
আয়ার্ল্যান্ডের কাব্যঐতিহ্য
অনুপ সেনগুপ্ত
" অপাপবিদ্ধ বিশ্বরূপদর্শন হয় আয়ার্ল্যান্ডের কবিতায়। কবিরা এখানে মন্ত্রের মতো কবিতা দিয়ে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছেন প্রকৃতির। মহাকাব্য হয়তো এ-দেশ রচনা করেনি, সেই মহাকাব্যিক মানসিকতা, গ্রিস বা রোমের যা ছিল, তা তার কোনও দিনই ছিল না, লিরিকের সিদ্ধিই তার অভীষ্ট, কিন্তু প্রকরণগত দিক থেকে য়ুরোপের আর সব দেশকে সে টেক্কা দিয়েছিল। আর সেইসঙ্গে কবির আত্ম-উপস্থিতির উজ্জ্বল চিহ্ন রাতের আকাশের নক্ষত্রের মতো ছড়িয়ে আছে বহুযুগ আগের সেইসব কবিতায়।" আয়ার্ল্যান্ডের কাব্য-ঐতিহ্য নিয়ে লিখলেন অনুপ সেনগুপ্ত
Many times man lives and dies
Between his two eternities
That of race and that of soul
And ancient Ireland knew it all
— উইলিয়ম বাটলার ইয়েটস (Under Ben Bulben Ⅱ)
| ১ |
য়ুরোপকে অন্ত্যমিলের সুষমা শিখিয়েছিল কেলৎরা। এদেরই উত্তরপুরুষ আইরিশ জাতি। কেলৎরা একসময় প্রায় গোটা য়ুরোপ জুড়ে ছড়িয়ে ছিল। রোমান সাম্রাজ্যের দুর্বার বিস্তারে কেলতিক সংস্কৃতির ক্রমবিবর্তন শেষ আশ্রয় খুঁজে পায় আয়ার্ল্যান্ডে। আর এ দেশের একটা প্রাচীন কবিতার বাকপ্রতিমা অনুসরণ করে বলা যায়, সূর্যের আলো, চাঁদের দীপ্তি, বজ্রের গতি, সাগরের গভীরতা – এইসব স্বর্গীয় শক্তি নিয়ে যেন জেগে উঠল একদিন আইরিশ জাতিসত্তা।
I am a mound of poetry
I am a word of skill
… … …
I am one who shapes fire in my mind
— Amergin (The Mystery)
সন্ত পাত্রিক (সেন্ট প্যাট্রিক) আর তাঁর দলবল আইরিশদের খ্রিস্টান করলেন বটে, কিন্তু এই জাতির মধ্যে পেগান স্মৃতি রয়ে গেল। সাহিত্য ও ঐতিহ্যের পরম্পরায় এই স্মৃতির প্রকাশ বারবার ঘটেছে। পেগান আয়ার্ল্যান্ডে দ্রুয়িদ শ্রেণি একই সঙ্গে ছিল কবি, পুরোহিত, জ্যোতিষী, আইনপ্রণেতা ও শিক্ষক। এমনকি রাজাকে সিংহাসনচ্যুতও তাঁরা করতে পারতেন। আয়ার্ল্যান্ডে খ্রিস্টধর্ম প্রসারের ফলে দ্রুয়িদ শ্রেণি ক্রমশ লোপ পায়। এরপর কবিরা পরিচিত হন ফিলি (Fili) নামে। আর ছিলেন বার্ড (Bard)। বার্ডদের কবিতাকে বলা হত Bairdne, আর ফিলিদের কবিতাকে Filidecht। বার্ড, ফিলি দুজনেই যদিও রাজানুগ্রহ পেতেন, কিন্তু বার্ডদের সম্মানমূল্য ছিল ফিলিদের অর্ধেক। অনেক বার্ড আবার আজকের সাংবাদিকদের মতো খানিকটা ভূমিকা পালন করতেন। ঘুরে ঘুরে খবর জোগাড় করে তা কবিতার চেহারা দিতেন। তারপর হার্প বাজিয়ে সে-সব গাইতেন কিংবা আবৃত্তি করতেন। তবে অনেক রকম বার্ডের কথা জানা যায়। বার্ডদের ছিল ষোলোটা গ্রেড বা শ্রেণি। আর ফিলিদের সাতটা গ্রেড। ফিলিদের এই শ্রেণিকাঠামো বা হায়ারার্কির সবচেয়ে নীচে থাকত ‘অবলেয়র’ (Oblaire), আর সবচেয়ে ওপরে ‘অল্যাহ্ব’ (Ollamh, আইরিশ ভাষায় ‘mh’-এর উচ্চারণ ইংরেজি ‘v’-এর মতো, কখনও আবার ‘w’-এর মতো)। ফিলিরাই সভাকবি হতেন। এঁদের সামাজিক সম্মান ছিল রাজার ঠিক পরেই। আর পেশা হিসেবেও তা ছিল যথেষ্ট কাঙ্ক্ষিত। একসময় আয়ার্ল্যান্ডের এক-তৃতীয়াংশ অভিজাত পরিবারের কেউ না কেউ ছিলেন ফিলি। এঁরা রাজার কাছ থেকে যে পরিমাণ জমিজমা পেয়ে বিলাসী জীবন কাটাতেন, গরিব রাজারা সভাকবি রাখার কথা ভাবতেও পারতেন না। ষষ্ঠ শতকে আইন করে কাব্যরচনার অধিকার কয়েকটি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়। ফলে এবার থেকে কবি বা ফিলি হতে গেলে প্রতিভার সঙ্গে জন্মগত পরিচয় দরকার হয়ে পড়ে। O’Canvans, O’Duvegans, O’Higgins, McDermotts, McDonaghs – এরা আয়ার্ল্যান্ডের সেই যুগের বিখ্যাত সব কবিকুল, অনেকটা আমাদের কুলীন ব্রাহ্মণ বংশের মতো। তবে শুধু বংশপরিচয়েই কেউ কবি বনতেন না। সাত থেকে বারো বছর পড়াশোনার পর কবি হওয়ার ছাড়পত্র পাওয়া যেত। আয়ার্ল্যান্ডের Clogher, Armagh, Lismore আর Tamar-এ তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল। এখানে শিক্ষক হতে পারতেন শুধু হাইপোয়েট ‘অল্যাহ্ব’-রা। ছাত্রদের শিখতে হত পুরাবৃত্ত, ইতিকথা, আইন, রাজাদের কুলুজি, আয়ার্ল্যান্ডের নানা জায়গার নাম ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, বিভিন্ন উৎসবের তাৎপর্য, আর অবশ্যই ব্যাকরণ, ছন্দ ও অলংকারশাস্ত্র। এছাড়া বিগত যুগের সমস্ত কাব্য স্মৃতির ভিতর সযত্নে রাখতে হত। জানতে হত অন্তত সাড়ে তিনশো উপকথা। শিক্ষার পুরোটাই শ্রুতি ও স্মৃতিনির্ভর। কোনও লিখিত পাঠ্যগ্রন্থ ছিল না। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস – এই শিক্ষাবর্ষে বাড়ি ছেড়ে ছাত্রদের থাকতে হত হোস্টেলের ছোট ছোট কুঠুরিতে। আর পরীক্ষা-পদ্ধতিও ছিল অভিনব। এইসময় খাবার ও জলসহ ওই রকম অন্ধকার কুঠুরিতে রাখা হত ছাত্রদের। কাউকে দেওয়া হল হয়তো কোনও রাজবংশ বা পৌরাণিক চরিত্রকে নিয়ে কাব্যরচনা করতে। অন্ধকার বিছানায় শুয়ে মনে মনে কবিতাটা নির্মাণ করে স্মরণে রাখত ভবিষ্যতের কবি। পরদিন সকালে তার আবৃত্তির পর কাব্যবিচার করতেন শিক্ষক। এখান থেকে বেরিয়ে কেউ অবলেয়র হতেন, কেউ অল্যাহ্ব। কিন্তু পদমর্যাদা অনুযায়ী বিগত কঠোর পরিশ্রমের মূল্য তাঁরা যথাযথ পেতেন রাজার কাছ থেকে।
| ২ |
Our ancestors fell there
… … …
Remember the hard tribute
Remember the extraordinary pride.
এই প্রাচীন আইরিশ কবিতা যুদ্ধক্ষেত্রে রাজা ও তাঁর সৈন্যদের মনোবল ও প্রেরণা দিতে লেখা। কবি শুধু রাজসভার ঘেরাটোপেই থাকতেন না, রাজার সঙ্গে তাঁকে যুদ্ধক্ষেত্রেও যেতে হত। হত্যার উল্লাসের মধ্যেও তাঁকে মগ্ন থাকতে হত নিজের সৃষ্টিতে। কত রকমেরই না থিম ছিল সেকালের আইরিশ কবিতায়। প্রেম, যুদ্ধ, রাজবংশের গৌরবগাথা থেকে পশুচুরি, অভিযান, প্রতারণা, আগুন, অতর্কিত হানা, সমুদ্রযাত্রা, অপহরণ। রাজা যুদ্ধে জিতলে লিখতে হত বীরগাথা (Eulogy)। আর রাজার তিরোধানে শোকগাথা (Elegy)। প্রতিটা বিষয়ভিত্তিক কবিতার জন্যে ছিল নির্দিষ্ট প্লট, নির্দিষ্ট ছন্দ, এমনকি নির্দিষ্ট শব্দভাণ্ডার। এক্ষেত্রে নিয়ম ভাঙলে কবিদের অর্থদণ্ড অবধি দিতে হত। অবলেয়ররা মাত্র সাতটা বিষয় কবিতা লেখার জন্যে পেতেন। কিন্তু অল্যাহ্বরা – তিনশো ষাটটা। অনুপ্রাস, স্বরসাদৃশ্য (assonance), ব্যঞ্জনসাদৃশ্য (consonance), অন্ত্যমিল, অর্ধমিল (half-rhyme) – এই সব কিছু ব্যবহার করতে পারতেন অল্যাহ্বরা। আঙ্গিকগত এই স্বাধীনতার জন্যে তাঁদের কবিতার নান্দনিক উৎকর্ষ শৃঙ্গজয় করেছিল। অন্য শ্রেণির কবিদের ইচ্ছে থাকলেও সেখানে পৌঁছোনোর উপায় ছিল না। মেটাফর তৈরিতেও অল্যাহ্বরা স্বকীয় প্রতিভার চিহ্ন রেখে গেছেন। আর একটা অলংকার তাঁরা ব্যবহার করতেন – তার নাম কেনিং (kenning)। যেমন ‘রক্ত’কে কেনিং করে লিখতেন ‘তরবারি-পানীয়’, যেভাবে অ্যাংলো-স্যাক্সন কবিতায় মৃত্যুকে বলা হত ‘তরবারিঘুম’, সমুদ্রকে ‘তিমিমাছের পথ’ কিংবা নর্স কবিতায় বাহু বা arm-এর পরিবর্তে ‘Mountain of the hawk’। জার্মানিক কবিদের অন্যতম অভিজ্ঞান-অঙ্গুরীয় এই কেনিং, তা তিনি নরওয়েজীয় হোন, বা অ্যাংলো-স্যাক্সন কিংবা আইসল্যান্ডিক। এই কাব্যপ্রকরণ আইরিশরা খুব সম্ভবত এদের কারও কাছ থেকেই শিখে থাকবে। তবে সেকালের আইরিশ কবিতায় আমায় সবচেয়ে বেশি অবাক করে, রাজনীতি, যুদ্ধ উন্মাদনা, বিলাসী জীবনের মধ্যেও ব্যক্তির নিজস্ব স্তব্ধতা, কোলাহল, আত্মার সংগীত। কখনও কখনও আত্মচরিত হয়ে ওঠে কবিতা। আর তা সজীব, প্রাণশক্তিতে ভরপুর।
| ৩ |
Man flourishes, the maiden buds
In her fair strong pride
Perfect each forest from top to ground
Perfect each great stately plain
… … …
A timorous, tiny, persistent little fellow
Sings at the top of his voice
The lark sings clear tidings
Surpassing summer-time of delicate hues!
— অজ্ঞাতনামা আইরিশ কবি (Song of Summer)
এই পৃথিবীর, এই জল, মাটি, আকাশের সৌন্দর্যকে কবিতায় আত্মস্থ করা আর তার ব্যক্তিত্বারোপে আয়ার্ল্যান্ডের তুলনা সেই যুগে যুরোপের অন্য কোনও দেশে মেলে না। ম্যাথু আর্নল্ড একেই বলেছেন ‘ন্যাচরাল ম্যাজিক’। আয়ার্ল্যান্ডের পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গল বারবার উঠে আসত তার কবিতায়। অ্যাংলো-স্যাক্সন বা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান কবিতাতেও প্রকৃতি এসেছে, তবে তা অন্যভাবে। সৌন্দর্যের থেকেও প্রকৃতির ভয়াবহ রূপের প্রাণপ্রতিষ্ঠা করতেন তাঁরা। কিন্তু আইরিশ কবি প্রথম থেকেই প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ হয়েছেন। সেই পেগান অতীত থেকেই মুগ্ধতার প্রবহমানতা বজায় রেখেছেন আইরিশ কবিরা। সেই নদী কখনও শুকিয়ে যায়নি। তারই এক শাখা পরে এসে মিশেছিল ইংরেজি কবিতায়।
আর এই মুগ্ধতার সঙ্গে মিশেছে আত্মপ্রত্যয়। খ্রিস্টপূর্বকালের কবি Amergin , খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকের Torna, Caelius, Sedulius, ষষ্ঠ শতকের Colm Cille, বা আরও পরে একাদশ দ্বাদশ শতক পর্যন্ত আইরিশ কবিতায় এই দীপ্তি দেখা যায়। আইরিশ পুরাণ অনুয়ায়ী সে-দেশের প্রথম কবিতা হিসেবে স্বীকৃত Amergin-এর ‘The Mystery’ -তে মানুষের অন্তর্গত দেবত্ব বিচ্ছুরিত হয়েছে এইভাবে :
I am the roar of waves
I am the dew drops in the sun
I am the salmon of wisdom
Who (but I) is both the tree and the lightning strikes it.
এইভাবে অপাপবিদ্ধ বিশ্বরূপদর্শন হয় আয়ার্ল্যান্ডের কবিতায়। কবিরা এখানে মন্ত্রের মতো কবিতা দিয়ে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছেন প্রকৃতির। মহাকাব্য হয়তো এ-দেশ রচনা করেনি, সেই মহাকাব্যিক মানসিকতা, গ্রিস বা রোমের যা ছিল, তা তার কোনও দিনই ছিল না, লিরিকের সিদ্ধিই তার অভীষ্ট, কিন্তু প্রকরণগত দিক থেকে য়ুরোপের আর সব দেশকে সে টেক্কা দিয়েছিল। আর সেইসঙ্গে কবির আত্ম-উপস্থিতির উজ্জ্বল চিহ্ন রাতের আকাশের নক্ষত্রের মতো ছড়িয়ে আছে বহুযুগ আগের সেইসব কবিতায়।
মানুষের জীবন-মৃত্যুর মাঝে জাতি ও আত্মা – এই দুই অনন্তের কথা আয়ার্ল্যান্ড যে জানত, তা আমরা জেনেছি ইয়েটসের কাছ থেকে। হয়তো এই দুই-এ না থেমে সৌন্দর্যের মতো, প্রেমের মতো আরও অনেক অনন্তের খোঁজ পেয়েছিল এই দেশ। হয়তো পরবর্তীকালের ইংরেজি কবিতা বিষণ্ণতার উত্তরাধিকারও অর্জন করেছিল আইরিশ কবিতা থেকে।
তবু লিরিকের এই পবিত্র চন্দ্রমায় কলঙ্করেখার মতো হাজির হয় স্যাটায়ার। সমুদ্রের পরপাড়ের শত্রু-আক্রমণ থেকে বাঁচতে দ্রুয়িদরা না কি কিছুক্ষণের জন্যে আয়ার্ল্যান্ড দ্বীপটাকেই অদৃশ্য করে দিতেন, কিংবা সমুদ্রের বুকে তুলতেন ঝড়। পরবর্তীকালেও এখানকার মানুষ বিশ্বাস করে এসেছে কবিদের অলৌকিক ক্ষমতার কথা। ভাবত, স্যাটায়ারে লক্ষ্য-ব্যক্তির মুখে ফোস্কা পড়ে, তার কুষ্ঠ হয়, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এমন কাউকে হাতের কাছে পেলে রাজারা শত্রুর বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে ছাড়বেন কেন! ভারতবর্ষে মুনিঋষিরা ক্রোধে অভিশাপ দিতেন, আর আইরিশ কবিরা ততটা রাগে নয়, বরং খানিকটা চাকরি বাঁচাতেই লিখতেন স্যাটায়ার। প্রকৃতপক্ষে তা ছিল শিষ্টভাষায় গালাগাল। অবশ্য কাব্যসিদ্ধির উদ্দেশ্যও এর ছিল না। এতে রাজার শত্রুর মুখে ফোস্কা পড়ত না বলা বাহুল্য, কিন্তু কবির হাত পুড়ত। একটা আইরিশ স্যাটায়ারের দৃষ্টান্ত দিই –
Without food quick on a platter
Without fresh milk for a calf to grow on
Without lodging for a man when night prevails
Without sweetness for men of art –
Such is (the like) of Bress
No longer is prosperity Bress’s
— Cairbre’s Satire on King Bress
আয়ার্ল্যান্ডের ধর্মীয় কবিতাবলী লিখেছিলেন খ্রিস্টান সন্ন্যাসীরা। অনেক ধর্মীয় কবিতাতেই যতটা ভাগবতরস আছে, ততটা কাব্যরস নেই। কিন্তু কোনও কোনও কবিতায় কাব্যিক দীপ্তি, গির্জার বাইরে বনবাসী বা গুহাবাসী একাকী সন্ন্যাসীর অনুভূতির বর্ণালী মুহূর্তমালার তাৎক্ষণিক অনন্ত সৃষ্টি করে। আবার একেবারে অন্যরকম ধর্মীয় কবিতা ‘The Devil’s tribute to Moling’ পড়লে চমকিত না হয়ে উপায় নেই। সেই কবিতায় মোলিং নামে এক খ্রিস্টান সন্ন্যাসীর কাছে ছদ্মবেশে ডেভিল এসে বলে সে যিশু। মোলিং অবশ্য সবই বুঝতে পারেন। কিন্তু এখানে ডেভিল নিজের যে গুণকীর্তন তৃতীয় পুরুষে করে, তার পোয়েটিক ফোর্স হাজার বছর পেরিয়ে গেলেও আজকের পাঠক টের পেতে পারেন। এরই অংশবিশেষ –
He is a fragrant branch with its blossom,
He is a vessel full of honey,
He is a precious stone with its virtue,
Whoso doth the will of God’s Son from Heaven.
… … …
He is a sun that warms holy Heaven,
A man with whom the great king is pleased,
He is a temple blessed noble,
He is a holy shrine bedecked with gold.
| ৪ |
দ্বাদশ শতকের শেষ অর্ধে আয়ার্ল্যান্ডে অ্যাংলো-নর্ম্যান আক্রমণে ফিলিদের নিজস্ব অস্তিত্ব ও ঐতিহ্য বিপন্ন হয়। লোপ পায় পদমর্যাদা। বার্ড ও ফিলিদের পার্থক্য ঘুচে গিয়ে তার অর্থ প্রায় একাকার হয়ে যায়। আঞ্চলিক রাজাদের অনুগ্রহে বার্ড ও ফিলিরা কোনোক্রমে নিজেদের টিকিয়ে রাখে। বার্ডিক সংস্কৃতি সপ্তদশ শতক, বা বলা ভালো অষ্টাদশ শতকের প্রথম কয়েক দশক পর্যন্ত আয়ার্ল্যান্ড ধরে রাখতে পেরেছিল। ‘The Last of the Great Bards’ নামে পরিচিত Turlough O’Carolan প্রয়াত হন ১৭৩৮ খ্রিস্টাব্দে। কিন্তু ফিলি ? পাঠক অতটা নিরাশ হবেন না। ঈষৎ উচ্চারণ ও বানান পাল্টে (fili → file, বহুবচনে filid → fili) আইরিশ ভাষায় আজও সে কবি। তবে অল্যাহ্ব হয়ে গেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর। সেই হাই পোয়েট আজ আর কবিতা লেখেন না।
সহায়ক গ্রন্থাবলী –
1. Ancient Irish Poetry – Kuno Meyer
2. Early Irish Literature – Eleanor Knott and Gerand Murphy
3. Irish Bardic Poetry – Osborn Bergin
4. Early Bardic Literature, Ireland – Standish O’Grandy
5. Lyra Celtica – Edited by E.A. Sharp and J. Mastthay
6. Celtic Literature – Mathew Arnold
7. The Concepts of an Academy and the Celts – Jorge Luis Borges (Lectures, Dictations 1956-1986), Selected Non-Fictions, Edited by Eliot Weinberger.