পার্থজিৎ চন্দ-এর কবিতাগুচ্ছ
শিশু ভোলানাথ
এ গাছ বৌদ্ধ প্যাগোডা, চুপ করে আলো নিভে যাওয়া
প্রহর শেষের মতো নির্ভার। কতদিন আগে
বাজ তার শরীর পুড়িয়ে মাটির ভেতর নেমে চলে গেছে
চৈত্র-শালিকের একটি-দুটি বাচ্চা কোটরের থেকে মুখ বাড়িয়ে দেখছে
মোষের পিঠের মতো মেঘে ফুটে আছে কুর্চিফুলের দল
এ কোটর কার যেন তৃতীয় নয়ন
কার যেন তৃতীয় নয়নে উড়ে এসে প্রবেশ করেছে
মা-পাখির মৃদু আনচান, বিকেলের আলো।
আমার জানালা দিয়ে দেখা রাজপুত্র দুটি
যেন শিশু ভোলানাথ
একটি আইসক্যান্ডির দু’দিক চুষতে চুষতে
খিলানের মতো বাঁশতলা পেরিয়ে চলেছে
যতি
একটি প্রজাপতির পিঠে, বিকেলবেলায়
উড়ে এসে বসবে আরেকটি প্রজাপতি
এ দৃশ্য দেখেছি
ঘুমের ভেতর ঘুমে
দেখেছি তোমার ঠোঁটে
একফোঁটা জলের ওপর গন্ধরাজ-ছায়া পড়ে আছে
ঘটনাক্রমের পর পূর্ণচ্ছেদ দাও।
তারপর কাঁদো, তারও পর
একা একা পোড়া হাত দিয়ে মুছে দাও
যতি
ছুরির আত্মা
একদিন সিঁধ কেটে এ লোহার টুকরো ঢুকে পড়েছিল কামারের ঘরে
ঘুমন্ত কামারের পাশে চুলার মধ্যে
পূড়ে লাল হয়ে যাওয়া লোহার টুকরো, প্রসারিত
চামড়া ছেঁড়ার মতো বাঁকা ও তীক্ষ্ণ
জলে ঝাঁপ দিয়ে বারবার নিজেকে শান্ত করেছে
বাষ্প ও চিৎকার রাত্রে মিশেছে। একদিন
বাঁকা ও তীক্ষ্ণ লোহার টুকরো ঘূর্ণির গায়ে
নিজের শরীর ঘষে ধারালো হয়েছে। রোদ নিভে এলে
সেই ধারালো বাঁকা ও তীক্ষ্ণ লোহার টুকরো বরফপাতের বনে
তাকিয়ে দেখেছে মরা, কালো হয়ে যাওয়া পশুর চামড়া
হে আমার পশুর চামড়া, বালাপোশ…কয়েক হাজার রাত পর
তুমি অপরূপ কিংখাব হবে
প্রতিটি রক্তপাতের আগে, হে লোহার টুকরো, মনে রেখো
কীভাবে তোমার ভিতর ঢুকে গিয়েছিল ছুরির আত্মা
সম্মোহন
তারপর ঝরঝর করে সব মনে পড়ে গেল
এই তো সারাদিন পিয়াগিও পিক-আপ ভ্যান
পিচরাস্তা ধরে ছুটে চলে গেছে। শ-মিলের কাছে
গুঁড়ির পাহাড়, সাবমার্সিবল পাম্প
বসিয়ে ফিরছে কনট্রাকটর
দূর বাঁকুড়ার গ্রাম থেকে এসে
মফসসলের বাইরের দিকে
বসতি করেছে কেউ, সন্ধেবেলায়
মেয়ের সামনে বসে
ভাঙা-গলা বাবার গলায় শোনা গিয়েছিল
‘মায়ের পায়ের জবা হয়ে ওঠনা ফুটে মন…’
মনে পড়বার আগে তবে তোমার ভিতর এসব দৃশ্য ছিল, প্রিয় সম্মোহন!
দৃশ্য
মিশ্র-ধাতুর হ্রদ। ধাতুবাষ্প উড়ে যাচ্ছে
ধাতুমেঘ জলের ফোঁটার মতো ঝরতে ঝরতে
পাখি হয়ে যাচ্ছে, পাখি হয়ে
ছায়া ফেলছে হ্রদের গভীরে।
ধাতু-হ্রদে এ ছায়াই পাখিটির সমনাম, পাখির শরীর।
হ্রদের কিনারে জমে উঠেছিল বরফকুচির মতো ধাতু
তারপর এতদিন পর আজ
এক অবাক পর্যটক, দেখে
ত্রিভঙ্গে ফুটেছে পার্বতীর ঠাম
তার নরম স্তনের দিকে চেয়ে আছে স্তব্ধ নটরাজ
অসাধারণ লেখা।
কিছু অসাধারণ কবিতা পড়লাম। ❤️❤️❤️