নন্দিথা কে এস এর পাঁচটি কবিতা <br /> অনুবাদ- শর্বরী চৌধুরী

নন্দিথা কে এস এর পাঁচটি কবিতা
অনুবাদ- শর্বরী চৌধুরী

মালয়ালাম ভাষার কবি নন্দিথা কে.এস (১৯৬৯-১৯৯৯) কেরলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মালয়ালাম ও ইংরেজি ভাষায় কবিতা লিখেছেন। তাঁর কবিতা জনসমক্ষে এসেছে তিনি আত্মহত্যা করার পরে। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করার পর তিনি ব্যক্তিস্বাধীনতার সংকট বিষয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন। নন্দিথা ছিলেন কেরলের একটি শহরের কলেজে অতিথি অধ্যাপিকা। নন্দিথার কবিতার ডায়েরি তাঁর মৃত্যুর পর আবিষ্কৃত ও প্রকাশিত হয়। তাঁর কবিতায় পাওয়া যায় প্রেম,যন্ত্রণা ও মৃত্যু চেতনা। এক অদ্ভুত বিষাদময়তা আমরা খুঁজে পাই তাঁর কবিতার ভাষ্যে। মানুষের অসহায়তা, তা থেকে মুক্তির পথ-এ সব কিছুই উঠে এসেছে তাঁর কবিতায়। জীবনের অন্তর্লীন ছবি ফুটিয়ে তোলায় তিনি আন্তরিক ও বিশিষ্ট।তাঁর কবিতায় যেমন রিক্ততার কথা রয়েছে,তেমনি আছে পূর্ণতায় উত্তরণের কথাও। নন্দিথার কবিতা আমাদের চৈতন্য কে আলোড়িত করে প্রবলভাবে।

১)

যে স্বেদবিন্দু তোমার কপালে প্রস্ফূটিত, তা আমার পোশাকের প্রান্ত কে কলঙ্কিত করেছে।
তোমার ক্লান্ত চোখে আমি আমার বিপদ ঘনিয়ে উঠতে দেখেছি।
তোমার বেপরোয়া আচরণ আমার দুর্বলতা কে নস্যাৎ করেছে।
আমি জানতাম যে তোমার রঙিন স্বপ্নের মধ্যে
আমার নিদ্রা বিবর্ণ হয়ে যাবে।
তোমার তাচ্ছিল্যের হাসির মধ্যে আমার অশ্রু বরফ হয়ে যাবে।
তোমার নিস্পৃহতার কাছে অপমানিত হবে আমার নিজস্ব সত্তা।
এজন্য আমি পালাতে চেয়েছিলাম।
কিন্তু-আমি নিজের ভালোবাসার কাছে অসহায়।

২)

এখনও অনেক পথ বাকি।
সূর্যাস্তের অন্ধকার আকাশ ভ্রামণিকদের মন ভেঙে দিচ্ছে।
তীর্থযাত্রীরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।
বিষণ্ণ বাতাসে প্রত্যাশিত ভাবনারা তছনছ হয়ে যাচ্ছে।
রক্তে বাসা বাঁধছে শূককীট।
পচা,দুর্গন্ধযুক্ত মোড়কগুলি নিয়ে বিধ্বস্ত তীর্থযাত্রীরা এগিয়ে চলেছে।
তারা লক্ষ্য ভুলে গেছে, শুধু পথের শেষে পৌঁছতে চাইছে।
যারা হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছে তারাই ভাগ্যবান,
কারণ তারা মোক্ষলাভ করছে !

৩)

তোমার বোকামি দেখে সারা পৃথিবী উপহাস করে।
তোমাকে তারা পাগল বলে।
তারা তাদের চতুর চোখ দিয়ে তোমাকে বুঝে উঠতে পারে না।
তুমি তাদের থেকে লক্ষ যোজন দূরের মানুষ।
যখন তাদের চোখ সত্যিই তোমাকে দেখতে পায়, তখন তুমিই উপহাস করো;
তোমার নিজের বোকামো দেখে নয়, বরং তাদের মূর্খামি দেখে !

৪)

হাওয়া বইছে প্রবলভাবে।
জেগে উঠছে আমার ভেতরের নিভন্ত অগ্নিশিখা। দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে।
দগ্ধ চুল থেকে গন্ধ বেরোচ্ছে।
কর্কশ হাড়গুলোয় চিড় ধরছে।
দেহের মাংস গলে যাচ্ছে।
মাথার খুলি বেরিয়ে আসছে।
পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে আমি অট্টহাসি হাসছি।
তার বন্ধ্যাত্ব দেখে আমি উন্মাদের মতো হাসছি।

৫)

তোমার চোখে যে হাসি রয়েছে তা যেন বলে তুমি ধরাছোঁয়ার বাইরে।
তোমার কথায় শানিত ছুরির ধার, যা বিক্ষত করে।
আসলে তুমি যন্ত্রণা পাচ্ছো।
আমি দেখতে পাচ্ছি কীভাবে তোমার রসনা বিক্ষত হচ্ছে, দেখছি তোমার অস্থিরতা।
শীতে যে সোনালি ফুল প্রস্ফূটিত হয়,সে আবার গ্রীষ্মে মাথা তোলে, শরতে মুকুলিত হয়।
তুমিও সেরকম বারবার ফুটে ওঠার জন্য শক্ত হও, বিশ্রাম নাও এখন।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)