
থিক নাট হানের কবিতা
ভাষান্তর: শীর্ষা
থিক নাট হানের জন্ম ১৯২৬ সালের ১১ই অক্টোবর। সমগ্র বিশ্বে এই বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর পরিচয় একজন জেন সন্ন্যাসী হিসেবেই। বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধ মতবাদের প্রচারকার্যে নিযুক্ত ছিলেন তিনি। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বৌদ্ধধর্মের শিক্ষকতাও করেছেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় (১৯৬৩-১৯৬৬) তাঁর শান্তিবার্তার প্রচার সর্বজনবিদিত। কিন্তু এসবের বাইরেও তাঁর আরেকটি পরিচয় আছে – তিনি একজন কবি। তাঁর কবিতায় শান্তি, প্রেম এবং অহিংসা একমাত্র সত্য হয়ে ফুটে ওঠে। তাঁর লেখা 'কল মি বাই মাই ট্রু নেমস' (Call Me by My True Names) বইটির পাতায় পাতায় তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন অহিংসার গন্ধ। দীর্ঘ রোগভোগের পর মাত্র কয়েকদিন আগেই (২২ জানুয়ারী, ২০২২) তিনি এই পৃথিবী ছেড়ে পাড়ি দিয়েছেন তথাগতের দেশে। রেখে গিয়েছেন তাঁর চিরন্তন অস্তিত্ব। তাঁর বিপুল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তাঁর কিছু কবিতার (১৯৬৪ সালে লেখা) ভাষান্তর আজ তাঁর চরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে অর্পণ করা হল –
বার্তা
আমার কপালে জীবন তার পদচিহ্ন ফেলে গেছে।
কিন্তু আমি এই সকালে আবার একটি শিশু হয়ে গেছি
ফুল এবং পাতার মাঝে লুকিয়ে থাকা হাসিটি
কপালের বলিরেখাগুলোকে মুছে দিতে ফিরে এসেছে,
যেভাবে বৃষ্টি মুছে দেয় সমুদ্রসৈকতে পায়ের ছাপ।
আবারও একটি জীবন-মৃত্যুর চক্র শুরু হয়।
আমি কাঁটার ওপর দিয়ে হাঁটি, দৃঢ়ভাবে, যেন ফুলের পথ।
আমি মাথা উঁচু রাখি।
বোমা এবং গুলির শব্দের মাঝে কবিতারা ফুটে ওঠে।
গতকাল যে অশ্রু ঝরেছিল আমার চোখ থেকে
আজ তারা বৃষ্টি হয়ে গেছে।
খড়ের চালের ওপর সেই বৃষ্টির শব্দ আমাকে শান্ত করে তোলে।
শৈশব, আমার জন্মভূমি, আমাকে টানছে,
আর বৃষ্টি গলিয়ে দিচ্ছে আমার হতাশাকে।
আমি এখনও বেঁচে আছি, হাসতে পারছি শান্তভাবে।
যন্ত্রণার গাছে ধরা সুমিষ্ট ফলটির মতো!
আমার ভাইয়ের মৃতদেহ নিয়ে
অন্ধকারে ধানক্ষেত পার করি আমি।
পৃথিবী তোমাকে তার বাহুবন্ধনে আঁকড়ে রাখবে, আমার প্রিয়,
যাতে তুমি আগামীকাল ফুল হয়ে জন্মাতে পারো
যে ফুলগুলি শান্তভাবে সকালের ক্ষেতে হাসতে থাকে।
এখন আর কেঁদো না তুমি, আমার প্রিয়
আমরা একটি রাত্রির সঘন অন্ধকার পার করে ফেলেছি।
এই সকালে,
আমি ঘাসের ওপর হাঁটু গেড়ে বসি,
তোমার অস্তিত্ব উপলব্ধি করার সময়।
অনুচ্চারিত অপূর্ব এক হাসি মেলে ধরা ফুলগুলো
আমার সঙ্গে নীরবে কথা বলে।
বার্তা,
ভালোবাসা এবং
বোঝাপড়ার বার্তাটি
এভাবেই আমাদের কাছে পৌঁছে যায়।
সাক্ষী রয়ে যায়
অন্ধকার আকাশে বিস্ফোরণের আলো জ্বলে ওঠে।
একটি শিশু হাততালি দেয় এবং হাসে।
আমি বন্দুকের শব্দ শুনতে পাই,
এবং হাসিটির মৃত্যু হয়।
কিন্তু সাক্ষী
রয়ে যায়।
শান্তি
তারা আমাকে সকালবেলা জাগালো
যুদ্ধক্ষেত্রে আমার ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ দিতে।
তবুও বাগানে
একটি নতুন গোলাপ, তার মেলে ধরা ভেজা পাপড়িগুলো নিয়ে
ঝোপের মধ্যে ফুটে আছে।
এবং আমি বেঁচে আছি,
শ্বাস নিচ্ছি গোলাপ এবং গোবরের গন্ধে
খাচ্ছি, প্রার্থনা করছি এবং ঘুমাচ্ছি।
কখন আমি আমার দীর্ঘ নীরবতার অবসান করতে পারি?
কখন আমি আমার শ্বাসরুদ্ধ অনুচ্চারিত কথাগুলো বলতে পারি?