
পাবলো’র ডায়েরি – শতাব্দীর নৌকায় আমাদের গোধূলি ভেসে যায়
সম্রাট সরকার
– “অধেক আকাশ/ অমাবস্যার/ আর বাদবাকি/ জমাট রক্ত/ যেন হত্যার -/ ধারণ করেছি/ আমার শরীরে”
– “খুঁজে পাবে তুমি/ ঝোপের ভেতরে।“ বাবা! আমারও মনে থাকে আজকাল কবিতার লাইন!
– আরেব্বাস! তুমি কখন সঞ্জীব প্রামাণিক পড়লে পাবলো!
– পড়েছি একদিন।
আমাদের এখন ঝোপের ভেতর শুয়ে থাকার সময়। আমার আর বাবার। আমরা মুঠো ভর্তি কুঁচফল কুড়িয়েছি। আর সঞ্জীব প্রামাণিকের এই কবিতাটার নাম ‘কুঁচফল’।
– বাবা, শুধু কুঁচফল কেমন দখতে, তার উপমা আর কোথায় মেলে – এই কবিতা?
– হ্যাঁ তাই। যা দেখি, আপন করে পাই, তাইই কবিতা।
– তাহলে তো চোখের সামনের সমস্ত কবিতা!
– চোখের বাইরেরও! শুধু প্রতি মুহূর্তে কেউ লিখছেন না বলে…
– আর উপমা?
– সে তো হৃদয়ের সম্ভ্রান্ত প্রপাত।
– তুমি জটিল হয়ে যেওনা বাবা!
– না হলে এতবড় অমাবস্যার কালো আকাশ, রক্ত লাল রঙ, তুমি এই ঝোপের নীচের ঝিরিঝিরি ছায়ার গভীরে, মাটির ঢেলার অবারিত কোণে – পেলে কি করে!
– বাবা! আমি এই কুঁচফল গুলো সাজিয়ে সঞ্জীব প্রামাণিক লিখব?
– না লিখলে অন্যায় হবে।
কতরকম সবুজ রং ধরেছে এখন ধানক্ষেতের গায়ে। শ্যালো পাম্পগুলো চালালে মজার শেষ থাকেনা। আলের ধার দিয়ে দিয়ে জল যাওয়ার নালা। এখন ধানের সময়। দক্ষিণের মাঠের শিরায় শিরায় মূল্যবান জল বয়ে চলেছে। নালার ধারগুলো বেশি উঁচু না। জমির মাটি কেটে কেটে আলের গায়ে দেওয়া হয়েছে। নালার অনেক শাখা-প্রশাখা। কখনো কোনো নালার মুখে মাটির বস্তা ফেলেদিলেই জলের মুখ ঘুরে যায় অন্য জমিতে। পাম্প কম। জমি অনেক। চাষিও অনেক। তাই পাম্পগুলো এই সময় সর্বক্ষন ঘট্… ঘট্….. ঘট্…. ঘট্ করে চলতে থাকে। নিজেরদের মধ্যে মিলেমিশে এইভাবে জল নিতে হয়। পাম্পের মালিককের ঘন্টার হিসেবে পয়সা। আমি যখন একা একা মাঠে যাই তখন চাষিদাদুরা আমাকে পয়সার হিসেব কষে দিতে বলে। আমি তো ঐকিক নিয়ম জানি। পাম্পের ঘরের চালে খাতা-পেন গুঁজে রাখা আছে। কে কত সময় পাম্প চালালো তার হিসেব। হিসেব খুব ভয়ঙ্কর জিনিস। কিছু মালিক হিসেব জানেনা। তাদের সঙ্গে চাষিদের গন্ডগোল হয়না। মোটামুটি করে মিলিয়ে নেয়। যারা হিসেব জানে তাদের হিসেব প্রায় মেলে না। আমাদের বাড়িতে চলে আসে। বাবা ক্যাল্কুলেটরে হিসেব করে ব’লে দেয়। আমাদের চাষ করার জমি নেই, কিন্তু জলের হিসেব করতে হয়! কেমন মজা!! মজা করার জন্য নালার জলে টমেটো, আলু, এটাসেটা গড়িয়ে দিই। জলের টানে ভেসে যায়। আমিও সঙ্গে সঙ্গে ছুটি আল ধরে। টমেটোটা ডোবে, ভাসে, পাক খায় এগিয়ে চলে। মাটির গায়ে ধাক্কা লেগে নাচতে থাকে। আমি ভাবি টমেটোটা যদি ‘বিয়ার গ্রিল্স’ হয়! বা আমিই যদি বিয়ার গ্রিল্সের মত জলের স্রোতে ডুবে ভেসে, ঘাসের শেকড়ে আটকে গিয়ে আবার কোনমতে ছাড়িয়ে বন্য জগৎ থেকে লোকালয়ে পৌঁছে যাই! এইসব ভাবতে ভাবতে হাঁটি। টমেটো জলের টানে টানে পৌঁছে যায় কোনো একটা জমিতে। ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড। মানুষ বনাম বন্যজগৎ।
অতয়েব সিমেন্টের পাঁচিল মোতায়েন হয় বয়সা বিলের মধ্যে। নাকি কারখানা হবে। বাবা বলেছে পাঁচিল হল মানুষের সভ্যতার দর্প। মোতায়েন হলে বোঝা যায় অন্যকারোর ‘নো-এন্ট্রি’। পাখিদের পাঁচিল নেই। হাতিদের নেই। বাঘেদের এলাকা আছে। তবে পাঁচিলের প্রয়োজন নেই। সকাল-সন্ধ্যে একবার এলাকার ধার দিয়ে দিয়ে পায়চারি করলেই হল। ওরা প্রত্যেকটা গাছ চেনে। কিছুদূর অন্তর গাছের গায়ে হিসি করলেই তার গন্ধে অন্য বাঘ টের পেয়ে যাবে। বুঝে যাবে এটা অন্য কারোর এলাকা। বাবা বয়সা বিলে এখন বেশি একটা যায় না। আগে আমি আর বাবা সাইকেল চালাতাম বয়সার পাশ দিয়ে। এখন রাস্তা ব্যস্ত সবসময়। বাবা আমাকে নিয়ে যেতে ভয় পায়। দুই বড় শহরের মাঝে টিমটিম করে জেগে আছে আমাদের এই গ্রাম। দামাল চারচাকা ছিটকে চলে আসে, ঝাঁকে ঝাঁকে ছড়িয়ে পড়ে বয়সা বিলের লাগোয়া রাস্তায়। চারচাকা থেকে লোক উঁকি মারে, আঙুল দিয়ে বিলের দিকটা দেখায়। সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে আলোচনা করে। রাতে জেসিবি চলে বিলের মধ্যে। জেসিবির আলো দেখা যায় দূরে দক্ষিণের মাঠ থেকে। বাবার কথা থেকে বুঝতে পারি জমি-জায়গা আর জল খুব হিসেবের জিনিস। দখল করবার জিনিস। বুঝেশুনে নেওয়ার জিনিস। তাই পাঁচিল। জেসিবির দৌরাত্বে সরালের ঝাঁক উড়ে যায় বিলের ওপর দিয়ে, মাঠের ওপর দিয়ে। বয়সা বিল দুঃখ পায়। জেসিবির চাকা টেনে ধরে বয়সা বিল। পাঁকে ডুবিয়ে দেয়। মরিয়া কিছু লোক বিশাল বড় ক্রেন নিয়ে আসে। ক্রেন বিলের কিভাবে নামবে? অতয়েব ক্রেন যাওয়ার রাস্তা। উঁচু করে মাটি ফেলে বেশ শক্তপোক্ত রাস্তা। বয়সা বিলের মধ্যেখান দিয়ে। প্রাইমারী স্কুলের সমনেটায় বয়সা বিল দুভাগ হয়ে গেল। এদিককার মাছ, সাপ-ব্যাঙ আর ওদিকে যেতে পারবেনা। ওরা তো পাঁচিল কি জিনিস জানেনা। এদিক ওদিক করতে গিয়ে বাধা পেল। তাই আলাদা হয়ে গেল। বাবা বলেছে এর নাম ‘হ্যাবিট্যাট ফ্র্যাগমেনটেশন’। যেমন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে মানুষ যাওয়ার রাস্তা হলে, রেল-লাইন হলে জঙ্গল ভাগ হয়ে যায়। ছোটো হয়ে যায়। পশুরা স্বাধীন ভাবে যাওয়া-আসা করতে পারে না। ছোট জায়গায় আটকে পরে। হাঁসফাঁস করে। কেউ রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ির ধাক্কায় মারা যায়। কেউ গাড়ির দিকে ধেয়ে আসে। ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড।
আমার পড়াশোনার চাপ বাড়ছে। আমি বাবা-মা’র কাছে পড়ি। দাদুর কাছে পড়ি। জেঠুর কাছে পড়ি। সবাই চিন্তা ক’রে টিউটর দেয়নি। তাও ভাল্লাগে না। স্কুলে ভাল্লাগে। সব স্যার ভালো। একদিন লিখতে দিয়েছেন “তোমার একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা”। আমি লিখছি। মানস অভয়ারণ্য ভ্রমণের কথা। ‘মানহ্ অভয়ারইণ্য’। সেই ঘন জঙ্গলের কথা মনে পড়ছে। আমার পাশে তুরাজ লিখছে। লিখতে লিখতে বেঞ্চ দুলছে। ঠিক হাতির পিঠে উঠলে যেরকম দোলে। অক্ষরগুলো ওঠানামা করছে। ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। আমি কি বেঞ্চে বসে আছি, না হাতির পিঠে! আমি ভাবছি আমি হাতির পিঠেই উঠেছি। হাতে বাবার দেওয়া ‘গ্রিমিট্-ইনস্কিপ’-এর পাখির বই। ‘বার্ডস্ অফ ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট’। বাবা বলেছে যা যা বাইনোকুলারে দেখা যায় তা তা বইটায় মিলিয়ে দেখতে। দুলে দুলে হাতির পিঠে আমি যাচ্ছি। হাতি মানসের উঁচু ঘাসজমিতে যাচ্ছে। ওটা ‘স্টোন চ্যাট’, ওই যে ‘বায়া উইভার’-এর ঝাঁক উড়ে যায়। ‘ইন্ডিয়ান পি-ফাউল’ পেখম মেলেছে। এদিকে একটা ‘লেসার কোউকাল’। হাতি নদীর ভেতর নামে। ‘ইন্ডিয়ান করমোরান্ট’-এর দল রোদ পোয়াচ্ছে। কয়েকটা ‘উড স্যান্ডপাইপার’। বাইনোকুলারে দুলতে দুলতে পাখি দেখি আর বই মেলাই। লজে এসে লিখে ফেলি কি কি দেখলাম। বাবা দ্যাখে। বই মিলিয়ে আবার বুঝিয়ে দেয়। বইটায় সব ছবি হাতে আঁকা। ‘উড’ আর ‘কমন’ স্যান্ডপাইপার নিয়ে খুব কনফিউশন হচ্ছে। কোনটা লিখি! হাতের কলম থেমে যাচ্ছে। হঠাৎ ঘন্টা পড়ার আওয়াজ। স্যার খাতা নিয়ে নিলো। ভ্রমণের অভিজ্ঞতা লিখতে গিয়ে লিখেছি শুধু বাইশটা পাখির ইংরেজি নাম। স্যার জিজ্ঞেস করলেন – “এগুলো কি লিখেছো পাবলো”? আমি কিছু উত্তর দিতে পারছিনা দেখে আমাকে প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে নিয়ে গেলেন। প্রিন্সিপাল স্যার আরো মিষ্টি। আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। “তুমি এতো সব পাখি চেনো”? আমি ঘাড় কাত করলাম। সঙ্গে সঙ্গে হুকুম হল স্কুলের পাখির চার্টটা বের করার। আমাকে ক্লাসে নিয়ে গেলেন। আমার ওপর দায়িত্ব চার্টের যেক’টা পাখি আমি চিনি সেক’টা সম্পর্কে বন্ধুদের বলা। আমি চড়ুই, শালিক, কাক আর মোহনচূড়া নিয়ে বললাম। বন্ধুরা থ। আমার তখন বিরাট ব্যাপার। প্রিন্সিপাল স্যার লাইব্রেরি থেকে একটা বই পড়তে দিলেন। ‘না-মানুষের কাহিনী’। লেখক নারায়ণ সান্যাল।
আজকে মা অফিস থেকে সব হারিয়ে ফিরেছে। পকেটমার মায়ের পার্টস্ তুলে নিয়েছে বাস থেকে নামার সময়। পার্টস্-এ অফিস আইকার্ড, মোবাইল আর এটিএম কার্ড ছিলো। সারা রাস্তা কাঁদতে কাঁদতে এসেছে। সাথে আর পয়সা না থাকায় বাজারে চেনা দোকানে ধার করে চা-বিস্কুট খেয়েছে। বাবা বকেছিলো। অনেক কষ্টে কাকে না কাকে, কোথায় না কোথায় ফোন করে এটিএম কার্ড ব্লক করা হল। মোবাইল নম্বর ব্লক করা হল। বাড়ির বড়দের কত কিছুই না জানতে হয়! বাড়ি ফিরে আসার পর বাবা আড্ডা শুরু করেছে।
– “মোবাইল নেই, এটিএম কার্ড নেই, তোমার একটু হলেও তো হালকা লাগছে”!
মা আরো গম্ভীর হয়ে যাচ্ছে।
– “আমি কি ইচ্ছে করে হারিয়েছি?”
মায়ের মুখটা ‘ওয়ান হর্নড্ রাইনো’-র মত থমথমে। আমি সঞ্জীব প্রামাণিক বলছি।
– “পাথর পাথর দিয়ে গড়া/ যেন এক আদি অবয়ব/ গালমন্দ অকথা-কুকথা/ সহজে হজম করে সব।“
আমরা তিনজনেই জানি কবিতাটার নাম ‘গন্ডার’। মা আরো পাথরের মত হয়ে যাচ্ছে। মায়ের মোবাইল আর্ধেক সময় বন্ধই থাকে। কারণ চার্জ থাকেনা। আফিসে ভাবে বাড়িতে গিয়েই চার্জ দেবো, আর বাড়িতে ভাবে অফিসে গিয়েই চার্জ দেবো। সুতরাং চার্জ খতম। মায়ের চিন্তা অফিসের আইকার্ড নিয়ে। থানায় গিয়ে ডায়েরি করতে হবে। অফিসের লোক মা’কে ওই আইকার্ড দিয়েই চেনে। খুব কাজের কার্ড। যখন-তখন লাগে। ঢুকতে, বেরতে কার্ড দেখাতে হয়। সব সময় গলায় প’ড়ে রাখতে হয়। কার্ডটা মায়ের ‘কলার আইডি’। ঠিক বন্যপশুদের যেমন রেডিও কলার পরানো থাকে। কোথায় যায় না যায় কম্পিউটারে সব ধরা পড়ে। যদি মা এখন সেই গন্ডারটার মত হত! ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড না হয়ে মা বন্য হয়ে যেত। যদি সত্যিই ইচ্ছে করে হারিয়ে ফেলত গলার বেড়ি। সাথে আমার থেকেও ছোটো বাচ্চা ছিল। একবার পুরুষ গন্ডার তেড়ে এল। মা-গন্ডারটা পালালো বাচ্চাকে নিয়ে। যাওয়ার পথে গলায় ঝোলানো রেডিও কলার গাছের ডালে বাধিয়ে ছিঁড়ে ফেলে দিল। যাতে কেউ খুঁজে না পায়। এবার স্বাধীন। গুনতির বাইরে।
মা আর আমি ছুটছি। মানসের উঁচু ঘাসজমির মধ্যে দিয়ে। ঘাসজমির মাঝে মাঝে বড় বড় গাছ। আমি মায়ের গায়ে লেপ্টে থাকার চেষ্টা করি। মা মাঝে মাঝে দাঁড়ায়। মাথা উঁচু করে হাওয়ায় গন্ধ শোঁকে। পাশ দিয়ে হাতির দল চলে যায়। আমার পিঠে শালিক বসেছে। একটু দম নিয়ে ভাবছি মায়ের দুধ খাব। কি একটা শব্দ হল। মা আবার ছুটতে শুরু করে। আমি পিছু নিই। কয়েকটা জিপসী মা’কে ঘিরে ধরার চেষ্টা করে। প্রথমে ঢিল মারছিলো জিপসীর লোকগুলো। মা আমাকে প্রাণপন আড়াল করে ছুটছিলো। মায়ের গায়ে দমাদম ঢিল পড়ছিল। এবার পটকা ফাটাচ্ছে। অনেক লোক জমে গেছে। জঙ্গল ভেদ করে অগুন্তি গাড়ি-ঘোড়া এগিয়ে আসছে। কিলবিল করে ঝোপঝাড় ভেঙে চারদিক থেকে এগিয়ে আসছে মানুষ। মানুষের পাঁচিল এগিয়ে আসছে যেন। সবার হাতে একটা করে রেডিও কলার। মা দাঁড়িয়ে পড়েছে। আমি মায়ের পেটের তলায়। মা হাঁপাচ্ছে। পেটটা উঠছে, নামছে। মা কাঁদছে। সবাই মায়ের হারানো আইকার্ড হাতে যেন দাঁড়িয়ে। ফেরত দেবে। দিয়েই ছাড়বে। মা কথা শোনেনি। পায়ের ফাঁক দিয়ে দেখছি জিপসী থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে বন্দুক। প্রথমে একটা, তারপর দশটা, তারপর শত শত বন্দুক মায়ের দিকে অকপট তাকিয়ে। স্বাধীন হওয়ার শাস্তি। মানুষের হিসেবের বাইরে যাওয়ার শাস্তি দেবে বন্দুক। ঘুম-পাড়ানি গুলি ছুটবে। আমি আর মা নিথর শুয়ে পড়বো এবার মানুষের গুনতির নিচে।
– বাবা, তুমি এখানে!
– “আমি একটু আগেই এসে পড়েছি কী করব বলুন তো?/ ফিরে যাব?/ আর একটু বাদেই আপনারা এসে পড়বেন/ উত্তাল ঢেউ-এর বেগে উন্মত্ত ব্যতিব্যস্ত।/ আর আমি।/ আমি একপাশে সরে যাব,/ না আপনাদের মধ্যেই নিঃশব্দে মিলে যাব?”
– না মিলে গেলে বরং অন্যায় হবে নিয়মমাফিক। কোন কবির কবিতা বললে?
– এই কবির নাম অরুণ কুমার সরকার।
– আমরা কোথায় গেছিলাম?
– কোথায় আর যাবে এখানেই ছিলে – ঘুমে।
– বাবা, আমি তোমার আপনি?
– “তুমি বলব না তুই – বুঝতে না বুঝতেই গোধূলিসন্ধির স্বর্গে পাখি উড়ে যায়/ আমারও এক অনির্বাণ আস্তিক্যভূমি প্রয়োজন, আমারও এক সমারূঢ় ফড়িঙের/ শুশ্রূষা প্রয়োজন, এই নীড় কিঞ্চিৎ লাল, এই নীড় কিঞ্চিৎ হলুদ/ ষড়রিপু হাতে নিয়ে বাউল আসে, শতাব্দীর নৌকায় আমাদের গোধূলি ভেসে যায়/ তুমি বলব না তুই? মনখারাপ মনখারাপ, ভাসমান মনখারাপ/ চরাচর নিবেদিত হলো”
– তুমি একদম রহস্য করবে না। আর ভেবো না আমি দেখিনি তুমি আজকাল জহর সেনমজুমদার পড়ছ। কোথায় ছিলে তুমি ‘উন্মত্ত ব্যতিব্যস্ত’?
– নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী জানতেন। “আমি প্রকৃতির কাছে নিজের দুঃখ জানাতে গিয়েছিলুম -/ প্রকৃতির নিজেরই এত দুঃখ/ তা আমি জানতাম না।“