
গল্প
রাজা শশাঙ্ক’র নাতি
পার্থজিৎ চন্দ
১
রাজা শশাঙ্ক’র নাতি একজন মাঝারি উচ্চতার দৃষ্টিহীন মানুষ, ছানি কাটানোর পর মোটা কালো ভারী কাচের চশমার মতো একটা চশমা পরে তিনি একটি টালির-চালের ঘরের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরনে ফ্যাঁৎফ্যাঁৎ করা একটা পায়জামা আর ফতুয়া।
আধঘণ্টা আগে রাজা শশাঙ্ক’র নাতির সঙ্গে কথা হয়েছে, তিনি মুখে মুখে পথ নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, প্রথমে কার্পেট-মোড় থেকে ডানদিকে ঢুকে যাওয়া রাস্তা ধরে কিছুটা এসে আবার ডানদিকে…তারপর নাক বরাবর সোজা। টোটোওলাকে বলে দিন, হরিহরপাড়ায় যাব…আপনাকে যা বলে দিলাম কোনও সমস্যা হবার কথা নয়। একজন অন্ধ’ও এই রাস্তা ধরে চলে আসতে পারবে।
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে তিন-সেকেন্ড চুপ করে ছিলেন রাজা শশাঙ্ক’র নাতি, তারপর বলেছিলেন, আরে অন্য অন্ধ’র কথা ছাড়ূন, আমিই তো আসি এই রাস্তা ধরে।
স্টেশন চত্বর পেরিয়ে একটা সিগারেট শেষ করে টোটোওয়ালাকে সেই মতো নির্দেশ দিতে হয়েছিল। সত্তর টাকায় কন্ট্র্যাক্ট, সঙ্গে ‘পিয়া তু আব তো আজা’ যে সারা রাস্তা বেজে চলবে টোটোর মিউজিক সিস্টেমে, সেটুকুর গ্যারান্টি।
বড়-রাস্তা ধরে কার্পেট-মোড়ের মৃদু জ্যাম পেরিয়ে আবার ডানদিকে বাঁক নেবার পর সাদামাটা গ্রামের রাস্তা। ঢালাই করা রাস্তা, টোটো ছুটছে বেশ আরাম করে। পঞ্চায়েতের লাগানো গাছ, গাছে বোর্ড, ‘আপনি এক স্বচ্ছ ও আদর্শ গ্রামে প্রবেশ করছেন…ফাঁকা জায়গায় মলত্যাগ সামাজিক অপরাধ। ধরা পড়লে ৫০০ টাকা জরিমানা’
কেউ দুষ্টুমি করে পাঁচের পর দু’টো শূন্যের উপর কাদা লেপে দিয়েছে।
গাছের ছায়া মাড়িয়ে চলেছিল টোটো।
মাঝে একবার ফোন এসেছিল লক্ষণ মাইতির,
-দাদা, নেমেছেন? টোটো পেয়েছেন?
-হুঁ
-ওঁনার নাম্বার তো আমি আপনাকে সেন্ড করেই দিয়েছিলাম। কথা হয়েছে ওঁনার সঙ্গে? আপনাকে খুব কষ্ট দিলাম, কিছু মনে করবেন না প্লিজ। ওঁর সঙ্গে গল্প করে যা জানার জেনে আমাদের এখানে চলে আসবেন কিন্তু, গরীবের আয়োজন…দু’মুঠো খাবেন আমাদের সঙ্গে। তারপর ঠিক দুপুর তিনটে থেকে অনুষ্ঠান শুরু করে দেব, আপনাদের থেকে দুটো কথা শুনবো বলেই তো এই ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো…
রাস্তায় পাখি ডেকেছিল, কুর্চিফুলের গাছের ছায়ায় ঢুকে পড়েছিল টোটো। আকাশি কুর্চি মাড়িয়ে টোটো চলেছিল রাজা শশাঙ্ক’র নাতির বাড়ি।
লক্ষণ মাইতির দেওয়া ফোন নম্বরে আগেও দু’একবার কথা হয়েছে ভদ্রলোকের সঙ্গে। রাজা শশাঙ্ক’র নাতি’র বিষয়টি আমন্ত্রণপত্র থেকেই জানা গিয়েছিল; লেখা ছিল ‘অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ – কবি ও রাজা শশাঙ্ক’র নাতির সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতা ও একক কবিতাপাঠ।’
ফোনে কথা বলে রাজা শশাঙ্ক’র নাতি’কে বেশ রসিক বলেই মনে হয়েছিল। তিনি বিয়ে করেননি, বিবাহবিচ্ছিন্না এক বোন আর তার ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকে্ন। গৌড়ের রাজার বংশধরের এখন সাকুল্যে চারকাঠা বাস্তু, দু-বিঘে ধানজমি। ধানজমিতে চাষ হয় না, কারণ জমিটি নিয়ে গ্রামের এক এক্স পঞ্চায়েত-প্রধানের সঙ্গে মামলা চলছে পনেরো বছর।
রাজা শশাঙ্ক’র নাতনি মাদুরের এক পাশে একটা প্লাস্টিকের বোতলে জল আর কাচের প্লেটে দুটো রসগোল্লা রেখে গিয়েছিল। রাজকন্যা ভানুমতীর মতো কোনও রহস্য নেই এই মহিলার, শীর্ণ শরীর। অপুষ্টির ছাপ স্পষ্ট, ছাপা-শাড়ি পরা…নুন আনতে পান্তা ফুরানো অবস্থা দেখেই বোঝা যায়।
রসগোল্লা দুটো শক্ত ইঁটের মতো, আঙুল দিয়ে চিপে এক ফাঁকে দেখে নেওয়া হয়ে গেছে। তাই বোতল থেকে জল খেতে খেতেই কথা শুরু হয়েছিল,
-আপনারা এখানে কতদিন?
– আমরা বেশ কয়েক পুরুষ এখানে, প্রথমে যিনি আসেন তিনি মুর্শিদাবাদ থেকে তাড়া খেয়ে নদীপথে পালিয়ে গঙ্গার ধারে এসে নামেন। সেখানেই বসতি, ছেলেপুলেনাতিনাতনি। যথারীতি শরিকি ঝামেলা শুরু। আমার ঠাকুরদা অল্প বয়সে মারা যান, একটা চাল-কলে কাজ করতেন। সেই চাল-কলের মালিক’ই এই জমিটা আমার ঠাকুমাকে দেয়, এর আগে আমরা এখান থেকেও পাঁচ কিলোমিটার দূরে বাস করতাম…গঙ্গার ধারে। দেখেশুনে মনে হয় পুর্বপুরুষ নদীপথে পালিয়ে এসে নদীর ধারেই গেঁড়ে বসেছিলেন…
-আচ্ছা, আপনি রাজা শশাঙ্ক’র কত’তম পুরুষ?
রাজা শশাঙ্ক’র নাতি গলা খাদে নামিয়ে আনেন একটু, বলে্ন – সত্যি কথা বলতে কী আমাদের প্রামাণ্য বংশতালিকা হারিয়ে গেছে। আমি আন্দাজে একটা সংখ্যা বলতাম, কিন্তু বছর তিনেক আগে এক প্রফেসর, কলকাতা থেকে এসেছিলেন…অনেক হিসেব কষে জনসমক্ষে আমাকে হেয় করেছিলেন, বলেছিলেন এত-তম পুরুষ হতেই পারে না…সেই থেকে আমি ওই রিস্ক আর নিই না। তবে আমরা যে রাজা শশাঙ্ক’র বংশধর সে নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই…
একটা কুকুর সামনের উঠোন থেকে উঠে এসে প্রথমে মাদুরের এক পাশে তারপর শশাঙ্ক’র নাতির গা-ঘেঁষে বসেছিল। শশাঙ্ক’র নাতি তার গায়ে হাত বোলাচ্ছিলেন আর সামনের আমগাছ থেকে এই গ্রীষ্মে ডেকে উঠছিল একটা কোকিল।
কাজের কথা তেমন এগোচ্ছে না, কথা ঘুরফিরে এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়ে পড়ছে। এবার কাজের কথা পাড়া দরকার,
-আপনার শোনা কোনও কাহিনি নেই শশাঙ্ক বা পূর্বপুরুষ সম্পর্কে? মানে যে কাহিনি বংশপরম্পরায় শুনে আসছে ফ্যামিলির লোকজন…
-ঠাকুমার কাছে থেকে কিছু গল্প শুনেছিলাম, আমি জন্ম-অন্ধ তাই ঠাকুমার বেশ কোল-ঘেঁষা ছিলাম। ঠাকুমা বলত, পলাশীর সময় পর্যন্ত নাকি আমাদের এমন হাঁড়ির হাল ছিল না। তখনও শশাঙ্ক’র বংশধর হিসাবে বেশ সম্মান পাওয়া যেত, শুনেছি গ্রামের স্কুলের মাস্টারমশাই ইতিহাস পড়াতে পড়াতে মাৎসন্যায়ের কথা বলবার সময় আমার বাবা’কে উঠে দাঁড়াতে বলতেন। সবাই হাঁ-করে তাকিয়ে থাকত বাবার দিকে, ওই চ্যাপ্টার পড়া হবার সময় বাবার নাকি বেশ খাতির বাড়ত ক্লাসে। বাবা ক্লাস নাইন পর্যন্ত পড়ে স্কুল ছেড়ে দিয়েছিল আর্থিক কারণে। কিন্তু যে কথা হচ্ছিল, ওই পলাশীর যুদ্ধের পর আমাদের সব যায়…
এখান থেকে কাহিনির একটা আবছা রাস্তা দেখা যাচ্ছে, রাস্তা বললে ঠিক বোঝানো যাবে না হয়তো। এটিকে পথ বলা ভালো, আতাগাছের নীচ দিয়ে চলে যাওয়া একটা পথ। আতাফুলের গন্ধ ধক করে নাকে এসে লেগেছিল, আতা এক আশ্চর্য বাঙালি-ফুল। কথাটা আরও একটু এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার,
-পলাশীর সময়ে আপনাদের পূর্বপুরুষ কার দিকে ছিল? ক্লাইভ, না সিরাজ?
রাজা শশাঙ্ক’র নাতি ফতুয়ার পকেট থেকে বিড়ির বান্ডিল বের করে বলল, নিন, একটা ব্রাউন সুতোর বিড়ি খান, খুব মিষ্টি আর হালকা।
দু’টো মানুষের বিড়ির ধোঁয়ার মধ্য দিয়ে আবার ফিরে আসছে কাহিনি ও ইতিহাস। মাঝখানে একবার রাজা শশাঙ্ক’র নাতির ভাগ্নি কাচের সস্তা প্লেট’টা নিয়ে চলে গিয়েছিল। বাঁ-পাশের একচিলতে ঘুপচি ঘর থেকে স্পষ্ট শোনা গিয়েছিল, ‘শালা ঢেমনি, দু’টো না-গিলে ভাইয়ের জন্য একটা রাখা যেত না! শুধু গেলার তাল…’
কথাটাকে হাওয়ায় হারিয়ে যাবার সময় দিয়েছিলেন তিনি। এর আগে ফোনে কথা হবার সময় একবার ‘ডিসকোর্স’ শব্দটি শোনা গিয়েছিল রাজা শশাঙ্ক’র নাতির গলায়। অর্থাৎ তিনি ভাগ্যের দোষে গরিব হলেও গোদা-পাবলিক যে নন সেটা নিশ্চিত।
গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবার আগে বিশিষ্টজনেরা একটা ছোট্ট পজ নেন, যেন অতি-বিস্ফোরক ও অজানা কিছু বলবেন। গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবার সময় এই পদ্ধতিটি রপ্ত করেছেন তিনিও। কিছুটা সময় নিয়ে দু’টো পা ছড়িয়ে বসলেন। একবার নাকের পাটা চুলকে বলতে শুরু করলেন।
-আসলে কী জানেন, আমার যতদূর শোনা ও জানা ওই সময়ে সিরাজের চারপাশের মানুষের মধ্যে বেশিরভাগই সিরাজের বিপক্ষে ছিল। না হলে ক্লাইভের পক্ষে জেতা সম্ভব ছিল না।
বেলা এগারোটার কাছাকাছি চলে গেছে ঘড়ির কাঁটা, গরম বাড়ছে। বাঁশ থেকে লোহার হুক দিয়ে ঝোলানো একটা সিলিং-ফ্যান ঘটাং ঘটাং করে ঘুরে চলেছে। হাওয়া মাথার ঠিক তিনফুট উপর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে, উবে যাচ্ছে।
-কিন্তু ইতিহাসে যে বিশ্বাসঘাতকতার কথা বলা হয় বারবার! মানে আপনি নিশ্চিত অনেক বেশি জানবেন, তবুও জাস্ট বললাম আর কি…
কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল কালো চশমাপরা রাজা শশাঙ্ক’র নাতি,
-আপনার কী মনে হয় ব্যাপারটা অতই সহজ! ক্লাইভ এলো আর কচুকাটা করে রেখে গেল! তার আগে বর্গীরা শুষে নিয়েছে বাংলার রস, এমনিতেই বেশ খারাপ অবস্থা…ক্লাইভ গোদের ওপর বিষ-ফোঁড়া ছিল। এই ধরুন, আমি একজন অন্ধ-মানুষ, আমি গ্রামের পঞ্চায়েত’ও নই…কেউকেটা নই। কিন্তু এই আমাকেও আপনি আমার পাড়ায় ঢুকে মেরে চলে যেতে পারবেন? পারবেন না; পারবেন তখনই যদি এলাকার মানুষ আপনাকে সাহায্য করে, দেখেও না-দেখার ভান করে।
বোঝা গিয়েছিল এই যুক্তি শশাঙ্ক’র নাতি বহুদিন আগে থেকেই শানিয়ে রেখেছেন, টেবিলে প্রশ্নটি পড়া মাত্র উত্তর এসে গিয়েছিল। এক্ষেত্রে অবশ্য প্রশ্নটি পড়েছিল মাদুরের উপর। মাদুরের চারদিক কাপড়ের পাড় দিয়ে সেলাই করা। মাদুরের কাঠি বেরিয়ে পড়েছে কোথাও কোথাও।
এই যুক্তির বিরুদ্ধে যুক্তি দিয়ে লাভ নেই। এর থেকে বরং প্রসঙ্গ বদল করে অন্য কিছু কথা বলে নেওয়া ভালো
-কিন্তু পলাশীর সময়ে আপনার পূর্বপুরুষদের অবস্থা কেমন ছিল জানা হল না তো…
আবার একটু থমকালেন শশাঙ্ক’র নাতি। তারপর বললেন,
-আমরা ছিলাম মাধব রাই, মানে জগৎ শেঠের খাস লোক। জগৎ শেঠ বাঙালি ছিল না, সুদে টাকা খাটাতো। সেই সময়েও লাখ টাকার কমে সুদে খাটাতো না সে। আমাদের হাত দিয়ে ছোটখাটো লেনদেন, যেগুলো জগৎ শেঠ নিজে করত না, সেগুলো হত। শেঠ’কে সুদ-সমেত টাকা ফিরিয়ে দিয়েও বেশ ভালই থাকত সে সময়ে। কিন্তু পলাশীর যুদ্ধের পর সব উল্টেপাল্টে যায়। শেঠ এক সময়ে তাড়িয়ে দেয় আমাদের পূর্বপুরুষ’কে। শুধু তাড়িয়ে দিলে রক্ষা ছিল, শোনা কথা চুরির অপবাদ দিয়ে রীতিমতো লোকলস্কর লাগিয়ে ছিল তাকে ধরবার জন্য। সে সময়েই আমরা পালিয়ে আসি মুর্শিদাবাদ থেকে।
শশাঙ্ক’র নাতি কলেজ পর্যন্ত গিয়েছিলেন, তারপর ছেড়ে দেন। মুখে মুখে কবিতা (ছড়া নয়) রচনা করবার একটা স্বাভাবিক ক্ষমতা রয়েছে তার। তার পাঁচটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে এখনও পর্যন্ত। পাড়ার দু’একজন ছেলেমেয়ে এসে পত্র-পত্রিকা পড়ে শুনিয়ে যায়। বংশ-পরিচয়ের সুবাদে কলকাতা দুর্গাপুর ও গৌড়বঙ্গের বেশ কিছু অধ্যাপক ও মানবাধিকার কর্মীর সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগাযোগ আছে তার। এমনকি এলাকার কোনও ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে প্রফেসরদের কাছে শশাঙ্ক’র নাতির নাম বলতে তারা চিনতেও পেরেছেন। ফলে শশাঙ্ক’র নাতির যে একটু নামডাক হয়েছে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই এখন।
রাজা শশাঙ্ক’র সঙ্গে পলাশীর এক দূর-সংযোগ গড়ে উঠছে, এ এক আশ্চর্য খনন। এই জায়গাটি থেকে আলাদা আরেকটি ডিসকোর্স গড়ে উঠতে পারে, শশাঙ্ক’র নাতির এমনই মত। এই মতের সঙ্গেও দ্বিমত পোষণ করার এখনও পর্যন্ত কোনও অবকাশ নেই।
উদ্যোক্তা লক্ষণ মাইতি এর মধ্যে বার-দুয়েক ফোন করেছেন, তাড়া দিচ্ছেন প্রাইমারি স্কুলে চলে আসার জন্য। সেখানেই খাওয়াদাওয়ার পর্ব, সারা সকাল জুড়ে সারাবাংলা কবি-সম্মেলন হয়েছে। একশো টাকা দিয়ে নাম রেজিস্ট্রেশনের পর কবিতা পড়ে একটা মানপত্র নিয়ে বাড়ি ফেরা। বিকেলে একটু গম্ভীর অনুষ্ঠান, লক্ষণ মাইতি আমন্ত্রণের সময়েই বলে দিয়েছিলেন যে তাকে আলাদা স্লট দেওয়া হবে। শশাঙ্ক’র নাতিরও নিশ্চয় ওখানে খাবার নিমন্ত্রণ আছে,
-চলুন, এবার স্কুলের দিকে যাওয়া যাক। আমি নতুন লোক, সামনে রাস্তা থেকে নিশ্চয় টোটো পাওয়া যাবে…
-দাদা, আমি এখন যাবো না, লক্ষণবাবু আমাকে বারবার বলেছেন কিন্তু আমি অনুষ্ঠানের আগে, আমার স্লটের আগে কোথাও যাই না…
-কেন? ওখানে গেলে তো একসঙ্গে বেশ আড্ডা দিতে দিতে গল্প করতে করতে খিচুড়ি খাওয়া যেত…
-খিচুড়ি খাওয়ায় আমার কোনও অসুবিধা নেই, কিন্তু…
ইতস্তত করছিলেন শশাঙ্ক’র নাতি। তারপর বলেই ফেললেন, আসলে কী জানেন দাদা, অনেক ঠেকে শিখেছি, উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বেশি ঘষাঘষি করলেই ক্ষতি। বলা যায় না, হাজার টাকায় কন্ট্র্যাক্ট, খিচুড়ি খাইয়ে হয়তো দু’শো টাকা কম দিল। খিচুড়ি খেয়েছি বলে তখন আর আমি কিছু বলতেও পারব না, এদিকে ওই দুশো টাকা আমার কাছে অনেক। এমন হয়েছে বার কয়েক, শেষে আমার মূর্খ বোন এই রাস্তাটা বাতলে দিল। এখন আর কোনও সমস্যা নেই।
বোঝা গেল অনুষ্ঠানে গেলে শশাঙ্ক’র নাতি টাকা নেন। উদ্যোক্তা লক্ষণ মাইতি যাতায়াতের টাকা দেন কলকাতার লোকজনকে। আমন্ত্রণ করার সময়েই বলে দিয়েছেন সে কথা। অতএব পাওয়া যাবে শ’দুয়েক। কিন্তু শশাঙ্ক’র নাতি বেশ অনেকটা বেশি পাবেন। তবে এটা শুনে রাগ হবার কথা নয়, কারণ তার সত্যি টাকা দরকার। রাজা শশাঙ্ক’র নাতি কোনও চাকরি নেই, বাঁধাধরা ইনকাম নেই; এই সুবিধাটুকু সে ডিজার্ভ করে।
২
দুপুরের খাওয়াদাওয়ার পর তিনটের বদলে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল বিকেল চারটেয়। সকাল থেকে ছিল সারা বাংলা কবি-সম্মেলন। একশো টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে একটি করে কবিতা পড়ে দুপুরে খিচুড়ি খেয়ে দূরের কবিরা চলে গেছেন, স্থানীয় কবি ও সংস্কৃতিমনস্ক মানুষজন কিছু রয়েছেন।
বাংলা সাহিত্যের বর্তমান অবস্থা নিয়ে একটি ছোট্ট সেশন শেষ হ’ল। পাহাড়িপথে নিছক হাঁটাও অনেকের কাছে এখন যেমন ট্রেকিং ঠিক তেমন এই সেশনের ধারণাটি গড়ে উঠেছে অকাদেমি আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনারগুলিকে অনুসরণ করে। শহর থেকে দূরত্ব মেপে এলাকার সেন্টিমেন্ট অনুযায়ী বক্তৃতা করতে হয়। দূরত্ব অনুযায়ী সাবঅল্টার্ন বিষয়সমূহ গুঁজে দিতে হয়, এটাই দস্তুর। আট-দশটা সভাসমিতি অ্যটেন্ড করলে প্যাটার্ন জানা হয়ে যায়, তারপর যা পড়ে থাকে তা নিছক অভ্যাস।
বক্তৃতা করতে করতেই দেখা গিয়েছিল রিক্সা থেকে রাজা শশাঙ্ক’র নাতি নামছেন, হাতে লাঠি কাঁধে একটি সাইড-ব্যাগ। লক্ষণ মাইতি ছুটে গিয়ে তাঁকে ঘরের ভিতর স্টেজের সামনের চেয়ারে বসিয়ে দিয়েছিলেন।
বহুক্ষণ আগেই বোঝা গেছে এটি একটি ব্রেক-অ্যওয়ে গ্রুপ, একটি সংস্থা থেকে কয়েকজন বেরিয়ে গিয়ে আরেকটি সংস্থা তৈরি করেছে। অর্থাৎ এটি সেই অর্থে একটি ‘দেখিয়ে দেবার’ অনুষ্ঠান।
রাজা শশাঙ্ক’র নাতি স্টেজে উঠেছেন, তাঁকে উত্তরীয় দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়েছে। লক্ষণ মাইতি নিজেই মানপত্র পাঠ করলেন। পুষ্পস্তবক দিয়ে বরণ করল লক্ষণের ছোটো মেয়ে।
এবার একটি আলাপচারিতার পর্ব। সহজ প্রশ্ন কঠিন করে বলা ও সহজ উত্তর কঠিন করে দেওয়া – দুটির মধ্যেই আশ্চর্য শিল্প আছে। সে শিল্প রাজা শশাঙ্ক’র নাতি ও লক্ষণের সংস্থার লোকজন আয়ত্ব করেছেন বেশ ভালোভাবেই। কথাবার্তা শুরু হবার আগে রাজা শশাঙ্ক’র নাতি স্মৃতি থেকে দুটি কবিতা পড়লেন ও এক কিশোর তাঁর দুটি কবিতা আবৃত্তি করল। এলাকার শিক্ষক কথোপকথন চালিয়ে নিয়ে যাবার দায়িত্বে,
-আপনার কাছে শশাঙ্ক’র ঐতিহ্য বহন করা অ্যডভান্টেজ? না, অভিশাপ?
-আমার লেখার থেকেও বেশি আলোচনা হয় আমার বংশ-পরিচয় নিয়ে, এটা আশির্বাদ হতে পারে না…আবার এটাও স্বীকার করি, আমি বাংলার এক প্রায় লুপ্ত হয়ে আসা পর্বের প্রতিনিধিত্ব করছি।
-আপনি মনেপ্রাণে নিজেকে সামাজিক অবস্থান থেকে কোন গোত্রে রাখবেন – আপনি কি ডমিন্যান্ট ফোর্স? না, ডমিনেটেড?
এ জাতীয় প্রশ্নের বেশ চোখা চোখা উত্তর দিচ্ছিলেন রাজা শশাঙ্ক’র নাতি, প্রশ্ন ও উত্তরের ধরন শুনেই বোঝা যায় আগে থেকে চিত্রনাট্য তৈরি করে রাখা হয়েছে। লোকজন অনেকেই হাঁ হয়ে শুনে চলেছে কথাবার্তা।
এই পর্বের অনুষ্ঠান প্রায় পুরোটাই রাজা শশাঙ্ক’র নাতিকে ঘিরে। আলাপচারিতার পর লক্ষণ মাইতি অনুনয়ের সুরে তাকে কিছু বলতে বললেন। অ্যপিয়ারেন্স ফি হিসাবে যে টাকা রাজা শশাঙ্ক’র নাতি পেয়েছেন তার মধ্যে এটিও ধরা আছে।
ভাষণ শুরু হয়েছিল শশাঙ্ক’র নাতির; কর্ণসুবর্ণে তার পূর্বপুরুষের রাজধানী স্থাপণ থেকে শুরু করে তিনি এগিয়ে যাচ্ছিলেন মঞ্জুশ্রীপ্রকল্প নামক গ্রন্থের পথ ধরে। বেশ গুছিয়ে কথা বলছিলেন তিনি। শুধু রাজধানীস্থাপণ নয়, শশাঙ্ক’র মুদ্রা থেকে সাম্রাজ্যবিস্তার পদ্ধতি বেশ বিস্তৃত করে বলছিলেন। শশাঙ্ক’র থেকে ছোট ছোট লাফ দিয়ে তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন পলাশীর আমবাগানে। শশাঙ্ক’র মৃত্যুর পর মাৎসন্যায়’কে তুলনা করছিলেন আউরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মুঘল সাম্রাজ্যের অবস্থার সঙ্গে।
একটু একটু করে ভারতে ঢুকে পড়ছে বেনিয়াতন্ত্রের লোকজন, এক সময়ে তারাই ক্ষমতা দখল করবে। ‘প্লান্ডারিং’ শব্দটা বেশ কয়েকবার উচ্চারণ করেছিলেন রাজা শশাঙ্ক’র নাতি, কিছু কিছু তথ্যও পেশ করছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লুঠের পরিমান বোঝাতে। গ্রীষ্মের বিকেল গড়িয়ে চলেছে সন্ধের দিকে, ঘরের ভেতর একটা হলুদ ল্যাম্প জ্বলে উঠেছে। সেই আলোর নীচে নাটকীয় ভঙ্গিতে জলসা-হুজুরের মতো গলা ওঠানামা করছে রাজা শশাঙ্ক’র নাতির। শোনা যাচ্ছিল তার স্বর, ‘আমি অনেক পুরানো বইপত্র ঘেঁটে দেখেছি, রাজা শশাঙ্ক একজন প্রজাবৎসল রাজা ছিলেন…শুধু তাই নয়, এক সময়ে আমাদের এখানের বামপন্থীরা যা ভাববেন তা আসলে অনেক আগেই রাজা শশাঙ্ক ভেবেছিলেন। তিনি ছিলেন ভূমি-সংস্কারের প্রথম উদ্যোক্তা…’
রাজা শশাঙ্ক’র নাতি এক মুহূর্ত থামলেন, মুখ নিচু করে পাশে বসে থাকা লক্ষণ মাইতিকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আর টানবো?’
লক্ষণ মাইতি উত্তর দিলেন, স্পষ্ট শোনা গেল, ‘আরেকটু টেনে দিন…আর মিনিট দশেক।’
সারারাত্রি-ব্যাপি অর্কেস্ট্রার ফাংশনে চুক্তি হয়, ভোর সাড়ে-চারটে পর্যন্ত পাবলিক ধরে রাখতেই হবে, তবেই ফুল পেমেন্ট। একবার সে কথা মনে পড়ে গেলে অবাক হবার কিছু নেই।
রাজা শশাঙ্ক’র নাতি পাঞ্জাবির পকেট থেকে রুমাল বের করে একবার মুখ মুছে নিয়ে আবার শুরু করেছিলেন, ‘আজ বাঙা্লি হিসাবে আমাদের গর্ব হওয়া উচিত। রাজা শশাঙ্ক ছিলেন জাতীয় বীর, কিন্তু তিনি পরবর্তীকালে সে সম্মান পাননি…তিনি শুধু রাজা ছিলেন না, তিনি ছিলেন জনগণের ইচ্ছার স্বতস্ফূর্ত প্রকাশ।…আমাদের দুর্ভাগ্য যে তিনি শুধুমাত্র বই’তে রয়ে গেলেন, আমরা তাঁকে বহন করলাম বাহন করলাম না…’
রবীন্দ্রনাথের একটি বিখ্যাত পর্যবেক্ষণকে গুঁজে দিয়েছিলেন রাজা শশাঙ্ক’র নাতি। এসবে কোনও দোষ নেই, বরং লাভ আছে। মানুষ শোনা কথাই বারবার শুনতে চায়, কারণ সেক্ষেত্রে তার শোনার পরিশ্রম কম, ‘আমার বক্তব্য আমি আর দীর্ঘায়িত করব না, লক্ষণবাবুর মতো মানুষ আছেন বলে এখনও এলাকার সংস্কৃতি টিকে আছে। আপনারা আরও বেশি বেশি করে ওনার পাশে দাঁড়ান। আর একটা কথা, শশাঙ্ক’কে নিয়ে তেমন কিছু কাজ’ই হয়নি…আজও মাটি খুঁড়লে সেই সময়ের মুদ্রা পাওয়া যায় কোথাও কোথাও। লাখ লাখ টাকা দামে কালোবাজারে বিক্রি হয়ে যায় সেসব…এবার রাজা শশাঙ্ক রিসার্চ সেন্টার হওয়া জরুরি…আমাদের সংস্কৃতির উত্তরাধিকার আমাদেরই বহন করতে হবে…’
বেশ ভালো হাততালির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল তাঁর ভাষণ।
লক্ষণবাবু একটা টোটো ঠিক করে দিয়েছেন, শিয়ালদায় ফেরার শেষ ট্রেন রাত আট’টায়। রাজা শশাঙ্ক’র নাতি স্টেশন পর্যন্ত যাবেন, ফিরতি পথে টোটো তাকে তার টালির চালের ঘরের কাছে নামিয়ে দিয়ে যাবে।
আলো-আঁধারি রাস্তা, একটা দুটো করে বাইক হুসহাস করে চলে যাচ্ছে। টুকটাক কথা হচ্ছিল রাজা শশাঙ্ক’র নাতি’র সঙ্গে,
-আপনি আজ চমৎকার বলেছেন, সব রেফারেন্স আমার জানার কথা নয়…পড়িওনি কোথাও’
-আপনি আমার এলাকার বা ফিল্ডের লোক নন, মানে আপনাকে বললে কোনও সমস্যা নেই। আমি আসলে ‘শশাঙ্ক’ বেচে খাই। মাসে তিন-চারটে অনুষ্ঠান থাকে, অনুষ্ঠান পিছু এখন হাজার টাকা। বোন রাখি তৈরি করে…সব মিলিয়ে কোনও রকমে চলে যায়। তাই এসব আমাকে বলতে হয়, আরও কী জানেন…’
চুপ করে যায় শশাঙ্ক’র নাতি।
-আপনি বলতে পারেন, কোনও অসুবিধা নেই।
-আসলে কী জানেন, আমিও আগে রাজা শশাঙ্ক’কে বেশি গ্লোরিফাই করতাম না, বরং কিছুটা সমালোচনাই করতাম। তার ব্যর্থতার দিকে আঙুল তুলতাম, তো ধীরে ধীরে হ’ল কী, আমার শো কমে যেতে লাগল…মানুষ আসলে রাজা শশাঙ্ক’র বীরত্ব সম্পর্কে শুনতে চায়। এখন উদ্যোক্তরা বায়না করার সময়েই আমার কাছে আবদার করে, শশাঙ্ক সম্পর্কে ভালো ভালো কথা বলতে হবে। আর সেদিন একজন এসেছিলেন বাড়িতে, তিনিই প্রথম শশাঙ্ক রিসার্চ সেন্টারের বিষয়টি আমার কাছে রাখলেন। সাংস্কৃতির নবজাগরণ খুব দরকার, না হলে আমরা হারিয়ে যাব…’
রাজা শশাঙ্ক’র নাতি’কে এই মুহূর্তে স্বপ্নের রাজপুরুষ মনে হচ্ছে, বাংলার প্রকৃত এক সম্রাটের বংশধর,
-আচ্ছা, শশাঙ্ক সম্পর্কে আপনার মতামত কী?
-আপনি যতটুকু জানেন আমিও ততটুকুই জানি, এই গ্রামে বসে বেশি বই পাওয়া সম্ভব নয়। আর তাছাড়া সারাদিন ধরে লোক রেখে রিসার্চ করার মতো ক্ষমতাও আমার নেই। ভরসা এখন একটাই, ওরা বলছে রাজা শশাঙ্ক রিসার্চ সেন্টার করবে; টাইম লাগবে, কিন্তু করবে। তখন যদি কিছু একটা হিল্লে হয়…
আকাশে হালকা হলুদে ডোবানো থালার মতো চাঁদ উঠেছে। এখানে ধানখেতের ধারে ঢালাই রাস্তার উপর টোটো দাঁড় করিয়ে সিগারেট খেয়ে নেওয়া যায়।
রাস্তার ধারে পুকুর, বেশ বড় একটা মাছ ঘাই দিয়ে উঠল, দু’জন চশমাপরা মানুষ সিগারেট খাচ্ছে,
-এতক্ষণ কাটালাম কিন্তু মাৎসন্যায় সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা হল না, ওই ব্যাপারে আমার কিন্তু খুব আগ্রহ।
সিগারেট’টা ফেলে রাবারের চটি দিয়ে পিষে আগুন নিভিয়ে দিল রাজা শশাঙ্ক’র নাতি,
-আমিও বিশেষ কিছু জানি না, শুধু জানি রাজা শশাঙ্ক’র মৃত্যুর পর প্রায় একশো বছর ছারখার অবস্থায় কাটিয়ে ছিল বাংলা…জোর যার মুলুক তার অবস্থা…ওই বড়মাছ ছোট মাছকে যেমন গিলে খায়…
-আরেকটু ডিটেলস কিছু জোগাড় করা যায় না!
-হবে হয়তো, ওই তো ওরা শশাঙ্ক রিসার্চ সেন্টার তৈরি করবে বলে আমাকে কথা দিয়েছে…ওরা নিশ্চয় মাৎসন্যায় নিয়ে কাজ করবে। আর এক হিসাবে দেখতে গেলে মাৎসন্যায়’ই তো একমাত্র সত্য; কারণ এই যে সমিতি পঞ্চায়েতকে খাচ্ছে, জেলাপরিষদ সমিতিকে খাচ্ছে…এমনকি টোটো রিক্সা’কে খাচ্ছে এই সবই তো মাৎসন্যায়, তাই না! মাৎসন্যায়’কে একটা সময়ের পর তো বেশ যায়েজ বলেই মনে হয়…
পুকুরে একটা বড় মাছ আবার ঘাই দিয়ে উঠেছিল, গ্রামের ঢালাই রাস্তা দিয়ে টুকটুক করে টোটো চলেছিল স্টেশনের দিকে।
পার্থজিৎ চন্দের ‘শাঙ্কের নাতি’ গল্পটি বেশ পরীক্ষামূলক গল্প। ম্যাজিক রিয়েলিজমের সাথে মিশে আছে বাংলার লুপ্তপ্রায় লোকঐতিহ্য,গ্রামকথার নিপুণ বুনন ও একাল-সেকালের মাৎসন্যায়ের সুচারু ফারাক।যা পাঠকের পাঠককে বেশ চমকিত করে।
পার্থজিৎ চন্দের ‘রাজা শশাঙ্ক’র নাতি’ গল্পটি বেশ অন্যরকম পরীক্ষামূলক গল্প।ভারতের মিথ,ইতিহাস এবং লোকঐতিহ্যের জারণে,গ্রামবাংলার ক্রমশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে থাকা সভ্যতাসংস্কৃতি ম্যাজিক রিয়েলিজমের আবহেউঠে এসেছে এ গল্পে।লেখক সুচারু দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন মাৎসন্যায়ের একাল-সেকাল।গল্পে লেখক একটি সত্যকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন,সেটি হল-‘মাৎসন্যায়’।
ভালোবাসা নিও সৌরভ
একেবারে অন্যরকম গল্প। বেশ ভালো লাগল।
শ্রদ্ধা জানবেন।
রাজা শশাঙ্কের নাতি গল্পটা মন দিয়ে পড়লাম।
একরাশ ভালো লাগা।