যখন তাঁকে পেলাম কাছে .. <br /> অবিনাশ মিশ্র

যখন তাঁকে পেলাম কাছে ..
অবিনাশ মিশ্র

একজন ভারতীয় কখন প্রথম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে পান? এই প্রশ্নটা ভাবতে গিয়ে মনে পড়ে গেল জাতীয় সঙ্গীতের কথা। বেশিরভাগ ভারতীয় রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে প্রথম পরিচিত হন জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে, যদিও বাঙালি বা বাংলাভাষীদের ক্ষেত্রে এটি ভিন্ন।

আমিও জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে প্রথম রবীন্দ্রনাথের মুখোমুখি হয়েছিলাম— এবং এটা জেনেছিলাম যে এটি একটি সাধারণ রচনা বা সংগীতের মতো পড়া বা শোনা যাবে না! এই পরিচয়ের অনেক পরে, যখন আমি সাহিত্য জগতের দিকে তাকালাম, দেখলাম, আমি দেখতে পেলাম যে, জাতীয় সংগীত নিয়ে এর আগেও যে সব বিতর্ক বহুবার হয়ে গেছে, তা আবার একটি বিখ্যাত হিন্দি মাসিক পত্রিকায় আবারও শুরু হয়েছে।

কিছুক্ষণ পর এই বিতর্কের ছায়ায় চোখ বোলাতে বোলাতে, আমার মনে হল রবীন্দ্রনাথই রবীন্দ্রনাথ! আশ্চর্য হবেন না। এটা কোনো অতিরঞ্জন নয়; কারণ সাহিত্য আকাদেমির যে লাইব্রেরিতে আমি সপ্তাহে ছ’দিন যেতাম, সেটি ছিল রবীন্দ্রভবন নামে একটি ভবনে। সেখানে প্রবেশের আগে রবীন্দ্রনাথের মূর্তির দিকে তাকানো বাধ্যতামূলক ছিল।

এই উপস্থিতি ব্যতীত, আমি যে সমস্ত শিল্পকলায় উদ্ভাসিত হয়েছি, রবীন্দ্রনাথ সেই সব সমস্ত শিল্পেই ছিলেন। তিনি সাহিত্যে ছিলেন, তিনি চিত্রকলায় ছিলেন, তিনি ভাস্কর্যে ছিলেন, তিনি ছিলেন সংগীতে, তিনি থিয়েটারে ছিলেন, তিনি চলচ্চিত্রে এবং তিনি ওয়েব সিরিজেও… তাই আমি জানতে পেরেছি যে এই ধরণের উপস্থিতি নিয়ে এই সংসারে তিনিই একমাত্র কবি। কেউ তাঁকে যতই এড়িয়ে যেতে চায় না কেন, কোথাও না কোথাও তাকে পাওয়া যায়। তিনি মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে ছিলেন, তিনি ছিলেন আইনস্টাইনের সঙ্গে, তিনি ছিলেন পণ্ডিত নেহরুর সঙ্গেও।

এই রবীন্দ্রময়তা ছাড়াও, আমি কবির ছবি দ্বারা এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলাম যে আমি আমার স্টাডি রুমে তরুণ রবীন্দ্রের একটি ছবি ফ্রেমবন্দী করে ঝুলিয়ে রেখেছিলাম। এটা সেই দিনের কথা যখন এই স্টাডি রুমটাই ছিল আমার বেডরুম এবং রান্নাঘর। আসলে তখন, এই একটাই রুম ছিল আমার। এই একাকীত্ব জীবনে, আমি ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট ক্যালেন্ডার থেকে এই ছবিটি নিয়েছিলাম যেখানে বারো জন ভারতীয় মহাপুরুষের তরুণাবস্থার ছবি ছিল। আর এই বারো জনের মধ্যে একজনই কবি ছিলেন – তিনি কবীন্দ্র রবীন্দ্র।

আমি আমার ছোটবেলায় রবীন্দ্রনাথ এবং রবীন্দ্রনাথের উপর প্রচুর লেখা পড়েছি। এই প্রসঙ্গে, আমি হিন্দি এবং ভারতীয় সাহিত্যের উপর তাঁর প্রভাব সম্পর্কেও জানলাম। শ্রেষ্ঠ হিন্দি কবি ও গদ্য লেখকরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাগুলি বাংলা থেকে হিন্দিতে অনুবাদ করেছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বাংলা শিখেছিলেন যাতে তাঁরা মূল ভাষায় রবীন্দ্রনাথ পড়তে পারেন।

এই প্রবন্ধের লেখক (মানে আমি) যখন প্রথম কলকাতায় যান, তখন তিনি গিয়েছিলেন জোড়াসাঁকোতেও (ঠাকুরবাড়ি)। এখানেই আমাদের প্রিয় কবির শৈশব কেটেছে। কলকাতার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত এই বাড়ির সর্পিল সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার সময়, এর এবড়ো-খেবড়ো মাটিতে হাঁটতে হাঁটতে, বারান্দা এবং প্ল্যাটফর্মগুলিকে উপলব্ধি করতে গিয়ে লীলা মজুমদারের ‘জোড়াসাঁকো বাড়ি’ বইয়ের পাতাগুলি মনে পড়ছিল। তখনও আমি রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুটি উপন্যাস ‘কাদম্বরী দেবী কা সুইসাইড নোট’ (কাদম্বরী দেবীর সুইসাইড নোট) এবং ‘ম্যায় রবীন্দ্রনাথ কি পত্নী’ (আমি রবি ঠাকুরের বউ) পড়িনি। এখন যখন জোড়াসাঁকোতে যাব, আমার নিশ্চয়ই মনে পড়বে এই দুটি উপন্যাসের পাতাগুলো, যেগুলো আমি পড়েছি শুধুমাত্র রবীন্দ্রনাথের প্রতি ভালোবাসার কারণে।

এই পাঠের পরে, আমি বুঝতে পেরেছি যে কবি-লেখক-চিন্তাবিদরা যারা ঈশ্বর বা মহাত্মার মর্যাদা অর্জন করেছেন তাঁরাও একটি মুক্ত প্রেম-যৌন জীবন যাপন করতে পারেন এবং এর যে কোনও ধরণের প্রকাশ, কাল্পনিক বা বাস্তব, ভারতীয় মানসিকতায় কিছুটা অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে— এই বিশ্বাস নিশ্চয়ই রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো গল্পকারদের মধ্যে ছিল। যাইহোক, এটি কেবল একজন ভারতীয় নয়, এটি একটি সর্বজনীন মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি যে এটি সেই সমস্ত লোকদের গোপনীয়তা জানতে চায় যারা হয় তাদের নাগালের থেকে অনেক দূরে বা যাদের ‘পাবিলিক পশ্চারিং’ ঈশ্বর বা মহাত্মাদের খুব কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও। সভ্যতার শুরু থেকেই সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত এই কৌতূহলোদ্দীপক আগ্রহের সুযোগ নিয়ে আসছেন পেশাদার লেখক ও সাংবাদিকরা। কখনও কখনও, এই প্রচেষ্টায়, এই ‘পেশাদার’রা এমন মাত্রায় পড়ে যান যে, তাঁরা শোনা এবং বানানো তথ্যকে সম্পূর্ণ বাস্তব হিসাবে উপস্থাপন করেন। এইসব গল্প সহজভাবে অনেক কম উত্তরদায়িত্বের সঙ্গে লেখা হয়, বলাবাহুল্য। কিন্তু…

রবীন্দ্রনাথকে, কয়েক বছর আগে, এক নতুন আঙ্গিকে পেলাম। আর এই প্রেক্ষাপটে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আমার পরিচয় হল একেবারে নতুনভাবে। সেসময়, আমি সবচেয়ে খারাপ সিনেমার ক্ষেত্রেও এত প্রশংসা দেখতাম, পড়তাম এবং শুনতাম যে আমার ক্রমাগত মনে হত যে আমি এবার অপ্রীতিকর কিছু বলেই ফেলব। এ অবস্থায় আমার রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে একটি ছবিতে দেখা হয়। এটি ছিল আর্জেন্টিনার চলচ্চিত্র – পাবলো সিজার পরিচালিত ‘থিংকিং অফ হিম’ (২০১৭)। এই ছবিতে দু’টি গল্প একসঙ্গে চলে। ভূগোল শিক্ষক ফেলিক্স তার অস্থির বর্তমানকে এড়াতে পারে না। একদিন সে পায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতার বই। গল্পটা এমনভাবে এগোয় যে সাদা-কালো পর্দায় রবীন্দ্রনাথ আর্জেন্টিনায় এসে লেখিকা ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর অতিথি হন এবং রঙিন পর্দায় ফেলিক্স শান্তিনিকেতনে এসে কমলির অতিথি হন। প্রেম এখানে নিরঙ্কুশ নয়, পূর্ণ নয়, তবে এর প্রভাবে এটি সমগ্র মানবতার জন্য কল্যাণকর হওয়ার স্বপ্ন দেখাতে পেরেছিল।

আজ সর্বত্র, প্রকাশ্যে উপস্থাপিত গল্প ও বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, রবীন্দ্রনাথের প্রেম সম্পূর্ণ নয়। মাত্র কয়েক দিন আগে, আমি ইনস্টাগ্রামে একটি রিলের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় এটি উপলব্ধি করেছি। এই রিলে ওশো বলেছেন: “রবীন্দ্রনাথের একটি উপন্যাসে, একটি ছেলে তার প্রেমিকাকে বলে যে, আমি তোমাকে বিয়ে করতে প্রস্তুত, কিন্তু তুমি থাকবে হ্রদের ওপারে এবং আমি এই ধারে। বিষয়টি প্রেমিকার বোধগম্যতার বাইরে। সে বলে তুমি পাগল হয়ে গেছ! প্রেমে পড়ার পর মানুষ একই বাড়িতে থাকে। প্রেমিক বলেন, প্রেমের আগে একই বাড়িতে থাকলেও প্রেমের পর একই বাড়িতে থাকা ঠিক নয়। বিপদমুক্ত নয়। একে অপরের আকাশে বাধা পড়তে থাকে। আমি হ্রদের ওপারে, তুমি এই লেকের এ ধারে। এই শর্ত, তাহলে বিয়ে হবে। হ্যাঁ, মাঝে মাঝে তুমি আমন্ত্রণ পাঠাবে আর আমি আসব বা আমি আমন্ত্রণ পাঠালে তুমি আসবে বা মাঝে মাঝে হ্রদে বোটিং করার সময় বা হ্রদের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা গাছের কাছে মর্নিং ওয়াক করার সময় হঠাৎ দেখা হয়ে যাবে – বিস্মিত, তাহলে এটা সুন্দর হবে। কিন্তু কোন দাসত্ব থাকবে না। তোমাকে না ডাকলে আমি আসব না, আমার ডাক ছাড়া তুমি এসো না। তুমি চাইলেই এসো, ডাকলে এসো না। আমি চাইলেই আসব, শুধু তুমি ডাকলে আমি আসব না। আমাদের মধ্যে যদি এতটুকু স্বাধীনতা থাকে তবেই এই স্বাধীনতার আকাশে প্রেমের ফুল ফুটতে পারে।”

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে যখনই দেখা হয়, আজও তিনি এই শিক্ষা দেন— স্বাধীনতার ইচ্ছা, স্বাধীনতার বরণ এবং স্বাধীনতার রক্ষা…

হিন্দি থেকে অনুবাদ: বেবী সাউ

লেখক পরিচিতি-

অবিনাশ মিশ্র হিন্দি ভাষার সুপরিচিত কবি-সাহিত্যিক। এখনো পর্যন্ত তাঁর দু’টি কাব্যগ্রন্থ, দু’টি উপন্যাস এবং একটি আলোচনা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes