অজিত সিং বনাম অজিত সিং <br /> একত্রিংশতি পর্ব <br /> তৃষ্ণা বসাক

অজিত সিং বনাম অজিত সিং
একত্রিংশতি পর্ব
তৃষ্ণা বসাক

অজিত সিং বনাম অজিত সিং দ্বাবিংশতি পর্ব তৃষ্ণা বসাক অজিত সিং প্রথমে ছিল বঙ্গলক্ষ্মী চানাচুর, তারপর এল আজাদ হিন্দ চানাচুর, তারপর একের পর এক বিপ্লব চানাচুর, সর্বহারা চানাচুর, উন্নততর সর্বহারা চানাচুর, এখন চলছে বিশ্ববাংলা। এখানেই কি ভাবছেন গল্প ফুরিয়ে গেল? এবার আসছে একে ফিফটি সিক্স চানাচুর। নাম যাই হোক, সোল এজেন্ট আমি।’ ‘বেওয়ারিশ’ গল্পের চানাচুরওলা এবার ঢুকে পড়েছে বাংলার শিল্পক্ষেত্র থেকে শিক্ষাজগতের ক্ষমতার অলিন্দে।খুন, যৌনতা, প্রতিশোধ, নিয়তিবাদের রুদ্ধশ্বাস সুড়ঙ্গে সে টের পাচ্ছে- -বহুদিন লাশের ওপর বসে বারবার হিক্কা তুলেছি আমরা -বহুদিন মর্গের ভেতরে শুয়ে চাঁদের মুখাগ্নি করেছি আমরা -অন্ধ মেয়ের মউচাক থেকে স্বপ্নগুলো উড়ে চলে গেছে (জহর সেনমজুমদার) এই সবের মধ্যে বাংলার কি কোন মুখ আছে আদৌ? থাকলে কি একটাই মুখ? না অনেক মুখ, সময়ের বিচিত্র রঙে চোবানো? বিগত প্রায় অর্ধশতাব্দী জুড়ে বাংলার অজস্র মুখের ভাঙ্গাচোরা টুকরো খুঁজে চললেন তৃষ্ণা বসাক, তাঁর নতুন উপন্যাস ‘অজিত সিং বনাম অজিত সিং’-এ । সব কথনই রাজনৈতিক, সেই আপ্তবাক্য মেনে একে কি বলা যাবে রাজনৈতিক থ্রিলার? সিটবেল্ট বাঁধুন হে পাঠক, ঝাঁকুনি লাগতে পারে। প্রকাশিত হল উপন্যাসের ৩১তম পর্ব। এই উপন্যাসের সব চরিত্র কাল্পনিক।

৩১

ন্যাশনাল লাইব্রেরির সিঁড়ি দিয়ে উঠলে একটা কফি শপ আছে, ঠিক শপ বলা যায় না। ওপেন টেরেসে কয়েকটা টেবিল চেয়ার পাতা, আর একটা কিয়স্ক মতো সেখানে চা কফি, চিপস, বিস্কিট এইসব পাওয়া যায়, দুপুরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে গেলে ঘুগনি বা ভেজিটেবিল চপ এইসব বানানো খাবার, কিন্তু কিঞ্জল কোনদিন জানতে পারেনি সেই সময়টা ঠিক কখন। ও যখনি গেছে, চপ, ঘুগনি শেষ হয়ে গেছে, স্লাইস কেক আর কফিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে ওকে।
আজ যেমন। তবে সিসিডি বা অন্য নামী কফি শপের থেকে এখানে বসে কফি খেতে অনেক ভালো লাগে কিঞ্জলের। এখানে চারদিকে কেমন একটা বই বই গন্ধ, কফির গন্ধে মিশে আলাদা আমেজ তৈরি করে। তার ওপর এখানে না এলে সে জানতেই পারত না লাইব্রেরি একটা ট্যুরিস্ট স্পট হতে পারে। ওদিকের সেই বিখ্যাত বাড়িটি, যেখানে আগে লাইব্রেরি ছিল, যার সিঁড়িতে সত্যজিৎ রায়কে লিজিয়ন অব অনার দিয়েছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট, এখন সারাই চলছে, প্রদর্শনশালা হবে। ওখানে লাইব্রেরি দেখেনি কিঞ্জল।কয়েক বছর হল লাইব্রেরি ভাষা ভবনে চলে এসেছে। সে এসে থেকে এখানেই দেখছে লাইব্রেরি। এটা একেবারে ক্যাম্পাসের শেষেই বলা যায়। তাই তার মনে হয় পড়াশোনার জন্যে এটাই সেরা জায়গা। বেশ কোজি একটা ব্যাপার আছে।
কফি খেতে খেতে সে মুগ্ধ চোখে চারপাশটা দেখছিল। আজ একটা মেঘলা দিন। ঝোড়ো হাওয়া দিচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে একটা নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। প্রবল ঝড় আর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা।মৎসজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। বেরোবার সময় মা বলেছিল ‘আজ বেরোস না’ কিঞ্জল বলেছিল ‘আমি কি মৎসজীবী? আর আমি তো যাচ্ছি জ্ঞান সমুদ্রের ধারে বসে দু একটা নুড়ি কুড়োতে।আমকে নিয়ে ভেবো না অত। মরব না এত সহজে’
মার চোখে কি একটু কষ্ট খেলে যেতে দেখল কিঞ্জল? হবে। আগে হলে সে মার গলা জড়িয়ে আদর করতে বসত। কিন্তু আজকাল সব তার কেমন অর্থহীন মনে হয়। কেউ তো সত্যি সত্যি কারো দুঃখ দূর করতে পারে না। যত সব ন্যাকামি।
ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির ছাঁট আসছে।তার এখন ভীষণ ইচ্ছে করছে আলুর চপ খেতে গরম গরম। কিন্তু সেই চপ সে আসার আগেই ফুরিয়ে গেছে। সেই সময়ে সে এসে পৌঁছতে পারেনি। সময়, সময় একটা বড় ফ্যাক্টর।সময় আসলে কী ভাবছিল কিঞ্জল। কোথায় যেন সে পড়েছিল। পূর্ব আর পশ্চিমের সময়ের বোধ আলাদা। পশ্চিমে সময় সবসময় সামনের দিকে ছোটে। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবাই দৌড়তে থাকে, বসে থাকার ফুরসত নেই তাদের। কারণ তারা জানে সময় তো ফিরবে না পেছনে, তাই ভুল শুধরে নেবার সুযোগ আসবে না আর। কিন্তু পূর্বে সময় ঘোরে গোল হয়ে, সব ঘটনাই পুনরাবৃত্ত হয়, তাই মানুষের তাড়া থাকে না এত, সবাই জানে সুযোগ আবার আসবে, এ জন্মের ভুলগুলো পরের জন্মে শুধরে নেওয়া যাবে। পেছনের বাঁকে যাকে ফেলে এলাম, এক পাক ঘুরে এলেই তার সঙ্গে আবার দেখা হয়ে যাবে। সময়ের নদীতে এক জল দ্বিতীয়বার তোলা যায় না, এ কথা পূর্বের ধারণায় ভুল। পূর্ব ভাবে অনন্ত এক আদি প্রবাহ বারবার বয়ে চলেছে, নতুন হয়ে আবার ফিরে আসছে।
কিঞ্জল চমকে উঠে ভাবল তাহলে কি নতুন কিছুই ঘটছে না? যা ঘটে গেছে তাই বারবার ঘটছে? সেদিন বিঘ্নেশের ফ্ল্যাটে যা ঘটেছে, তা কি আগেই হয়ে গেছে? ছায়া ছায়া কী যেন ভেসে ওঠে অতল জল থেকে, তার নাগাল পায় না সে পুরো।

এক বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিল সেদিন, নার্সারির বন্ধু, ঋকপর্ণা। ওর সঙ্গে একটা গার্ল বন্ডিং আছে ওর। ওরা দুজনেই একই স্কুলের নার্সারি থেকে টুয়েলভ অব্দি পড়েছে। যদিও, সেকশন বদলেছে, পরে ঋকপর্ণা সায়েন্স আর ও হিউম্যানিটিজ নিয়েছে, কথা কম হয়েছে, কিন্তু একটা অদ্ভুত টান থেকে গেছে। বছরে একবার ওরা গোটা একটা দিন স্পেন্ড করেই, সেটার কোন নির্দিষ্ট দিনক্ষণ নেই যদিও, কখনো একদিনের জায়গায় দু তিন দিন হয়ে যায়। ঋক এখন পুণে থাকে বলে অনেক কমে গেছে দেখা হওয়া, ভিডিও কল হয় মাঝে মাঝে। দিন চারেকের ছুটিতে ও এসেছে এক কাজিনের বিয়েতে, লড়াই করে পাওয়া ছুটি। তার মধ্যেই ওরা একদিন সময় বার করে নিয়েছে। মামাতো বোনের বিয়ে। মা আগের দিন চলে গেছে। বাবা অফিসে, ভাই স্কুলে, গোটা বাড়িটা ওদের দখলে। ঋকের বাড়ি গেলে কষ্ট হয় কেমন যেন। ওদের ভরাট পরিবার। বাবা মা ভাই, মামা পিসি, তাদের বাড়ি, বিয়ের নেমন্তন্ন এক সপ্তা ধরে, কী নর্মাল সব। সেখানে ওর মনেই পড়ে না ও কখনো কোন আত্মীয়দের বাড়ি গেছে কিনা বা কেউ এসেছে কিনা। খুব ছোটবেলায় এক বুড়ি ঠাকুমা গোছের কেউ আসত। বাবার পিসিমা সম্ভবত। তিনি বেশ আদর করতেন আর একটা ফেনা ভাত খাওয়াতেন ওকে ঘি ছড়ানো। চালের গন্ধটা কী অপূর্ব। নাম কালো নুনিয়া। সেই চালটা উনিই নিয়ে আসতেন সঙ্গে করে। ‘কলকাতায় তো বাঘের দুধও পাওয়া যায়, এই চাল বয়ে আনার দরকার কী তোমার?’ বাবা বলেছিল। উত্তরে সেই পিসি ঠাকুমা বলেছিল ‘একই নামে হয়তো পাবি, কিন্তু জিনিস আলাদা। এই যে তুই আমাদের ভবানী, নাম একই আছে, কিন্তু ওখানে যা ছিলি আর এখানে যা হয়েছিস, মানুষটাই আমূল বদলে গেছে যেন।’
সেসব কথার মানে বোঝেনি কিঞ্জল। শুধু বোঝেনি নয়, এই সব তুচ্ছ কথার যে কোন গুরুত্ব আছে আলাদা, তাও বোঝেনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, পিসিঠাকুমার কথার মধ্যে কোন ভয়ঙ্কর সত্য লুকিয়ে আছে, এমন কোন অতীত আছে ভবানী শাস্ত্রীর, গোপন সুড়ঙ্গের মতো, যা বুজিয়ে তাদের বর্তমান জীবনটা গড়ে উঠেছে, জলাজমি বুজিয়ে বহুতলের মতো।মা, হয়তো মাও সেই অতীতের অংশ, আর তাই কি মা কোনদিন ভবানী শাস্ত্রীকে ছেড়ে যেতে পারেনি?কেন মা, কেন পারলে না? পারলে তো তার জীবনটা একদম অন্যরকম হত। ঋকপর্ণার মতো একটা নর্মাল জীবন।
সেদিনটা কি চমৎকার কেটেছিল। প্রচুর কাবাব বানিয়েছিল ঋক।দুপুরের জন্যে বিরিয়ানি আর চিকেন কষা। ও একজন ফ্যান্টাস্টিক কুক। ও যাবার আগেই বানানো ছিল সব। কিঞ্জল একটা বিরাট চকোলেট কেক নিয়ে গেছিল আর প্রচুর চিপস, চকলেট। ওরা দুজন মজা করে কেক কেটেছিল।কারো জন্মদিন না, কিন্তু ওদের মনে হয়েছে দেখা হওয়াটাই সেলিব্রেট করা দরকার। তাই ওরা কেক কাটল, হ্যাপি বার্থডে টু ফ্রেন্ডশিপ গাইল বেসুরে, কারণ কেউই গান জানে না, তারপর সারাদিন শুধু খাওয়া, হাহা, হইহই আর ল্যাদ খাওয়া। ওদিকে ওর মামাতো বোন খালি ফোন করছে ‘বড়দিভাই, তুমি এলে না এখনো? সন্ধেবেলা সঙ্গীত হবে, এসো প্লিজ, না এলে কাট্টি। জন্মের মতো আড়ি’
জন্মের মতো আড়ি- কত বছর পরে শুনল কথাটা। ঋক বলছিল ‘আরে সন্ধের আগেই পৌঁছে যাব, চাপ নিস না। এই বন্ধুর সঙ্গে আর কবে দেখা হবে কে জানে। ও তো স্টেটস চলে যাচ্ছে পোস্ট ডক করতে’
ফোন রেখে বলেছিল ‘তুই চল না। তোকে দেখতে চাইছে বোন। আমার শাড়ি পরে নে। ক্রপড টপ পরে নিবি। ফিউশন সাজ’
খুব লোভ হয়েছিল কিঞ্জলের। কিন্তু সেদিন বিঘ্নেশের ফ্ল্যাটের ঘটনাটার পর থেকে ওর কী যেন হয়েছে। ওর কি অধিকার আছে এইসব জায়গাতে যাবার? তার ওপর ওই বড়দিভাই ডাকটা ওর ভেতরে ভেতরে ভাঙন ধরাচ্ছিল। ওই তাড়া দিয়ে ঋককে বার করল। সরসুনা দিয়ে আসতে আসতে চোখে পড়ল দেওয়ালে লেখা-

শহিদ স্মরণে আপন মরণে রক্তের ঋণ শোধ করো।
প্রথমে খুব মজা লেগেছিল। এখন যত ভাবছে, কেঁপে উঠছে। তাকেও কি শোধ করতে হবে?ঋণ? কিন্তু কার কাছে?

ভবানী শাস্ত্রী, তার বাবা, কথায় কথায় বলে সময় না হলে কিছু হয় না। সময়ই আমাদের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। হবেও বা।কিন্তু সময়কে কে নিয়ন্ত্রণ করে? কেউ তো আছে। কিঞ্জল কোনদিন বিশ্বাস করেনি ভবানী শাস্ত্রীর কথা। আজ সে নতুন করে ভাবতে চাইল। সত্যিই কি সব আগে থেকে ঠিক হয়ে থাকে? সে যে মোহরমালা আর ভবানী শাস্ত্রীর মেয়ে হয়ে জন্মাবে, মালদা শহরে প্রচণ্ড কারেন্ট অফ হতে সে একমাসের জন্যে কলকাতায় এসে থাকবে, আর মা বাড়ি না থাকলে সেও বাড়ি থাকতে চাইবে না, বিঘ্নেশের বাড়ি রাত কাটাবে- সব ঠিক আগে থেকে, সব? সে এই সাজানো নাটকের একটা পুতুল মাত্র? মা যে কলেজ ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবে, তাও প্রশাসনিক পদে, বাইপাসে ফ্ল্যাট কিনবে, সেই ফ্ল্যাট দেখাশোনার জন্যে মাকে যেতে হবে শনিবার শনিবার- এই সব ঠিক হয়ে আছে আগে থেকে?বন্ধুদের কেউ কেউ মাকে নিয়ে নানান ইঙ্গিত দ্যায়, কিঞ্জল পাত্তা দ্যায় না। ওর সামনে কারো কিছু বলার সাহস নেই। মুখ ছিঁড়ে নেবে কিঞ্জল। একজন মহিলা উঁচুতে উঠলেই খাপ পঞ্চায়েত বসে যায়, তার চরিত্র নিয়ে কাটাছেঁড়া চলে। চরিত্র কি শুধু অন্য কারো সঙ্গে শোয়ার ওপর নির্ভর করে? মা একজন দক্ষ প্রশাসক, তার চেয়েও মা একজন অসাধারণ মা।
হ্যাঁ কিঞ্জল জানে, মা শনিবার ওই ফ্ল্যাটে একা থাকে না, সম্ভবত অজিত আঙ্কল থাকে মার সঙ্গে। অজিত আংকেল তাদের লেভেলের নয় এটা সে জানে। তাদের বাঙ্গালিদের মধ্যে তো এই ব্যাপারটা আছেই। তারা নিজেরাই সব বিষয়ে সেরা। পাঞ্জাবিরা বাঁধাকপি, তামিল তেঁতুলম, গুজরাটি গুজ্জু আর বিহারি মানেই ছাতুখোর রিকশাওলা। অথচ সর্বভারতীয় পরীক্ষাগুলোয় দেখো বাঙ্গালির হাঁড়ির হাল, সেখানে এই ‘তেঁতুলম’, ‘গুজ্জু’, ‘বাঁধাকপি’ এমনকি ‘ছাতুখোর’দেরই জয়জয়কার। সেখানে মার মধ্যে কিন্তু এরকম কোন প্রাদেশিকতা দেখেনি কিঞ্জল। মা অজিত আংকেলের কাজটাকে চেনে, সে কোন জাতের সেটা তার কাছে বিচার্য নয়।
ইফ শি স্লিপস উইথ সামওয়ান, শি ফিলস কমফর্টেবল, হোয়াটস দা ফাকিং প্রবলেম উইথ ইট? যে মহিলা ভবানী শাস্ত্রীর সঙ্গে ঘর করে এল এত বছর, তার কাছে অজিত সিং ইজ আ রিলিফ। তাই না? যারা বাজে কথা বলছে অল ফাকিং ইডিয়টস। তবে অজিত আংকলের ব্যাপারটা ওর কাছে খুব স্পষ্ট নয়। একজন এত নিচু তলার কর্মচারী কী করে এত ক্ষমতাবান হয়ে উঠল, বিষয়টা সত্যিই খুব রহস্যময়। মা ওর কাছে সেফ তো? দি অনলি থিং শি বদারস অ্যাবাউট ইজ মামস সেফটি।

সেফটি। শব্দটা উচ্চারণ করে বলে কিঞ্জল। বেজায় হাসি পায় তার। সেফটি! নিরাপত্তা! যে দরজা সে ভেতর থেকে বন্ধ করে নিজেকে সেফ ভেবেছিল, নিরাপদ, সেই দরজা কী করে খুলে গেল? ব্ল্যাক ম্যাজিক?
তারপর থেকে কিঞ্জল প্রায়ই আয়নার সামনে নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, বাথরুমে তো বটেই, নিজের ঘর বন্ধ করে আয়নার সামনেও। নিজেকে তন্ন তন্ন করে দেখে বুঝতে চেষ্টা করে ওর কিছু খোয়া গেছে কিনা। কোন ক্ষতি করেছে কি কেউ? বিঘ্নেশ অনেকবার ক্ষমা চেয়েছে ওর কাছে, বলেছে ‘ট্রাস্ট মি, কিচ্ছু করা হয়নি তোর সঙ্গে, শুধু স্ট্রিপ অফ, তাও রত্নদীপা করেছে, আমরা কেউ না, ট্রাস্ট মি, কোন ছবি তোলা হয়নি’
কিঞ্জল চিৎকার করে বলেছিল ‘আমাকে কি তোর গান্ডু মনে হয়? ছবি তোলা হয়নি? তোরা দেখিস নি আমাকে? আমাকে ব্ল্যাকমেল করবি ওই দেখিয়ে? ভাড় মে যা। আমার ছেঁড়া যায়, রিয়েলি আমার ছেঁড়া যায়। একটা মেয়ের নুড ছবি দেখিয়ে তাকে ভয় দেখানোর যুগ শেষ হয়ে গেছে মনে রাখিস। মেয়েরা এখন নিজেরাই সব হাট করে দিয়েছে, নিজের ইচ্ছেয়। বুঝলি? বাট আমি তোদের এই অডাসিটি মানতে পারছি না। তোদের আমি’
অনেক কিছুই তো করতে অনেক কিছুই তো করতে পারত কিঞ্জল, মাকে বলে, অজিত আংকলকে বলে একটা কেসে ফাঁসিয়ে ওদের জেলের ঘানি টানানো কোন ব্যাপার ছিল? কিন্তু কিচ্ছু করে নি এতদিনে। শুধু চুপচাপ বসে ভেবেছে, শুধু নিজের জীবনটাকে দেখেছে বারবার। এই জীবন লইয়া কী করিতে হয়? এই জীবন লইয়া কী করিব? নবকুমারের মতো এই চিন্তা নয়, ও ভেবে যাচ্ছে, মানুষের জীবনের সুরক্ষাবোধ কত ঠুনকো, এক লহমায় সব উল্টো পাল্টা হয়ে যেতে পারে। সেটা তো ও ছোটবেলা থেকেই কি জানে না? কিন্তু তখন তো একটা অস্বস্তি, একটা ভয় মনে হত ব্যাপারটা। আর আজ মনে হয় নিরাপত্তা তো আদৌ ছিলই না ওর।
এটা স্রেফ একটা আই ওয়াশ। এই দুনিয়ায় কয়েকজন মুষ্টিমেয় মানুষ নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যে বাকি সবার জীবন তছনছ করে দ্যায়, তাদের ফেরার ঘর থাকে না, ঘরে প্রিয়জন থাকে না, প্রিয়জনের প্রিয়তা কেড়ে নেওয়া হয়, পড়ে থাকে শুধু কর্কশতা।কিন্তু কিঞ্জল, তার সঙ্গে কেন এমন হল? যার বাবার কাছে মাথা নিচু করে থাকে এই শহরের পুলিশ কর্তা, নেতা থেকে তাবড় শিল্পী, যার মার আঁচলে বাঁধা এই শহরের একজন অত্যন্ত ক্ষমতাবান নেতা, তার তো এরকম হবার কথা নয়।তাহলে কি কোথাও কোন ভুল থেকে গেছে? কোন বড় কল্পনার অতীত পাপ, ভয়ঙ্কর অপরাধ করেছে তারা?কারো কাছে কোন ঋণ রয়ে গেছে? যা না শোধা পর্যন্ত ক্ষমা নেই তার, তাদের। কী যেন সেই দেওয়াল লিখনটা পড়েছিল সে?
কী হতে পারে তার মা বাবার, বিশেষ করে বাবার আগের জীবন? এমন কি হতে পারে সূত্রগুলো ওর সামনেই আছে, কিন্তু ও ধরতে পারছে না। ওর সেই পিসিঠাকুমার কাছে গেলে হয়তো জানা যেতে পারে কিছু। কিন্তু এতদিনে তিনি কি বেঁচে আছেন? তাঁর কোন নামই শোনেনি সে বহুবছর। ভবানী শাস্ত্রীর সঙ্গে কথা হয় না তার। এমন নয় যে কোন ঝগড়া হয়েছে তার সঙ্গে। কিন্তু শৈশবের অমল সারল্য চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গে এই লোকটাকে সে অপছন্দ করতে শুরু করল কোন একদিন থেকে। আর এটাও বুঝতে পারল ভবানীও তাকে পছন্দ করেন না। সেটা জেনে তার বিন্দুমাত্র দুঃখ হয়নি। বরং সে বেঁচে গিয়েছিল ব্যাপারটা দুদিক থেকেই ব্যালান্স হয়ে গেছিল বলে। সমীকরণের দুদিকে পাল্লায় একই ওজন। বরং খারাপ হত তাকে ভবানী ভালবাসলে। কারণ সে তো প্রতিদানে কিছু দিতে পারত না। এখন চমৎকার শান্তি ও সমঝোতা তাদের। মোহরমালার সঙ্গে কথা হয় ভবানীর, তার সঙ্গে নয়।তাই মার কাছেই তাকে জানতে হবে পিসিঠাকুমার বিষয়ে। আর একজন, আর একজনও যেন আসতেন তাদের বাড়ি। অনেক কম বয়সী। রাইট। ভবানী তাকে দিদি বলতেন। হ্যাঁ ইনিও, বেশ ছিপছিপে লম্বা, মোটা বেণী পিঠে ঝুলছে, ওর জন্যে স্পেশাল কিছু একটা আনতেন, যেটা কলকাতায় পাওয়া যেত না, বা পাওয়া হয়তো যেত, কিন্তু বাড়িতে কখনো আসেনি। সেটা খেতে খুব ভালবাসত কিঞ্জল। একটা হজমি লজেন্স আর একটা অদ্ভুত নামের সন্দেশ।নামটা কিছুতেই মনে পড়ছে না কেন যে। পরে অনেক বার কফি খেতে গিয়ে মনে হয়েছে সেই সন্দেশের কথা। কফি! হ্যাঁ এমনি কফি না। মোচা।এই তো এই তো মনে পড়েছে। মেচা সন্দেশ। কলকাতার নয়, কোন জেলার স্পেশালিটি। গুগলে সার্চ করে পেয়েও যায় কিঞ্জল। বাঁকুড়া। হ্যাঁ আবছা মনে পড়ছে। কথায় একটা টান ছিল সেই পিসির।কী যেন একটা ছড়া কাটত তাকে কোলে নিয়ে।
‘শাল মেচা মাটির ঘোড়া
এই তিন নিয়ে বাঁকুড়া তার মধ্যে আমার ঘর
লাল মাটির মহুয়াতোড়’

গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে কিঞ্জলের। পিসির বাড়ি মহুয়াতোড়! সেখানে গেলে কি তাহলে অন্ধকার টানেলের অন্যদিকটা দেখতে পাবে সে?

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes
410 Gone

410 Gone


openresty