মণিশংকর বিশ্বাস-এর কবিতাগুচ্ছ
মেঘা
স্মৃতির ভিতর নীলপুর—
শালবন, মালঞ্চ মোড়ে
দেখা হয়
পেঁজা পেঁজা তুলোর মতো
তোমার উনিশ-কুড়ির সঙ্গে…
আমি আমাকে বলি,
কষ্ট পেয়ো না—
দুঃখ নিজে এসেছে দেখা করতে
ব্যাটারি
অল্প বয়সী একটি মেয়ে আর একটি ছেলে, ভাইবোন,
সমুদ্রে নেমেছে স্নানে—
ক্রমে ভাইবোনের সরলরেখাখানি খানিকটা অস্পষ্ট হয়ে আসে…
আকস্মিক এই চিন্তা আমাকে হঠাৎই কাঁপিয়ে দেয়।
এত পাপ!
একসঙ্গে দুদ্দাড় করে বহু ঢেউ এসে অপ্রস্তুত আমি কিছুটা জল খেয়ে ফেলি।
বুঝি, আমার পাপের ঘড়া পূর্ণ হয়ে এখন তা গড়িয়ে নামছে…
চিন্তা হয় খুব, অহেতুক—
জ্বলে থাকা এই ভ্রান্ত আলো
এখন কতটা সময় নেবে নিভে যেতে!
সৃষ্টিতত্ত্ব
আমার লেখা ও আমি আলাদা। তোমারও তো তাই। তুমি শুধু আমাকে সৃষ্টি করেছ। সৃষ্টি করেছ আমার দুঃখগুলিকে। আমার ভিতর এই বৃষ্টিহীনতা, ভারী বাতাস, পাক খেয়ে উঠে যাওয়া ধুলো, সরসর শব্দে ঝরে পড়া পাতা, এসবই তোমার রচনা।
আমি নিজে কিন্তু আজ দূরের বৃষ্টিদিনের ভিতর একটা ভারী লজঝড়ে সাইকেল চালিয়ে তোমার দিকে ফিরে আসছি
বিসর্জন
ঠাকুর বিসর্জন দেখতে গিয়ে মেয়েটা হারিয়ে গেল।
পরের দিন ঝোপের ভিতর থেকে উঁকি দিচ্ছিল বাঁ-হাতখানা
কাকে যেন তখনও ডাকছিল—
‘আসছে বছর আবার এসো’—
ফিরে ফিরে আসে মৃন্ময়ী, অসুর বিজয়ের তিথি—
কোনো তিথি-নক্ষত্র পঞ্জিকা—
মেয়েটাকে ফেরাতে পারে না
‘নক্ষত্রের আলোয়’
প্রতিদিন মনে হয় এই সেই পথ—
যার তত্ত্ব ও তালাশ ছিল
শেষ পর্যন্ত পথনির্দেশ তবু অধরাই থাকে—
প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত বুঝেছিলেন একথা
আমরা যারা ছোটখাটো, তারাও কিন্তু
হোঁচট খেয়েছি ওঁর মতোই—
গাছ থেকে খসে পড়া নরম জোঁক
কাঁটাঝোপ, ডোবাপুকুর, জলবিছুটি
সারাজীবন অনেক রকম পথ দিয়ে হেঁটে যেতে হয়
ছোট বলে কেউ রেয়াৎ করেনি
পরীক্ষামূলক হেঁটে যেতে হয়
নির্জন গোরস্থান—
মৃত মানুষের করতালির ভিতর দিয়ে
মৃত্যুর পরেও হেঁটে যেতে হয় আমাদের
কবি কী সব আশ্চর্য পংক্তির জন্ম দেন! দুঃখ নিজে এসেছে দেখা করতে। মৃত মানুষের করতালির মধ্য দিয়েও হেঁটে যেতে হয় আমাদের। জোঁকের মতই বোধ কামড়ে থাকা সব পংক্তি!