দীপক রায়ের কবিতা
ফিরে এসেছি বিরতির পর
অপলক চেয়ে থাকি তার দিকে —
কখনো অন্যমনস্ক । ছুঁয়ে থাকি শুধু
কখনো হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে খেলা করি
গল্প করি দিনভোর ।
গল্প ফুরোয় না। মাঝে মাঝে হড়কা বান এসে
ভাসিয়ে নিয়ে যায় – হাবুডুবু খাই আমি।
আর প্রত্যেকবার বাঁচিয়ে দেয় সেই নদী
আদর করে বলে – এতো যে বয়স হল
ছেলেমানুষি গেল না তোমার !
হাঁটুজল থেকে আমি আরো দূরে বুকজলে চলে যাই
ডুবতে এসেছি আমি , ডোবাও আমাকে
সে আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় মাঝনদীতে
বলে – ডোব, ডুবে মরো
পাগলা ঘন্টি বাজে, ভেসে যায় বয়া
কারো ডাক শুনতে পাই না আমি
কোনো ডুবুরি নেই , সারেং নেই কোনো
শুধু নদী আর আমি শুধু আমি আর নদী
আমরা দুজন …
২
একটা মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে
সেই মানুষটা নিজেই
মরে যেতে পারে পারে জেনেও
দাঁড়িয়ে থাকে সে তার পাশে।
বন্ধু বলেছে –
শিরদাঁড়াটা বিক্রি করে দিও না
সে দাঁড়িয়ে থাকে
শিরদাঁড়া বিক্রি করবে না বলে
সে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে
৩
এখনো রয়ে গেছে
এখনো ফুটে আছ উঠোনে
সিঁড়ির ধারে
সবুজ পাতার ভেতর এখনো
সাদা চন্দ্রমল্লিকা
ডানদিকে পাঁচিলের গায়ে এখনো
রক্তকরবী
আর ওই নীল অপরাজিতা
এখনো বোগেনভিলিয়া
বেড়ার ধারে …
সে নেই
কার জন্য তবু – প্রশ্ন করি ।
উত্তর দেয় না ওরা
কাক ডাকে কাঠঠোকরা ডাকে
আছে আছে । রয়ে গেছে সব
ঢোকার মুখেই
যে হলুদ জবা
যাকে দেখতে পাও না
সেও রোজ অপেক্ষা করে
সেও রোজ তোমার কথা বলে
৪
প্রত্যেকবার হেরে যাবার পর
উঠে দাঁড়াই
মাঠের চারদিক দেখে নিই
সকালটা দেখি দুপুরটা দেখি
তারপর বিকাল সন্ধ্যা রাত্রির অন্ধকার
সব হারগুলো লিখে রাখি
ভোরের পাখি ডাকার আগে
সব লিখে রাখি
৬
ফোন এলো না
সে অপেক্ষা করছে
মেসেজ এলো না
সে অপেক্ষা করছে
বৃষ্টি শুরু হল
সে অপেক্ষা করছে
ঝড় উঠল
সে অপেক্ষা করছে
জানলা বন্ধ করল দরজা বন্ধ করল সে কাউকে কিছু বলতে পারল না
সে অপেক্ষা করল ফোন এল না মেসেজ এল না বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে বজ্রপাত
কী করবে সে
সে কী করবে …
৭
দু’জনে বসে চিঠিগুলো একদিন ছিঁড়ে ফেলেছিলাম
ভেবেছিলাম এটাই নিয়ম
নিয়ম কীভাবে তৈরি হয় জানতাম না
আজ ভাবলাম সেদিনের নিয়ম ভুল ছিল
কী জানি আজকের নিয়ম ঠিক কিনা
৮
কথা বলতে বলতে আজকাল কেমন
অন্ধকার নেমে আসে দেখেছ
কথা বলতে বলতে আজকাল কেমন
কুয়াশা নেমে আসে দেখেছ
আমাদের এই চারমাথার মোড়টা তখন দার্জিলিংয়ের ম্যাল মনেহয়
একটা ঘোড়া টগবগ টগবগ করে নেমে যাচ্ছে দ্রুত
একটা ঘোড়া পিঠে বোঝা নিয়ে খুট খুট খুট খুট করে
উঠে আসছে আমাদের দিকে
দুই আর আট অসাধারণ লাগল। বাকিগুলোও ভালো লেগেছে