শ্রীজাতা গুপ্ত-এর কবিতাগুচ্ছ
ছায়া
রক্তচাপ পর্দানশিন
করিডরে ফিসফিস পায়ের আওয়াজ।
তাপমাত্রা, অদেখা সুখের দিকে, এই ওঠে, ফের পড়ে, ওই
অপরিচিতের সামনে নগ্নতা মহৌষধী। বিধির বাঁধন।
তোয়ালে অঙ্গে ঘষে নরম মুহূর্তের স্নান।
নার্স ফেলে রেখে গেছে
বিছানায়
স্যানিটাইসার স্মৃতি-
ঘাড়ে আজও দু’বছর আগেকার আফটারশেভ।
ছায়ারা শরীরভোজী। নিরাময় ছায়া অনুসারী।
অস্থি চায়। মাংস খায় রোজ।
দেহচ্যুত মন থেকে দূরত্ব অলঙ্ঘ্য রাখে।
বিজয়ী স্ক্যালপেল
১।
মাতৃগর্ভে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলাম যমজ ভ্রূণ গিলে খেয়ে। অপরিণত দোসর শরীরে ধারণ করে জন্মগ্রহণ৷ তার থেকে প্রত্যঙ্গ। নিহিত সন্তানসম্ভাবনা। বিপরীতগামীতায় বিগত, ভবিষ্য মিলে মন্ডময় বিনাশ ঘটাল- দন্ত-নখরযুক্ত, অস্থি-চামড়াময় গোলযোগ বাদ যাবে শরীর থেকে। অবেলায় ফিসিওলোজি টেক্সটবুক উদাহরণস্বরূপ, কী ফ্যাসিনেটিং ব্যাধি-পীড়া-রোগ।
২।
ধারালো ইনসিশনে তলপেট ফালাফালা দেখব বলে অ্যানেস্থেশিয়া প্রত্যাখ্যান করলাম। কাটাছেঁড়া অনুভূতিহীন, তবু, স্নায়বিক। দৃষ্টিনন্দন৷ রক্ত উপচে পড়ে, রক্ত মোছা হয়, জিজ্ঞাসার ফাঁকে৷ প্রশ্নবাণ সমাপনে যুদ্ধক্ষেত্রে রচিত হয় ধর্মগ্রন্থ। কখনও, ব্যথাবোধ স্থির হয় শানিত স্ক্যালপেল-এ।
৩।
দূরে থাকো, আরও দূরে যাও সরে-সরে
আমরা
দেখি বিজ্ঞানীর উল্লাস
ছাপিয়ে যায় ভয় ভীতি আবেগ। জঠর।
ভাঙচুর শরীর বুঝে নেয় হিস্টোলজি। ডার্মাল স্তর
আমরা
বলছি তোকে
হাসিমুখে এক কোণে সুখে থাক্,
আমাদের অনাগত সন্তানশোক
নিরাময়
সূঁচ ফুটিয়ে অক্ষর বসবে সারা গায়ে।
নিজের নাম, যোগচিহ্নে প্রেমিক। গ্রাম,
পাঠশালা। খচিত গালিগালাজ।
স্বগতোক্তি ভেসে আসবে –
স্যালাইন চ্যানেল করা অসম্ভব, এই,
শিরাউপশিরাহীন বল্কল-শীর্ণ মৃত বৃক্ষশাখায়।
উৎকণ্ঠা জেনুইন
শুশ্রূষাময়ী দুপুরের সন্ধানে জাফরি আলো; খেলা করে কবুতরের গ্রীবা। চাঁপাগাছ ঝড়কবলিত, তার, অসম্ভব ফ্রিজ-শট্ আটকে রাখছে সময়। প্রতি আবর্তে একবারের চুম্বনেচ্ছা, ক্লান্ত। দ্রুতগামী। হাতঘড়ির মুকে আঁকা সেকেন্ডের কাঁটা। ঘটিকা পুরনোপন্থী। সূর্য দেখে ঠাওর করা মুশকিল, ভোর? নাকি, গোধূলিসুলভ কাজিয়া? অভ্যন্তরীণ কবিতা বিনিময়ে নৈকট্য বেড়ে ওঠলে পাঁজরের ফাঁকে অনায়াসে গেঁথে বসে সুইসনাইফ জিভ। তীক্ষ্ণ পোর্ট্রেইট দৃষ্টি।
তা’ বলে, সম্পর্কের গভীরতা বিষয়ে আলোচনা বেমানান সকাল আট-টা বেজে সতের মিনিটে! মাংসের দোকানে তখন ব্যালকনি রেলিঙে ঝরে পড়া শিউলির উদগ্রীব লাইন। লং ড্রাইভ থেকে ফিরে চা নিয়ে বসবে সপ্তাহব্যাপী আলাপ। সামনের সিট থেকে ভ্রমণবিলাসী শব্দ কাচের আড়ালে লিখবে বন্ধুতার আসল-নকল। পরিচয়, সামান্য। উৎকণ্ঠা যদিও জেনুইন।