চিন্তার চিহ্নমালা ৮
সন্মাত্রানন্দ
নেপাল থেকে তিব্বতে যাওয়ার পাহাড়ি পথ ধরে যেতে যেতে অতীশ দীপংকর শ্রীজ্ঞান ও তাঁর শিষ্যবর্গ পথিপার্শ্বে এমন একটি অদ্ভুত গ্রামের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন, যা সম্পূর্ণ জনশূন্য—যেখানে ঘরবাড়ি আছে, মানুষ নেই। এখানে ওখানে জীর্ণ কপাটের আড়ালে পড়ে আছে মানুষের মৃত পঞ্জরাস্থি, কঙ্কাল। অনুমানে তাঁরা বুঝেছিলেন, বৃহত্তর পৃথিবীর থেকে অনেক দূরে এই গ্রাম উজাড় হয়ে গেছে মহামারীতে। মৃত্যুর অবধারিত নির্মম পদচিহ্ন দেখেও দীপংকর সেই দিন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন—এই সদা ভঙ্গুর, অস্থায়ী, ক্ষয়িষ্ণু পৃথিবীর মৃত্যুশয্যার শিয়রে বসে প্রাণান্তকাল অবধি তিনি সেবা করবেন। থাকবে না বলেই তো তার শুশ্রূষার প্রয়োজন। মৃত্যুর আগে প্রয়োজন কল্যাণস্পর্শের। সেই পথের ধারেই এক পরিত্যক্ত মন্দিরে প্রণাম জানিয়েছিলেন অতীশ। বিস্মিত শিষ্য প্রশ্ন করেছিলেন, ‘কাকে আপনি এই মন্দিরে প্রণাম করলেন, আচার্য?’ দীপংকর উত্তর দিয়েছিলেন, ‘মহাশূন্যতাকে!’ চিন্তার চিহ্নমালার অষ্টম পর্ব। সন্মাত্রানন্দের কলমে।
আগের পর্বগুলি পড়তে ক্লিক করুন —–> (১), (২), (৩), (৪), (৫), (৬), (৭)
কল্যাণমিত্র ও মৃত্যুর করিডোর
সমুদ্রসৈকতে লম্বা মাথা-উঁচু একটা লাল রঙের বাড়ি। একটা টাওয়ার বললেই ঠিক হয়। টাওয়ারের মাথায় বন্ধ হয়ে থাকা একটা ঘড়ি। ঘড়িটা একসময় চলত নিশ্চয়। এখন সারা দিনরাত নটা সাতচল্লিশ বাজে। রোজই ওইদিকে গিয়ে ঘড়িঘরের তলায় বসে থাকতাম। কিছুক্ষণ পর বালুচরের ওপর দিয়ে দীর্ঘাকার একজন মানুষ আসতেন। ভদ্রলোকের নাম মণিকণ্ডন। মণিকণ্ডন আন্না বলেই আমি ডাকতাম তাঁকে। তমিড় ভাষায় ‘আন্না’ মানে হল দাদা।
ঘড়িঘরটা যাঁরা বানিয়েছিলেন, সেই পর্তুগিজ বণিকদের কেউ বহু শতাব্দী আগে মণিকণ্ডন আন্নার পূর্বপুরুষ ছিলেন। মণিকণ্ডন কথাটা নিজেই বলেছিলেন আমাকে। সমুদ্রের লবণাক্ত স্রোতে বাণিজ্যতরী ভাসিয়ে দুরন্ত অ্যাডভেঞ্চার আর দস্যুতা করতে করতে ইস্ট কোস্ট বেয়ে চেন্নাপুরী আর মসল্লিপট্টনমের প্রেমে পড়ে একদিন দলে দলে এইখানে নেমেছিলেন তাঁরা। কোনো কৃষ্ণাসুন্দরীর প্রেমে পড়ে তাঁদেরই একজন কিছুদিন ঘর বেঁধেছিলেন এখানে, সন্তান-সন্ততি রেখে গেছিলেন। তার পর হয়তো আবার একদিন উতরোল সমুদ্রের বাতাসে পাগল হয়ে ক্ষণস্থায়ী সেই নীড় ভেঙে সমুদ্রের ঢেউ পেরিয়ে চলে গিয়েছিলেন কোথাও। সেই দুরন্তপনার নীল স্রোত এখনও লেগে আছে মণিকণ্ডন আন্নার নীল চোখের তারায়।
ঘড়িঘরটা বানিয়েছিলেন তাঁরা কোন কাজে, আমি তা জানি না। মণিকণ্ডনও এর সম্ভাব্য হেতু বলতে পারেননি। ট্যাঁকঘড়ি তো ছিলই। তারপরেও নেহাতই কি কীর্তিস্তম্ভ স্থাপনের তাগিদ? হবেও বা।
আমরা সেই মিনারের নীচে দুচার কথা বলার পরেই চুপ করে যেতাম। দুরন্ত বাতাস আর সমুদ্রের গর্জনে আমাদের কথা চাপা পড়ে যেত। কথা বলতে ইচ্ছেও হত না অবশ্য। মিনারেটের পেছনে একটা পাথুরে জায়গায় একটা মহানিম গাছের চারপাশে কতগুলো শকুন আকাশ থেকে যেন গগনচ্যুত দিগ্হস্তীদের মতো পড়ে গিয়ে ভিড় জমাত। ওদিকটায় শ্মশান ছিল। সেই অনিবার্য গলগথা—সেই মৃত্যু-উপত্যকার পাখিদের দিকে একবার তাকিয়ে, আরেকবার সমুদ্রের অশান্ত ক্রন্দনের পানে চেয়ে আমরা নিস্তব্ধ বসে থাকতাম সময়ের অসমাপ্ত মিনারের নীচে।
আমার মনে এই ছবিটা মাঝে মাঝেই ফিরে আসছে কদিন ধরে। এই যখন ক্রমাগত চেনা-অচেনা মানুষের মৃত্যুর বজরা সংবাদের স্রোত ঠেলে এসে পৌঁছোচ্ছে আমার কাছে। গত বছর থেকে শুরু হয়ে এবছর এই নির্মমতম এলিয়টীয় এপ্রিলে মহামারী প্রবল আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন চলে যাচ্ছেন অজস্র মানুষ। গত বছর গতায়ু মানুষদের চিনতাম না, তাঁরা খুব বেশি আমার চেনাজানার মধ্যে ছিলেন না। কিন্তু এ বছর? প্রায় প্রতিদিনই পরিচিত মানুষদের নির্বাপণ। একে একে নিভিছে দেউটি। আমরাও কে কবে চলে যাবো, জানি না। যেকোনো দিনই আমিও একটি সামান্য খবরের বুদ্বুদ হয়ে নিঃশেষে মিলিয়ে যেতে পারি। চারিদিকে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার। মৃত্যুর হাহাকার। ভ্যাকসিন প্রতুল নয়। তার জন্য মারপিট। ক্ষমতায়নের রাজনীতি চতুর্দিকে। এরই মধ্যে ভোট, এরই মধ্যে জমায়েত। মানুষের স্পর্শ এখন সন্দেহজনক।
তবু মানুষের পাশে মানুষ যে নেই, আমি তা বলতে পারি না। সামাজিক মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে অজস্র ফোন নম্বর। সাহায্যের জন্য যাদের ফোন করতে হবে। অক্সিজেনের জন্য। হাসপাতালের বেডের জন্য। অ্যাম্বুলেন্সের জন্য। শববাহী গাড়ির জন্য। মোটামুটি এখান থেকে চিতা পর্যন্ত সমস্ত ধাপেই পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মানুষ। এবং সেই প্রতিশ্রুতি ফাঁকা নয়। অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের পাশে মানুষ আছেন। ভয়, আতঙ্ক, সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংবাদের পাশাপাশি সুস্থ হয়ে ওঠার খবরও আছে। কিন্তু সেই ইতিবাচক আশাপ্রদ তথ্যগুলো কম প্রচারিত, কম চর্চিত।
মানুষ মরছে এখন প্রধানত তিন কারণে। এক, করোনায় আক্রান্ত হয়ে। দুই, অর্থাভাবে। গত বছর থেকে কাজ হারিয়ে বসে আছে অসংখ্য লোক। বিকল্প বৃত্তির সন্ধানে জেরবার হয়ে গেছে। হাতে টাকা নেই, খাবার নেই। তিন, আতঙ্কে ও অবসন্নতায় বেছে নিচ্ছে আত্মহননের পথ। এই তিনটি হেতুই প্রবল। অথচ প্রথমটি নথিভূক্ত, অন্য দুটি নয়। বিশেষত এই তৃতীয় হেতুটি মারাত্মক। এবং সব থেকে অবহেলিত।
অদ্ভুত এক ভয় চেপে ধরেছে মানুষের বুক। সে ভয় পাচ্ছে এবং চাইছে, সবাই ভয় পাক। ফলত, সে ভয়ংকরতার ছবি ও তথ্য সারাদিন ধরে শেয়ার করছে। কোনোদিন গোষ্ঠীগত জীবনের বাইরে নিজেকে একবিন্দুও ভাবতে বা রাখতে শেখেনি। সে দলে বিশ্বাস করে। দলীয়তায় বিশ্বাস করে। তাই এখন সে দলবদ্ধভাবে ভয় পেতে চাইছে। সে ভয় পাচ্ছে, তাহলে অন্যে কেন ভয় পাবে না? এখানে সে এক ভুল সমীকরণ স্থাপন করেছে। সেই ভুল সমীকরণটি হল, ভয়=সাবধানতা। ভয় পেলেই মানুষ সাবধান হবে, এমন সে ভাবে। কিন্তু ভয়ের সঙ্গে সাবধানতা-অবলম্বনের সম্পর্ক অল্পই। ভয় পেলে মানুষের মন সংকুচিত হয় এবং বুদ্ধি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। আর তখনই সে একের পর এক ভুল করে বসে। সতর্ক হওয়া আর সন্দেহ করা আর ভয় করা—এক জিনিস নয়। বস্তুত, ভয় করে কোনো লাভ নেই। এ সেই লখিন্দরের বাসর ঘর; লোহার হলেও তাতে কোথায় যে ছিদ্র থেকে যায়। সেই ছিদ্র দিয়ে কালান্তক মৃত্যু সাপ হয়ে ঢোকে। হাজার সতর্ক হলেও তা হতে পারে। তার মানে এই নয় যে, সতর্কই হব না আমি। যথাসাধ্য সতর্ক থাকব, কিন্তু সেই সতর্কতা আক্রান্ত না-হওয়াকে নিশ্চিত করতে পারে না। পারছেও না। পরস্পর দোষারোপ করে আরও দুর্বল হয়ে যাচ্ছে মানুষ। এক মাস-হিস্টিরিয়া। আর সামগ্রিক এই মানসিক দুর্বলতা ও ভয়ের পরিবেশে মানুষের মন ও শরীর আরোই দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তার ফলে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে আরোই।
আসল কথা, সুস্থ অবস্থায় মানুষ মৃত্যুসত্যকে মোটেও স্বীকার করতে চাইত না। মনে আছে, এর আগে এ সংক্রামক ব্যাধি যখন ছিল না, তখন মৃত্যুর কথা, জীবনের অনিত্যতার কথা বলতে গিয়ে সারা জীবন আমি নিন্দিত হয়েছি। যখনই বলেছি, এসব কিছুই থাকবে না, জীবন ক্ষণস্থায়ী বুদ্বুদের মতো মিলিয়ে যাবে, তখনই সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাকে বলেছে, এসব আমার নেতিবাচক চিন্তা। একে নেতিবাচক মনে হয়েছে কেন? কারণ, জীবনকে ভোগ করার উদগ্র বাসনা আছে মানুষের। তাকে অস্বাভাবিক বলছি না। কিন্তু ভোগটা যে একদিন চলে যাবে, এটাও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। সেটাকে স্বাভাবিক বলে মেনে নিতে এত অসুবিধা কেন? সব চলে যাবে, যাচ্ছে। যৌবন চলে যাবে, রূপ ঝরে যাবে, দন্তুর পরিহাসের মতো এসে দেখা দেবে বার্ধক্য। প্রিয়জনেরা এক এক করে সকলে বিদায় নেবেন। কেউ থাকবে না। টাকা যাবে, বিদ্যাবুদ্ধি মূক হয়ে যাবে, প্রতিভা ভোঁতা হয়ে যাবে, ক্ষমতাবানদের ক্ষমতা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে, আমিও থাকব না একদিন। এই অবধারিত সত্য। এতদিন পায়ের উপর পা তুলে এই সত্যকে অস্বীকার করেছে মানুষ। এই তো সব থেকে বড়ো আশ্চর্য। সেই যে বকরূপী ধর্মের প্রশ্নের উত্তরে মহারাজ যুধিষ্ঠির বলেছিলেন, অহনি অহনি ভূতানি গচ্ছন্তি যমমন্দিরম্, শেষানি স্থিরত্বম্ ইচ্ছন্তি কিমাশ্চর্য অতঃপরম্! প্রতিদিন চোখের সামনে প্রাণীরা যমসদনে যাচ্ছে, অথচ অবশিষ্ট জীবিত ব্যক্তিরা মনে করছে, তারা চিরকাল বেঁচে থাকবে, এর থেকে বড়ো আশ্চর্য আর কী আছে! আজ এই মহামারী অনেকের চোখের উপর থেকে অজ্ঞানের ভারী পর্দাটা খসিয়ে দিচ্ছে। বলছে, অন্যদের আক্রান্ত না-হওয়ার ওপরেই তোমার আক্রান্ত না-হওয়া নির্ভর করে। আরও বলছে, মৃত্যুকে তুমি ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। তোমার ধর্ম, তোমার বিজ্ঞান, তোমার কলকব্জা কিছুই শেষ অবধি কাজ করবে না। জীবন তাহলে কী? জীবন হচ্ছে মৃত্যুকে একটা নির্দিষ্ট মরশুম অবধি ঠেকিয়ে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা মাত্র। সে চেষ্টা বেশ কয়েকবার সফল হতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হবেই। ব্যর্থ হওয়াই তার নিয়তি। আমরা একটা হারা গেম খেলছি। মেনে নিলে মন শান্ত হবে। না মানলে মন অশান্ত হয়ে উঠবে। তখন পরের পর আরও ভুল করব। আর এই না-মানার আসল কারণ বাসনা। জীবনতৃষ্ণা।
নেপাল থেকে তিব্বতে যাওয়ার পাহাড়ি পথ ধরে যেতে যেতে অতীশ দীপংকর শ্রীজ্ঞান ও তাঁর শিষ্যবর্গ পথিপার্শ্বে এমন একটি অদ্ভুত গ্রামের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন, যা সম্পূর্ণ জনশূন্য—যেখানে ঘরবাড়ি আছে, মানুষ নেই। এখানে ওখানে জীর্ণ কপাটের আড়ালে পড়ে আছে মানুষের মৃত পঞ্জরাস্থি, কঙ্কাল। অনুমানে তাঁরা বুঝেছিলেন, বৃহত্তর পৃথিবীর থেকে অনেক দূরে এই গ্রাম উজাড় হয়ে গেছে মহামারীতে। মৃত্যুর অবধারিত নির্মম পদচিহ্ন দেখেও দীপংকর সেই দিন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন—এই সদা ভঙ্গুর, অস্থায়ী, ক্ষয়িষ্ণু পৃথিবীর মৃত্যুশয্যার শিয়রে বসে প্রাণান্তকাল অবধি তিনি সেবা করবেন। থাকবে না বলেই তো তার শুশ্রূষার প্রয়োজন। মৃত্যুর আগে প্রয়োজন কল্যাণস্পর্শের। সেই পথের ধারেই এক পরিত্যক্ত মন্দিরে প্রণাম জানিয়েছিলেন অতীশ। বিস্মিত শিষ্য প্রশ্ন করেছিলেন, ‘কাকে আপনি এই মন্দিরে প্রণাম করলেন, আচার্য?’ দীপংকর উত্তর দিয়েছিলেন, ‘মহাশূন্যতাকে!’
এইসব ভাবনার মধ্যে মেরিনা বিচের সেই ঘড়িঘরটার কথা আমার মনে আসে। শূন্য সৈকতে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটা ঘড়ি মাথায় নিয়ে সেই ঘরটা অবসিত যুগের নিয়ত ভঙ্গুর কীর্তিস্তম্ভ হয়ে পড়ে আছে। তার পেছনে একটা মৃতের স্থান। মৃতের স্তূপ। যার ওপর নেমে আসছে শবভুক শকুনের দল। আর তার সামনে অন্তহীন সমুদ্র। যার সদাচঞ্চল ফেনময় ঊর্মিমালা জীবনের সিকতায় আছড়ে পড়ছে নিরবধিকাল।
(ক্রমশ)
লেখাটার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। দু’মাস শয্যাশায়ী থাকার পর মা চলে গেলেন 26 তারিখ। গত এক বছর কেমো পেন্ডিং ছিল করোনার কারণে। এই বয়েসে বিনা চিকিত্সায় আর কতই বা যুঝতেন? এখনও ঘা বড় কাঁচা রয়ে গেছে। নিজেও কভিড আক্রান্ত। তবুও লেখাটার প্রতীক্ষা করছিলাম। মনেই হয়েছিল এই ধরনের চিন্তার প্রতিফলন পাব। মৃত্যুর অমোঘতার কথা বলতে গিয়ে আমাকেও একটু ঠাট্টার শিকার হতে হয়। অনেকেই ভাবে একলা মানুষ তাই নেগেটিভ ভাবে,নেগেটিভ বলে। কিন্তু এটা কেন নেগেটিভ তা আমিও বুঝি নি। এটাই তো সকলের জীবনের একমাত্র চরম এবং কমন সত্য। জন্ম মুহূর্ত থেকেই তো মৃত্যুর দিকে হাঁটা। যদি মহামারী না আসত, তাহলেও তো আমরা কেউ জানি না কে ক’দিনের অতিথি। সকলেই এক রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাসের চরিত্রের মত জীবন কাটাচ্ছি। কেউ জানি না ঠিক পরের মুহূর্তে কী ঘটবে। যাই হোক, কমেন্টেই বিরাট বকবক করে ফেললাম। তারজন্য ক্ষমাপ্রার্থী। ভালো থাকবেন।
ধন্যবাদ। আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন। আপনার মায়ের চলে যাওয়া কষ্টকর।
কিন্তু এই সত্য। কী জন্যে একে লোকে নেগেটিভ চিন্তা বলে? তীব্র বাসনার থেকে।
হ্যাঁ। বাসনার জন্যই এত বিশ্রী সঞ্চয় স্পৃহা, এত প্রতিযোগিতা। বোঝেনা ধনী দরিদ্র ক্ষমতাবান আর সাধারণ সকলকেই এক চুল্লিতে সব ফেলে রেখে যেতে হবে। সঙ্গে যাবে শুধু কর্মফল। আমার মা বিবেকানন্দের প্রচুর লেখা না দেখে বলতে পারত। কর্মযোগে বিশ্বাস করত। রামকৃষ্ণ মিশনের এক মহারাজ বলেছেন মা যে সময়ে গেছেন সেই সময়ে পথ খুব আলোকিত থাকে। আর,মা সব লেনাদেনা এই জন্মেই চুকিয়ে গেছেন। অর কোথাও মা জন্মাবে না। মা আমাকে কাজ করতে বারণ করে গেছেন। লিখিতও রেখে গেছেন যাতে কেউ চাপ না দেয়। মা রাসবিহারী অঞ্চলের ফুটপাথের বাচ্চাদের খাওয়াত। ইচ্ছে আছে করোনা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে মায়ের নামে গরীব বাচ্চাদের খাইয়ে দেব।
পাপড়ি, কী বলব বুঝতে পারছি না
তুমি সুস্থ হয়ে ওঠ।
হিন্দোল বললাম
অনেক ধন্যবাদ গো। কী আর হবে বল, এ এমন এক কঠিন সময় সকলকে লড়তে হচ্ছে। তোমরা সাবধানে থাক। ভালো থাক। এই লেখকের লেখা থেকে মনে জোর পাই।দৈনন্দিন ক্ষুদ্রতা থেকে মাথা তুলে দাঁড়াবার শক্তি পাই।
তীব্র ভাবে সময়োপযোগী।সত্যিকথা বলতে কি, চিরকালীন, চিরন্তন…আমরা ভুলে যাই বা ভুলে থাকতে চাই
হ্যাঁ, এই আত্মবিস্মৃতিই আমাদের ধ্বংসের কারণ।
এই যে নশ্বর জীবনের গন্তব্যস্থল জানিয়ে দিলেন, আমার একটুও ভয় করেনি শুনে। আমি থাকব না , সেই গ্রামটির মতো আমিও ফুরিয়ে যাব জেনেও আতঙ্ক ছুঁতে পারেনি আমাকে। এই শান্ত তৃপ্তি বড়ই সুন্দর। না থাকাটাও সুন্দর মনে হয়। আপনার লেখনি প্রাণে শক্তি আনে।
সুস্ত থাকুন। যত্নে থাকুন।
আপনিও সুস্থ থাকুন। সাবধানে থাকুন। নির্ভয় থাকুন।
আগের সাতটি পর্ব পড়ব অবশ্যই। আমি হয়তো দেখিনি বা সময় দিতে পারিনি বলে পড়া হয়নি।
এই অস্থির সময়ে সেই অমোঘ সত্য আরো একবার এত সহজ করে বলার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
সত্য সব সময়েই সত্যই থাকে। কঠিন সময় সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে চলে যায়।
ধন্যবাদ।
কবে যে এর শেষ জানা নেই, এমন সময় জন্মেছি যে জীবনটা সবে একটু সুসংহত পরিণতির দিকে এগোতে না এগোতেই বেঁচে থাকাটাই দুষ্কর হয়ে উঠলো। সবাই ভালো থাকুন, নতুন আলোকিত দিনের জন্য বুক বাঁধা যাক।
বড় কঠিন সময়। তবে এও চলে যাবে।