
গৌরীশঙ্কর দে-র দুটি কবিতা
কবিতা
১
লেখা না লেখার মাঝখানে দীর্ঘশ্বাস, তুমিই কবিতা।
পাখির ফুরুৎ কবিতা কি তুমি,
পাণ্ডুলিপির ফাঁকফোকরের নীরবতা?
শিশিরমঞ্চের আলো থেকে ঠান্ডা ক্রিমেটোরিয়ামে
কবির কফিন করতালি দেয়,
সে হাততালির প্রতি রন্ধ্রে কবি জীবন্মৃত। আলো জ্বললে বোঝা যায় আসলে কে অডিটোরিয়ামে কে ক্রিমেটোরিয়াম থেকে পড়লো কবিতা।
২
ফুল স্পীডে ফ্যান ঘুরছে
ধড়ফড় করছে শিখাটি,
প্রদীপ জ্বলছে। খুব সহজ
পরের বাক্যটি—তবু
নিভছে না।
পাক খাচ্ছে ঘড়ি, নাড়িভুঁড়ি
মোমের, কোনোটার কাঁটাই নিখোঁজ
দালি গোঁফে তা দিচ্ছেন,
পরের বাক্যটি সোজা
ঘড়ি চলছে।
জীবন জ্বলছে,
সময় চলছে।
‘মরচে পড়া পেরেকের গান’
আজ পড়ছে কি কেউ?
পরের বাক্যটি তবু—লেখা হচ্ছে।
এত বই থাকে কোনো ঘরে?
এত মেধা ধরে কারো ধড়ে,
কাঁথা স্টীচ বোনে এত শাড়ি!
পরের বাক্যটি অত্যন্ত সহজ
কবিতাই নারী।
গান
যে গান লিখিনি আজও সেই গান বাজে।
শরতে শিউলি ফুল সাজে
সাজি হাতে দেখি না তোমাকে আজ
প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েছ, সালোয়ার কামিজ
পরনে, চরণে স্নিকার…
আনন্দের পায়ে খোসপাঁচড়ার জ্বালা ও যন্ত্রণা।
নিম ও হলুদ বেঁটে চলেছেন মা।
অমৃত কথা শুনতে শুনতে জানো আমিও চলেছি,
মাথার ভিতর আনন্দ সুস্থ হ’য়ে উঠছে
এ-সবই বিশ্বাসের ব্যাপার।
সঙ্গীতও এরকমই কোনো আধিদৈবিকতা।
প্রপঞ্চিত প্রভাতের দীর্ঘ নীরবতা—
প্রাতর্ভ্রমণ সেরে কিছু শিউলি কিছু লাল জবা
হাতে ঘরে এলেন রমণী,
আজকালকার।
ব্যাপার এসব—মহা মাতৃকার রক্ত বলি শেষে,
ঘরে বসে মস্তিষ্কের ট্রেড মিলে হেঁটে এসে
পারিপার্শ্বিক অবস্থা বুঝে শঙ্খে ফুঁ দিলাম।
তক্ষুনি সাগর উঠলো ডেকে, ‘আয় আয়…’
বিশ্বাসে মিলায় যদি
তর্কের কী আর দরকার?