সোমা দত্ত -র কবিতাগুচ্ছ
সব চরিত্র শারীরিক
১
একদিন শুধু তাকিয়ে থাকবো
অনুবাদ কোরোনা আমাকে
শূন্য হতে চাই
মেনে নিতে চাই সকলি ফুরায়–
২
তোমাকেই লিখে লিখে শেষ হল রাত
তবু এক বিষণ্ণ সন্ধ্যার মতো বসে থাকা
অচেনা শূন্যতা
দেহহীন দেহবোধ
এ কেমন নিরাকার
৩
সমস্তটাই গুলিয়ে গেল
ভালবাসি বলার পর মনে হল ভালোবাসা নয়– কল্পনা !
তারপর মনে হল একটি গতিপথ
কখনো তরল কখনো বায়বীয়
আমি কাগজের নৌকার মতো,
ধারকের উপরে ভাসছি…
৪
চুমু খাওয়ার মুহূর্তে তোমাকে টের পাই
লালারসে চূর্ণ-বিচূর্ণ স্বাদের গন্ধ ছড়ায়
শুষে নেওয়ার হিরণ্ময় টান– এটুকুই যৌবন!
একেই নাম ধরে ডাকি
বলি তুমি আমার সর্বস্ব
তুমি প্রাণ, তুমিই মন্ত্র
তুমিও প্রতারকের মত আমাকে আঁকড়ে ধরে বলো
-¬¬¬¬– আজীবন! আজীবন!
৫
শরীর সুলভ
শারীরিক দৃশ্য সুলভ
তবু অন্ধকারে আমাদের এত ভয়
আলো ফুটে উঠলেই বলে উঠি
শরীর নয়… শরীর নয়…!
৬
মুঠোর মধ্যে মেয়েশরীর পেলে আনন্দ হয়
তার পোশাকহীন অন্দরমহল এর কারুকার্য দেখলে আনন্দ হয়
তৃপ্তি হয় ‘নতবৃন্তপদ্মসম’ মুখে
শুধু স্পর্ধা শরীরের মতো টানটান হলে,
পুরুষের যন্ত্রণা হয়!
৭
জীবনের অর্ধেক আয়ু জুড়ে তোমার জন্য ঘড়ি দেখেছি ধর্মতলার মোড়ে
তোমার গল্প থেকে সে পথ বহুদূর…
৮
মাটির মূর্তি গড়ে তোলার মুহূর্তে শিল্পীকে সন্দেহ করি
হয়তো সে মাটিকে মাংস ভাবে
অথবা মাংসকে মাটি–
৯
উপোসের প্রান্তে অধিষ্ঠিত দেবতা জানেন
নিবেদন উদ্দেশ্য প্রণোদিত
প্রসাদে মাছি পড়লে
ভক্ত ঝাঁপিয়ে পড়বে
মাটি শরীর, শরীর মাটি…
১০
আমার অঞ্জলিবদ্ধ ফুল বেলপাতা শিহরিত
দেবতার পায়ের আগেই মধুময় তরঙ্গে
তার পূজার শরীর বিমোহিত
এই রহস্যময় ফাঁকির মধ্যে বেহালার ছড়ের
মতো চালনা করছি সুর এবং শব্দ
হায় খলস্বাধীনতা!
১১
কন্ঠস্বর– দ্যুতিমেঘ– জাদুতল্লাশি–
চোখের তারার ভিতরে রৌদ্রের মতো ছড়িয়ে পড়েছে।
তবু আমি মেঘ মাখি অনঙ্গ শরীরে, অন্ধকারে স্নান সারি।
সাবান পিছলে যায় বুকের উপর থেকে,
দুহাতে সরাই ফেনা–
শাসনে প্লাবিত বিরোধ অগ্রাহ্য করে অণুবীক্ষণে চোখ রাখি–
দেখি কেমন জেগেছে সাধ, তপ্ত বীজের ভিতরে–
কতখানি মাথা তোলে স্পর্ধার প্রতিভাস, বসন্তের ঔরসে…
১২
তোমাকে আবিষ্কার করেছি ঘুমের অতলে।
জেগে ওঠামাত্র অস্বীকার
এই সামাজিক দ্বিচারিতা আমাকে শুদ্ধ পরিচয় দেয়–
আমি আগ্নেয়শিখরে উঠব, প্রবল লাভার উদ্গীরণে–
এ আমার দীর্ঘ পরমায়ুর কাঙ্খিত জয়!