোমদেবকে ধরার জন্যে পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। যখন জানতে পেরেছেন রাজকন্যার পানিপ্রার্থী সে। ইতিমধ্যে কয়েকবার দুইজন নির্জনে দেখা করেছে। তখন মহারাজের টনক নড়ল।

ভয়ানক রাগ হল সোমদেবের উপরে। কে সেই আগন্তুক, এতো দুঃসাহস যার?

কার ঘাড়ে কটা মাথা আছে যে এমন কাজ করতে পারে?

রাজকন্যা এখনও নাবালিকা না হলেও সাবালিকা নয়। সবে মাত্র সতেরোয় পা দিয়েছে। কী এমন বয়েস হয়েছে? একেবারে ছেলেমানুষি মন। এই বয়েসে সে না হয় ভুল করতে পারে তাই বলে সোমদেব নাম যুবকের সে এত বড় দুঃসাহস দেখায় কীভাবে?

বামুন হয়ে চাঁদে হাত!

চাল নেই চুল নেই, ঠিক ঠিকানা নেই এমন বাউন্ডুলের সঙ্গে মল্লরাজ কন্যার বিয়ে?

এমন দঃস্বপ্ন সে যেন আর কোনোদিন না দেখতে পারে আমি সেই চেষ্টাই করছি।

মহারাজ হুংকার ছাড়লেন।

মেঘমালা থাকলে এসব কথা সে আগেই জেনে যেত সেই মতো সোমকে রক্ষা করতে

পারত।

কিন্তু এতো সব কান্ড ঘটে গেল সে তখন মাতুলালয়ে।

এদিকে সেদিন মহারাজের চরেরা সোমদেবকে ফুলডুংরি টিলায় একটা গাছের গুড়ির সঙ্গে বেঁধে রেখেছিল। পিছ মোড়া করে বেঁধে চোখ দুটো কালো কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিল।

একজন দ্রুত অশ্বের পিঠে চেপে রাজার কাছে এই সংবাদ পৌঁছে দিল যে তাকে পাওয়া গেছে এবং বেঁধে রাখা হয়েছে ফুলডুরি পাহাড়ের উপরে একটা শাল বৃক্ষের সঙ্গে।

মহারাজ আদেশ দিলেন, আজ রাতেই দেবী রংকিণীর থানে নিয়ে যাও তাকে।

দেবীর পূজার বলি হবে সে।

মহারাজের সর্বাংগ ক্রোধে প্রকম্পিত হচ্ছিল তখন।

মহারাজ যখন এই আদেশ দিলেন সেই সময়ে সেখানে উপস্থিত ছিল মেঘমালার প্রেমিক খনি শ্রমিক অপূর্ব। রাজপ্রাসাদে তার অবাধ যাতায়াত। নানা ফাই ফরমায়েশ খাটে সে। উদ্দেশ্য একটাই মেঘমালার সান্নিধ্য পাওয়া। তা ছাড়া সে নানা গুণের অধিকারী। স্বয়ং মহারাজ তাকে খুবই স্নেহের চোখে দেখেন। এই জঙ্গল মহলের পথ ঘাট, হাল হকিকত অনেক কিছুই তার নখদর্পণে।

তার পিতৃপুরুষেরা এই রাজ বংশে কাজ করে আসছেন। সুতরাং পারিবারিক সম্পর্কে রাজ পরিবারের তাদের অনেকখানি হৃদ্যতা আছে।

সে তো গোটা ব্যাপারটা সবই জানত।

যখন এই বার্তা তার কানে গেল সে প্রথমে ভয়ানক আতংকিত হল এবং পরে অস্থির হয়ে পড়ল। রাজকন্যার কথা ভেবে উতলা হল।

রাজকন্যার সখীর কথা ভেবে উদবিগ্ন হল। রাজকন্যা কী ভাবে এই শোক সামালাবে?

রাজকন্যার কিছু একটা হলে রাজকন্যার শোকে আকুলা হবে তার প্রেমিকা। সেই বা কি করে ভালো থাকবে কাছের মানুষ দুইজন যখন এমন কষ্টে থাকে?

এইসব হাজার চিন্তা আতকে ঘিরে ধরল।

কিন্তু এই মুহূর্তে কোনটা সে আগে করবে বুঝে উঠতে পারছে না।

তার এমন হতচকিত অবস্থা দেখে একজন প্রতিহারী তার কাছে এসে বলল, কী ব্যাপার তোমার এমন

অবস্থা কেন? কী হয়েছে? শরীর খারাপ লাগছে?

অপূর্ব মাথা নাড়ল। বলল, একবারটি মেঘমালাকে ডেকে দিতে পারো?

– সে আর এমন কি কঠিন কাজ। যাই দেখি বলি গে।

তুমি এ এই খানে একটু বোসো তো। আমি এই যাবো আর চলে আসবো।

অপূর্ব একটা থামের নীচেয় বসে পড়ল।

তার শরীর থেকে অঝোরে ঘাম ঝরছে। চিন্তায় মাথার ভিতরে মনে হচ্ছে আগুন জ্বলছে। ছাতি ফেটে যাচ্ছে সুতীব্র যন্ত্রণায়। তার ভিতরে চিন্তা করছে কী ভাবে এই বিপদ থেকে সোমদেবকে বাঁচানো সম্ভব।

ভাবতে ভাবতেই মেঘমালা স্বয়ং সেখানে উপস্থিত হল।

– একী? কী হয়েছে তোমার?

মেঘমালা সংবাদ পেয়ে তৎক্ষণাৎ ছুটে চলে আসে।

অপূর্ব সংক্ষেপে জানায়, রাজকন্যার সমূহ বিপদ।

– মানে?

– মানে, আগন্তুককে রাজার রক্ষীরা গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখেছে।

মহারাজ নির্দেশ দিয়েছেন আজ রাতে দেবী রংকিনি মাতার সামনে যূপকাষ্ঠে তাকে বলি দেবে।

কথাটা কানে যেতেই মেঘমালার বুক কেঁপে উঠল। চোখের কোণে দুই ফোঁটা অশ্রুবিন্দু দেখতে পেল অপূর্ব।

মেঘমালা দু মিনিট সময় নিল।

বলল, যে রাজ অনুচরেরা আগন্তুককে বেঁধে রেখেছে তাদের চেনো?

– হ্যাঁ,

– কারা?

– বাদল আর মুরলী।

– ওহ, এবারে বুঝতে পেরেছি। ওই দুর্মুখ দুইজন এই ফন্দী এঁটেছে তাহলে।

দাঁড়া এবারে, তোদের কীভাবে জব্দ করতে হয় আমিই দেখাবো।

কথাটা মনে মনে বলল মেঘমালা।

মুখে বলল, এরাই তাহলে কঠিন কাজের দায়িত্ব পেয়েছে?

এই প্রসঙ্গে বলা দরকার এই বাদল আর মুরলী এক সময়ে মেঘমালার পাণিপ্রার্থী ছিল।

কিন্তু মেঘমালা এদের কিছুতেই পাত্তা দেবার পাত্রী নয়।

নাছোড়বান্দা যুবক দুইজনকে কথার ছলে সরিয়ে রেখেছিল।

তাছাড়া মুরলী ছিল ভয়ানক হিংস্র আর খতরনক। নানান অসামাজিক কাজকর্ম করায় তার

জুড়ি মেলা ভার।

তামার খনির শ্রমিকদের সেই বিদ্রোহী করে তুলছিল। কয়েকবার সে গরাদ বাস করেছে।

মহারাজ জানেন সে কথা।

বাদল দুষ্ট প্রকৃতির হলেও মুরলীর মতো নয়।

আজও সময়ে সময়ে ওর দিকে এমন আড় চোখে তাকায় যেন সামান্য একটু হৃদয় শিথিল হলেই মেঘমালার কাছে প্রণয়ের বার্তা পাঠাবে।

মেঘমালা সেই সুযোগটা এখন কাজে লাগাবে ঠিক করল।

এরাই আগন্তুকের খোঁজ দিয়েছিল মহারাজকে। এমনকি রাজার কানে তুলেছিল রাজকন্যার সঙ্গে প্রণয়ের খবরটাও।

চিত্রলেখা আবার সে কথা মুক্তমালার সখীদের মুখ থেকে জানতে পেরেছে।

এটাও জেনেছে যে এই চক্রান্তের পিছন্তে মুক্তার হাত আছে।

মেঘমালা ফিরে এলে রাজকন্যা এদিকের সমস্ত খবর জানিয়েছে মেঘমালাকে।

তখন থেকে মেঘমালা তক্কে তক্কে ছিল।

এখন যখন শুনল এদের কপট ছল চাতুরির জন্যে আগন্তুকের প্রাণনাশ হতে চলেছে তখন সে মনে মনে ঠিকই করে ফেলল বাদল আর মুরলীর শেষ দেখে ছাড়বে।

এমন একজন অসহায় মানুষের যারা এমন সর্বনাশ করতে পারে তাদের শেষ পরিণতি কি হওয়া উচিত নিজেই মনে মনে ঠিক করে ফেলল।

মেঘমালা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিল এবং অপূর্বকে বলল, চটপট উঠে পড়।

– কোথায় যাচ্ছ?

– ঘোড়া নিয়ে দ্রুত একবার যেতে হবে মহুয়া বনের ধারে।

– মহুয়া বনের ধারে? এই রাতে?

– রাত কোথায়? সবে তো সন্ধ্যা ঘনিয়েছে। দেরী করলে রাত বাড়বে।

এই মুহূর্তে বাড়তি কথা বলার সময় নেই। চলো,-

– তুমিও কি যাবে?

– নয়তো কি? তোমার যা অবস্থা দেখছি একা সব কিছু সামলাতে পারবে?

মেঘমালা চটপট বেরিয়ে পড়ল।

আজ ঘোর অমাবস্যা তিথি।

দেবী রঙ্কিণীর থানে পূজার আয়োজন চলছে। রাজ পুরোহিত সহ আরো অনেকে সেখানে

উপস্থিত আছেন। রাত্রি দ্বিতীয় প্রহরে অমাবস্যা লাগছে। তখনি দেবীর পূজা শুরু হবে।

সারারাত ধরে চলবে পূজা।

স্বয়ং মহারাজ রাত্রি দ্বিতীয় প্রহরের সামান্য কিছু আগে পৌঁছে যাবেন। এ রাতে মহিলারা

যাবেন না।

তাদের যেতে হলে ভোরবেলা যেতে হবে।

অপূর্বর মুখ থেকে কথাটা শোনামাত্র মেঘমালা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিল। যা করার কয়েক ঘন্টার

ভিতরেই করে ফেলতে হবে।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes