দেবেশ রায়-এর সাক্ষাৎকার
‘আমি নিজেকে সাহিত্যিক বলিনা। বলি কথোয়াল। স্টোরিটেলার।'
:: সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শমীক ঘোষ

‘এইসব ইন্টার্ভিউ নিয়ে কী হবে? তার থেকে আপনি গল্প লিখুন।’
আমাদের সামনে প্লেটে লুচি, আলুর দম, মিষ্টি। অথচ আমার গলা শুকিয়ে কাঠ। এই স্বাক্ষাৎকারের জন্য চুয়াল্লিশটা প্রশ্ন বানিয়েছিলাম আমি। আটপৌরে প্রশ্ন। সংবাদপত্রের ইন্টার্ভিউতে যেমন ছাপা হয়। দেবেশ’দার সেইগুলো পছন্দ হয়নি।
ঘর জুড়ে শুধু বই। দুটো বড় বুক কেসে। সোফার পাশে ছোট টেবিলের ওপর । বই এই বাড়ির সব কটা ঘরে। এমনকি জানলার ওপরে সিলিং-এর কাছেও তাক। সেখানেও বই। বাংলা থেকে হাল আমলের বিদেশি সাহিত্য। তলস্তয়, প্রুস্ত থেকে গ্রিক আর রোমান নাটকের কমপ্লিট কালেকশন। ঢোকার মুখে, সিড়ি দিয়ে ওঠার সময় দেখেছি ছাতের দরজার কাছেও একটা র‍্যাক। সেটাতেও বই রাখা।
‘ছবি তুলব দেবেশ’দা?’
‘আমি কিন্তু পাউডার মেখে আসিনি।’
‘বারান্দায় যাওয়া যায়?’ নিয়ে গেলেন। ‘ছাদে যাবেন?’ নিজেই বললেন। শুধু যেতে যেতে আবার বললেন, ‘আপনাদের ওপর আমি খুব রেগে আছি।’
ছাদ জুড়ে সারি সারি টব। একটা লম্বা গাছের সামনে এসে দাঁড়ালেন তিনি। ‘এই গাছটা আগে আমার ফ্ল্যাটের দরজার সামনে ছিল। শুকিয়ে গিয়েছিল। এইখানে নিয়ে এসেছি তাই।’ গাছ নয় যেন সন্তান। বসে পড়লেন টবের ওপর। গাছটার তলায়। ‘একটা ছবি তুলুন তো।’
বাগুইহাটির আবাসনের ছাদ থেকে বহুদূর শহরের স্কাইলাইন। দেবেশ’দা রেলিং ধরে ঝুঁকে। ‘একটা ছবি তুলুন তো পাশের গলিটার। লং শট।’
‘আপনার ফিল্ম করার খুব ইচ্ছে ছিল না?’
‘এখনও সুযোগ পেলেই করব।’ আমি জানি দেবেশ’দা ডকুমেন্টারি করেছেন অনেকগুলো। একসময় ছবি তোলার নেশাও তাঁর ছিল।
ছবি তোলা হল। বসলাম। আমি সামনে মাটিতে। দেবেশদা সোফায়। নিজেই শুরু করলেন।
‘ফুটবল খেলায় যেমন কে হারল, কে জিতল, কে অফসাইড করল, কে ফাউল করল, সবটাই ওই মাঠের মধ্যে ঠিক হচ্ছে। মাঠের বাইরে থেকে কিছু নয়। সাহিত্যও তাই। সাহিত্য শুধু মাত্র দুটো মলাটের মধ্যে আছে। রবীন্দ্রনাথ কোনওদিন পূর্ববঙ্গে থাকেননি। অথচ নৌকাডুবি বা বেশ কিছু গল্পে যেভাবে পূর্ববাংলার কথা বলেছেন তেমন আর কেউ পারেনি। একজন লেখক খুব বিশ্বস্তভাবে তাঁর অঞ্চল, তাঁর জীবন নিয়ে লিখতে পারেন। কিন্তু এই বিশ্বস্ততাটা লেখক হওয়ার প্রাথমিক শর্ত নয়। বরং আমি উল্টো করে বলব যে লেখক তাঁর গল্পের অঞ্চল তৈরি করে উঠতে পারেননা তিনি ততবড় লেখক নন। আমাকে আপনারা যে প্রশ্নগুলো পাঠিয়েছেন সেইগুলো পাবনা-জলপাইগুড়ি নিয়ে।’
দেবেশ’দা থামলেন। ‘আমি কী একটা গোলমাল পাকিয়ে দিতে পারলাম?’
আমার চুয়াল্লিশটা প্রশ্ন কেমন বুদবুদের মতো মিলিয়ে যাচ্ছে আমার সামনে। অথচ আমি প্রশ্নগুলো তৈরি করে উত্তরবঙ্গ সংবাদের বিভাগীয় সম্পাদককে দেখিয়ে নিয়েছিলাম। তাহলে কী হবে ইন্টার্ভিউয়ের! কী প্রশ্ন করব? তাহলে একজন লেখকের সঙ্গে তাঁর বড় হওয়ার, তাঁর বেড়ে ওঠার জায়গার কোনও সম্পর্কই নেই?
‘একবার একটা গল্প শুরু করেছি। গল্পের প্রেক্ষাপট, ভূগোল আমার খুব চেনা। একটা লোক তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছুটা হেঁটে এসেছে। গহন জঙ্গল। একটা গাছ আছে। তার তলা দিয়ে তিনদিকে তিনটে রাস্তা গিয়েছে। কোথায় গিয়েছে মনে করতে পারছি। কিন্তু গাছটা কী কিছুতেই মনে করতে পারছি না। আমার এক ছাত্র ছিল পবিত্র ভট্টাচার্য। মারা গিয়েছে। আমাকে খুব ভালোবাসত। তাকে চিঠি লিখলাম। সে ওই জায়গাটা দেখে এসে লিখল বাবলা গাছ। কী গাছ না জানলে লিখব কী করে লোকটা কেমন করে হাঁটছে? বুঝলেন নাতো… যদি বটগাছ হত…’
‘বাবলা গাছে কাঁটা আছে।’
‘হ্যাঁ কাঁটা থাকলে লোকটা হয় গোড়ালি ওপর ভর করে হাঁটবে। নয়তো আঙুলে ভর করে। কীভাবে সেটা সে জন্ম থেকেই জানে। তিস্তা নিয়ে একটা গল্প লিখতে গিয়েই এইরকম হয়েছিল। তখন জলপাইগুড়ির হাকিমপাড়ায় থাকি। কিছুতেই তিস্তাটাকে ধরতে পারছি না। হাঁটতে চলে গেলাম তিস্তায়। দু’মাইল হাঁটার পর একটা লোককে দেখলাম। এরা তিস্তার পাড়ে বসে থাকে। জলে কাঠ ভেসে এলেই দৌড়ে গিয়ে ধরে। ওটাই পেশা। ব্যাস ফিরে এসে লিখে ফেললাম। অথচ নদীর জল এইদিক দিয়ে যাচ্ছে, ওদিক দিয়ে যাচ্ছে এভাবে তো লিখলেই তো হত। অসুবিধে আছে। প্রধান একটা বিষয় না ধরে ফেললে ল্যান্ডস্কেপটা ধরা যায় না। ল্যান্ডস্কেপ… ল্যান্ডস্কেপ…’
অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন তিনি। আমার মনে পড়ল তাঁর লেখা লাইন। তাঁর উপন্যাস তিস্তাপারের বৃত্তান্ত থেকে। এই নদীটার সঙ্গে কোনও বরফগলা ঝোরার যোগ নেই – বাঘারু জানে। না থাকলেও নদী ত! আকাশ ছাড়া কোনও ঢাকনা নেই। নদী ত! স্রোত এসে বাঘারুরকে ঘা মারলে ফুলে ওঠে – বানভাসি ফরেস্টে এক একটা শালগাছের গোড়ায় যেমন হয়।
‘লেখক হওয়া শুরু হল কীভাবে। সাহিত্যিক হতে চাইলেন কেন?’
‘আমি নিজেকে সাহিত্যিক বলিনা। বলি কথোয়াল। স্টোরিটেলার। আমাদের উত্তরবঙ্গে এমন আছে। কোচবিহারে গীতালদহ বলে একটা গ্রাম আছে। ওই গ্রামে কেউ গান গাইত। সেই থেকে গীতালদহ। ওয়াল্টার বেঞ্জামিনের একটা লেখা পড়েছিলাম ‘স্টোরিটেলার।’ সেইখান থেকে এই কথাটা মাথায় আসে। কথোয়াল শব্দটা উত্তরবঙ্গে কেউ বলে কিনা জানি না। তবে রাজবংশীদের মধ্যে এইরকম অনেক শব্দ আছে। পাখোয়াল – যে পাখি ধরে, নদীয়াল – যে নদীটাকে খুব ভালো করে চেনে, পাথাল – একটা বিরাট প্রান্তর যার মধ্যে গাছপালা বিশেষ নেই কিন্তু চারদিকে অনেক গ্রাম আছে। সেই পাথাল ধরে যে যায় সে হল পাথোয়াল। বনের মধ্যে থাকে যে – বুনোয়াল।’
‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত লেখা শুরু হল কীভাবে?’
‘আমার এই বয়সে আর বানিয়ে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু সত্যি বললে বিশ্বাস করবেন না। প্রথম চ্যাপ্টারটা লিখি বারোমাস পত্রিকায়। তখন একবারও ভাবিনি যে এর দ্বিতীয় চ্যাপ্টার হবে। একদিন কলেজ স্ট্রীট কফি হাউজের বাইরে বসে আছি। আমি আর শক্তি। শক্তি আমার মুখে একটা চুমু খেল। সিগারেট ধরিয়ে দিয়ে বলল খুব ভালো লিখেছিস। পরের বছর শারদিয়া সংখ্যায় লিখতে হবে। আমি ভাবলাম এটা নিয়েই লিখি। কিন্তু সেটা আসলে তৃতীয় চ্যাপ্টার। সেটাও লোকজনের পছন্দ হল। এইভাবেই…’
‘আপনি তো নিজে কমিউনিস্ট পার্টির মেম্বার। ’
আমি সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক ছিলাম।
তিস্তাপারের বৃত্তান্তে লিখেছেন তিনি চলন্ত শালগাছের মতন মাঝনদীতে বাঘারু দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর আবার স্রোত সামলে এম-এল-এ কাঁধে পা বাড়ায়।
‘নিজে কমিউনিস্ট হয়ে কমিউনিস্টদের সমালোচনা করলেন না?’
‘সমালোচনাটা কোথায় করলাম? ওটা তো সত্যি। আমাকেও ওরকম অজস্রবার নদী পার করে দিয়েছে। আর ওটা এখন সিপিএমের কোন নেতার ঘটনা করে দিলেই বলবে সমালোচনা? বলুক না আমার সামনে এসে কেউ যে তাকে করেনি। পারই হতে পারত না।’ দেবেশ’দার মুখে তীর্যক হাসি।
‘তিস্তা প্রসঙ্গেই বলি তিস্তা ব্যারেজ প্রজেক্ট নিয়ে আপনার আপত্তি আছে।’
মুহূর্তে মুখটা কঠিন হয়ে গেল। চুপ করে রইলেন কিছুক্ষণ। ‘আমি তো বামফ্রন্টকে বলেছি। জ্যোতিবাবুকে বলেছি। তখনকার সেচমন্ত্রী বিশ্বনাথ মুখার্জিকে বলেছি। আপনারা তো কিছুই জানেন না। ওখানে একটা ব্যারেজ করে দিয়েছেন। জলটা কোথায় যাবে? আসলে অতবড় ব্যারেজ হবে। বিদেশি টাকা আসবে। লোকজন দেখতে পাবে। এইসব দৃশ্যমোহন কারণেই ওটা করেছিল। এই ওদের রাজনৈতিক দৃষ্টি। আমি তখন থেকে বলেছি। তিস্তাপারের বৃত্তান্ত লেখার আগে থেকে বলেছি। কী মানেটা কী? এইখানে ভারতবর্ষে আঠারো মাইল সমতল। পঁচিশ মাইল বাংলাদেশে। আঠারো প্লাস পঁচিশ এই হচ্ছে এই নদীটার কার্যকারিতা। তা ব্যারেজটা করে কার উপকার হল? ওই আঠারো মাইল জায়গাই শুকিয়ে গিয়েছে। ওখানে বাড়ীঘর-বসতি হয়ে গিয়েছে। পাশ দিয়ে একটা খাল করেছে। সেই খালের দুধারে মরুভূমি। আমি বারবার প্রতিটা লেখায় লিখেছি যে আপনারা একটা হিসাব দিন। ব্যারেজ তৈরির আগে কৃষিফলন কী ছিল। আর ব্যারেজ তৈরির পর কৃষিফলন কী আছে। যদি বাড়ে দু’কান মুলে রাজী হব।’
গলাটা ক্রমশ উঠছে দেবেশ’দার। রেগে গিয়েছেন। ‘দেশটাকে না চিনলে মন্ত্রী হওয়া যায় না। একবার ভীষণ বন্যা হয়েছিল দক্ষিণ বঙ্গে। কমিশনার বললেন যে ফ্লাড পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে আমরা যেতে পারছি না। বিনয় চৌধুরী আরামবাগ থেকে বললেন আমি পৌঁছে গিয়েছি আপনারা আসুন। একে লিডারশিপ বলে। একে লিডারশিপ বলে। মাটি চেনে। দেশের আন্দোলনের ভেতর থেকে যে ওঠেনি সে কী করে দেশ চিনবে? রাজনীতি যে করে সে তো মানুষকে চেনে। অঞ্চলটাকেও চেনে। না ওই খালটাকে ওদিক দিয়ে নেবেন না। এই নলেজটা তাঁর আছে।’
দেবেশ’দা মুখ চোখে রাগ ফুটে উঠছে। হাত’দুটো সোফার ওপর ঠুকছেন বারবার। বেশ জোরে। গলাটা উঠে যাচ্ছে।
‘৬৮ এর ফ্লাডের পর রাজ্যপাল শান্তি স্বরূপ ধাওয়ান গিয়েছেন মিটিং করতে। আমি তাঁকে বললাম, ওয়েল মিস্টার ধাওয়ান, আপনি কী আমাদের বন্যার কথা শেখাতে এসেছেন? যে বন্যাতে আমরা নিজেরা আক্রান্ত হয়েছি? নাকি আপনি আমাদের কাছ থেকে জানতে এসেছেন যে আমরা বন্যায় কতটা ক্ষতিগ্রস্ত এবং আমাদের আসলে কী এই মুহূর্তে দরকার? পরিষ্কার করে বলুন। আপনি যদি শেখাতে এসে থাকেন, আমি এই মিটিং-এ নেই। তখন রাজ্যপাল সাবধান হয়ে গেলেন। ওঁর উপদেষ্টা এ কে ব্যানার্জি কথা শুরু করলেন। তিনি যে কটা কথা বলছেন আমি বলছি ইট ইজ নট কারেক্ট। উনি আমাকে পালটা বলছেন না আমি ঠিক বলছি না। আমি বললাম ঠিক আছে। চলুন ওই জায়গায় গিয়ে দেখি আসলে কে ঠিক। আমাকে সব পার্টির লোকজন ভালোবাসত। দেবেশ’দা থাকলে ঠিক কথা বলবে। টি-ব্রেক হয়েছে। সব পার্টির নেতারা আমাকে বকতে শুরু করল। তুমি রাজ্যপালকে মিস্টার ধাওয়ান বললে? এটা একটা ভদ্রতার ব্যাপার।‘
আমি দেখছি দেবেশ’দার ডানহাতের মুঠোটা ক্রমশ আরো শক্ত হচ্ছে। অল্প একটু ঘাম যেন মুখে। ‘আমি রেগে গিয়েছিলাম। ধাওয়ানের সঙ্গে আমার তফাতটা কী? উনি আমাকে ডেকেছেন এখানকার সমস্যা জানার জন্য। আমার কাছে শুনুন। ইয়োর এক্সেলেন্সি বলতে হবে? বলব। বাইরে যাঁরা ছিলেন তাঁরা আমার কাছে ভিড় করে আসছেন। দেবেশ’দা কিছু হয়েছে? আমি বলছি না কিছু হয়নি, কিছু হবেও না। আবার মিটিং শুরু হল। চিফ মেডিক্যাল অফিসার এল। তিনিও বললেন যে সব কিছু স্বাভাবিক। আমার হাসপাতালে অপারেশন হচ্ছে। আমি আবার রেগে গিয়ে বললাম যে উনি মিথ্যা বলছেন। কালো মিথ্যা নয় সাদা মিথ্যা। একটা গাড়ি নিয়ে হাসপাতালে যাই চলুন। ওখানে একটাও বেড নেই যেখানে একজন সাধারণ রোগী শুতে পারেন।’
হাসলেন নিজেই এবার। হাসিতে শ্লেষ ঝরে পড়ছে। থামলেন সামান্য। ‘সেই মিটিংয়ের ফল হল রাজ্যপাল দশটা রেফ্রিজারেটর ওইখানেই স্যাংশান করলেন। আমি আসা যাওয়ার পথে দেখতে পেতাম দশটা রেফ্রিজারেটর বাইরে পড়ে আছে। বৃষ্টিতে রোদে মরচে পড়ে যাচ্ছে। একদিন সি এম ও এইচের অফিসে গেলাম। কি ব্যাপার বলুন তো? তিনি বললেন আপনি তো ফ্রিজিডেয়ার পাইয়ে দিলেন। কিন্তু তাঁর তদারকির লোক তো আসবে চিফ সেক্রেটারির লেভেল থেকে। হু উইল লুক আফটার টেন ফ্রিজিডেয়ার।’
হাতটা আবার মুঠো হয়ে গিয়েছে। আছড়ে পড়ছে সোফার হাতলে। খুব জোরে। হতাশায়। ‘ফর ব্লাড… ব্লাড… ব্লাড… ব্লাড… ব্লাড… ব্লাড… ওগুলো ব্লাড ব্যাংকের জন্য নেওয়া হয়েছিল। অথচ একটাও রাখতে পারলাম না। সব কটা নষ্ট হয়ে গেল।
এইটাকে বলে দেশ জানা। এর মধ্যে কেউ লিখতে পারলে লেখে, কেউ রাজনীতি করতে পারলে রাজনীতি করে। এর মধ্যে কোনও তফাৎ নেই। আমাদের জলপাইগুড়ি শহরে কোনও ব্লাড ব্যাঙ্ক ছিল না। কোনও এক্স রে মেশিন ছিল না। কল্পনা করতে পারেন একটা ডিস্ট্রিক্ট হেড কোয়ার্টার! রাজ্যপালকে বলছে অপারেশন হচ্ছে। সিনেমা হল চলছে…’
দেবেশ’দা চুপ করে গেলেন। অন্যদিকে তাকিয়ে রইলেন অনেকক্ষণ।
তাঁর লেখাই মনে পড়ে গেল – তিস্তার দুই পাড় বাঁধ দিয়ে বাঁধা হয়েছে। সেই বাঁধের ওপর সবাই দাঁড়িয়ে। একটা ট্র্যাঞ্জিস্টরের আওয়াজও মাঝে মাঝে পাওয়া যায় – বোধহয় বানভাসিদেরই ভেতর থেকে। কিন্তু তিস্তা আর তিস্তাবুড়ি না থেকে তিস্তানদী হয়ে ওঠে। সেই তিস্তাবুড়ির মূর্তি পাটকাঠি আর পাট দিয়ে বানিয়ে লোকে পুজো করে। সেই তিস্তাবুড়ি এখন পারে তার বুকে ভাসমান একটা লোককে আকাশে উধাও করে দিতে।
বন্যার উপকথা জন্মাছিল – নতুন।

জানলার বাইরে এখন সন্ধে। বাগুইহাটির মাঝারি মাপের পুরোনো ফ্ল্যাটের মধ্যে এখন টিউবের আলো। সারি সারি বইয়ের মাঝে কথা বলে যাচ্ছেন দেবেশ রায়। তিনি যেন একটু বিরক্ত। কথার মাঝে মাঝে যতি আসছে। আমার সব কথা শুনতে পাচ্ছেন না তিনি। হিয়ারিং এইড লাগানোর পরও। আমার কথাগুলো পুনরাবৃত্তি করছে কণিষ্কদা। আরো একটু জোরে।
‘বুনোয়াল বলছিলাম। বনে থাকে যে। আমার এক কমরেড ছিল বুনোয়াল। তার ছটা হাতি ছিল। আমি তার বাড়িতে ছিলামও। উনসত্তর সাল নাগাদ। আমি ওই অঞ্চলে কোনও মিটিং করছি জানলে ও ওই ছটা হাতি নিয়ে বসে থাকত। একটা বাচ্চা হাতি ছিল। আমার পায়ের কাছে বসে থাকত। ওদের একটা গাছের ওপর ঘর ছিল। যাকে আজকাল ট্রি-হাউজ বলে। ওই বাচ্চা হাতিটার শুড়ের ওপর পা দিয়ে আমি সেই ট্রি-হাউজে উঠে যেতাম। শুধু আমার জন্য যখন ভাত ফোটাত তখন হাতিগুলো একটু রেস্টলেস হত। আগুন বিষয়টা ওরা প্রবৃত্তিগত কারণে সহ্য করতে পারে না। কিন্তু আমি আছি। তাই ওরা কিছু করত না। দূরে সরে যেত।
‘প্রথম গল্প দেশ পত্রিকায় ছাপা হয়। তাই না?’
‘আমার দাদা (দীনেশ রায়) স্কুল জীবনে ডিক্লেয়ার করে দিয়েছিলেন যে সে সাহিত্যিক। দাদার ঘরে একটা শরৎচন্দ্রের ছবি টাঙানো থাকত। দাদা কিন্তু সেই বয়সেই সাহিত্যিক হিসাবে সবার কাছে অ্যাক্সেপ্টেড। এর মধ্যে কোনও দ্বিধাদ্বন্দ নেই। দাদার ভাই দেবেশ। কলেজে ঢুকেছে তাহলেও সেও সাহিত্যিক। ২রা সেপ্টেম্বর ছিল আমাদের কলেজের প্রতিষ্ঠাদিবস। ওই দিন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধের কম্পিটিশন হত। আমাকে লিখতেই হবে। আমার কোনও চয়েস নেই। আমি কী করব? দাদাকে ধরলাম। একটা গল্প আমাকে বলে দাও আমি লিখে নিই। দাদা উড়িয়ে দিল। মাকে গিয়ে বললাম। মা দাদাকে বকলেন। ওর প্রথম বছর ও কীভাবে পারবে। একটু বলে দে তুই। দাদা আমাকে ডিকটেশন দিল। আমি লিখে ফেললাম। সেই লেখাই জমা দিলাম। ফার্স্ট প্রাইজ । কবিতা, প্রবন্ধতেও তাই। সেগুলো কিন্তু দাদা লিখে দেননি। আমার আর না লিখে উপায় নেই। প্রতি বছর এইভাবেই চলতে লাগল। ফোর্থ ইয়ারে উঠে বললাম, আমি প্রাইজ পেতে পেতে ক্লান্ত। আমি আর লিখব না। থার্ড ইয়ারে যখন পড়ি তখন দাদার বন্ধুদের মধ্যেই বোধহয় আলোচনা হচ্ছিল কলকাতার কাগজে লেখা নিয়ে। সবাই বলত বাইরের কাগজে লেখা পাঠালে ছাপা হওয়া খুব কঠিন। কিন্তু আমার মনে হল ভালো লেখা হলে ছাপা হবে না কেন? আর ভালো লেখার কায়দা আমার জানা আছে। আমার মনে হল আমি পরিচয়ে কিছুতেই লিখব না। আমি কমিউনিস্টদের কাগজ ভীষণ অপছন্দ করতাম। সারাদিন ধরে লিখলাম। লিখে দেশ পত্রিকায় পাঠিয়ে দিলাম। ছাপা হয়ে গেল। এর মধ্যে কোনওরকম অনুশীলন, মহাত্ম্য, সৃষ্টিশীলতা এসব ছিল না।’ দেবেশ’দা হাসছেন।
‘দেশ পত্রিকায় গেলেন তারপর?’
‘আমি প্রথম যেদিন দেশ অফিসে গেলাম আমাকে নিয়ে হাসাহাসি পড়ে গেল। সাগরদাও হাসছেন। রবিবাবু বলে তখন এক প্রুফ রিডার ছিলেন। তিনিও হাসছেন। বিমলদা রুমাল চাপা দিয়ে হাসি থামাতে পারছে না। আমি তো অবাক হয়ে গেলাম। পরে বুঝলাম সবার আমার লেখা পড়ে ধারণা হয়েছে আমি লম্বা চওড়া মোটা লোক। আমার বয়স তখন কত হবে উনিশ কুড়ি। আমি পরে বিমলদাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে আমাকে হঠাৎ মোটা ভাবতেন কেন? বলেছিলেন, এত পাকাপাকা লেখা লেখ। মোটা ভাবব না তো কী। বিমলদার অবশ্য ধারণা হয়েছিল আমি খেতে পাইনা বলে রোগা। তখন পাইকপাড়ায় থাকতেন। প্রায়শই ডাকতেন ওঁর বাড়িতে খাওয়ার জন্য। বউদিও খুব ভালোবাসতেন।
‘অথচ দেশ পত্রিকায় লিখলেন না আর।’
আনন্দবাজার ’৬৪ সালে লিখল কমিউনিস্টরা দেশদ্রোহী। আমার কাছে যখন শারদীয়া সংখ্যায় লেখা চাইল তারপর। আমি স্টেটমেন্ট দিলাম যে ওরা ফ্যাসিস্ট। আমি ফ্যাসিস্টদের কাগজে লিখি না। তারপরেও অবশ্য লিখেছি সাগরদা যখন শেষবার দেশ শারদীয়া সংখ্যা করলেন তখন উনি চেয়েছিলেন প্রথম যে লেখকদের লেখা উনি ছেপেছেন তাঁদের সবাইকে রাখতে। আমি বলেছিলাম নিশ্চয় দেব। গুজরাত দাঙ্গার সময় আনন্দবাজার যখন দাঙ্গা বিরোধী অবস্থান নিল তখনও লিখেছি।
‘কমিউনিস্ট পত্রিকায় লিখবেন না, অথচ নিজে কমিউনিস্ট?’
‘আমি তো মাতৃগর্ভে যখন তখন থেকে কমিউনিস্ট। বারো তেরো বছর বয়সে প্রথমবার অ্যারেস্ট হয়েছিলাম। কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হয়েছিল সেইসময়। আমার সেই বাল্যকাল থেকেই কেমন একটা ধারণা ছিল কমিউনিস্টরা সাহিত্য শিল্পের ব্যাপারে ওভার ডিটারমিনিস্টিক। এটা কেন মনে হত তার কোন ব্যাখ্যা নেই আমার কাছে। ওই বয়সে মাথা দিয়ে হওয়া সম্ভবও নয়। কিন্তু আমি এটা মনে মনে নিশ্চিত জানতাম যে আমি কখনও কোনও কমিউনিস্ট পার্টির কাগজে কখনও লিখব না। ওরা সাহিত্য বোঝে না।
‘পরিচয় পত্রিকার সম্পাদক হয়েছিলেন তো।’
‘শুনুন কলকাতায় তখন কমিউনিস্ট মতবাদে বিশ্বাসী সাহিত্যিকদের মধ্যেও অনেক দলাদলি ছিল। আমি তো কৃষক আন্দোলন করা কমিউনিস্ট। কমিউনিস্ট পার্টির জেলা সম্পাদক। আমার তো পার্টির মধ্যে অন্য মর্যাদা। এখানে যখন আসতাম তখন এখানকার নেতারা বলতেন সাহিত্যিকদের কীসব গোলমাল আছে একটু মিটিয়ে দিয়ে যান না। আমি ওর মধ্যে ঢুকে বিপদে পড়ি? তবে একটা কথা বলতে পারি। আমার কমিউনিস্ট হওয়া বা স্থানীয় নেতা হিসাবে পরিচিতি পাওয়া আর আমার সাহিত্যিক হওয়া এর মধ্যে কোনও কন্ট্রাডিকশন কাজ করেনি।
‘কীরকম?’
‘আমি যখন পার্টির নেতা তখন আমাকে নানা দিকে ছুটতে হত। কিন্তু আমি যে গল্প উপন্যাস লিখি একথা তারা কেউ জানতই না। আবার এইখানে যাঁরা পার্টির নেতা তাঁদের মনে প্রশ্ন ছিল যে আমি ওখানে কী করি। তাঁরা বছরে পাঁচ সাতটা গল্প লেখার জন্য জানতেন। আসলে আমি বোধহয় দুটো আলাদা পৃথিবীত তৈরি করে ফেলতে পেরেছিলাম। কোনটাই কোনটার মধ্যে ঢুকত না।’
দেবেশ’দা এখন শান্ত। মুচকি মুচকি হাসছেন। ‘একবার আমাদের সেন্ট্রাল পার্টির লিটরেচার ইনচার্জ কলকাতায় এসেছেন। ঘটনাচক্রে আমিও কলকাতায়। তিনি একটা মিটিং ডেকেছেন। সেইসময়েই আমার মানুষ খুন করে কেন উপন্যাসটা বেরিয়েছে। উনি কোন ভাবে সেটা শুনেছেন। আমার যে লেখক হিসাবে কোনও গুরুত্ব আছে সেটা উনি কিন্তু বোঝেননি। ওঁর কাছে আমার গুরুত্ব হল আমি পার্টির লিডার। উনি আমাকে মিটিং-এর মধ্যে বললেন আমি আপনার দীর্ঘ উপন্যাসটা দেখেছি। কিন্তু আপনি ছোট উপন্যাস লিখুন, ছোট গল্প লিখুন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাগুলো নিয়ে। আমি চট করে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, তাহলে আপনি অন্য লেখকদের বলুন। আমি আমার নিজস্ব স্টাইলে লিখি। আর সেটাই আমার স্টাইল। আর আমি বুঝতে পারছি না কেন আপনার বলা ফর্মটাই বেশি বাঞ্ছনীয়? আপনি লেখকদের আদেশ দিতে যাবেন না।
কমিউনিস্টরা বুঝতই না শিল্প সাহিত্য কাকে বলে। এটা একটা সম্পূর্ন ভুল ধারণা থেকে তৈরি যে পার্টি হল সম্পূর্ণ এবং সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। আর পার্টিই সব কিছু ঠিক করে দেবে।’
কথাটা শুনতে শুনতে আমার চোখদু’টো আবার বইয়ের তাকে। দুটো আলাদা দেওয়ালে। আমার সামনে বিরাট বুককেস ভর্তি সাহিত্য, প্রবন্ধ নানা ধরণের বই। আর পেছনের দেওয়ালটাই মার্ক্সীয় তত্ত্বের বই। লেনিন। কার্ল মার্ক্স।
‘কিন্তু একজন লেখক কী সমাজ থেকে আলাদা হতে পারে?’
‘পারে না। কিন্তু লেখকের রাজনীতিটা আলাদা। সেটা দলের পার্টির রাজনীতি নয়। তোমাকে বিচার করতে হবে যে গল্পটা যেখানে যাচ্ছে সেটা আপনার নিজস্ব ইডিওলজির বিরুদ্ধে যাচ্ছে কিনা। শুনুন ওসব কারণটারণ দিয়ে লেখা হয়না। লেখাটাকে দেখতে পাওয়া যায় শুনতে পাওয়া যায়।’
‘মানুষ খুন করে কেন। চা’বাগানের এক অসাধু ট্যাক্স ইন্সপেক্টরকে নিয়ে। চা-বাগানের বর্তমান অবস্থাটা…’
‘এখন আমি এখান থেকে কী লেকচার দেব? এটা যদি চোখের সামনে কেউ দেখতে না পায় যে চা-বাগান উঠে গেছে। তাহলে আমি বললে দেখবে? কী হবে বলে? লাভ কী বলে?’ গর্জে উঠলেন তিনি।
‘কোনও কোম্পানি, দেশি হোক বিদেশি হোক, বিদেশি কোম্পানি তবু একটু মানে, আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের যা যা দেওয়া উচিৎ তাঁর শিকিভাগও দেয় না। খামোখা কিছু বস্তি বাড়ি বানিয়ে দিয়েছে বাসের অযোগ্য। প্রত্যেকটা চা-বাগানে একটা প্রাইমারি হেলথ সেন্টার থাকার কথা। হিসাব দিন কটাতে আছে। প্রত্যেকটা হাসপাতালে একটা ডাক্তার থাকার কথা। হিসাব দিন কটাতে আছে। এদেরকে পশুর অধম জীবন দিয়ে, পাতা প্লাক করিয়ে… দেখুন পৃথিবীতে সব থেকে দামী চা দার্জিলিং-এর। তাহলে এর একটা স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া তো যে এত টাকা পাচ্ছি তাহলে শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থাটা একটু ভালো করে দিই। কিন্তু সামান্য স্বাস্থ্যরক্ষার ব্যবস্থাটুকুও অনেক হাসপাতালে নেই। এটা একটা ডিহিউম্যানাইজড প্রসেস, যার ফলে চা-শিল্প ভয়ানক পরিস্থিতিতে চলে গিয়েছে। আজকাল তো শুনি চা-পাতায় ভেজালও মেশানো হয়। আগে তো জানা ছিল কোন বিটগুলোয় পিকিং হবে। কোনগুলোয় হবে না। কারণ পাতাগুলো তৈরি হয়নি। সেটা বাঘরাও জানত। সেই সময় বাঘগুলোও বোধহয় লেখাপড়া জানত। গাছের পাতার গন্ধ শুঁকে বলতে পারত এইখানে এখন পিকিং হবে না। সেইখানেই গর্তের ভেতর বাঘ বাচ্চা দিত। এখন আপনি যদি যা খুশি তুলে ফেলেন, তাহলে বাঘও আর বুঝতে পারছে না কোথায় পিকিং হবে না। আমার বন্ধুবান্ধব তো আছে চা-বাগানের মালিক। একজন আমার সঙ্গে পড়ত, আমি জানি যে আইন অনুযায়ী তাঁর যত টাকা ব্যাঙ্কে রিজার্ভ রাখার কথা সেই টাকা তুলে সে তার মেয়েকে গাড়ি উপহার দিয়েছে। আপনি এটা লিখতে পারেন টি-ইন্ডাস্ট্রি ইজ গন ফর এভার। ফর এভার। শ্রমিকরা রেশন পায় না। রেশন! বড় বড় বক্তৃতা! মদ না খেলে তো মরে যাবে।’
গলাটা এখন উঠে গিয়েছে অনেকটা। কথার সুরে শ্লেষ ঝরে পড়ছে। ঝরে পড়ছে রাগ। তিনি অস্থির হয়ে উঠেছেন।
’৭৫ সালে এই লেখকই ‘মানুষ খুন করে কেন’ উপন্যাসে লিখেছিলেন – ফ্যাক্টরির সামনে এসে মিছিলটা দাঁড়িয়ে পড়ে। পাঁচশ মানুষের অত বড় মিছিলেও অত বড় মাঠ, অত উঁচু একটা ফ্যাক্টরি আর দোতলা উইদারিং হাউসের মাঝখানে কেমন ছোট্ট হয়ে যায়। তাছাড়া মজদুরদের পক্ষে ফ্যাক্টরির একজোড়া বন্ধ দরজার দৃশ্য খুব অশুভ যেন। তাঁরা উদ্যোগ হারিয়ে ফেলে…
‘আপনি তো অনেক পড়েছেন…’
কথাটা শেষ হল না। তার আগেই বলে উঠলেন। ‘দেখুন আমি টোলে পড়তাম। সেই টোলের পণ্ডিতমশাই গলির মুখ থেকে ডাকতে ডাকতে আসছেন ভো অজঃ। ভো অজঃ। অজ মানে ছাগল। এই পুরো রাস্তাটা উনি ডাকতে ডাকতে আসছেন। আমার মার বাবা খুব নামী সংস্কৃত পণ্ডিত ছিলেন। তাঁদের কথা যদি মনে করি তাহলে একথা স্বীকার করা সম্ভব নয় যে আমি খুব পড়াশুনো করেছি। এখনও মাঝে মাঝে পাঁচটা ডিকশানারি খুঁজতে হয় একটা শব্দ নতুন করে ব্যবহার করব বলে। ডাকঘরে অমল পাঁচবার বলেছে পিসেমশাই আমি পণ্ডিত হব না। আমি ওটা দশবার বলতে চাই।’
‘না মানে বর্তমান বাংলা লেখালেখি নিয়ে জানতে চাইছিলাম।’
‘আমি তো অনবরত পড়ছি। তার ভিত্তিতে বলতে চাই বাংলা উপন্যাস শক্তিশালী হচ্ছে। ও বাংলায় বেশি। এই বাংলায় সাহিত্যে বড় ক্যাপিটাল আছে। তাঁরা অনেকটা ডিকটেট করতে পারে। ও বাংলায় বড় ক্যাপিটাল নেই। ফলে লেখকরা নিজেদের উদ্যোগে লিখতে পারে। নিজেদের উদ্যোগে বই ছাপাতে পারে। ফলে ওই বাংলায় উপন্যাস বেশি শক্তিশালী হচ্ছে।‘
‘বাংলা ভাষার পাঠক কমে যাচ্ছে।’
‘বাজে কথা। থার্ড ক্লাস কথা। পাঠক যদি কমে যেত তাহলে এত পাবলিশার বাড়ত? নতুন নতুন পাবলিশার আসছে। হত? তবে বাংলা উপন্যাস বেশি শক্তিশালী হচ্ছে। দু’নম্বর কথা ছোট গল্প এই বাংলায় খুব খারাপ হচ্ছে। রবিবারের পাতায় পনেরোশো ওয়ার্ডে লিখতে হবে। ওই ভাবে কী গল্প হয়? আমার কাছে এক তরুণ লেখক এসেছিলেন। আমি তাঁর লেখা পড়ে বললাম গল্পটাতো ভালো হচ্ছিল। আপনি এখান থেকে বদলালেন কেন? বললেন নইলে বেড়ে যেত ছাপত না। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম না ছাপলে কী ক্ষতি হত। সে হা হা করে হাসছে। সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে বাংলার।’
উঠে আসব এইবার। শেষবার তাঁকে একটা প্রশ্ন করে বসলাম।
‘একটা কথা বলব? স্পষ্টবাক, হয়তো বা অপ্রিয়কথা বলেন, কঠোর মানুষ মনে হয় আপনাকে। অথচ আমি আপনার মধ্যে একজন স্নেহপ্রবণ মানুষ খুঁজে পাই বারবার।’
দেবেশ’দা চোখ সরিয়ে নিলেন। চুপ খানিকক্ষণ। ‘মানুষের তো অনেক ডাইমেনশন থাকে।’

CATEGORIES
TAGS
Share This
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes
410 Gone

410 Gone


openresty