সনেট মণ্ডলের কবিতা    অনুবাদক- বেবী সাউ

সনেট মণ্ডলের কবিতা অনুবাদক- বেবী সাউ

আমার মায়ের গ্রাম

তোমরা যদি আমার মায়ের গ্রামে যাও,
সেখানে কিন্তু সেরকম কিছুই নেই দেখার।
শুধু এক বটবৃক্ষ , আমার প্রপিতামহদের
ধ্যান-ধারণার থেকেও পুরোনো।
আছে গুটিকয়েক ঘর, কতগুলি শহরের চেয়েও বয়স্ক,
আমার মায়ের থেকেও বয়স বেশি এমন কিছু মন্দির,
এবং আছে দিগন্তবিস্তৃত ধানক্ষেত ,
সেখানকার চাষিদের স্বপ্নেরও অতীত বৃহৎ।
আমার জন্যেও নেই সেরকম কিছুই দেখার।
আমি তো ভাবি , এই মামাবাড়ির থেকেও
অনেক বড় হয়ে গেছি।
তাও তোমাদের স্বাগতম জানাই , যদি বর্ষণমুখর দিনে ছাদে উঠে
পাতাদের কানে কানে বৃষ্টিফোঁটার ফিসফিস শুনতে চাও
এবং দেখতে চাও দুই জঙ্গলের মধ্যিখানে দোদুল্যমান এক অপূর্ব গ্রামকে,
তবে এসো অবশ্যই। এর মধ্যে বিশেষ কিছুই নেই –
তবু আছে জীবনের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম আনন্দগুলোকে উদযাপন করে
সুখী থাকার উপায় – বাতাসে বয়ে চলা পালকের ন্যায় হালকা দোদুল্যমান।

 

ধ্বংসস্তূপ

বই থেকে আর পাইনা কাগজের সুবাস,
যেমন কাগজ থেকে আর আসেনা শিক্ষার সুঘ্রাণ।
ঝরা পাতার মতো শিক্ষাও ইতস্তত ছড়িয়ে যায়,
আর পাতা ঝরে অগ্নিশিখায় অশ্রুর ন্যায়।
এই ধংসস্তূপ দেখে মনে হয় যেন একটি নিষ্ফল বিদ্রোহ ঘটে গেছে
চেয়ার, টেবিল আর বইগুলোর পাশে।

যেন এক অসম্পূর্ণ মানবজাতির কঙ্কাল
ঝংকার তুলেছে এক অদ্ভুত বেপরোয়া ছন্দে।

ইতিমধ্যেই বুঝতে পারি আমারি অস্থিসমগ্র ঢাকের বাদ্যি বাজাচ্ছে।
তবে আমি চিনতে পারিনা সে তাল, কোথায় তার সৃষ্টি।
সেই বিষ প্রচার করে চলেছে নিজ কর্মসূচি।
আর কান হয়ে চলেছে সন্মোহিত।

এখন আমাকে যেতে দাও।
এই ধ্বংসস্তূপ যদি কখনো মিউজিয়ামে না হয়ে
ইস্কুলে রূপান্তরিত হয়

তখন ডেকো আমায় আবার এই মাটিতেই

 

একটি ফেরীর নিশিডাক

প্রতিরাতে আন্দাজ দুটোর সময়
ফেরীটি তাঁর অস্তিত্বের জানান দেয়।
তার রাশভারী ভেঁপু
মধ্যরাতের বৃদ্ধ প্রহরীর কণ্ঠের মতোই জোরালো ও সরব।

আবহমান জলরাশির ধূমায়িত ছবি
পলকে শাশ্বত চিত্রে পরিণত হয়ে যায়
সেইসব মুদ্রিত আঁখির অন্তরালে,
যারা রাত্রিকে ভালোবেসে আত্মতুষ্টি পায়।

দূরে কুকুরের তীব্র ডাক
তবু ক্ষুন্ন করতে পারেনা নীরবতাকে।
হয়ে থাকে নিষ্ক্রিয়ভাবে বেপরোয়া।

এলোমেলো জীবন অলসতার বলয় তৈরি করে,
শিথিল কোনগুলো এবং স্মৃতির ভারসাম্য দিয়ে
ধীরে ধীরে তৈরি হয় তাসের ঘর ,
কিন্তু সেই ভেঁপুর প্রতি আওয়াজে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে ভেঙেও পড়ে।
তারপর দীর্ঘশ্বাসের সাথে শুরু হয় নতুন করে গড়ে তোলা।

ফেরীর নিশিডাকের দ্বারা ক্ষত বিক্ষত
সেইসব রাত্রির অন্ধকারে
পাপড়িঝরা ফুলগুলি
তাঁদের কান্ডকে আঁকড়ে ধরে – বিশ্বাসে।

 

আমার শৈশবের এক চিলতে মিঠে বাতাস

গরমের ছুটির এক দুপুরে
মা আমাকে কিছু মাটির পুতুল বানিয়ে দিয়েছিলেন,
আর সেগুলোকে লাল রং দিয়ে অপূর্ব করে তুলেছিলেন।

শর্ত ছিল, আমাকে লক্ষ্মী হয়ে স্নান আর
দুপুরের খাওয়া সেরে নিতে হবে ,
তবেই পুতুল হাতে পাবো।

বেশ কথা, যখন আমি ভাত- তরকারি নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি ,
ওমনিই চারপেয়ে খাটিয়ার ধরে রাখা
পুতুলগুলো গেলো পড়ে।

খানিক্ষণের জন্য মনে হলো
আমার সদ্য রং হওয়া মনের দেয়ালে
কে যেন একরাশ জল ছিটিয়ে দিলো।

আর সে রং ছিল আমার ভাবনার।

কয়েক দশক পর, আজ আবার জানতে ইচ্ছে হচ্ছে
কোন সেই নির্দিষ্ট মুহূর্ত, যখন আমি বড় হয়েছি
এবং সেই মুহূর্তও, ঠিক যখন আমি বৃদ্ধ হবো।
সেগুলো যেন ঘুরন্ত চাকার গতিবিধির মধ্যে দিয়ে
ঝলকে ঝলকে অদৃশ্য হয়ে চলেছে।

আজও একটু তফাৎ থেকে আমার
ঘরের দেওয়ালগুলোকে ভেঙে পড়তে দেখছি,
সেই শৈশবে মায়ের তৈরি খেলনা পুতুলগুলোর মতো।

অনুভব করতে পারি এক চিলতে মিথ্যে বাতাসে
আমার ছায়া জুড়িয়ে শীতল হয়ে উঠছে।
এ নির্ঘাত আমার শৈশবের বাড়ির পাশের তৃণভূমির হাওয়া

 

দাদামশাই এর বারান্দা

দাদামশাই আমাদের বারান্দার
এক প্রশস্ত কোণে রোজ বসতেন।
চেনা পথচারীদের দিকে তাকিয়ে সৌজন্যমূলক ঘাড় নাড়িয়ে
সময় কাটাতে তার দিব্যি লাগতো – পথের এ প্রান্ত থেকে।

তাঁর শেষ দিনগুলি আমার বেশ মনে আছে।
ছয় দশকেরও বেশি পুরোনো
তাঁর অতিপ্রিয় বিছানায় শুয়ে থাকার দিনগুলো।
আজকাল আমিও প্রায়ই আমাদের বাড়ির নতুন বারান্দায় বসি।
কিছু মানুষ হাত নাড়িয়ে যান।
কিছু শিষ্টতার হাসি আর কিছু শুধুই পথচারীদের চলে যাওয়া।

ঠিক করেছি, এখানেই বসে থাকবো,
যতদিন না আমি তাঁদের চোখে
দাদামশাইয়ের মতো হয়ে উঠতে পারি।

ঠিক যেভাবে দাদামশাই তাঁদের চোখে ধরা দিতেন –
এ বাড়ির এক অনিবার্য দৃশ্যপট –
প্রস্থানের অনেক আগের এক অসহনীয় কফিন।

 

একটি বিস্কুট কারখানা

ওই বিস্কুট কারখানা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে
বেকিং এর সুগন্ধ তার
ধাতব মোড়কের মধ্যে দিয়ে।

এখন বাসি রুটিগুলি নষ্ট হয়ে গেলেও
তারা সেই সৌরভ লুকোতে অপারগ।

দেয়ালের ঝাপসা স্লোগানগুলি
পুরোনো ক্ষতের মতো রয়ে গেলেও
এখনো চলেছে তাদের চেষ্টা , সেরে ওঠার।

সময়ের সাথে সাথে কারখানা
তার রং ও উজ্জ্বলতা খুইয়ে বের করতে থাকে
ইঁটের গাঁথনি –

ঠিক যেভাবে একটি গাছ আমাদের চাহনির তোয়াক্কা না করেই
ঝরাতে থাকে একটা একটা করে তার সমস্ত পাতা।

 

একটি ত্রিশূল এবং একজন চা বিক্রেতা

সেই বজ্রহননকারী ত্রিশূলকে
আগের থেকে অনেক বেশি স্তব্ধ লাগে এখন।

অস্বস্তি দ্বারা অবরুদ্ধ,
বিগত কিছু সুখ ও দুঃখ – একটি বিশ্বাস,
অবিরাম বয়ে চলেছে ভবিষ্যতের দিকে।

লতাগুল্মগুলির ভালোবাসা
নিবেদন করতে পারেনি লাল বা হলুদ ফুলের মাধ্যমে।

যেদিন থেকে ত্রিশূলের বজ্রহনণ বন্ধ হলো
সেদিন থেকে বন্ধ কারখানার পাশের সেই চা বিক্রেতা
কোনোদিনও লক্ষ্যই করলোনা তাকে।

বিশেষত সেদিন থেকে যেদিন বৈপ্লবিক পতাকারা
বছরভর বসন্ত বলে ঘোষণা করলো
ওই গোপন বিষাক্ত মরিচাক।

এখন সেই দরজার ভেতরে অপরিসীম শূন্যতা বিরাজমান ,
ভালোবাসার তাপ্পি ও কলহের নিশান লেগেছে ত্রিশূলে
এবং রয়েছে শুধু কিছু চা, পথচারীদের জন্যে।

 

সনেট মন্ডল ইংরেজি ভাষায় লেখেন। তিনি কবি, সম্পাদক। অ্যান আফটারনুন ইন মাই মাইন্ড (কপার কয়েন 2022), কার্মিক চ্যান্টিং (কপার কয়েন 2018), ইঙ্ক অ্যান্ড লাইন (ধৌলি বই 2018) সহ পাঁচটি কবিতার বইয়ের লেখক। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত কবি হিসেবে কবিতা পাঠ করেছেন। ২০১৬ সালে তিনি গায়ত্রী গামার্শ মেমোরিয়াল পুরস্কারে পুরস্কৃত হন।

অনুবাদ- বেবী সাউ। সনেট মণ্ডলের ইংরেজি কবিতা থেকে অনুবাদ করেছেন কবি। তাঁর অনূদিত অন্যান্য অনুবাদ কাজের মধ্যে রয়েছে বেক সিওকের কবিতা, থিক নাত হানের কবিতা, সিম্বোর্সকার কবিতা এবং অন্যান্য।

 

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (1)
  • comment-avatar
    পার্থজিৎ চন্দ 2 years

    ভাল অনুবাদ, সাবলীল। বেবীর অনুবাদের দক্ষতা নিয়ে যদিও প্রশ্ন নেই। এবং আরও আরও অনুবাদ, বাংলা থেকে ইংরেজি’তে দরকার। বেবী সাউ, এদিকেও নজর দেওয়া যেতে পারে। 😊😊😊

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes