
কী বিপদের নাম যে রবি ঠাকুর!
সরোজ দরবার
রবি ঠাকুরের সঙ্গে মন কষাকষি হয়ে গেল ক্লাস ফাইভ বা সিক্সে। তার আগে তিনি ছিলেন, গড়পড়তা বাঙালি বাড়িতে যেমন থাকেন। পাড়াগেঁয়ে আমাদের ঘরে ছবি বলতে আত্মীয়-স্বজন আর ঠাকুরদেবতার। তা বাদ দিলে শুধু রবীন্দ্রনাথেরই। তবে মোটেই তাঁকে পরিবারের সদস্য, পরমাত্মীয়, আত্মার আত্মীয়- এমন কিছুই মনে হয়নি। গুরুদেব, ইমাম সাহেব, পুরোহিত, মৌলবি কিচ্ছু নয়। দেওয়ালের একদম উঁচুতে হাত তিনেকের ফারাকে দুটো ছবি, বাঁধানো, পুরনো হয়ে যাওয়া। একজন, দেবী গন্ধেশ্বরী; অন্যজন রবীন্দ্রনাথ। দুজনেই সম্পূর্ণ অচেনা। গন্ধেশ্বরীর পুজো পাড়ায় হয় না, অথচ বাড়িতে ছবি আছে। আর রবীন্দ্রনাথ? যেরকম পোশাক মানুষটার, আমাদের জ্ঞাতিগুষ্টিতে কাউকে অমন লম্বা জামা পরতে দেখিনি। পাড়াতেও নয়। তার উপর হাত দুটো পিছনে রেখে যেভাবে দাঁড়িয়ে আছেন, ওরকম সচরাচর কেউ দাঁড়িয়েছেন বলেও মনে পড়ে না। গাঁয়ের জীবনে যা যা অভিজ্ঞতা নিয়ে বড় হয় কেউ, তার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ মারাত্মক বেমানান। ফলত অচেনা।
তবে, ততটাও নন। তাঁর নাম তো শোনা। সেই ছড়া-মুখস্থ-করা-বেলা থেকে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের…। পঁচিশে বৈশাখ এলে দেওয়ালের ছবিটা নামিয়ে রাখা হত কাঠের চেয়ারে। পরিষ্কার পাতা কাপড়ের উপর দাঁড়িয়ে জন্মদিনের রবীন্দ্রনাথ। ছোটপিসি চন্দনের ফোঁটা এঁকে দিত ছবির কপালে। মালা দেওয়া হল, আশেপাশে অল্পস্বল্প ফুলের সাজ। ব্যস এটুকুই। ছোট আমরা ছড়া বলেই খালাস। এরপর স্কুল। সেখানেও পঁচিশে বৈশাখ নানা আয়োজন। মালা-ফুল-কবিতা-গান-নাচ। জমজমাট জন্মদিন। মানুষটা যে নিঃসন্দেহে কেউকেটা তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। ক’জনের বা জন্মদিন এত ঘটা করে পালন করা হয়! বইয়ে যাঁদের লেখা পড়া হয়, তাঁদের সকলেরও নয়। অতএব রবি ঠাকুর বিশেষ। এটুকু সেই ছোটবেলাতেই মগজের মধ্যে ঢুকে গেল। যে ক্লাসেই উঠি, রবীন্দ্রনাথ পড়ার বইয়ে ঠিক থাকছেনই। তার উপর মাঝে মাঝে তাঁর ছবির দিকে চোখ তো চলেই যায়, আছেন তো মাথার উপরে। তাই বলে তাঁর সামনে দুষ্টুমি করতে যে প্রাণ কাঁপত এরকম কখনও হয়নি। ওই যা, রবি ঠাকুর দেখে ফেলবেন, তাহলে আমার কী হবে, এরকম কস্মিনকালেও মনে হয়নি। মাঝে মধ্যে তাঁর সঙ্গে আমার একটু অন্যরকম মোলাকাত হয় এই যা! বাবা অফিস থেকে ফিরে আমার পড়াশোনা নিয়ে বসে; এক-একদিন একটু আগে ছুটি, সেদিন অন্য পড়াশোনা। টেবিল থেকে নামে ‘সঞ্চয়িতা’। বাবা পড়ে, ‘সোনার তরী’, কৃষ্ণকলি; শুনতে ভালো লাগে, বুঝি না কিছুই। বরং ‘পুরাতন ভৃত্য’ ভালো। আর ‘দুই বিঘা জমি’। ওই যে ফেরার সময় আম পড়ার ঘটনাটা আছে, ওইখানটা এলেই আমাদের আমগাছগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। গাছগুলো মাথা দোলায়, আমও ঝরে পড়ে। ব্যাপারটা যে খুব স্বাভাবিক আর রবীন্দ্রনাথ সেই কথাই লিখে গিয়েছেন, ভেবে ভালো লাগে। বাড়ির সেলফে সব বই বাবার। হিসাবশাস্ত্র থেকে হোমিওপ্যাথি ডাক্তারি। এক তাকে রাখা ‘রামায়ণী কথা’, তার সামনেও রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন। সে লেখা পড়ে এক বর্ণও বোঝা যায় না। ‘রাজর্ষি’ খুলেও তেমন অর্থ উদ্ধার হয় না। বরং শরৎচন্দ্র ভালো। লালুর গল্প হোক বা মহেশ, আমি নিজেই পড়ে শোনাতে পারি। হিসাবটা দাঁড়াল এই, বাবার জন্য রবীন্দ্রনাথ; আমার উপেন্দ্রকিশোর, সুকুমার, শরৎচন্দ্র এমনকী আনন্দমঠ। একদিন অকস্মাৎ অঘটন। স্কুলে ‘বীরপুরুষ’ বলতে গিয়ে শেষের দিকে বেমালুম ভুলে গেলুম। মনে পড়ল না তো পড়লই না; তার আগে ‘প্রশ্ন’ আবৃত্তি করেছি, তখন গড়গড়িয়েই বলেছি। এদিকে বীরপুরুষ নাকি মাকে উদ্ধার করবে, আর আমি আর স্মৃতি থেকে শেষের ক’টা লাইন উদ্ধার করতেই পারলাম না। বাংলার রীতা ম্যাডাম বললেন, এত পড়া মনে রাখিস, আর রবীন্দ্রনাথের কবিতা ভুলে গেলি! বুঝলাম, অপরাধ বেশ গুরুতর। সব রাগ গিয়ে কেন কে জানে পড়ল রবীন্দ্রনাথেরই উপর; মনে হল, থাকো তুমি তোমার মতো; আমি আমার রাস্তা দেখছি। পঁচিশে বৈশাখ আর রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করিনি, কখনই না। স্কুলে এরপর নাটকে সুযোগ পেলাম, হলাম নরেন গোঁসাই। একটুও সংলাপ ভুলিনি; শুধু গুলি খেয়ে পড়ে যাওয়ার দৃশ্যে একবিন্দু খামতি। গুলির শব্দ আর পড়ে যাওয়ার তালমিলটা জোরদার হয়নি। আগে পড়ে যাওয়া আর পরে গুলির শব্দের ভিতর যে কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধান ছিল দর্শক তা এমনিই ক্ষমাঘেন্না করে দিয়েছে। আর যাই হোক, নরেন গোঁসাই মুখে কথা তো হারায়নি! নাই-বা হল বীরপুরুষ!
রবীন্দ্রনাথ যে ঠিক কেন প্রাণের আরাম, আত্মার শান্তি তা বুঝে ওঠার জন্য তৈরি মন চাই। সে মন আর আমার কোথায়! গান শুনি, ওই শুনিই। সর্বস্ব না সর্বনাশ কিছুই সেভাবে বুঝে ওঠা যায় না। শুধু তাঁর একটা ছবি আমার সঙ্গী হয়ে গেল। যখন যেখানে থেকেছি, এখন যেখানে আছি, যেখানে বসে থাকি দিনের বেশিটা সময়, রবীন্দ্রনাথের একটা ছবি কাছাকাছি থাকে। কতটা রবীন্দ্রনাথের কারণে জানি না, অনেকটা আমার নিজের প্রয়োজনে। সেই যে ছোটবেলায় বাড়িতে দেখা অচেনা মানুষটার ছবি, তিনিই এখন সবথেকে চেনা। ছবি হয়ে সঙ্গে থাকলে বসবাসের জায়গাটা যেন ঘর-ঘর হয়ে ওঠে। হয়তো নেহাতই সংস্কার, তা হোকগে! তবে রবীন্দ্রনাথ যে নিঃশ্বাসে, প্রশ্বাসে জড়িয়ে ছিল কিংবা আছেন, এমন দাবি করতে পারি না। বয়সের হালকা হুল্লোড়ে মনেই পড়ে না তাঁকে অনেক সময়। যেদিন খেয়াল হল, সেদিন নিজেই চমকে গেলাম। তখন বাঙালির অনিবার্য বেকারধর্ম পালন চলছে। নিজের সম্পত্তিতে ততদিনে কিছু বইপত্র এসেছে। জয়, ভাস্কর, মৃদুল, রনজিৎ, তুষার; পাশেই থাকে স্কুল থেকে উপহার পাওয়া গল্পগুচ্ছ। তার সঙ্গে একটা ছিন্নপত্র, জীবনস্মৃতি, চোখের বালি, আর সস্তায় পাওয়া সেকেন্ড-হ্যান্ড গীতবিতান। আমি থাকি এই মেসে, ওই মেসে, তারপর মেসের লাগোয়া এক খুপরি ভাড়া ঘরে। রবীন্দ্রনাথ থাকেন, যেমন তিনি বরাবর থাকেন সঙ্গে। বন্ধুরা মিলে মাঝেমধ্যে তাঁর গান গাই। বয়সের কাঁচা ধর্মে সেই গান নিয়ে মশকরা, প্যারডি করি। একবার গিয়ে রক্তকরবী দেখে এলাম অ্যাকাদেমিতে। এমনিতেই সে সব রাত জাগার দিনকাল। গান গাই, তাই তো তোমায় জাগিয়ে রাখি…। তারপর এসে হোঁচট খাই দুখজাগানিয়া শব্দে। বড় নতুন, নিষ্ঠুর, অথচ মোলায়েম এই শব্দ। কে এই দুখজাগানিয়া? হাতড়ে উত্তর মেলে না সহজে। বোঝাই তো যায়, রবীন্দ্রনাথ সহজ লোক নন। নেহাত সহজ পাঠ দিয়ে তাঁকে পড়া শুরু হয় এই যা! নইলে আজীবন তিনি বেশ কঠিন। সেরকম সময়ে একদিন সিঁড়ি ভেঙে নামতে গিয়ে পা মচকে বেকায়দায়। ব্যথা প্রবল! ভাবছি, রাত হয়েছে, এখন আর কাকে বিরক্ত করব! হুট করে মনে পড়ে গেল, রবীন্দ্রনাথের কথা। পড়েছিলাম, এক রাতে বিছের কামড় খেয়ে সারা রাত যন্ত্রণা সয়ে শুয়েছিলেন তিনি, পাছে