
কয়েকজন অগ্রজ কবির মাঝে কনিষ্ঠজন
গৌতম বসু
সদ্য আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন কবি গৌতম বসু এ মাসের ১৬ তারিখ। ১৫ জুন একটি মেলে এই লেখাটি আসে আমার কাছে। সেদিন লেখাটি পড়ার পর তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ এক ঘণ্টা কথাবার্তা হয়। তার পর দুপুরবেলা বৌদির ফোনে শুনি তিনি খুব অসুস্থ। তার পর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি চলে যান। এটিই তাঁর শেষ লেখা এ কথা বলতেই পারি। এ লেখা তিনি অন্য কোথাও পাঠাননি। এই লেখাটির ছত্রে ছত্রে এখনও গৌতমদার নাড়িস্পন্দন টের পাওয়া যাচ্ছে। তিনি নেই, এ কথা আমরা কিছুতেই মেনে নেব না। তিনি আছেন। আছেন। আছেন। -- আবহমান সম্পাদকমণ্ডলীর পক্ষ থেকে হিন্দোল ভট্টাচার্য
‘ সত্যি বলা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই কবিতার। কিন্তু জীবিকাবশে শ্রেণীবশে এতই আমরা মিথ্যায় জড়িয়ে আছি দিনরাত যে একটি কবিতার জন্যও কখনো-কখনো থেমে থাকতে হয়।’ (‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’র ভূমিকা, চৈত্র ১৩৭৬)। যতদূর জানতে পেরেছি, এর আগে, অর্থাৎ ১৯৭০-পূর্ববর্তী শঙ্খ ঘোষের কোনও রচনায়, নিজের কাব্যভাবনা ঘিরে এমন দ্ব্যর্থহীন উক্তির সন্ধান পাওয়া যায় না। আমরা অনুমান করি, ১৯৭০-এরও আগে ─ সত্যি বলা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই কবিতার ─ এ-উক্তি, শিথিল ভাবনার বেশে শঙ্খ ঘোষের তরুণ কবিমনে ঘুরে বেড়াত, পরিপার্শ্বের প্রহারে ক্রমে তা প্রত্যয়ে উত্তীর্ণ হয়। সন্দেহ নেই, এটি তাঁর মননশীলতা ও সংবেদনশীলতার অর্জন মাত্র নয়, এটি তাঁর জীবনের ধ্রুব। তাঁর কবিতার অগণিত পাঠক খুব সহজেই ওই উৎস থেকে উৎসারিত কবিতাসমূহ চিনে নিতে পারবেন, অনুভব করতে পারবেন, পরিণত বয়সের লেখায় তা পল্লবিত হয়ে কিভাবে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা জানি, এটি কবির সচেতন সিদ্ধান্ত, তিনি চেয়েছেনই তাঁর লেখা যদি কোথাও কাজ করে, তা হলে তা এভাবেই করুক। সিদ্ধির আর-কোনও বিমূর্ত স্তরের পানে তিনি ফিরেও তাকান নি। কিন্ত, আমরা এমনও দেখেছি, কবির হাত থেকে তাঁর নিজেরই ভাবনাপুঞ্জ একবার মুক্ত হলে তার গতিবিধি কবির সচেতন মনের নিয়ন্ত্রণে থাকে না, শোনা যায় অবচেতনের পদধ্বনি। তাঁর অন্তিমপর্বের একটি ব্যতিক্রমী রচনা স্মরণ করছি :
‘পিছনে বৈঁচির বন, সামনে কটা বেড়াবাঁধা ঘর।
তারই ঠিক মাঝখানে মাটির শিথানে মাথা রেখে
শুয়ে আছে যেন আরো দীর্ঘ কোনো ইতিহাস নিয়ে
সমস্ত শরীরজোড়া অন্ধকারে কিছু কথা বুনে।
কে শুয়েছে? সে কি আমি? হয়তো-বা। হয়তো-বা নয়।
পাশে আসে, বসে থাকে, উড়ে যায় ডানার সময়
নিজেরই নিয়মে, আর সেও পড়ে থাকে দৃষ্টি মেলে
বুক পেতে মেনে নেয় আদিগন্ত চলন্ত আঘাত
কান পেতে শুনে নেয় শত শত বন্ধুপদপাত ─
মনে রাখে, গুনে রাখে, কাছে এসে ফিরে গেল কে কে।
ব্রত তার নিষ্প্রভতা, ব্রত তার আত্মপরাভব
শুয়েছে সে, একা, তবু তোমারই বাঁ–হাতে হাত রেখে।’
[‘ব্রত’ / কাব্যগ্রন্থ ‘শুনি শুধু নীরব চিৎকার’, ২০১৫]
একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দেড় দশক পার হবার সময়ে, জীবনাবসানের মাত্র কয়েক বছর আগে, শঙ্খ ঘোষ লিখছেন : ‘বুক পেতে মেনে নেয় আদিগন্ত চলন্ত আঘাত’! এক মুহূর্তে জন্য হলেও, আমাদের মনে সংশয় জাগে, আমরা কি তবে পশ্চাদপসরণ প্রত্যক্ষ করছি? কবিতাটির অন্তিম চরণে পৌঁছে আমরা বুঝতে পারি, পশ্চাদপসরণ নয়, এক সুস্থির, নিস্তরঙ্গ সমভাব কবির চেতনাকে এখন আলোকিত করছে। সুদূর প্রাচ্যের ‘তাও’ ধরনে তিনি লিখছেন:
‘ব্রত তার নিষ্প্রভতা, ব্রত তার আত্মপরাভব
শুয়েছে সে, একা, তবু তোমারই বাঁ–হাতে হাত রেখে।’
নবার্জিত এই সুর শঙ্খ ঘোষের কবিতার সনাতন পাঠকদের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত হলেও অভিমতটিকে তার যোগ্য মান্যতা দিতেই হবে। ‘তাও’ দর্শনশাস্ত্রে নিষ্প্রভতা, আত্মপরাভব প্রভৃতিকে কেন যে উচ্চতম স্থান দেওয়া হয়েছে সে-বিষয়ে অবগত না হলে এই কবিতায় প্রবেশ করা যাবে না। ‘ব্রত’ কবিতাটির সূত্র ধ’রে আমরা বলতে চাইছি, সংবেদনশীল ব্যক্তির জীবনে, পরিপার্শ্বের প্রভাবে, সত্যের প্রকাশ বিবর্তিত হয়, তা যদি না হত, সঙ্কীর্ণ মতবাদের তকমার সঙ্গে তার কোনও প্রভেদ থাকত না।
এর চেয়েও একটি সূক্ষ্ম প্রশ্ন আছে; চিন্তাশীল মানুষের জীবনে ‘সত্য’ শব্দটির মর্মার্থ কী? শব্দটি আমাদের নিত্যব্যবহার্য শব্দতালিকার অন্তর্গত, কিন্ত ‘সত্য’ প্রকৃতপক্ষে কী, এ-প্রসঙ্গে আজও কোনও ঐক্যমত স্থাপিত হতে পারে নি, না সাধারণ মানুষের মনে, না মহাজনদের চিন্তাভাবনায়।
আমাদের মনে আছে ১৯৩০-এ য়ুরোপ-পরিক্রমারত রবীন্দ্রনাথ একবার আইনস্টাইনের বাড়ি গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। উভয়ের কাজের ক্ষেত্র ভিন্ন, তথাপি দু’জনেই নিজেদের মতো ক’রে গভীরতম অর্থে সত্যানুসন্ধানী, সেই সূত্র ধ’রে তাঁদের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয় (প্রথম প্রকাশ: রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক সম্পাদিত ‘দ্য মডার্ন রিভিউ’/ জানুয়ারী ১৯৩১)। আইনস্টাইন বলেন, বিশ্বপ্রকৃতি সম্পর্কে ধারণার দু’টি ভিন্ন দিক আছে, একটি মানুষের চেতনার সঙ্গে সম্পর্কিত, অন্যটি মনুষ্য-নিরপেক্ষ। দ্বিতীয় ধারণার অর্থ, মহাবিশ্ব যে নিয়মাবলীর দ্বারা চালিত সেগুলি সবই মানুষ-পূর্ববর্তী। মানুষ সেই প্রাকৃতিক নিয়মগুলি আবিষ্কার করবার চেষ্টা ক’রে চলে, এইমাত্র। রবীন্দ্রনাথ বলেন, মানুষ ও বিশ্বপ্রকৃতির মধ্যে সঙ্গতি স্থাপিত হয়, তখন সেই চিরকালীন সত্য হয়ে ওঠে সুন্দর। রবীন্দ্রনাথের এই ব্যাখ্যা সম্পূর্ণভাবে মানুষের মনের সৃষ্টি, আইনস্টাইনের আপত্তির প্রত্যুত্তরে রবীন্দ্রনাথ বলেন, বৈজ্ঞানিক-দ্বারা আবিষ্কৃত নিয়মাবলীও ঠিক তাই, সব নিয়মই মানুষের মননসঞ্জাত, মানুষ আছে ব’লেই তারাও আছে। তাঁদের সেদিনের আলোচনা এক বিচিত্র বৈপরীত্যের মধ্যে অমীমাংসিত রয়ে যায় :
‘রবীন্দ্রনাথ: যাই বলুন, সত্যের সঙ্গে মানুষের চেতনার কোনও সম্পর্কই যদি না থাকে, তা হলে
আমাদের কাছে সে-সত্যের কোনও অস্তিত্বও নেই।
আইনস্টাইন: তা হলে দেখা যাচ্ছে, আমি আপনার চেয়েও ধর্মপ্রাণ!
রবীন্দ্রনাথ: অতিজাগতিক পুরুষাত্মাকে, মহাবিশ্ব-চেতনাকে নিজের মধ্যে স্থাপন করাই আমার
ধর্ম।’
আমাদের আলোচনায় রবীন্দ্রনাথ-আইনস্টাইন প্রসঙ্গ ফিরিয়ে আনার একটিই উদ্দেশ্য; স্পষ্ট ক’রে এই কথাটি বোঝা যে, ‘সত্য’ যথা প্রত্যেকটি শব্দই একেকটি অতলসাগর বিশেষ, আমাদের শব্দব্যবহার সাধারণত শব্দের গায়ে আঁচড় কাটাতেই সীমাবদ্ধ রয়ে যায়।
ǁ ২ ǁ
শঙ্খ ঘোষের কবিতা ঘিরে যে বিপুল পরিমাণে আলোচনা-সাহিত্য ইত্যবসরে গ’ড়ে উঠেছে তার কিয়দংশ সামগ্রিক(যেমন তারাপদ আচার্য করেছেন), বাকিটা, আংশিক, হয়তো-বা কোনও কাব্যগ্রন্থ-ভিত্তিক; সব ক’টি কাজেরই একটিই সাধারণ লক্ষণ আছে, নিবিড় পাঠ। বর্তমান আলোচকের জন্য এখানে এক বর্গ ইঞ্চি স্থানও অবশিষ্ট নেই। পুনরাবৃত্তিমূলক ও অভ্যাসসঞ্জাত লেখাগুলি এক পাশে সরিয়ে রেখে, যদি অনুসরণ করা যায় কেবল সৃষ্টিশীল লেখাগুলি, তা হলেও মত ও মতান্তরের জঙ্গল থেকে কোনও স্পষ্ট চিত্র ফুটে ওঠে না। বহু বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সঞ্চারিত আলোচনা-সাহিত্যে নিবিড় পাঠের নানা ইতিবাচক দিকের (অভিমতের বইচিত্র্য, প্রতর্ক প্রভৃতি) মধ্যে, এটি একটি নেতিবাচক দিক। শঙ্খ ঘোষ নিজেও বিশেষত রবীন্দ্রসাহিত্য বিচারের ক্ষেত্রে নিবিড় পাঠের কর্মপ্রণালী অনুসরণ ক’রে এসেছেন, কণ্ঠস্বর তাঁর একার, ফলত, মতামতের ভিড়ও অনুপস্থিত। সম্প্রতি, পরিস্থিতির চাপে প’ড়ে এই গঠনবিন্যাস তাঁকে পরিত্যাগ করতে হয়। তাঁর সক্রিয় মন যখন তাঁর অশক্ত শরীরের সঙ্গে যুদ্ধে পরাভূত হয়ে এক পা-এক পা ক’রে পিছিয়ে আসছে, ঠিক তখন তাঁর সুহৃদ অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত প্রয়াত হন। বন্ধুর সম্মানার্থে তাঁর অন্তিম রচনাটি(প্রথম প্রকাশ ‘অলোকের কবিতায় স্থান-কালের ক্রমিক প্রসার’/ গুরুচণ্ডাল৯ ওয়েব পত্রিকা /২৯ নভেম্বর ২০২০) সম্পূর্ণ স্মৃতিনির্ভর; একটি-দুটি কবিতা থেকে উদ্ধৃতির জন্য বাইরের সহায়তা নেওয়া হয়েছে, এইমাত্র। এই লেখাটি একদিন দিকনির্ণায়ক রূপে বিবেচিত হতে পারে, কিন্তু যেহেতু এ-প্রসঙ্গ আমাদের বর্তমান আলোচনার মূল বিষয় নয়, সেহেতু আমরা বিস্তারিত আলোচনা পরিহার করলাম। এইটুকু বলা যেতে পারে সারা জীবন বন্ধু অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের কবিতা পাঠ ক’রে শঙ্খ ঘোষের আত্তীকরণ এমন এক পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল যে, কোনও কাব্যগ্রন্থের পৃষ্ঠা নতুন ক’রে ফিরে পড়বার প্রয়োজনই হয় নি। এই ধরনের পাঠকে দূরের পাঠ আখ্যা দেওয়া যেতে পারে; সন্দেহ নেই, এটি খুবই কার্যকরী এক কর্মপ্রণালী। এই পরিস্থিতিতে, কোনও বিশেষ কাব্যগ্রন্থের আলোচনায় আরও একবার প্রবেশ না ক’রে, আমরা শঙ্খ ঘোষের সিদ্ধির ও স্থানাঙ্ক নির্ণয়ের একটি বিকল্প পথের কথা ভেবেছি।
এই গঠন-প্রণালী কেবল তাঁদের জন্য বিন্যস্ত যাঁরা দীর্ঘ কবিজনের অধিকারী, যেমন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অমিয় চক্রবর্তী, বিষ্ণু দে, সুভাষ মুখোপাধ্যায় এবং শঙ্খ ঘোষ। প্রসঙ্গত, একটি অন্য কাঠামোর কথাও ভাবা যেতে পারে, মধ্যায়ু কবিদের জন্য,(জীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত এবং বুদ্ধদেব বসু) কিন্তু সঙ্গত কারণেই আমাদের মনে রাখতে হবে, বিন্যাস-দু’টি কোনও ভাবেই প্রতিতুলনীয় নয়। ‘দশমী’ (১৯৫৬) কাব্যগ্রন্থে প্রকাশক এই বিজ্ঞপ্তি সংযুক্ত করেছিলেন, ‘সুধীন্দ্রনাথের পরবর্তী কাব্যগ্রন্থে এই কবিতাগুলি সংযোজিত হবে। এই কারণে ‘দশমী’র পুনর্মুদ্রণ সম্ভব হবে না।’ অর্থাৎ, আমরা স্পষ্ট সঙ্কেত পাচ্ছি যে, সুধীন্দ্রনাথ আরও লেখার কথা ভাবছিলেন, যা তাঁর আক্সমিক জীবনাবসানের কারণে খর্বিত হয়। জীবনানন্দ দাশ ও বুদ্ধদেব বসুর আকস্মিক প্রয়াণ সর্বজনবিদিত। এই ক’টি প্রাথমিক কথা সেরে নিয়ে আমরা আমাদের মূল অনুশীলনীতে প্রবেশ করতে পারি।
১.কবির আদিপর্ব (তিরিশ বছর পর্যন্ত)
তিরিশ-অনূর্ধ্ব বয়সে কি কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল? স্বতন্ত্র ও সজীব কাব্যভাষার
সুচিহ্ন কি সেখানে লক্ষ করা যায়? কেমন ছিল প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রাথমিক অভিঘাত?
শঙ্খ ঘোষ: ‘দিনগুলি রাতগুলি’ (১৯৫৬),প্রথম প্রকাশিত হয় কবির চব্বিশ বছর বয়সে; প্রথম বইতেই কাব্যভাবনায় ও কাব্যভাষায় যে স্বাতন্ত্র্যের পরিচয় তিনি দেন, তা বাঙলা কবিতার পরিমণ্ডলে এক স্থায়ী সংযোজন।
সুভাষ মুখোপাধ্যায়: কবির মাত্র একুশ বছর বয়সে প্রথম প্রকাশিত ‘পদাতিক’ (১৯৪০), সেই সময়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এতগুলো দশক পেরিয়ে আসার পরেও বইটির অভিঘাতের অনুকম্পন আজও টের পাওয়া যায়।
বিষ্ণু দে: ‘উর্বশী ও আর্টেমিস’ (১৯৩৩), প্রথম প্রকাশিত হয় কবির চব্বিশ বছর বয়সে এবং বইটি খানিকটা মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। বিষ্ণু দের কৃষ্টিচেতনা সেদিনের বাঙলা কবিতার সাধারণ পাঠকের পক্ষে গ্রহণযোগ্য ছিল না। এমন কি, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তাঁর প্রাথমিক অভিমত পুনর্বিবেচনা করেন। প্রাথমিক অভিমত সম্বলিত (১৩ জুলাই ১৯৩৩)চিঠিটি ডাকে দেওয়ার পর, রবীন্দ্রনাথ ১৭ জুলাই ১৯৩৩ তারিখে আরও একটি চিঠি লেখেন:
‘কল্যাণীয়েষু ,
তোমাকে চিঠি লেখার পরেই মনে হলো বিচার সম্পূর্ণ হয় নি। আজকাল অন্যমনস্ক হয়ে পড়েচি
─ বোধহয় বয়সের প্রভাবে। কুঁড়েমিটা সন্ধ্যার অন্ধকারের মতো জীবনে ঘনিয়ে এসেচে ─ তাই একদৃষ্টিতে যা দেখি তার বেশি আর যাইনে। তেমনি ক’রেই উড়েচলা মন নিয়ে তোমার বইয়ের অংশে অংশে চোখ বুলিয়েছিলুম। মনে হয়েছিল এর চালটা নতুন, সেই জন্য অভ্যস্ত আরাম নিয়ে এর সর্বত্র সঞ্চরণ করা চলে না। সেইটেই প্রথম ধারণা, আর সেই কথাটাই তাড়াতাড়ি তোমাকে লিখে কাজ সেরেচি ─ এও কুঁড়েমির লক্ষণ। চিঠি ডাকে রওনা হবার বইখানা আর একবার হাতে পড়ল ─ দেখলুম কবিতাগুলো এমনতরো সরাসরি বিচারের যোগ্য নয়।…’ [ উৎসনির্দেশ:
‘পরিচয়’ বিষ্ণু দে-র সপ্ততিবর্ষ পূর্তি সংখ্যা , মে-জুলাই ১৯৭৯, সম্পাদনা: দেবেশ রায়]
অমিয় চক্রবর্তী: ‘খসড়া’ (১৯৩৮) কবির সাঁইত্রিশ বছর বয়সে প্রথম প্রকাশিত হয়। তারও আগে, দু’টি কাব্যপুস্তিকার সন্ধান পাওয়া যায়, যথাক্রমে কবিতাবলী (১৯২২?) এবং উপহার (১৯২৭), কিন্তু এদের কোনওটিতেই কবির নিজস্ব কাব্যভাষার সুচিহ্ন দেখা যায় না। অন্যদের প্রতিতুলনায়, নিজের কাব্যভাষা গ’ড়ে তুলতে তিনি কিছুটা বেশি সময় নিয়েছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে কোনও একটি বা দু’টি কাব্যগ্রন্থ শনাক্ত করা অসম্ভব। গীতিকবিতা ছাড়াও একাধিক মাধ্যমে তিনি তাঁর উন্মেষপর্বে ছাপ রেখে গেছেন। তাঁর প্রাথমিক পর্বের গীতিকবিতার ভাষা যদি আজ আড়ষ্ট লাগে, মনে রাখতে হবে, লেখাগুলির বয়স ১৪০ বছর। আরও একটি্ কথা, রবীন্দ্রনাথ যেখানে মুখের ভাষা ব্যবহার করেছেন, যেমন ‘বাল্মীকি প্রতিভা’ সেখানে সময়ের ব্যবধান উধাও। উন্মেষপর্বের প্রধান কাজগুলি আমরা এইভাবে চিহ্নিত করেছি। ‘বাল্মীকি প্রতিভা’(১৮৮১/বয়স ২০),‘সন্ধ্যাসঙ্গীত’(১৮৮২/বয়স ২১), ‘প্রভাতসঙ্গীত’(১৮৮৩ / বয়স ২২) ‘ভানু সিংহ ঠাকুরের পদাবলী’ (১৮৮৪/ বয়স ২৩),
‘কড়ি ও কোমল’ (১৮৮৬/ বয়স ২৫) এবং ‘মানসী’ (১৮৯০ / বয়স ২৯)।
২.কবির মধ্যামপর্ব (পঁয়ত্রিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ বছর)
মধ্যবয়সে (৩৫-৪৫ বছর) নিজের লেখার ধারা থেকে ভেঙে বেরিয়ে এসে নতুন ও অদ্যাবধি অচর্চিত পথের সন্ধানের সুচিহ্ন দেখা যায় কিনা।
শঙ্খ ঘোষ:‘নিহিত পাতালছায়া’(প্রথম প্রকাশ:১৯৬৭/ কাবির বয়স ৩৫) পর্যন্ত কবির সিদ্ধি তাঁর স্বগঠিত পথেই এগিয়েছে, অন্য কবির ক্ষেত্রে এখানে আত্মতুষ্টির এক আবহ গ’ড়ে উঠতে পারত ।শঙ্খ ঘোষ ব্যতিক্রমী লেখক; পরিণাম যাইহোক, নিজের ‘সাফল্য’কে তিনি প্রশ্ন করেন। ‘কবিতার মুহূর্ত’ গ্রন্থে তিনি লিখছেন: …‘কিন্তু একথার একটা প্রতিবাদ উদ্গত হয়ে উঠছিল মনে। মনে হচ্ছিল কোথাও কোনো ভুল হয়ে যাচ্ছে; আছে কিছু আছে। সমাবেশের মধ্যে কথাবলার অনভ্যাসে, জড়তায় বলতে পারিনি সে কথা। ভিতরে ভিতরে তাই জমে উঠছিল একটা অসম্পূর্ণতার কষ্ট।’ এটি হয়ে রইল ‘জাবাল সত্যকাম’-র সর্বজনপরিচিত নেপথ্যকাহিনীর লিখিত রূপ, ঠিক যেমন ‘আরুণি উদ্দালক’-এরও রয়েছে অন্য একটি নেপথ্যকাহিনী। একটা সময় আসবে যখন নেপথ্যকাহিনীর স্মৃতি ঝাপসা হয়ে আসবে, কিন্তু নিশ্চিতরূপে বলা যায়, কবিতা-দুটির মর্মবিদারক রূপ ম্লান হবে না কখনোই। ভারতের প্রাচীন রসবেত্তাগণ উদ্বৃত্ত দৃষ্টির উপর বিশেষ জোর দিতেন, বলতেন মূল চিন্তাসূত্রের উপর উদ্বৃত্ত গ’ড়ে না উঠলে কাব্যের প্রকাশও ঘটে না। এই নিরিখেও ‘জাবাল সত্যকাম’ ও ‘আরুণি উদ্দালক’ শঙ্খ ঘোষের অন্যতম প্রধান দুই সৃষ্টিকর্ম। এর সঙ্গে মাত্র একটি বাক্য আমাদের যুক্ত করতে হচ্ছে, এই রচনা দু’টির কাছে তিনি আর কখনও ফিরে আসেন নি।
সুভাষ মুখোপাধ্যায়: সুবীর রায়চৌধুরী লিখছেন – ‘সুভাষ মুখোপাধ্যায় দীর্ঘকাল কবিতা লেখা বন্ধ রেখেছিলেন। আবার নিয়মিত কাব্যচর্চা শুরু হয় ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে। এ-বিষয়ে বর্তমান সম্পাদকের কাছে তাঁর নিজের স্বীকারোক্তি: “১৯৪০ সালে ‘পদাতিক’ বার হওয়ার পরই রাজনীতিতে চলে যাওয়ায় নিজের গরজে কবিতা ক্কচিৎ কদাচিৎ লিখেছি। এই সময়ে মন চলে যায় গদ্যে। ’৪৮-এর পার্টি দৈনিকে টাকা তোলার জন্য লিখি ‘অগ্নিকোণ’। তারপর জেল থেকে বেরিয়ে বজবজে থাকতে থাকতে এবং পরে ’৫৪ নাগাদ লেখা শুরু হয় ‘যত দুরেই যাই’-এর কবিতাগুলো দিয়ে। লেখা আর না-লেখার টানাপোড়েনে বোনা আমার লেখকজীবন।”’
‘যত দুরেই যাই’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৬২ (কবির বয়স ৪৩)।এটি তাঁর আর-একটি স্মরণীয় কাব্যগ্রন্থ হলেও এর কাব্যভাষা আমাদের পূর্বপরিচিত, কবির পুরাতন কাব্যভাষার সম্প্রসারিত ও সূক্ষ্মতর রূপ।
বিষ্ণু দে: দীর্ঘ কবিতার মাধ্যমকে বিষ্ণু দে যেভাবে আপন ক’রে নেন, তেমন ভাবে আর-কেউ পারেন নি। মূল কাব্যগ্রন্থ গুলি : ‘সাত ভাই চম্পা’ (১৯৪৫)কবির বয়স ৩৬, ‘সন্দ্বীপের চর’ (১৯৪৭)কবির বয়স ৩৮, এবং ‘অন্বিষ্ট’ (১৯৫০)কবির বয়স ৪১। শেষোক্ত কাব্যগ্রন্থের প্রথমেই আমরা পেয়ে যাই ‘অন্বিষ্ট’ শীর্ষক দীর্ঘ কবিতা, সত্তর বছর অতিক্রান্ত হবার পর, যা আজও অনতিক্রম্য রয়ে গেছে।
অমিয় চক্রবর্তী: আমাদের আবার মনে হয় অমিয় চক্রবর্তীর মনোলোক ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন, তাঁকে এই ফ্রেমে বন্দী করার অপ্রয়াস থেকে বিরত থাকাই সমীচীন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: এই সময়ের মূল কাব্যগ্রন্থগুলি – ‘সোনার তরী’ (১৮৯৪) কবির বয়স ৩৩, ‘বিদায় অভিশাপ’ (১৮৯৪) কবির বয়স ৩৩, ‘চিত্রা’ (১৮৯৬) কবির বয়স ৩৫, ‘মালিনী’ (১৮৯৬) কবির বয়স ৩৫, ‘চৈতালি’ (১৮৯৬) কবির বয়স ৩৫, ‘কথা’ (১৯০০) কবির বয়স ৩৯, ‘কল্পনা’ (১৯০০) কবির বয়স ৩৯, ‘নৈবেদ্য’ (১৯০১) কবির বয়স ৪০, ‘শিশু’ (১৯০৩) কবির বয়স ৪২, ‘খেয়া’ (১৯০৬) কবির বয়স ৪৫।
৩.কবির পরিণত বয়সের অর্জন (পঁয়তাল্লিশ বছর পরবর্তী)
শঙ্খ ঘোষ: ‘বাবরের প্রার্থনা’ (১৯৭৬) কবির বয়স ৪৪, ‘পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ’ (১৯৮০) কবির বয়স ৪৮, ‘প্রহরজোড়া ত্রিতাল’ (১৯৮২) কবির বয়স ৫০, ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’ (১৯৮৪) কবির বয়স ৫২, ‘ধুম লেগেছে হৃৎকমলে’ (১৯৮৪) কবির বয়স ৫২,‘ গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ’ (১৯৯৪) কবির বয়স ৬২। সন্দেহ নেই, পরিণত বয়সের শঙ্খ ঘোষের লেখায় যে বিস্তৃতি, গভীরতা ও বহু মাত্রাযুক্ত সংবেদনশীলতা তিলে-তিলে গ’ড়ে উঠেছ তা এক বিরল ঘটনা। তিনি বড়, এই কথাটি অনেকেই মানেন, কিন্তু তার পরবর্তী প্রশ্নটি ‘কেন বড়?’ কিঞ্চিৎ দুরূহ ।বর্তমান আলোচনায় আমরা সেই প্রশ্নের সন্ধান করেছি। শঙ্খ ঘোষ কেবল কবিতা লেখেন নি, কবিতার এক তন্ত্র-নির্মাতার (সিস্টেম বিল্ডার)ভূমিকা পালন করেছেন। বিভিন্ন মাত্রাযুক্ত লিরিক কবিতা সহযোগ এক সুবিশাল চালচিত্র গঠন। কালের অপ্রতিরোধ্য গতির সম্মুখে এ-সমস্ত একদিন হয়তো ভেঙে পড়বে, সেই ভাঙাগড়ায় সবাই রয়ে যাবেন সূক্ষ্মদেহে।
সুভাষ মুখোপাধ্যায়: পরিণত বয়সের কাব্যগ্রন্থগুলি যথাক্রমে, ‘কাল মধুমাস’ (১৯৬৬) কবির বয়স ৪৭, ‘এই ভাই’ (১৯৭১) কবির বয়স ৫২, ‘ছেলে গেছে বনে’ (১৯৭২) কবির বয়স ৫২। প্রতিটি বই-ই কবির কাব্যভাষায় সমুজ্জ্বল, কিন্তু একই সঙ্গে এ-কথাও সত্য যে, তা রয়ে গেছে একমাত্রিক বিবরণের স্তরে।
বিষ্ণু দে: পরিণত বয়সের প্রধান কাব্যগ্রন্থগুলির তালিকা দীর্ঘ। ‘নাম রেখেছি কোমল গান্ধার’ (১৯৫৩) কবির বয়স ৪৪, ‘আলেখ্য’ (১৯৫৮) কবির বয়স ৪৯, ‘তুমি শুধু পঁচিশে বৈশাখ’ (১৯৫৮) কবির বয়স ৪৯, ‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ’(১৯৫৮) কবির বয়স ৪৯, ‘সেই অন্ধকার চাই’ (১৯৬৬) কবির বয়স ৫৭, ‘সংবাদ মূলত কাব্য’(১৯৬৯) কবির বয়স ৬০, ‘ইতিহাসে ট্র্যাজিক উল্লাসে’ (১৯৭০) কবির বয়স ৬১, ‘ঈশাবাস্য দিবানিশা’ (১৯৭৪) কবির বয়স ৬৫, ‘চিত্ররূপ মত্ত পৃথিবীর’ (১৯৭৫) কবির বয়স ৬৬, ‘উত্তরে থাকো মৌন’ (১৯৭৭) কবির বয়স ৬৮ এবং ‘আমার হৃদয়ে বাঁচো’ (১৯৮১) কবির বয়স ৭২। অকস্মাৎ আমাদের মনে হয় অসমবয়সের দুই কবি বিষ্ণু দে এবং শঙ্খ ঘোষ যেন কাছাকাছি চ’লে এসেছেন তাঁদের, কর্মপ্রণালী ভিন্ন হলেও লক্ষ অভিন্ন!
অমিয় চক্রবর্তী: ‘পারাপার’(১৯৫৩) কাব্যগ্রন্থে কবি (বয়স ৫২ বছর) লিখলেন
‘কেঁদেও পাবে না তাকে বর্ষার অজস্র জলধারে।
ফাল্গুন বিকেলে বৃষ্টি নামে।
শহরের পথে দ্রুত অন্ধকার।
লুটোয় পাথরে জল হাওয়া তমস্বিনী;
আকাশে বিদ্যুৎজ্বলা বর্ষা হানে
ইন্দ্রমেঘ;
কালো দিন গলির রাস্তায়।
কেঁদেও পাবে না তাকে অজস্র বর্ষার জলধারে।’
…
বা এইরকম অগণিত কবিতা, তাঁর কবিজীবনের পরিসমাপ্তি হল ‘ঘরে-ফেরার দিন’ কাব্যগ্রন্থ (১৯৬১) দিয়ে, কবির ৬০ বছর বয়সে। অমিয় চক্রবর্তী আরও পঁচিশ বছর জীবিত ছিলেন, প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকটি কবিতার বই, কিন্তু তাঁর লেখার সেই হীরকদ্যুতি থেকে আমরা
বঞ্চিত হলাম।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: রবীন্দ্রনাথ ক্ষেত্রে ‘পরিণত বয়সের অর্জন’ ও ‘অন্তিমকালের উক্তি’ আমরা একত্রিত ক’রে নিয়েছি। ‘নবজাতক’(১৯৪০) এবং ‘সানাই’(১৯৪০) কবির বয়স ৭৯, কবির শেষজীবনের দুটি কবিতার বই। আমরা দেখলাম এর এর ঠিক পরের বছরে প্রকাশিত, চারটি কবিতার বইয়ের সঙ্গে, ‘রোগশয্যায়ে’, ‘আরোগ্য’, ‘জন্মদিনে, এবং মরণোত্তর কাব্যগ্রন্থ ‘শেষ-লেখা’র কিছুমাত্র সাদৃশ্য নেই। আমরা এখানে বাক-সংযম রক্ষা করলাম, কারণ এ-এলাকা প্রতিভার।
বিশ্লেষণ পদ্ধতি সম্পর্কে দু’টি মন্তব্য :
বিশ্লেষণের জনপ্রিয় পদ্ধতিটি অনুভূমিক (হরাইজোনটাল),অর্থাৎ যে দু-তিনজন একই সময়ে কাজ করেছেন, পাঠক তাঁদের কাজের পর্যালোচনা করেন । এটির প্রধান সুবিধার দিক এই যে, একই সময়ের লেখকদের আমরা এক সঙ্গে পেয়ে যাচ্ছি । এ-পদ্ধতির বিপদের দিকগুলি কিছু কম নয় । ১. পাঠকের ব্যক্তিগত পক্ষপাত সরিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব এবং ২. লেখক যে তাঁর সময়ের বন্ধন ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে চান, তার প্রতিফলন কোথাও যেন হারিয়ে যায়। আমাদের উলম্ব (ভার্টিকাল) পদ্ধতি উদ্ভট হলেও তার দুটি ইতিবাচক দিক চোখে পড়ে। ১. ব্যক্তির প্রতিতুলনায় অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কোনও-না –কোনও সিদ্ধিকে, ফলত ব্যক্তিগত পক্ষপাত আরোপের জায়গা থাকছে না। ২. লেখক যে তাঁর পরিপার্শ্বের ক্রীতদাস মাত্র নন, তাঁর একটা স্বীকৃতি তাঁকে দেওয়া হচ্ছে।
গৌতম বসু
১৫ জুন, ২০২১
বারবার পড়লাম। ঋদ্ধ হলাম। এমন মননশীল আলোচনা অনেক কিছু শেখায়, মনকে শুদ্ধ করে
বড় তাড়াতাড়ি চলে গেলেন গৌতমদা।
তাঁর ভাবনাতরঙ্গ আমাদের সঙ্গে থাকুক।
গৌতম বসুর এই লেখাটি এত দীর্ঘপ্রাণ যেটা লেখাটিকে অমর করবে । আরেকটি জিনিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেটা এই লেখার লিখনশৈলী। আরও আছে । পঠন বা গবেষণার পদ্ধতিগত মৌলিকত্ব। কোনও লেখার আলোচনাকালে দেখেছি উনি যতটা না একটি লেখা পাঠ করছেন, তার চাইতে বেশি লেখকের জার্নিটা লক্ষ্য রাখছেন । এই প্রজাতির পাঠক বিরল ।
কী আর বলি কৃষ্ণদা!
তাঁর ভাবনাতরঙ্গ আমাদের সঙ্গে থাকুক।
গৌতম বসুর অতুলনীয় গদ্যভাষা, সেইসঙ্গে তাঁর অন্বেষণধর্মী বিশ্লেষণের বিচ্ছুরণে বারেবারেই হতবাক হই। কবিতা আর এইরকমসব গদ্যের মধ্যেই এখন আপনার সঙ্গে বারবার দেখা হবে গৌতমদা।
ওনার লিখনপ্রনালী আমাদের সর্বদাই ঋদ্ধ করে। খুব নিয়মিত নয়। তবু পত্রিকা প্রকাশের আগে ফোন করতাম। লেখা চাইতাম। আমাদের চর্যাপদের অনুষ্ঠানেও তিনবার এসেছেন। আজ খুব মনে পড়ছে।
একটি অসাধারণ লেখা পড়লাম।
গৌতমদার আকস্মিক মৃত্যু আমাদের সবাইকে নাড়িয়ে দিয়েছে। তাঁর চিন্তন, ভাষাশৈলী বরাবরই আমাদের ঋদ্ধ করেছে। মিষ্টভাষী ব্যক্তিমানুষটিকে কোনোভাবেই ভোলা যাবে না।
মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোয় তথ্যমূলক আলোচনা! প্রয়াত গৌতম বসুর প্রতি অসীম শ্রদ্ধা জানাই 🙏
এই বিশ্লেষণ এর সঙ্গে প্রায় সহমত ( যতটুকু আমার জানা /পড়া আছে,যেমন অমিয় চক্রবর্তীর কবিতা বেশি পড়ার সুযোগ হয়নি,)
.. বিভিন্ন বয়সকালের কবিতা নিয়ে বলার সময় just key point টা বলা হয়েছে,আরেকটু বিশদে জানার পিপাসা রয়ে গেল। আবহমানের সম্পাদককে অনুরোধ করবো, এরকম আরো প্রবন্ধ পাঠের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য.