সম্বৎসরিক ভক্তিহীন রবি-পুজো : কতখানি আত্মিক? কতখানি লোকদেখানো, আনুষ্ঠানিক? <br />   শুভাশিস মণ্ডল

সম্বৎসরিক ভক্তিহীন রবি-পুজো : কতখানি আত্মিক? কতখানি লোকদেখানো, আনুষ্ঠানিক?
শুভাশিস মণ্ডল

‘অন্ধকারে লুকিয়ে আপন মনে
কাহারে তুই পূজিস সঙ্গোপনে
নয়ন মেলে দেখ দেখি তুই চেয়ে
দেবতা নাই ঘরে’

#
বেঁচে থাকলে, তাঁর বয়স হ’ত ১৬৩ বছর। আমরা, বঙ্গভাষীদের একাংশ তাঁকে দেবতা করে তুলেছি, প্রায়! বিগত দেড়শো বছর ধরে, আমরা দুই বঙ্গের বাঙালিদের অতি ক্ষুদ্রাংশ, তাঁর কাছ থেকে দু হাত ভরে শুধু নিয়েই গিয়েছি। কতটুকু নিতে পেরেছি? আমবাঙালির সকলেই কী তা পেরেছেন? আমাদের যাপনে, জীবনে তিনি প্রকৃতার্থে কতটুকু জুড়ে থাকেন? অবরে-সবরে গুটিকয় রবীন্দ্রসংগীত শোনা ব্যতীত, তাঁকে কী শিক্ষিত সংস্কৃতিবান সংখ্যালঘু বাংলাভাষীরা মাঝেমধ্যে বা নিয়মিত স্মরণ করে? বঙ্গভাষীদের সংখ্যাগুরু অংশ দৈনন্দিনতায় ঠিক কতটুকু তাঁকে নিয়ে মাথা ঘামায়? তাঁর যাবতীয় কর্মকাণ্ডের কতটুকু খোঁজখবর অধিকাংশ বাঙালি রাখতে পেরেছে? কতটুকুই বা আত্মস্থ করে, প্রয়োগ করতে পেরেছে আপন জীবনচর্যায়? তাঁর নানান বিষয়ের সুগভীর ভাবনাকে কতটা কার্যকর করতে পেরেছে, জীবনে? যাপনে?

#
সাতাত্তর বছরের স্বাধীনোত্তর এই ভঙ্গ বঙ্গদেশে, কবির মহাপ্রয়াণের তিরাশি বছর পরেও, শান্তিনিকেতনে প্রতিষ্ঠিত তপোবনাদর্শের প্রাচীন শিক্ষার্জন পদ্ধতির একদা ব্রহ্মচর্যাশ্রম, পরবর্তীর ‘পাঠভবন’ আমরা পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলায়, অন্তত একটি করে স্থাপন করতে পেরেছি কী? যেখানে, কবির কারিকুলাম-অনুসারী আনন্দ-পাঠ গ্রহণ সম্ভব? নীরস সিলেবাসে বিষয়ের প্রতি পড়ুয়াদের কৌতূহলোদ্দীপক আগ্রহ সৃষ্টি করে, প্রকৃত বিদ্বোৎসাহী গড়ে তোলাই যার উদ্দেশ্য ছিল। যেখানে উন্মুক্ত প্রকৃতির কোলে বসে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধূলা, ছবি আঁকা, প্রকৃতিপাঠ, হাতের কাজ, শিক্ষামূলক ভ্রমণ, নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটক, দেওয়াল ম্যাগাজিন, নীতি ও শৃঙ্খলারক্ষার পাঠ, স্বাবলম্বী হওয়ার পাঠ গ্রহণ সম্ভব? আদর্শ বিদ্যালয় পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত, তার একটি মডেল তিনি তৈরি করে দেখিয়েছিলেন। আমরা তাঁর প্রদর্শিত মডেল অনুসরণ করতে পারি নি!

কবি প্রদর্শিত পথে, পল্লীউন্নয়নের সমবায় পদ্ধতি, স্ত্রী শিক্ষা, সমবায়ের মাধ্যমে মেয়েদের হাতের কাজ শিখিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা, কৃষি উন্নয়নের প্রয়াস, গ্রামীণ চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতিসাধন, জনস্বাস্থ্যের যত্ন, পরিবেশ রক্ষা, দূরশিক্ষার বিস্তার, কর্মসংস্থানের প্রশিক্ষণ এবং স্বনির্ভরতার পাঠ, সুস্থ সাংস্কৃতিক ভাবনার প্রসার, প্রভৃতি কবিকর্মীর বিবিধ বিষয়-ভাবনাগুলিকে কী আমরা আমাদের বঙ্গজীবনের অঙ্গ করে নিতে পেরেছি? না, এতদিন পরেও তা বাস্তবায়নের কোনও সম্ভাবনাই চোখে পড়ে নি! না কেন্দ্র, না রাজ্য সরকার স্বাধীনতার সাতাত্তর বছর পরেও কবির গড়ে দেওয়া মডেল অনুসরণ করে বিদ্যালয় মহাবিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিন্দুমাত্র প্রয়াসী হয় নি! কেন্দ্র যদি রবীন্দ্র-শিক্ষার্জন দর্শন না বুঝতে চায়, রাজ্যও সে বিষয়ে উদাসীন থেকেছে! শিক্ষাক্ষেত্রের কোনো বেসরকারি উদ্যোগেও রাবীন্দ্রিক ভাবনা প্রতিফলিত হতে দেখিনা সেভাবে!

#
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসের বাইরে, তাঁকে নিয়ে আমরা কতটুকু চর্চা করি? কীভাবে করি?

#
উপরিউক্ত যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর অধিকাংশ আমজনতার কাছে, নেতিময়। তবু, তিনি আছেন। আবিশ্বের বঙ্গভাষীদের এক শতাংশের মননলোকে হলেও, তিনি আছেন। এবং হয়তো থাকবেনও।

#
তাঁকে, তাঁর সৃষ্টিকে, তাঁর কীর্তিকে ভিন্নতর কৌণিকে জানার ইচ্ছে আমাদের অন্তহীন। ব্যক্তি, স্রষ্টা এবং কবিকর্মী রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে গবেষণা চলতেই থাকবে। চলুক। কিন্তু গবেষণার অনেক মূল্যবান উপাদান যে নষ্ট হতে বসেছে। সে বিষয়ে যত্নশীল হবে কে? কোন প্রতিষ্ঠান? বিশ্বভারতী, রবীন্দ্রভারতী, জাতীয় গ্রন্থাগার, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, জয়কৃষ্ণ-বাগবাজার-চৈতন্য-রামমোহন লাইব্রেরির মত কিছু প্রতিষ্ঠান, এশিয়াটিক সোসাইটি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারগুলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অসংখ্য বইপত্তর আছে ঠিকই। কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট একটি গ্রন্থাগারে রবীন্দ্র-গবেষণার যাবতীয় উপাদান সাধারণের কাছে, গবেষকদের কাছে এখনো পর্যন্ত সহজলভ্য নয়!