নিশুতরাতে কারও ঘুম ভাঙে! আমি তো আর রবীন্দ্রনাথ হতে যাচ্ছি না রে বাবা! তবু মনে পড়ল কথাটা। ব্যথা চেপে খানিকক্ষণ বসে রইলাম নিজের ঘরে। একটু পরে মেসের এক দাদা দেখতে পেয়ে চুন-হলুদ ব্যবস্থা করে ফোলার উপর লাগিয়ে দিল। সেদিন কেন যে রবীন্দ্রনাথের কথা মনে পড়েছিল সে কথা ভেবে তল মেলে না। দেওয়ালের ছবির মানুষটা কবে যে ঠিক ভিতরঘরে ঢুকে পড়েছেন টেরই পাইনি।
আর একটু সময় গড়াল। একটা কাজের সুযোগ এল। কী কাজ? না, সেই রবীন্দ্রনাথের উপরই লেখাজোকা। সুযোগটা এনে দিয়েছিল আমার এক দাদা। ‘পারবে?’- প্রশ্ন এল। ‘কেন পারব না?’- নিজেকেই বললাম নিজে। রবীন্দ্রনাথ তো তেমন অচেনা আর এখন কেউ নন। কাজের নমুনা পেশ করলাম। এক সংস্থার বড়বাবু তা দেখে অ্যাপ্রুভ করে দিলেন। শুরু হল রবীন্দ্রসাগরে হাবুডুবু। সেই কাজ চলল বছর দেড়েক। রবীন্দ্রনাথকে তখন পড়ি আর পড়ি। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নানাজনের লেখা পড়ি আর পড়ি। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তখন একটু একটু করে কথাবার্তা চালাচালি শুরু হয়। বাঙালি হয়ে জন্মানোর এই এক মস্ত সৌভাগ্য। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে এক আলাপন-পৃথিবী তৈরি করে নেওয়া যায়, তর্ক করা যায়, হার মানা যায়; স্বীকার, অস্বীকার, পুনরাবিষ্কারে সেই পৃথিবী রোজ ঘুরতে থাকে এই মহাবিশ্বে। আমার ধারণা সব বাঙালিরই তা থাকে। আমারও হল। তারপর কাজের জন্য রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লিখি। পয়সা পাই। সেই ছোটবেলার ছবিটার কথা মনে পড়ে। ছবিটাকে সামনে রেখেই ছোট থেকে বড় হয়ে উঠলাম যেন। বেকারবেলায় বাকি বাঙালিযুবকের মতো আমিও বাবার হোটেল ভরসা। বেকার আমার হাতে সেদিন যেন সহৃদয় রবীন্দ্রনাথ টাকা এনে দিলেন। এমনিই, যেমন গুরুজনরা ছোটদের দিয়ে থাকেন, আদরে-স্নেহে। রাতের বেলা তাঁকে নিয়ে কাজ করি। পড়তে লিখতে রাত ফুরিয়ে আসে। খোলা জানলায় তখন ভোর হয় হয়! টেবিলের দিকে ফিরে তাকাতেই দেখি, রবীন্দ্রনাথ জেগে বসে আছেন তখনও। যেন আমারই জন্য। আমি মনে মনে বলি, কতজন আপনাকে কত নামই তো দিয়েছে। আমি যদি বাবা বলে ডাকি, আপনি আপত্তি করবেন, রবীন্দ্রনাথ?
তবে, এরপর বিপদ বাড়ে বই কমে না। আসলে, রবীন্দ্রনাথকে জানা আমার ফুরোয় না। সেটাই হল মুশকিল। লোকটা তো শান্তি দেন না একটুও। পুব-পশ্চিম কোনটিকেই তিনি ছাড়ছেন না। আধুনিকতার যে রথে চড়ে বসেছিলেন, পশ্চিমের মুখোশ যখন খুলল, তখন সে কথা বলতে তো দ্বিধা করছেন না। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যে বলেন, রবীন্দ্রনাথের জীবনে রামমোহন আর বিদ্যাসাগরের প্রভাব অনেকখানি, তা যথার্থই। ওঁরা দুজনও যা করার একাই করেছিলেন। সংকল্প থেকে সরেননি। রবীন্দ্রনাথও দেখি জীবনভর একলা চলো। সেই এক জেদ। একদিকে গানে, লেখা নতুন রাস্তায় হাঁটছেন। রাজনীতিতে এলেন, সরেও গেলেন। বুঝলেন, এ জায়গা তাঁর নয়। তবু সারা জীবন তীব্র ভাবে রাজনৈতিক হয়েই থাকছেন। গান্ধীজিকে যে চিঠি লিখছেন, সেখানে বোঝা যায় গান্ধীমতে-পথে তাঁর অনাস্থার কথা। আবার গান্ধীকে বরণ করে নিচ্ছেন সাদরে। সুভাষকে দেশনায়ক বলতে দ্বিধা করছেন না। মজা হল, দেশহিতের চলতি মতের বিরোধিতা করে আর লিখেই তিনি ক্ষান্ত হচ্ছেন না। তাঁর যে দেশগঠনের ভাবনা, তার ফলিত প্রয়োগ করছেন, তাঁর যতটুকু সামর্থ্য তার মধ্যেই। ভাবছেন হয়তো, এই ছোট প্রকল্প একদিন ঠিক দেশে মডেল হয়ে উঠবে। শান্তিনিকেতনের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন অকাতরে। ব্যক্তিগত জীবনে বিপর্যয়। তা সত্ত্বেও ভিড়ের মাঝে একলা হয়ে লেখার কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন। সবথেকে বড় কথা, তিনি প্রতিদিন হয়ে-উঠছেন। থেমে থাকছেন না। রবি চক্রবর্তী একটি চমৎকার তথ্যের সামনে আমাদের এনে হাজির করেন। ‘ভারততীর্থ’ লিখছেন রবীন্দ্রনাথ, যেখানে পুণ্যতীর্থে জেগে ওঠার কথা। দেশ এখানে তীর্থক্ষেত্র। ঠিক তার পরের দিন লিখছেন, ‘দীনের সঙ্গী’, পৌঁছে যাচ্ছেন সেখানে, যেখানে থাকেন দীনের হতে দীন। সবার অধম সবহারাদের মাঝেই যে তাঁর চরণ রাজে, উপলব্ধি রবীন্দ্রনাথের। তার পরেরদিন তাই লিখে ফেলেন, ‘দুর্ভাগা দেশ’। যাদের অপমান করা হয়েছে, তারাই তো পশ্চাতে টানছে। এই তো দুর্ভাগ্য! এই অপমান মিটবে কী করে! আমি বুঝতে পারি, পশ্চিমের মায়া কাটার পর রবীন্দ্রনাথ যে মানুষের তীর্থ নিয়ে তাঁর আশার কথা বলবেন, সে বীজ তাঁর কবিতাভাবনাতেই লুকিয়ে। আর যা লুকিয়ে তা হল, এক বিন্দুতে থিতু না হওয়া। এক জীবনের ভিতর জন্মান্তরের গল্প। তিনি নিজেও থিতু হচ্ছেন না, আমাকেও হতে দিচ্ছেন না। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ নিজেই নিজের সমালোচনা করছেন। তারপর কালকের রবীন্দ্রনাথকে যেন নাকচ করে, আবার নতুন রবীন্দ্রনাথের খোঁজ করছেন। কখনও আমি একে স্ববিরোধিতা বলে ভুল করেছি। এখন বুঝি এই বদল, এই প্রতিদিন হয়ে-ওঠাই মানুষের ধর্ম, প্রাণের ধর্ম, বেঁচে থাকার প্রথম শর্ত। আর এক মনীষীও তাই বলেন, বদলই একমাত্র ধ্রুব। রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনকেই সেই পরীক্ষাগার করে তুলেছেন। এই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া মুশকিল। পরিত্রাণ হওয়ার আগে তিনি বিপদে ফেলে দেন। বলেন, থেমে থাকছ না তো? কাল থেকে আজকের মধ্যে কতটা নতুন হয়েছ তুমি! কতটা বদলেছে ভাবনা? কতটা সমালোচনা করেছ নিজের?
নাহ্ লোকটা একটুও আরাম দেন না। কী বিপদের নাম যে রবি ঠাকুর, যত দিন যায় ততই বুঝতে পারি।