
অনুপ সেনগুপ্ত-র কবিতাগুচ্ছ
আলিঙ্গন
দুটি বাহু লুকিয়ে
একটি পঞ্চভুজ
ত্রিভুজ সেজে বসে আছে
তবু কেউ হয়ে ওঠার ভয় তাকে তাড়া করে
আবার কেউ না হয়ে ওঠার ভয়ও তাড়া করে
এই দুই ভয়ের মধ্যে সে একটা বৃত্ত আঁকে
বৃত্তটি কখনও চাঁদ হয়ে তাকে জ্যোৎস্না দেয়
জ্যোৎস্নায় স্বপ্ন দেখে সে:
ছেলেবেলায় ফিরে গিয়ে দু-বাহু খুলে
নিজেকে জড়িয়ে ধরেছে
অস্থান
অন্য ব্যঞ্জনা খুঁজতে খুঁজতে
কোনও কোনও শব্দ
স্বস্থান ছেড়ে অস্থানে ডুব দেয়
সেইসব শব্দ মিলেই তৈরি
অন্য এক ভাষা
তুমি আমিও একদিন
গল্প করব সেই ভাষায়
তখন কথা বলা মানে
চুপ করে থাকা
সেই নতুন ভাষায়
কিংবা নতুন নৈঃশব্দ্যে
প্রেমেরই মতো অস্পর্শনীয় কোনও গোলাপ
সহসা আর্তনাদ করে ওঠে
দূরত্ব
ক্রমশ দূরত্ব বাড়ে। আমি শূন্যস্থানে নৈঃশব্দ্য ভরে যাই। কখনও আগুন লাগলে সেই নৈঃশব্দ্য পুড়ে ছাই। ছাই থেকে অসংখ্য শব্দ ডানা মেলেছে। তাদের কেউ চিৎকার, কেউ গান, কেউ-বা শুধুই প্রজাপতি। স্বপ্ন ভেঙে আমিও জেগে উঠতে চাই না আর। আমার ঘুম নদী হয়ে যাক, ছুঁয়ে দিক তোমাকে –
হয়তো বহুদিন পর দুই অনুপস্থিতির মধ্যে এই নদীই সেতু হয়ে জেগে থাকে।
ফেরার
একটি রাত্রি
একটি দিনকে খুন করে
বহুদিন ফেরার
পুলিশ তাকে খুঁজছে
কোনও স্বপ্নে, কবিতায় কিংবা স্মৃতির মধ্যে
যদি সে লুকিয়ে থাকে
খাঁচা
প্রতিদিন জেগে উঠি একটা খাঁচায়
প্রতিদিন পাখি ওড়ে এর আকাশে
প্রতিদিন আবিষ্কার নতুন ঈশ্বরের
প্রতিদিন প্রমাণ করি এখনও বেঁচে আছি
এত বড় খাঁচা
তার শুধু অন্তর আছে
বাহির নেই কোনও
চিহ্ন
স্বপ্নের মধ্যে যে ফুল ফোটে,
যে চাঁদ ওঠে, যে নদী বয়ে যায়
সেই সৌরভ, জ্যোৎস্না আর
অথৈ জলে ভেসে
নোঙর ফেলি জাগরণে
সেই ফুল ঝরে পড়ে
নিঃশেষ হয় চাঁদ
শুকিয়ে যায় নদী
যদি জেগে উঠে তাদের ভুলে যাই
শুধু ম্লান পাপড়ি, অমানিশীথ আর
মরাখাত আঁচড়-চিহ্ন হয়ে
থেকে যায় জীবনের গায়ে
বাইনারি
শূন্য আর এক
এক তার সব সম্পদে যখন শূন্যকে পূর্ণ করে –
তখন
তারা না-এক, না-শূন্য
না-আমি, না-তুমি
না-এখানে, না-সেখানে
না কথা, না-নৈঃশব্দ্য
শুধু অনস্তিত্বের দুই চিহ্ন
যদি অন্য শূন্য, অন্য এক
হয়ে উঠতে পারে কখনও
সর্বনাম
ঢেউ-আঙুলে আমি ছুঁলেই
তুমি সৈকত হয়ে যাও
এই বাক্য থেকে
তুমি
শুধু সর্বনাম হয়ে বেরিয়ে গেলে
শুকিয়ে যায় সমুদ্র
তখন সর্বনাম তুমি আর
স্বগত তুমির মধ্যে
জেগে থাকি গহ্বররূপে
কখনও কেউ যদি এপার-ওপার
সেতু বেঁধে দেয়
আবার সমুদ্র –
আবার ঢেউ-আঙুলে তোমার
দুই সৈকত ছুঁতে পারি
ভালো লাগল
সব কবিতাই এক গভীর ভাবনার কথা বলে অল্পে সহজে