#
এতাবৎ তাঁর জীবন-সৃষ্টি-কীর্তি বিষয়ে প্রকাশিত হয়েছে কয়েক হাজার গ্রন্থাদি। ততোধিক পত্রপত্রিকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য মূল্যবান প্রবন্ধাদি। কিন্তু সেসব গ্রন্থ ও প্রবন্ধাবলীর সম্পূর্ণ তালিকা কোথায়? সূচি কোথায়? লেখকের নাম, প্রকাশক, গ্রন্থ বা পত্রিকার প্রকাশকাল, সংস্করণের সালতামামি কোথায়? কেন একটি ছাদের নীচে ‘রবীন্দ্রচর্চাকেন্দ্র’ জাতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানে, অথবা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের অথেনটিক ওয়েবসাইটে রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক যাবতীয় তথ্যাদি খুব সহজে, একটি ক্লিকে তা পাওয়া যাবে না? রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক এতাবৎ যত গ্রন্থাদি ও প্রবন্ধাবলী প্রকাশিত হয়েছে, তার অর্ধেকের বেশি পরিমাণ, বাজারে পাওয়া যায় না। আউট অফ প্রিন্ট! অথচ তা অধিকাংশ লাইব্রেরিতেও ব্যবহারযোগ্য নেই। বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান। কলকাতা থেকে ১৬৩ কিলোমিটার দূরে। বাঙালিদের কাছে রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক আবেগ যতখানি, অন্যান্য ভাষাভাষীদের কাছে খুব স্বাভাবিক ভাবেই কতোখানি নয়! রাজ্য সরকারের তরফে কেন এতদিনেও একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ‘রবীন্দ্রচর্চা গবেষণাকেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হলো না? যেখানে রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক যাবতীয় দুষ্প্রাপ্য বই-সহ, এযাবৎ প্রকাশিত যাবতীয় প্রয়োজনীয় উপাদান সহজলভ্য হবে। যেগুলি এখন আউট অফ প্রিন্ট, কপিরাইটহীন সেগুলির ফটোকপি বা ডিজিটাল সংরক্ষণ, বা পিডিএফ ফর্ম্যাটে পড়া যাবে, এমন ব্যবস্থা কে করবে? সহস্রাধিক সাময়িকপত্রে অসংখ্য মূল্যবান প্রবন্ধাদি প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলি সংগ্রহ করে, একত্রিত করে ভবিষ্যতের গবেষকদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা কী করা সম্ভব নয়? ১৯ খণ্ড ‘চিঠিপত্র’-এর বাইরে, আরও অন্তত ১৯ খণ্ডে প্রকাশের মত চিঠিপত্র বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সেগুলি একত্রিত করে, খণ্ডে খণ্ডে দুই মলাটে প্রকাশের দায়িত্ব কে নেবে? বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে দীর্ঘদিন সম্পূর্ণ উদাসীন! তাঁদের প্রকাশন বিভাগ প্রায় অবলুপ্তির পথে!

#
বিভিন্ন লাইব্রেরিতে রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক পুরনো বইগুলোর উল্লেখ ক্যাটালগে থাকলেও, বাস্তবত তা নানা কারণে পাঠকের হাতে এসে পৌঁছয় না! কর্তৃপক্ষ উদাসীন! আগ্রহী গবেষকদের তা না পেয়ে হতাশ হতে হয়! অথচ রবীন্দ্রনাথ আমাদের, বাঙালিদের গর্ব! আন্তর্জাতিক পরিচিতি তাঁর। আমরা বাঙালিরা তাঁর মহাপ্রয়াণের তিরাশি বছর পরেও রবীন্দ্রচর্চা গবেষণার ফসল সংরক্ষণে উদাসীন!

#
বাংলা ভাষায়, দুই বাংলায় রবীন্দ্রনাথের জীবন ও সৃষ্টি বিষয়ক আনুমানিক সাত-আট হাজার গ্রন্থ আজ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও ইংরেজি-সহ ভারতীয় অন্যান্য ভাষা এবং আরও বেশ কিছু বিদেশি ভাষায় লেখা হয়েছে, রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক অসংখ্য গ্রন্থাদি। দেশে-বিদেশে রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক সহস্রাধিক থিসিস পেপার জমা হয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হেফাজতে। দেশেবিদেশের বিশিষ্ট গবেষকদের কয়েক হাজার প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে অসংখ্য পত্রপত্রিকার পৃষ্ঠায়। দেশ-বিদেশের অসংখ্য শিল্পীদের কন্ঠে রেকর্ড হয়েছে রবীন্দ্রসংগীত, গীতিনাট্য নৃত্যনাট্যের গান, রবীন্দ্র-কবিতা, নাটক, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ। অন্যান্য ভারতীয়, তথা শতাধিক বিদেশি ভাষায় রবীন্দ্র-রচনা অনূদিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের জীবন ও রচিত কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে অনেকগুলি সিনেমা, তথ্যচিত্র। আমাদের কবির বহুমুখী প্রতিভার বহুকৌণিক বিশ্লেষণ হয়েই চলেছে, কালে কালান্তরে। লেখ্যরূপে, দৃশ্য-শ্রাব্য মাধ্যমে। এই সমস্ত অমূল্য সম্পদ কী আমরা যথোপযুক্ত সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারি না? কপিরাইট উঠে যাওয়া বই এবং প্রবন্ধগুলি ডিজিটাইজ করার ব্যবস্থা করতে পারি না, রাষ্ট্র, রাজ্য বা কোনও সহৃদয় সংস্থার ব্যবস্থাপনায়? চর্চাপোযোগী উপাদানের হার্ডকপি এক ছাদের তলায় এবং আইন মেনে তার সফট কপি রবীন্দ্র-চর্চা গবেষণা-কেন্দ্রের রিপোজিটরিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে, আগ্রহী টেকস্যাভি-পড়ুয়াদের কাছে সহজলভ্য করে তুলতে পারি না?

#
নবপ্রজন্ম নানা কারণে লাইব্রেরি বিমুখ! কিন্তু মোবাইলমুখী! সেক্ষেত্রে যাদবপুরের ‘বিচিত্রা’ সাইটের মত, যেখানে রবীন্দ্র-রচনা এক ক্লিকেই সহজলভ্য, তেমনি অনলাইন রিপোজিটরি, ওয়েবসাইটের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক যাবতীয় গ্রন্থাদির বিস্তারিত খোঁজ খবর সহজলভ্য করার ব্যবস্থা কী কোনো সরকারি সংস্থা করতে পারে না? তাহলে দেশে বিদেশের অসংখ্য রবীন্দ্রপ্রেমী ছাত্র গবেষকেরা ভীষণ উপকৃত হতেন। অন্তর্জালিক বিশ্বে নবপ্রজন্ম রবীন্দ্রনাথকে সামগ্রিকভাবে বুঝে নিতে সাহায্য পেত। পাঠক লাইব্রেরি যাওয়ার সময় না পেলে, সরকারি ডিজিটাল আর্কাইভকেই পাঠকের দরবারে পৌঁছে যেতে হবে! একবিংশ শতাব্দীতে এসে, আধুনিক প্রযুক্তির সম্পূর্ণ সদব্যবহার কেন আমরা করবো না? তার ব্যবস্থা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকেই করতে হবে। নিতে হবে সুপরিকল্পিত উদ্যোগ।

#
রাজ্যে একটি নজরুল গবেষণা কেন্দ্র আছে। খুব ভালো। সাধু উদ্যোগ। কিন্তু ‘রবীন্দ্র-চর্চা গবেষণা কেন্দ্র’ নেই কেন? অন্তত একটি ‘রিপোজিটরি’। যেখানে একটি ক্লিকেই রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক যাবতীয় লেখাপত্তরের হদিস পাওয়া সম্ভব। যে বইগুলি বর্তমানে বাজারে পাওয়া যায়, সেগুলি পাঠাগারে রেখে, যেগুলি পাওয়া যায় না, কপিরাইট মেনে, লেখক বা তাঁর পরিবারের, প্রকাশকের অনুমতিসাপেক্ষে, তাঁদের প্রাপ্য রয়েলটি দিয়ে, সেগুলি সংরক্ষণের ব্যবস্থা কী করা যায় না? অন্তত এটুকু তথ্য তো দেওয়া সম্ভব– বইটি বা প্রবন্ধটির লেখক কে, কোন পত্রিকার কোন সংখ্যায় তা প্রকাশিত হয়েছিল, কোন প্রকাশনী সংস্থা, গ্রন্থাকারে কবে প্রকাশ করেছে, কোনো সংস্করণ হয়েছে কী না, প্রকাশক পরিবর্তন হয়েছে কি না, ওই বইগুলি কোন কোন লাইব্রেরিতে ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় রয়েছে? তা পাঠকের পক্ষে পাওয়া সম্ভব কি না, গ্রন্থের সূচি, কল নং, তা বাস্তবত ব্যবহারযোগ্য কি না, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যাদি।

#
একবিংশ শতাব্দীর সিকিভাগ প্রায় অতিক্রান্ত। কালের নিয়মে, ভারচ্যুয়াল জগতের হাতছানিতে একালের বৃহদংশের পড়ুয়ারা বিস্তারিত পাঠাভ্যাসে অলস, পাঠ-বিমুখ। গবেষক, শুধুমাত্র ডিগ্রি প্রত্যাশী। তাঁদের মুখ্য উদ্দেশ্য চাকুরী-লাভ এবং অর্থউপার্জন! শিক্ষক-অধ্যাপক সিলেবাসের বাইরে, রবীন্দ্র চর্চায় অনাগ্রহী! প্রকৃত বিদ্যানুরাগীর সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান! বঙ্গভাষী জনসংখ্যার নিরিখে তাঁরা অত্যল্প হলেও, তাঁরা আছেন। তাঁরা থাকবেনও।

#
২০২৪-এ, রবীন্দ্রচর্চাকে যুগোপযোগী করতে সত্যিই একটি অনলাইন রিপোজিটরি এবং অফলাইন ‘রবীন্দ্র-চর্চা গবেষণা-কেন্দ্র’ খুব প্রয়োজন। যেখানে এক ছাদের তলায় কবির যাবতীয় সৃজনশীলতার তথ্যাদি এবং কবির জীবন সৃষ্টি কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাদি উভয় ফরম্যাটে সংরক্ষিত থাকবে। দেশ-বিদেশের প্রকৃত-আগ্রহী অনুসন্ধিৎসুরা ব্রিটিশ লাইব্রেরির মত, জার্মানির হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটির মত, কিছু অর্থের বিনিময়ে, কিছু বিনামূল্যে, অনলাইনে বা অফলাইনে প্রয়োজনীয় উপাদান বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারবেন। প্রয়োজনে, কপিরাইট মেনে, লেখক-প্রকাশকদের রয়েলটি বাবদ কিছু অর্থ রিপোজিটরির তরফে দেওয়ার ব্যবস্থা করা সম্ভব। আগ্রহী পাঠককেই প্রয়োজনে অর্থের বিনিময়ে রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক গ্রন্থাদি অথবা গ্রন্থাংশ সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি সেই সংস্থাকে, তা সরবরাহ করতে হবে।

#
দরকার সরকারের তরফে অথবা বেসরকারি উদ্যোগের সদিচ্ছা, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং রূপায়ণ। কেন্দ্র এগিয়ে না এলে, রাজ্যকেই সে উদ্যোগ এবং দায়িত্ব নিতে হবে। আর, রাজ্য সরকারও যদি সে দায়িত্ব নিতে না চায়, তাহলে, কলকাতারই বড়ো কোনও প্রকাশন সংস্থা, অথবা গিল্ডকে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যক্তিগত উদ্যোগের গবেষণাকে পুরস্কৃত ক’রে উৎসাহিত করা হয়, কোনও কোনও বড়ো প্রকাশনার তরফে। কিন্তু বৃহৎস্বার্থে, রবীন্দ্র-চর্চাকে আরও আধুনিকতম যুগোপযোগী করে তুলতে এগিয়ে না এলে, অচিরেই অনেক অমূল্য লেখ্য-সম্পদ আমাদের হারাতে হবে। সেই সম্পদ রক্ষা করা রবীন্দ্রপ্রেমী বঙ্গভাষীদের আশু কর্তব্য। কারণ, তিনি বাঙালিদের একমাত্র রবীন্দ্রনাথ!

#
নইলে, শুধু পঁচিশে বৈশাখ, আর বাইশে শ্রাবণে কবির ছবিতে ফুল-মালা দিয়ে, গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজো ক’রে, দু’চারটে রবীন্দ্র-কবিতা আর রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে নম নম করে সম্বৎসরিক রবীন্দ্র-পুজো ‘কবিপ্রণাম’ সারা হবে। প্রণাম, কবির চরণ পর্যন্ত পৌঁছবে না—
“যখন তোমায় প্রণাম করি আমি,
প্রণাম আমার কোন্‌খানে যায় থামি,
তোমার চরণ যেথায় নামে অপমানের তলে
সেথায় আমার প্রণাম নামে না যে”…

কবি-প্রদর্শিত আদর্শপথে যদি আমরা না-ই চলতে পারি, তাহলে, প্রতি বছর লোক দেখানো রবিপুজো করে কী হবে?

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes