
রুমা তপাদার-এর কবিতাগুচ্ছ
ঝটিকা সফর
১
আজ ঝটিকা সফরে প্রিয়মুখ সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিল
সমস্ত মুখের থেকে দূরে।
আমি হাত পেতে তার মুখ চেয়ে নিয়েছি তখন
মুখ নয়, সে আমার হাতে হাত রেখে
তুলে দিল অবিকল আমার মুখের মতো একটি মুখ
হাত দিয়ে তুলে দেখি তার কাছে আজ কোনও লজ্জা নেই ভয় নেই,
সমস্ত আকাশ এসে দাঁড়িয়েছে সুঠাম
জড়তা মিলেছে শূন্যে
স্তব্ধতা চলেছে শব্দে শুধু প্রাণবায়ু
অস্থিরতা স্তব্ধ হয়ে গতি অনুভব করছে
গতি স্থির বেগের উপর, ততক্ষণে সাম্যাবস্থায়
সমস্ত প্রাপ্তির অবসান এই পরম মুহূর্তই
মিলনস্থান আত্মার পরমাত্মায়
২
যেভাবে সফরে যায় সকলে ফেরে না সেভাবেই যথাযথ
পথ ফেরে গতি-হেরফেরে
সময়ের ব্যবধানে দীর্ঘ ও সুদীর্ঘ মায়া জন্ম নেয়
স্থিরতা-প্রধান মায়া পড়ে থাকে
সফর রাস্তার খাঁজে খাঁজে
মায়া ঠেলে দেয় সুস্পষ্ট ঘুমের দিকে
ঘুমেরা গড়িয়ে চলে মায়া স্পর্শের তলায়
গভীর রাত্রের দিকে ঘুম এলে মায়া জেগে ওঠে
মায়া জেগে ওঠা মাত্র ঘুম চটে যায়
এ ওর মুখের দিকে চেয়ে থাকে অবিকল
এই তো স্থিরতা মুহূর্তের ঝটিকা সফরে
গড়ে ওঠা একান্ত সম্বল
৩
আবেশ রেখেছে চারিদিকে চলন্ত স্থিরতা প্রাপ্ত হয়েছে
স্থির আত্মা দুটি চেয়ে আছে চোখ বন্ধ করে
এ ওর চোখের দিকে
দৃশ্যেরা অস্থির হয়ে আরও কাছে এসে দেখে নিচ্ছে
দৃষ্টি কোথা থেকে উঠে আসে
মণি থেকে? মণি কোথা থেকে গোচর হয়েছে এতকাল?
আত্মা আলো হয়ে উঠে এলে স্পর্শ থেকে দৃশ্যতঃ সম্ভব
শব্দ থেকেও সম্ভব, গন্ধ থেকে অসম্ভব নয় দেখা…
যে-প্রেম ধ্যানস্থ হতে পেরেছে
তাকে ভেঙে চুরে যুগে যুগে তত্ত্ব কথারা হয়েছে লেখা।
৪
যে-প্রেম প্রেমজ কথা বলে দেহতত্ত্ব লীলারস
আজানের সুর ধরে চলে যায়
আকাশে হাওয়ার কাছাকাছি
তাঁকে সবটুকু দেওয়া যায় অনায়াসে
সমর্পণে সুখ আসে কান্না আসে
চোখ মুছে ফেলি পাতায় লুকিয়ে ফেলি অশ্রু
তাকাতে পারি না বলে স্থির বসে অনুভব করি পাশাপাশি
অনর্গল হয়ে ওঠে তার কণ্ঠস্বর,
দেখি ঈশ্বর বাচ্চার মতো
দু’হাতে আমার হাত ধরে বসে আছে প্রহরের পর প্রহর…
৫
সময় যেভাবে শেষ হয় ফিরে আসতেই হয়
সু-সফর শেষে আনাচ-কানাচ জীবনের কাছাকাছি
স্থিত হতে কিছুটা সময় লেগে যায়
সে-সময় প্রিয় মুখ উথালপাথাল
সময় সময়মতো স্থির হয়
পেশি কেঁপে ওঠে, মনে পড়ে
এগিয়ে চলেছে দৃশ্য স্থির চোখ
এগিয়ে যাওয়ার দিকে চেয়ে পাতা নত,
মনে হয় রাস্তা বেড়েই চলুক
আমি তাকে প্রাণ ভরে দেখি আরও কিছুক্ষণ অন্তত!
৬
সফরই তো ঝটিকা আসলে
স্থান থেকে স্থানান্তরে গেলে থেমে যেতে হয় কিছুক্ষণ
গতিশীল পথ জানে প্রকৃত সফর মানে,
তার বুক চিরে সোজাসুজি চলে যায়
বেখেয়ালে জুটি প্রেম এক হতে হতে
চোখে-মুখে স্বগতোক্তি স্পষ্ট ছাপ কথা নেই
স্পন্দনের সুগভীরে নিশ্চুপ হৃদয় অনর্গল হয় ইচ্ছেমতো
পথেরা দুরন্ত হয় কিন্তু ঝটিকা সংহত।
৭
ঝটিকা সফর অমরত্বকামী।
সে সমস্ত দৃষ্টি দিয়ে উপলব্ধি করে
বাইরের হাওয়া পর্যন্ত পারে না কাছে আসতে
যতটুকু হাওয়া আসে শ্বাসবায়ু
শব্দ বলতে কণ্ঠস্বর
কণ্ঠস্বর কাছে আসে কানে এঁটে বসে এমন
বাড়ি ফেরে শরীর একাই
হ্যাঁ, সফরই পরমান্ন, তাই সফরেই পড়ে থাকে মন…