সরস্বতী ডট কম <br /> রূপশ্রী ঘোষ

সরস্বতী ডট কম
রূপশ্রী ঘোষ

সরস্বতী বিদ্যেবতী

দুজন কলেজ ছাত্রী। স্টেশনে হঠাৎ দেখা। একজন অন্যদিক থেকে হাত বাড়িয়ে দৌড়ে এলো। “ইইইই …” করে আনন্দে আওয়াজ করেই, “কি রে তুই?”
— “হ্যাঁ এই পড়তে যাবো।”
— “ও। তারপর কি খবর বল?”
— “কি আর এই তো চলছে। বলছি তুই সরস্বতী পুজোয় বেরোচ্ছিস তো?”
যে মেয়েটি দৌড়ে এলো সে বললো, “না রে, এবারে মনে হয় হবে না! কি যে করি। ও তো থাকবে না!”
— “কোথায় যাবে?”
— “কাশ্মীর।”
— “ওঃ তুই তাহলে আমাদের সঙ্গে বেরোতে পারিস তো? চলনা চলনা আমাদের একটা গ্রুপ আছে। আমরা সবাই একসঙ্গে বেরোবো। তুই তাহলে যোগ দে, তোর যদি ও না থাকে। এক কাজ কর আমি তোকে আমাদের একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে তাতে ঢুকিয়ে নেবো। তাতে জানিয়ে দেবো।”
— “ও ওই গ্রুপটায় তো? যাতে সৌম, সৌভিক ওরা আছে?”
— “হ্যাঁ হ্যাঁ ওটায়। সৌভিক আমাকে জিজ্ঞেস করছিলো যাবি? আমি বলেছি ঠিক নেই।”
— “তোর ইয়ে যাবে কবে?”
— “আরে সেটাই তো এখনো টিকিটি কাটা হয়নি, এবং কবে যেতে হবে জানেও না কিন্তু ওইসময়ই যেতে হবে।”
— “ঠিক আছে তুই এক কাজ করিস ও গেলে আমাদের সঙ্গেই বেরোস, আর ও থাকলে তো প্রশ্নই নেই। এই ট্রেন আসছে। নে টাটা। বাই। হোয়াটসঅ্যাপে জানিয়ে দিস। কথা হবে ওখানে।”

গল্প শুনতে শুনতে মনে পড়ে গেলো সত্যি এটা একটা দিন ছিলো বটে। তবে আমার সময়ে আমাদের ওখানে এমন প্ল্যান করে বেরোনো ছিলো না। একবার ক্লাস ইলেভেনে পড়ার সময় আমরা চারটে মেয়ে স্কুল থেকে খানাকুল গিয়েছিলাম। শাড়ি পরা সাজগোজটা স্মৃতিতে রাখার জন্যে একটা স্টুডিয়োয় গিয়ে ছবি তুলে ফিরে এসেছিলাম।
শাড়ির জন্যে নিজের, পাড়ার যেখানে যত বৌদি কাকিমা আছে সবার আলমারির অন্দরমহলই আমাদের জানা হয়ে যেতো। সবার আলমারিই একবার করে খুঁড়ে যারটা পছন্দ হতো সেটা পরতাম। তবে সবসময় পছন্দ হলেই যে, চেয়ে পেতাম তা কিন্তু নয়। কারণ শাড়ি যত্ন করে রাখার একটা ব্যাপার আছে। খিচুড়ি, তরকারি ফেলে দাগ ধরানোর ভয় সবার মনেই কাজ করতো। যারা শাড়ি দিতো তারা দাগ বিহীন অবস্থায় ফেরৎ না পাওয়া অব্দি শান্তিতে থাকতো না। ওই বয়সে শাড়ির যত্ন নিয়ে মাথাঘামাতাম না, উলটে মনে হতো আহা! এটা নিয়ে এতো ভাবার কি আছে, কাচলেই তো উঠে যাবে। এখন বুঝি। কালকেই দেবপ্রিয় আমার একটা শাড়িতে আইসক্রিম ফেলে দিয়েছে, সে জানেও না! 🙂

আসল আনন্দ ছিলো স্কুলে। একদম ছোটবেলায় কিছুই বুঝতাম না, ভোরবেলা উঠে চান করতে হয় জানি আর স্কুলে গিয়ে অঞ্জলি দেওয়া তার আগে খাওয়া চলবে না। প্রাইমারী স্কুলে খুব তাড়াতাড়ি পুজো হয়ে যেতো। আমরা অঞ্জলি দিয়ে ফল খেয়ে খেলতে শুরু করে দিতাম। রান্নার উনানের থেকে অনেকটা দূরে। বিশাল বড় উনানে, কাঠের জ্বাল দিয়ে বড় একটা লোহার কড়াইতে, লম্বা খুন্তি দিয়ে তুষ্টু দত্ত দাদু খিচুড়ি নাড়তো। দাদুর খিচুড়ি রান্না শেষ হলেই স্যাররা ডেকে খাওয়াতে বসিয়ে দিতেন, খেয়ে বাড়ি চলে আসতাম।

ক্লাস ফাইভে একটু বড় স্কুলে গেলাম। প্রথম বছর একটুও আনন্দ হয়নি। তখনো বন্ধুর সংখ্যা বা তাদের সঙ্গে হৃদ্যতাও অতো গড়ে ওঠেনি। পরের বছর মনে হলো ধুর এই স্কুলে পুজোয় ঠিক আনন্দ হয় না। এক তো লুচি খাওয়ায়, ওটা আমি খাই না। দুই পুজোর দিনে বা আগেরদিনে যা কিছু কাজ সব বড় মেয়েদের দিয়ে করায়। কবে যে সেভেন এইট হবে! আগেরদিন বিকেলবেলা স্কুলে গিয়ে বাঁধাকপি কাটা আরো নানান কাজ। পুজোর দিনে সকাল থেকে ফল কুঁচোনো, লুচি বেলা। এই কাজগুলো একসঙ্গে হই হই করে করতে বেশ লাগতো। মজার ব্যাপার ছিলো স্যাররা ওই সময় ভীষণ বন্ধু হয়ে যেতেন। তখন পড়া না পারা বা ভুল করার বকুনি থেকে একেবারে মুক্তি। অংকের স্যার বিশ্বনাথবাবু। যাঁকে যমের মতো ভয় পেতো ছাত্রছাত্রীরা তিনিও পাশে বসে হাতে ধরে লুচিবেলা শেখাতেন। আমাকেও শিখিয়ে ছিলেন। বলে ছিলেন – “এই দ্যাখ ঘোষ, আড়াই প্যাঁচে লুচি বেলতে হয়।” বলে আড়াই প্যাঁচ দিয়ে প্রত্যেকটা লুচি বেলার সময় আমাকে ফলো করতে বলেছিলেন। তারপর নিজে চেষ্টা করেছিলাম। কয়েকবার করার পর স্যার আবার হাতে ধরে শিখিয়ে দিয়েছিলেন। পেরেছিলাম। এখন নিজের মতো করেই বেলি, কিন্তু বেলতে গেলেই স্যারের ওই আড়াই প্যাঁচের কথা মনে পড়ে।

ইংরেজির স্যার রণজিৎবাবু। তিনি হেডও ছিলেন। খুব ভয় পেতাম তাঁকে। একবার ক্লাস সিক্সে “ভূলুণ্ঠিত” মানে ধরে ছিলেন। যারা পারেনি তাদের সবাইকে বেঞ্চের ওপর তুলে পুরো ক্লাস দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন। আমাকে ধরার আগেই দীপিকাকে ধরে ছিলেন ও মানেটা বলে দিয়েছিলো, আমি বেঁচে গেছিলাম। সেদিন থেকেই ভয় পাওয়া শুরু। কিন্তু সরস্বতী পুজোর দিন তিনিও কেমন সবার বন্ধু হয়ে যেতেন।

সেভেন এইট থেকেই একটু পাখা মেলা শুরু হয়েছিলো। এমন কিছু না, সব বন্ধুরা মিলে সবার বাড়িতে একবার করে সাজটা দেখাতে যাওয়া। তার মধ্যে দীপিকাদের বাড়ি একদম স্কুলের কাছেই তাই ওদের বাড়িটা দশবারও যাওয়া হয়ে যেতো আয়না দেখার ছুতোয়। বিকেলের দিকে আমাদের বাড়ি, কোনো কুল গাছের তলা এইসব সেরে যে যার বাড়ি। সঙ্গী ছিলাম আমি, দোলা, দীপিকা, হাসিবা, মাধবী, অপর্ণা। সাকিনা, হাসিনা, আখতারা স্কুলে আসতো, অতোটা ঘুরতো না। পুজো শেষে বাড়ি চলে যেতো। সবাই বলতো সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেতে নেই, এখনো অনেকে বলেছে। কিন্তু আজ অব্দি সেটা আমার মেনে চলা হয়ে ওঠেনি।

পুজোর নিয়ম কানুন কিছু জানতাম না। সকালবেলা চান করে, শাড়ি পরে স্কুলে চলে যেতাম। স্কুলের জন্যে আমরা সবাই কিছু কিছু ফুল তুলে নিয়ে যেতাম। অঞ্জলি দেওয়ার সময় ঠাকুরের পায়ে ফুল দেওয়ার থেকে একে অপরের মাথায় ছোঁড়াটাই ছিলো বেশি আনন্দের। আর মন্ত্র তো সবার মুখস্থ। রীতি আছে ঠাকুরের কাছে বই দিতে হয়। যারা পুজোর জোগাড় করতো তারা যে কোনো একটা বই, কালির দোয়াত, আর পেন চেয়ে নিতো। আমি কখনো আমার বই পেন দিইনি। যাহোক একটা বই যে কেউ দিয়ে দিতো। কোনো পত্রিকা, পারলে খবরের কাগজ যাহোক একটা কিছু হলেই মনে হয় পুজো হয়ে যাবে এমনই শুনতাম । আজকাল দেখি যে যে বিষয়ে কাঁচা, সে সেই বিষয়ের বই দেয়। একদল ছেলেমেয়ের আলোচনা শুনেছি – “তুই এই বইটা দিচ্ছিস কেন? এটায় তো তুই খুব ভালো!” — “ধ্যাৎ! এটায় আমার ভীষণ চাপ, একদম ভাল্লাগেনা। আমি এগুলো দিয়েছি দ্যাখ!” বলে নিজের আনা পাহাড় সমান বই দেখিয়েছিলো। কেউ কেউ তো পুরো বইয়ের আলমারিই দিয়ে দেয়। এছাড়াও হারমোনিয়াম, তবলা, সিন্থেসাইজার সব দিতে দেখেছি। এখন শুধু সরস্বতী পুজোয় নয়, দুর্গা পুজোতেও অনেকে বই দেয় সরস্বতীর কাছে। তাই এখন ভাবি ওই পুজোর কটা দিন আনন্দে গা ভাসিয়ে না দিয়ে যে সাবজেক্টগুলোয় পুষ্টি কম আছে সেগুলো দিলে কাজের কাজ করতাম। এখন দিলে কি আর হবে?

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes