জীবননাচের আখ্যান  <br />         সায়ন ভট্টাচার্য

জীবননাচের আখ্যান
সায়ন ভট্টাচার্য

“তাঁর হাসি সদা রহস্যময়। কখনো তা ছিল কবির মজ্জাগত ব্যঙ্গ তো কখনো তা নিছক শিশুর সারল্যের প্রতিফলন। প্রয়াত কবি উৎপলকুমার বসুর হাসির সঠিক বিশ্লেষণে দেখা গেল সবাই প্রকৃতই বিস্মিত। তাঁর কবিতার মতোই সে হাসি আড়াল তৈরি করে। যে আড়াল পেরিয়ে তার কাব্য হৃদয়ের স্পর্শ পাওয়া সত্যিই দূরহ কাজ। ”
নভেম্বর মাসের এক স্মরণ সভায় এই ভাষালিপি গুলি ঝরে পড়ছিল শিশিরের মতো। শহরের গাড়ি ঘোড়া কুয়াশা ভেদ করে তখন আপন গন্তব্যমুখী। হৃদয় বারবার স্মৃতির মলাট খুলে পাতার বুকের মাঝে কান পাতে। কোনো এক আজানু কেশ নারীর মতো রহস্যময় কবির চলাফেরা । ‘বস্তুত ধূলির খেলা ফেলা দিয়ে আমি বারবার / অন্য সকলেরই মতো ধ্রুব তত্ত্বে, আত্মজিজ্ঞাসায় / ফিরে যেতে চেয়েছি যৌবনে’ ( ‘ফেরিঘাট’/ পুরী সিরিজ)
এই যৌবনে ফিরে যাওয়া যায় একমাত্র যখন রচয়িতা তার শেষ কলমটুকর আঁচড় দেয় খাতায়। তাকে অনেকটা বাদ দিতে হয় জীবন থেকে ভাষা, মানুষ, সংলাপ, ব্যর্থ চুম্বনের ইতিহাস। বাদ দিতে দিতে তিনি নেচে ওঠেন জীবন থেকে জীবনীর পথে। তার আয়তন মাত্র ৩২ পৃষ্ঠা ।শ্রষ্ঠা সবাইকে ডাক দেন খোলা বারান্দার উপর থেকে – ” আমাকে নাচতে দাও “, উৎপলকুমার বসু।

ট্রপিক চলনের বেগে টেবিলের ল্যাম্প গরাদ দিয়ে বাহিরমুখী – কবি বন্ধু বলেন – ” এই ধূসর কলকাতা শহরের রোজকার সাধারণ আকাশ এখন অপৃথিবী বা অতিপৃথিবীর অন্তরীক্ষ হয়ে উঠল কেমন করে? দূর নীলাভ জন্মান্তরের মতো লাগে এ অলৌকিক। ” দেবারতি মিত্র বললেন। এই শহরের পথে রাস্তা পার হতে পারে হাঁস? কেন পারে না? ওই যে সুদূর আকাশের গা-ছোঁয়া বাড়ি ওর জানালার আলো কি কোনো মাটিহীন মানুষের চোখের জল – যা ফসফরাসের মতো জ্বলজ্বল করছে! যে জীবনকে চিনি না তাকে নিয়ে আমি শেষ লেখায় হাত দিলাম, অবশ্য এ লেখার কোনো শুরু নেই, না আছে শেষ। লিখতে লিখতে পাশে তার আধখোলা ডায়রির পাতায় “রাক্ষসনক্ষত্রের” আলোয় ভরে আছে ক’টা লাইন – ” কবিতা কী এ প্রশ্ন অবান্তর কেননা কবিতার কোনো ভালো মন্দ নেই। কবিতার শুধুমাত্র নতুনত্ব আছে। অপরদিকে অপাঠ্য কবিতার আছে নষ্ট লৌকিকতা। ”

পাঠক আমাকে ক্ষমা করবেন, আপনার সঙ্গে আমার কাব্যশাস্ত্রের সম্পর্ক নয়। আমি ভ্রাম্যমাণ শব্দহীন ভাষা – আপনার স্নায়ুর বিদ্যুৎ বেগ আমার বধির, অন্ধ ও শূন্যতার জীবনে এক একটি হৃদস্পন্দন। আমি পাঠ করি আপনার কন্ঠে কবির জীবন, যে জীবনের মাঠে ঘাস মাটি জড়িয়ে দেখেছি “বহুদিন আগে উড়ে” আসা “শীতের হাঁস কুরুক্ষেত্রে যেখানে ভীষ্ম শরশয্যায় শুয়ে আছেন এবং হিমালয় থেকে গঙ্গা দেবী তাঁর সন্তানের তত্ত্বাবধানের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন একদল সাদা হাঁস, তখন শীতকাল, ভূমিতে অর্জুন নিক্ষেপ করেছেন তির এবং সেখান থেকে উঠে আসছে জল আর আকাশে উড়ে যাচ্ছে রাতের সাদা হাঁস তখন। ” (পৃষ্ঠা ৬)

অর্জুন প্রশ্ন করে ভীষ্মের মতো এই সময়ের আদি কথাকারকে – ” কী সে বস্তু যে প্রায়ই অপমানিত হয় কিন্তু কখনো সম্মানিত হয় না? উত্তর – আদালত।” ( পৃঃ ২৩)

বাইরে এখন আকাশ নীল , হৃদয়ে ভয় আর জীবনের রহস্য মাখা হাসি ঝুলে আছে উৎপলকুমারের ঠোঁটে। কোনো কন্ঠ নেই -ইতিহাস কথা কয় – ” মেগালিন খাওয়ার বিরুদ্ধতা এবং কাকাসাহেব কালেলকর নাকি ভয় পাচ্ছেন ভারতবর্ষে ওই জিনিসের প্রকোপ কীসের প্রকোপ? বিরুদ্ধাচরণ করা কি কেউ ঠেকাতে পারে? ধর্ম এক্সট্যসি এবং রাসায়নিক এক্সট্যসিতে তফাত কী? কিন্তু এ নিয়ে বেশি কথা বলা চলে না। সুতরাং নির্বাক। ” (পৃ : ৭)

নির্বাক কোথায়? এই তো আমি তোমার ভিতরে প্রবেশ করে ফেলেছি – কথাকার ! ঠিক এ প্রশ্ন আপনাকে নয় আবার অনেকটা আপনাকে। কি বলেন কবি উৎপলকুমার – ” কিন্তু কুকুর ও মানুষের স্বতন্ত্র ও অনিশ্চিত অবস্থান বুঝে নিয়ে আমি বা আমরা শেষকালে ওই হোটেল -সংসারের ভিতর না যাওয়াটাই ভালো বিবেচনায় অন্য কুকুরদের সঙ্গে স্কুল মাঠের দিকে দৌড়তে থাকি। ” (পৃ : ১৩)
আপনি এগুলো কি লিখছেন বলুন তো ? ঠিক বুঝতেই পারছিনা এই স্রোতের মতো কেন ভেসে যাচ্ছে শব্দের কুন্ডলি?
আমি – সদাভ্রাম্যমান’কে আপনি নিয়ম মেনে চলতে বলছেন? বাস থেকে নেমে হাঁটতে বলছেন? নাকি ঠিক সময় চাইছেন বেজে উঠুক বাড়ি ফেরার কলিং বেল ?
জলের মধ্যে চশমা ভাসিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন কবি , কবি নয় মনোলেখকের মন – নেই কোনো বস্তুর মতো ভাষা, চলন। কথন রচনা করে যায় অন্তর বিভঙ্গে , এই সেই নৃত্যরত অভিঘাত, চেষ্টা করেই যাচ্ছি “কিন্তু আমি হায়, লিখতে বসেছি নস্টালজিয়া নিয়ে। নিকট স্মৃতি সব সময়ই দূর স্মৃতিকে অবজ্ঞা করে । সে যেন খোদিত পাথর সময় ধুয়ে যাবে না। কুয়াশা মুছে ফেলে তার অক্ষরগুলি নিশ্চয়ই পড়া যাবে। কেউ-না-কেউ

পড়ে ফেলবে। আজ অথবা কাল কিন্তু তৃতীয় দিন থেকে খেলা দূর স্মৃতির নিয়ন্ত্রণে। ” (পৃ : ১৪)
এ আখ্যান আমার নয় আপনার নয় – এ “আমাদের” শুধু, কথাকার এখন আমাদের স্পন্দন।
” আমি ভালোবাসি এই সেপ্টেম্বর মাস। গ্রীষ্ম এখনো সরে যায়নি -অথচ ভোরবেলায় হিম কখনো কখনো ছুঁয়ে যায় চাষের খেত ।
এখন গরম বেশি নয়। শীতও মৃদু। সূর্য এখানো উজ্জ্বল কিন্তু বাতাসে এক ধরনের উজ্জীবনী স্পর্শ – আমরা কাজ করার প্রেরণা অনুভব করি।” ( পৃ : ১৫ )

জীবনের একটা অপর স্থান থাকে। যে স্থান স্পন্দিত বাস্তব চেতনার গোপন গৃহকোণ। এই অন্য পৃথিবীর খোঁজ থেকেই আমাদের সচেতন সভ্যতা। সৃষ্টির মান্যতা দিতে দিতে কোথায় হারিয়ে গেছে ‘আপন’পাঠ ও ভাষা। সেই চলনক্রিয়ার সামনে দাঁড়াতে আমাদের অস্বস্তি হয় খুব। মনের সরলরেখা তৈরি করতে করতে শুকিয়ে যেতে থাকে হৃদয় মৌচাকের কুঠুরির মধু। ভাবতে হয় বারবার এই মুহূর্তের ছিটে লাগা রঙ বিভঙ্গ তৈরি করতে থাকা ক্যানভাস । একে কি ধরনের দেহ বলব – আখ্যানের নস্টালজিয়া নাকি পৃথিবীর-
” আমি যেন বার বার জেগে উঠি লোকাল ট্রেনে- বর্ধমান, বনগাঁ, মেদিনীপুর, ডায়মন্ড হারবার যাতায়াতের পথে – লোকের কথায়, হকারের ডাকে, পিকনিক – যাত্রীদের হাসিঠাট্টায়, কলহবিবাদে, থুথু- ছিটানো ক্রোধে ও অনন্ত কোলাহলে।
আমি সেই বযে়সে পৌঁছে গেছি যখন সমবযে়সিদের সঙ্গে দেখা হলে শরীর কেমন,কোন নার্সিং হোম জোচ্চোর, কোন্ সার্জেনের অপারেশনের সময় হাত কাঁপে ইত্যাদি কেচ্ছাকারবার ছাড়া আর কিছু লেনদেন থাকে না। তবে এখনো কি খাতুনবালা, ছোটো শেফালীর কথা মনে পড়ে না? পড়ে, পড়ে! সেজন্যই তো দু’-চার কলম লিখে উঠতে পারি।”(পৃঃ-৩০)

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes